এরকম শুধু আমার সাথেই হয়। শেষ পর্ব।
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই,আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন আরেকটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়ে গেছি। আজকে আমার সাথে ঘটে যাওয়া গত বৃহস্পতিবারের বাকি অংশটা শেয়ার করবো। কি পরিমান ভোগান্তির শিকার হয়েছি সেটা আপনারা ব্লগটা পড়লে বুঝতে পারবেন।
ক্যামেরা রেডমি নোট-৮
রাত নয়টার সময় আড়িখোলা আর পূবাইল স্টেশনের মাঝখানে আমাদের এগারোসিন্দুর ট্রেনটি নষ্ট হয়ে যায়। এমন সময় সব যাত্রিদের মাঝে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তারা কিভাবে বাড়ি ফিরবে। ট্রেনের ইন্জিন ঠিক করতে কত সময় লাগবে বা নতুন কোন ইন্জিন আনবে কি না। সবার ভিতরে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। এই অবস্থায় অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। যারা নরসিংদী যাবে বা আশে পাশে যাবে তারা ট্রেন থেকে নেমে হাটতে লাগলো আর অন্য কোন উপায় খুজতে লাগলো।
আমরা যারা দুরে যাবো তারা বসে বসে পেটের খিদা সহ্য করে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আশে পাশে কোন দোকানও নেই যে কোন কিছু কিনে খাবো। আমাদের ট্রেনটি মেইন লাইনে নষ্ট হয়েছে। যার ফলে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এবং সিলেটগামী সমস্ত ট্রেন বন্ধ হয়ে রয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে একটি মালগাড়ির ইন্জিন এসে আমাদের ট্রেনটি পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে আড়িখোলা স্টেশন পর্যন্ত এনে আউট লাইনে দাড় করালো। অন্যান্য ট্রেনের জন্য মেইন লাইট ক্লিয়ার করে দিলো। যায়হোক আড়িখোলা এসে কোন কিছু না পেয়ে পেটের খিদা নিবারন করার জন্য হকার থেকে দুইটি রুটি কিনে খেলাম। এখানেও দূর্নীতি পাচঁটার জিনিষ দশ টাকা আর দশটাকার জিনিষ ২০ টাকা। সুযোগের সৎ ব্যবহার। যায়হোক খেয়ে আবার বসে রইলাম কখন ইন্জিন ঠিক হবে তারপর যাবো।
এগারসিন্দুর ট্রেনের কিছু যাত্রী আড়িখোলা স্টেশন মাষ্টারের কাছে রিকুয়েষ্ট করে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টোপিজ দেওয়া জন্য। যদিও এই ট্রেনটি এখানে কোন সময় স্টোপিজ দেয় না। যাত্রীদের বিপদ দেখে তিনি সবার রিকুয়েষ্ট রাখলেন। প্রায় বিশ মিনিট পরে উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়িখোলাতে স্টোপিজ দিলো। এই ট্রেনেও যাত্রীতে ঠাসা, কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। আমি জীবন মরন হাতে নিয়ে উপবনে উঠার চেষ্টা করলাম। অবশেষে দশ মিনিটের চেষ্টার ফলে উপবনেরে গেইটে পা রেখে একটু দাড়াতে পারলাম। একদিকে গাদাগাদি মানুষ অন্যদিকে প্রচন্ড গরম সব মিলিয়ে জীবনটা তেজঁপাতা হয়ে গেল। যাদের সাথে ফেমিলি,বাচ্ছা,ব্যাগ আছে তারা কেউ উপবনে উঠতে পারে নাই।
উপবন ট্রেনটি ধীরে ধীরে নরসিংদি পর্যন্ত যাওয়ার পরে কিছু মানুষ ট্রেন থেকে নামলো। যার ফলে ট্রেনটা কিছুটা হালকা হলো। তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সেখান থেকে ভৈরব গিয়ে নেমে পড়লাম। ভৈরব যখন নামলাম তখন রাত প্রায় বারোটা বাজে। উপবন ট্রেন আবার ব্রাহ্মনবাড়িয়া স্টেশনে বা আখাউড়া স্টেশনে স্টোপিজ দেয় না। যার ফলে ভৈরব নেমে যেতে বাধ্য হলাম। সাড়ে বারোটার দিকে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসলো। তারপর সেই ট্রেনে চড়ে রাত একটার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে গিয়ে নামলাম। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে শশুর বাড়ি গেলাম। শশুর বাড়ি যেতে যেতে রাত দেড়টা বেজে গেছে। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে ঘুমাতে আড়াইটা বেজে গেছিলো।
পরের দিন আবার ঢাকা আসতে হবে কিন্তুু ট্রেনের টিকেট পায়নি। আমি যদি একা আসতাম তাহলে কোন সমস্যা ছিল না। স্টান্ডিং টিকেট নিয়ে চলে আসতাম। সাথে যেহেতো বউ যাবে সুতরাং যে করে হোক ট্রেনের টিকট সংগ্রহ করতে হবে। কারন বউ আবার বাসে যেতে পারে না। বাসে গেলে গাউসিয়া যাওয়ার আগেই বাস থেকে নেমে যেতে হবে। যার ফলে বাধ্য হয়ে ব্ল্যাকারের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট খুজতে লাগলাম। অবশেষে দুইটি টিকেটের খুজ পেলাম কিন্তু মূল চাই ৮০০ টাকা। যেটা কাউন্টার থেকে নিলে দাম মাত্র ২৯০ টাকা। আমাদের স্টেশনে কিছু ব্ল্যাকার আছে তারা আগে আগে টিকেট গুলো নিয়ে যায়, যার ফলে যাত্রীরা টিকেট পায় না। অবশেষে বাধ্য হয়ে ৭০০ টাকা দিয়ে দুইটি টিকেট নিলাম।
আসার সময় ট্রেনে উঠতে একটু কষ্ট হয়েছে তবে রাস্তায় তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আমরা যে মহানগর গোধূলী ট্রেনে এসেছি সেটাও ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে আসতে ২০ মিনিট লেইট করেছে। যদি আমরা সঠিক সময়ে না যেতাম তাহলে কিন্তুু ট্রেনটি যথা সময়ে এসে চলে যেতো। যায়হোক সুন্দর ভাবেই কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌছলাম। তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। এখন কমলাপুর থেকে নারায়গঞ্জ যেতে হবে সিএনজিতে করে। কারন বাসে যাওয়া সম্ভব নয়। সিএনজি মামাকে জিঙ্গেস করলাম কত টাকা...? তারা ভাড়া চায় ৭০০ টাকা। চিন্তা করেন মাত্র ত্রিশ মিনিটের রাস্তা সিএনজি ভাড়া চায় ৭০০ টাকা। সিএনজি ওলাদের উপর যে মানুষের অভিশাপ এজন্যই। অবশেষে ৪৫০ টাকা দিয়ে আসতে রাজি হলো। সিএনজিতে চড়ে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত প্রায় ২ টা বেজে গেছে।
এই হলো আমার দুইদিনের ব্যস্তময় জীবনের গল্প। দুইটা দিন অনেক চাপের উপর দিয়ে গেছে। ঠিক ভাবে স্টিমিটে কাজ ও করতে পারি নাই। তারপরও যথা সম্ভব পোষ্ট গুলো করার চেষ্টা করেছি। আশা করি ব্যস্তময় জীবনের দুই দিনের গল্প পড়ে আপনাদের কাছে ভালই লাগবে। আগামী কাল আবার নতুন একটি বিষয় নিয়ে হাজির হবো। আজকে এখান থেকেই বিদায় নিলাম। সবাইকে ধন্যবাদ।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
আরে ভাই কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার দরকার কি ছিল। ৪৫০ টাকায় নারায়ণগঞ্জ না যেয়ে ২০০ টাকার মিষ্টি নিয়ে আমার বাসায় আসলেই তো হতো। পোলাউ মাংস ও খাওয়া হতো আর গল্প গুজবও করা হতো। বাপরে যে ট্রেনে ভোগান্তির কথা শুনলাম তাতে তো ট্রেনে চড়ার সখ শেষ। আর সব কিছুর দাম অনেক কি আর বলবো। খুব সুন্দর করে লিখেছেন।
আপু আগে যদি জানতাম তাহলে মিষ্টি নিয়ে আপনার বাসায় চলে আসতাম,হি হি হি। ধন্যবাদ আপু।
আসলে ভাইয়া মাঝে মাঝে যাতায়াতে এমন বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।এটা সত্যি বলেছেন পরিবার নিয়ে এমন ভরা বাসে উঠা সম্ভব নয়। আপনি একা দেখে যেতে পেরেছেন। যাইহোক কষ্ট হলেও অবশেষে শশুড় বাড়িতে গিয়ে ভালো খাবার খেয়ে সব ভুলে গিয়েছেনহা হা হা।যাইহোক আাসার সময় তেমন কোন সমস্যা হয়নি যেনে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।
খাবারের কথা আর কি বলবো। শশুর বাড়ি মধুর হাড়ি,সেটা তো সবাই জানেন। ধন্যবাদ।
ট্রেনের ইঞ্জিন নষ্ট হওয়াতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল দেখছি। শ্বশুর বাড়িতে যেতে তো খুব কষ্ট হয়েছে ভাই। যাইহোক এতো কষ্ট করেও ভাবীকে বাসায় নিয়ে আসতে পেরেছেন, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। সিএনজি ওয়ালাদের উপর সত্যিই রাগ উঠে মাঝে মধ্যে। ডাবল ভাড়া চেয়ে বসে থাকে অনেক সময়। বাংলাদেশে ট্রেনে ওঠা হয়নি কখনো। আপনার পোস্ট পড়ে ট্রেনে ওঠার আগ্রহ একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।