তেতুঁল গাছের সাথে খিচুড়ির কি সম্পর্ক //১০% @shy-fox//
আমি তখন ইন্টারে পড়ি,২০১৪ সালের কথা। ছেলেটার নাম জাকারিয়া। সে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো। আর আমি তাকে প্রাইভেট পড়াতাম। ছেলেটা মাদ্রাসায় পড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তুু তার বাবার ইচ্ছা ছেলে স্কুলে পড়বে। জাকারিয়ার বাবা একজন মুদি দোকান ব্যবাসায়ী।
জাকারিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানায়। জাকারিয়ার বাড়ি পুকুরের দক্ষিণ পাশে। পুকুরের পুর্ব পাশে একটি তেতুঁল গাছ আছে। তেতুল গাছটার বয়স আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ বছর হবে। জাকারিয়া প্রায় সময় তেতুঁল গাছটার নিচে বসে থাকতো। এলাকার সব মানুষই তেতুঁল গাছটার নিচে বসে পশ্চিমের বাতাস গায়ে লাগাতো। তবে মানুষ যখনই আসতো প্রায় সময়ই জাকারিয়াকে গাছের নিচে পাওয়া যেত। আমিও অনেক বার এই তেতুঁল গাছের নিচ দিয়ে হেটে গেছি,কিন্তুু কখনো নিচে বসি নাই।
জাকারিয়ার একটি প্রিয় খাবার ছিল,সেটা হলো খিচুড়ি। গ্রামের যেখানেই ওয়াজ মাহফিল হতো যাকারিয়া সেখানে যেত খিচুড়ি খাওয়া জন্য। ঐ এলাকাতে মাহফিল শেষে কিচুড়ি খাওয়ানো হতো। আমি নিজেও অনেক মাহফিলে গিয়ে খিচুড়ি,বিরানি খেয়েছি।
জাকারিয়ার বয়স ১২ থেকে ১৩ বছর হবে। সে মাঝে মাঝে খিচুড়ির লোভে তার সমসয়সি ছেলেদের সাথে নিয়ে পাশের গ্রামেও মাহফিলে যেত। রাত ১২ টা বা একটার সময় খিচুড়ি খেয়ে বা কোন দিন খিচুড়ি হাতে নিয়ে বাসায় আসতো। জাকারিয়া একটু সহসী ছিল রাতে কোথাও যেতে বা আসতে তার ভয় করতো না।
একদিন গ্রামের রাস্তা দিয়ে রাতের বেলা তার বন্ধুদের সাথে বাড়িতে আসতেছিল, তাদের সবার হাতে খিচুড়ির পলি ছিল। রাস্তার দুই পাশে জমি ছিল। প্রায় ১৫/২০ মিনিটের একম রাস্তা পাড় হয়ে তাদের বাড়িতে আসতে হয়। তো ঐদিন ৫/৭ মিনিট রাস্তা আসার পর জাকারিয়া আকাশে একটি আগুনের টুকরা দেখতে পেল। সে তার বন্ধুদের সেটা দেখাল, তার দু্ইজন বন্ধু সেটা দেখেছে , আর এক জন সেটা দেখেনি। জাকারিয়া বলল মনে হয় বৃষ্টি আসবে তাই আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে। তারপর তারা সবাই বাড়িতে চলে আসলো।
কয়েকদিন পর আবার ঐগ্রামেই আরেকটা মাহফিলের আওয়াজ শুনতে পেল জাকারিয়া। সে তার বন্ধুদের মাহফলে যেতে বলল। কিন্তু যারা ঐদিন আগুনের টুকরা দেখেছিল তারা কেউ যেতে রাজি হলো না। তো যে বন্ধু আগুন দেখে নাই সে জাকারিয়ার সাথে মাহফিলে গেল। আবার আসার সময় উভয় জন আগুন দেখতে পেল। জাকারিয়া আগের কথাই বলল। একথা গুলো বলেছিল যাকারিয়া , যখন আমার কাছে প্রাইভেট পড়তো তখন। আমি তাকে মাহফিল থেকে খিচুড়ি নিয়ে বাসায় আসতে নিষেধ করি। বরং বলি মাহফিলেই খিচুড়ি খেয়ে চলে আসতে।
তারপর যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটা জাকারিয়া বলেনি বলেছে পাশের বাড়ির মানুষ। জাকারিয়া একদিন সন্ধার সময় ইদিলপুর নামক গ্রামে মাহফিলের আওয়াজ শুনতে পেল, সে তার বন্ধুদের যাওয়ার জন্য বলল কিন্তুু কেউ গেল না। বন্ধুরা বলল সেখানে মাহফিল হয় না গান হয়। একথা শুনে যাকারিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল, মাহফলে গান হলে সে ওখানে যাবে না। কিন্তুু এলাকার কয়েকটি ছেলে গান শুনতে যায়তেছিল, হঠাৎ রাস্তায় জাকারিয়ার সাথে দেখা তারা বলল কিরে যাবি নাকি ইদিলপুর মাহফিল আর গান শেষে অনেক খিচুুড়ি দেয়। জাকারিয়া যায়তে না চাইলেও তারা জোর করে জাকারিয়াকে নিয়ে যায়। ৩০/৩৫ মিনিট মাহফিল করার পর সেখানে গান শুরু হলো। আর পাশে খিচুড়ি রান্নার আয়োজন চলছে। জাকারিয়া সেটা দেখে মনে মনে চিন্তা করলো সে খিচুড়ি না নিয়ে বাড়ি যাবে না।
রাত ১.৩০ মিনিট পযর্ন্ত গান চললো। কিন্তুু জাকারিয়া খিচুড়ি রান্নার পাশে বসে ছিল। তখন গানের বিরতি দিয়ে খিচুড়ি খাওয়া শুরু হলো। জাকারিয়া খিচুড়ি না খেয়ে পলি করে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল। রাত তখন প্রায় ২ টা বাজে। তার সাথে আরো অনেক মানুষ ছিল, তাদের পিছনে পিছনে জাকারিয়া হেটে আসতেছে। জাকারিয়াদের বাড়ি আাসার আগে একটি ব্রিজ দিয়ে রাস্তা অন্যদিকে মোড় নিয়ে চলে গেছে। ব্রিজ থেকে নেমে জমির মাঝখানের রাস্তাটা দিয়ে জাকারিয়া হেটে আসতেছে। আজ আর আগুন দেখে নাই।
বাড়ির পাশে তেতুঁল গাছের নিচে জাকারিয়া থমকে দাড়ালো, কে যেন জাকারিয়া কে ডাকছে। হঠাত পিছন থেকে দুইজন লোক জাকারিয়াকে দেখে বলছে কিরে জাকারিয়া এত রাতে এখানে কি করছ সে বলল মাহফিল থেকে খিচুড়ি নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। তারা বলল আচ্ছা আমাদের সাথে চল। সে তাদের সাথে বাড়ির ভিতরে গেল। তারপর পরদিন সকালে জমিতে জাকারিয়ার লাশ পাওয়া যায়।
জাকারিয়ার গল্পটা ভালো লাগলো কিন্তু তবে আবার আসলে এই ছেলের খুব সাহস ছিল। এত রাতে রাস্তা দিয়ে আসতো আমার তো এত সাহস কোনদিনও হতো না। তবে কেনতার লাশ পাওয়া গেল এটা শুনে বুঝতে পারলাম না। খুব সুন্দর করে আপনি আপনার গল্পটা উপস্থাপন করেছেন অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।