মজনু চাচা জীবন যুুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।।
হ্যালো বন্ধুরা,
সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে একটি জেনারেল পোষ্ট শেয়ার করবো। কথা গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ,আশা করি সবাই খুব মনযোগ সহকারে পড়বেন।।
আমাদের বাড়ির পাশে দুর সম্পর্কের এক চাচা আছে ছিল । তিনি একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী। তিনি আমাদের বর্ডার এলাকা থেকে কাচাঁ মরিচ,ধনিয়া পাতা আর লেবু এনে গ্রামের বাজারে খুচরা বিক্রয় করতেন। সবার মুখেই শুনেছি তিনি খুবই ভালো এবং সৎ মানুষ। তাকে কারো সাথে কোন দিন জগড়া করতে কেউ দেখেনি। তিনির কোন ফসলি জমি ছিল না। তবে বাড়িটা মোটামুটি বড়ই ছিল। ব্যবসার টাকার প্রয়োজনে তিনি দুইবার তার বাড়ির কিছু অংশ বিক্রয় করেছিলেন। তবে যারা তার থেকে জায়গা কিনেছিলেন তারা মুহরী বা আমিনকে টাকা দিয়ে মেপে নির্ধারিত জায়গার থেকে বেশি পরিমানে জায়গা নিয়েছে। তবে দলিলের মধ্যে অতিরিক্ত জায়গাটা উল্লেখ করে নি। জাষ্ট দখল করে ভোগ করেছে।
চাচার বর্তমানে নয় কন্যা ও একজন ছেলে সন্তান রয়েছে। যখন চাচার পঞ্চম কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করেছিলো তখন থেকেই এলাকার মানুষ চাচাকে নিয়ে বিভিন্ন কর্থা বার্তা বলতো। এতগুলো মেয়েকে কিভাবে বিয়ে দিবে,চাচার কিছু হলে তাদের কি হবে,এমন বিভিন্ন মন্তব্য করতো। তবে চাচা মানুষের কথায় কর্নপাত করতো না। তিনি দুইটি বিষয়ে খুবই সিরিয়াস ছিলেন। একটি হলো ব্যবসা আর দ্বিতীয়টি হলো তার সন্তানদের পড়াশোনা। এই দুইটি বিষয়ে তিনি কোন অবহেলা করতেন না। চাচার সপ্তম কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করার পরে পাড়া প্রতিবেশির কটু কথা আরো বেড়ে গেল। অথচ যারা তাদেরকে নিয়ে কটু কথা বলতো তাদের সন্তান থেকে চাচার মেয়ে গুলো অনেক ভালো পরিবেশে ছিল,ভালো খাবার দাবাড় পেতো, ভদ্র ও শান্ত ছিল। তবে চাচার একটিই টিনের ঘর ছিল। আর সেই ঘরে পাচঁটি রুম ছিল। চাচার মেয়েরা তাদের ছোট বাড়িটিকে বাগানের মত সাজিয়ে রাখতো। কিন্তুু দোকানের,এলাকার মানুষের কটু কথার কারনে তিনি আর গ্রামে থাকতে পারলেন না।
২০১১ সালে চাচা স্বপরিবারে গ্রাম ছেড়ে নারায়নগঞ্জ চলে আসেন। এখানে এসেও চাচা তার আগের ব্যবসাটি চালিয়ে যান। তবে ২০১২ সালে তিনি কাঁচা মরিচ,ধনিয়া পাতা আর লেবুর ব্যবসা ছেড়ে একটি ছোট ভাতের হোটেল দেন। চাচার মেয়েরা বাসার মধ্যে সব কিছু রান্ন কারে সাজিয়ে গুছিয়ে দোকানে পাঠিয়ে দিতো। চাচা আর তার ছেলে সে গুলো বিক্রয় করতো। নারায়নগঞ্জ আসার পরে চাচার আরো দুইটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করে। চাচার একটি ছেলে ছিল আর সে গ্রামে থাকা অবস্থায় ষষ্ট নাম্বার সন্তান হয়ে জন্মগ্রহন করেছিল। ২০১৫ সালে চাচার সেই ছেলে লেবানন চলে যায়। সে এখনো সেখানেই আছে। চাচা-চাচি আর তার মেয়েরাই হোটেল পরিচালনা করতো। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করি,আর সেটা হলো আট বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পরে চাচার কোন মেয়েকে কেউ দেখতে পারে নি। চাচি এবং তার নয় মেয়ে সবাই সম্পূর্ণ পর্দা করতো। চাচা তার সাত মেয়েকে কওমি আকিদায় মহিলা মাদ্রাসায় পড়িয়েছে। আর দুই মেয়েকে জেনারেল লাইনে পড়িয়েছে।
এখন পর্যন্ত তিনি তার সাত মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছে। সাত মেয়ের জামাইয়ের মধ্যে দুইজন সৌদিপ্রবাসি দুইজন মাদ্রাসার টিচার আর তিনজন চাকরীজিবি। দুই মেয়ে সিলেট থাকে আর পাঁচজন তাদের হাজবেন্ডের সাথে ঢাকায় থাকে। অষ্টম নাম্বার মেয়ে এডভোকেট আর নবম নাম্বার মেয়ে ঢাকা মেডিকেলে পড়ছে। আর চাচার ছোট ভাতের হোটেলটি বর্তমানে অনেক বড় হয়েছে। সেখানে সকালে পরোটা,নান রুটি,বিকালে মাছ মাংস সবজির সাথে ভাত আর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্রিল,নান,হালিম,কাচ্চি,মোগলাই,দই পাওয়া যায়। চাচার হোটেলে এখন দুইজন ম্যানাজার সহ দশ বারোজন লোক কাজ করে। নারায়গনঞ্জ শহরে একটি তিন তলা বাড়ি আছে।
কিছুদিন আগে চাচার গ্রামের বাড়ির পুকুরের পানি অপসারন করে সেই পুকুর কেটে রাস্তা নিমার্ণ সহ সবাই বাড়িতে নতুন মাটি ফেলেছে। এখন সবাই নিজেদের বাড়ির জায়গা,পুকুর মাপামাপি করছে। চাচার বাড়ির আশে পাশে যারাই তাদের বাড়ি মাপে তাদের দলিল থেকে অতিরিক্ত জায়গা বের হচ্ছে। সমস্ত কাগজপত্র বের করে দেখা যায় সবাই চাচার জায়গা দখল করে ভোগ করছে। চাচার সব মেয়েরা শিক্ষিত,তাদের জামাইরা শিক্ষিত,তারা সবাই গ্রামে চাচার পাশে গিয়ে দাড়িয়েছে। তারা এডভোকেট ও সরকারি আমিন নিয়ে গেছে। দলিল অনুযায়ী মেপে চাচা পুকুরে,বাড়িতে অনেক জায়গা পেয়েছে। কোন জগড়া বিবাদ ছাড়াই সুন্দর ভাবে সব কিছু সমাধান হয়েছে।
গ্রামে এখন ধন্য ধন্য পড়ে গেছে। মজনু মিয়া তার সন্তানের জন্য সম্পদ গড়েনি বরং তার সন্তানকেই সম্পদ হিসাবে গড়ে তুলেছে। আর যারা তার মেয়েদেরকে নিয়ে কটু কথা বলতো তারা এখনো সেই গ্রামের চায়ের দোকানে বসে মানুষের নামে গিবত করে। তাদের কারো ছেলে অটো রিকশা চালায়,কারো ছেলে সিএনজি চালায়।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আপনার গ্রামের চাচা সত্যি আজ জীবন যুদ্ধে জয়ী।যারা ওনাকে নিয়ে ওনার ছেলে মেয়েদের কে নিয়ে গিবত করতো তারা আজ সফলতা অর্জন করতে পারে নি কিন্তুু চাচা বেশ সুশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন সন্তানদের।ধর্মীয় শিক্ষায়ও শিক্ষত করেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো।ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
জী আপু চাচা তার ছেলে মেয়েদের মানুষের মত মানুষ করেছে। ধন্যবাদ।
সত্যি জীবনের সফলতা পেতে হলে যুদ্ধ করে চলতে হয়।যেমন করেছিল মজনু চাচা।আসলে তার এই অক্লান্ত পরিশ্রম আর সততার জন্য হয়তো সে আজ এই পর্যন্ত পৌঁছেছে। সত্যি জীবন সম্পদ করলে কিছুই হয় তাই আমাদের সবারই উচিত আমাদের টাকার পিছে না ছুটে মানুষের মতো মানুষ হওয়া।ধন্যবাদ ভাইয়া।
জী আপু সে তার সন্তানদের সম্পদে পরিনত করেছে। ধন্যবাদ।
আপনার চাচা প্রকৃতপক্ষে আর জীবনে সফলতা অর্জন করেছেন৷ যারা উনাকে নিয়ে গীবত করত এবং ওনার ছেলে মেয়েকে নিয়ে গীবত করতো তারা কিছুই করতে পারেনিব অথচ তিনি নীরবতা পালন করে তার ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষিত করেছেন এবং ধর্মীয় শিক্ষায় তিনি তাদেরকে শিক্ষিত করেছেন যা দেখে খুব ভালো লাগলো৷ অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷
জী ভাইয়া আজকে চাচা সফলতার হাঁসি দিয়ে কথা বলে। ধন্যবাদ।