আমাদের ছোট সময়ের কিছু ভুল ধারনা।।
বাংলাতে ব্লগিং করার নাম্বার ওয়ান কমিউনিটি-
আমরা ছোট সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভুলভাল চিন্তা ভাবনা করতাম। সব ধরনের উদ্ভট চিন্তা ভাবনা তখন আমাদের মাথায় আসতো। বন্ধুরা এক সাথে হলে কার মাথায় কি চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে সবই প্রকাশ পেতো। এখন ঐসব চিন্তা ভাবনা আমাদের মনে হলো, মনের অজান্তেই হাঁসি পায়। এখন চিন্তা করি ছোট সময় কত বোক ছিলাম। এখন যেটা বুঝি ছোট সময় কেন বুঝিতে পারি নাই। তাহলে লাইফটা অনেক আগেই ঘুছিয়ে ফেলতাম। তবে সেটা তো আর হয় না,যখন যেটা দরকার সৃষ্টিকর্তা তখনই সেটা দিয়ে থাকেন। আজকে আমি ও আমাদের বন্ধুরা ছোট সময় যে ভুল ধারনা গুলো করতাম সেটার কিছু বর্ণনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরছি।
প্রথমেই আমার কথা বলি,ছোট সময় যখন দল বেঁধে গ্রামের প্রাইমারী স্কুল পড়তে যেতাম,রাস্তায় কোন কবরস্থান দেখলে,আঙ্গুল দিয়ে ইশারা দিয়ে দেখাতাম না। যদি ভুলেও আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে ফেলতাম, সাথের বন্ধুরা বলতো তারাতারি হাটুতে কামড় দিতে। না হলে আগামীকাল আমিও মারা যাবো। বোকার মত তখন অনেক কষ্ট হলেই নিজেই নিজের হাটুতে কামড় দিতাম। তারপরে আসি ছোট সময় চন্দ্র বা সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাটলে মনে করতাম চন্দ্র সূর্য আমার সাথেও হাটছে। চন্দ্র সূর্যের আর কাজ নেই,আমার সাথে হাটতে বসে আছে,হা হা হা। দুরে তাকিয়ে দেখতাম আকাশ গাছের সাথে লেগে আছে। ভাবতাম ঐগ্রামে গেলেই হাত দিয়ে আকাশ ধরা যাবে। কত বড় বোকা ছিলাম।
আর চাঁদের মধ্যে একজন বুড়ি আছে,বট গাছ আছে, এই ধারনা সবার মধ্যেই ছিল। সবাই ভাবতো বুড়ি চাঁদের ভিতরে বট গাছের নিচে বসে বসে কুয়াশা ছাড়ে। বুড়ির তো আর খায়ে দাইয়ে কাজ নেই,😂😂
আমার বন্ধুরা আমাকে আরেকটি ভুল কাজ করতে সবসময় উৎসাহ দিতো। সেটা হলো বাদুড় বা পাখি খাওয়া কোন কোন ফল খেলে সাতাঁর শিখা যায়,হা হা হা। এই ভুলটা শুধু আমি করি নাই,আমাদের সাথে যারা ছিল সবাই এই ভুলটা করেছে। শুধু আমরা করে স্টপ থাকি নাই,অন্যদেরকেও এটা খেতে উৎসাহিত করতাম। এই ভূল ধারনা করে কত যে বাদুড়ের,পাখির অর্ধেক খাওয়া ফল খেয়েছি তার কোন হিসাবে নেই। আর যদি বরই বা কোন ফল খাওয়ার পরে বীচি পেটে চলে যেতো তাহলে ভাবতাম পেঠের ভিতর গাছ উঠবে,হা হা হা।
আমার এক পন্ডিত বন্ধু আমাদের বলতো টেংরা মাছ বড় হলে পাঙ্গাস মাছ হয়,পুটি মাছ বড় হয়ে ইলিশ মাছ হয়। টিকটিকি গুই সাপের চাচাতো ভাই। গুই সাপেরা ধনী,অনেক অর্থ সম্পদের মালিক,তাই তারা হরলিক্স খেয়ে বড় হয়ে গেছে। আর টিকটিকরা গরীব, তারা হরলিক্স খেতে পারে না বলে ছোটই থেকে যায়, কত বড় ধোকা দিছে চিন্তা করেন। আরো আছে আমাদের এটাও শিখিয়েছে যে,ভারত আর ইন্ডিয়া দুইটা আলাদা দেশ। নাম আলাদা শুনে আমরাও বোকার মত বিশ্বাস করতাম। আমরা কত সুন্দর জ্ঞান নিয়ে চলাফেরা করতাম। কি ধারনা ছিল আমাদের।
আর আলমগীর-সাবানার কষ্টের ছবি দেখে সব ঘটনা সত্যি মনে করে কত যে চোখের পানি ফেলেছি,সেই পানি যদি বালতিতে জমা করতাম তাহলে এখন কয়েকটা পুকুর ভরে যেতো। আর বাংলা ছবির ডাইনি শ্বাশুড়িদের খুব ঘৃনা করতাম। মন চাইতো মূল সত্য ঘটনা নায়কদের কাছে বলে দেয়। ভিলেনরা এক মুভিতে মারা গিয়ে অন্য মুভিতে কিভাবে আসলো সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসতো না,হা হা হা।
আরেকটি মজার ভূল ধারনা ছিল যে, একজনের মাথার সাথে অন্যজনের মাথা ঠুস খেলে, দুই জনের মাথায় শিং গজাবে,তাই শিং যেন না গজায় তার জন্য একবার অনিচ্ছাকৃত ঠুস খেলে, ইচ্ছে করে আরো দুইবার ঠুস খেতাম। কত বড় বলদ ছিলাম। আর জাদুর ছবি দেখে তারা জাদু পারে সেটা বিশ্বাস করতাম। আর আলিফ লায়লার মত সত্য ঘটনা পৃথিবীতে আছে বলে মনে করতাম না। মানুষের মুখ দিয়ে আগুন বের হতো,এগুলো বিশ্বাস করতাম। জাদুর ছবি দেখে নিজে জাদুঘর হওয়ার ইচ্ছা পোষন করতাম।
ছোট সময়ের ভুল ধারনা বাস্তবে যখন দেখি তখন আরো বেশি হাঁসি পায়। আর এটা এখনো হচ্ছে। এখনও কিছু কিছু জাগায় দেখা যায়,একটি ব্যাঙ ধরে আরেকটি ব্যাঙের সাথে বিয়ে দেয়। এটা করলে না কি বৃষ্টি হবে। চিন্তা করেন এই যুগেও এত বোকা মানুষ আছে।
আরেকটি ভুল ধারনা ছিল যে,আমেরিকা মাটির নিচে। বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে নিচের দিকে গর্ত খুড়লে আমেরিকায় যাওয়া যাবে। আর বিমানের জন্য আকাশে আলাদা রাস্তা আছে। বিমান সেই রাস্তা দিয়ে চলে। আর একটি বিমানে যে এত মানুষ চড়তে পারে সেটা কল্পনাও করি নাই।
আরেকটি ভুল আমি নিজের প্রায় করতাম,সেটা হলো কোরআন শরীফের পাতার ভিতের ময়ূরের পাখা রাখতাম। মাঝে মাঝে তেল দিয়ে ভিজিয়ে দিতাম,যেন নতুন আরেকটি পাখা জন্ম দেয়। আর সেই ধারনা থেকে মনে করতাম বিয়ে করলে এমনি এমনি বাচ্ছা হয়,হা হা হা😜। আপনাদের কি ধারনা ছিল..?
প্রথম মোবাইল বের হওয়ার পরে,আমাদের তো মোবাইল ছিল না। মানুষের মুখে শুনতাম মোবাইলের ভিতরে টাকা ঢোকায়। তখন ধারনা করতাম মোবাইলের পিছন দিক দিয়ে মনে হয় টাকা ঢোকায়, হি হি হি। আল্লাহ মাফ করুক। আর সবাই বলতো মটোরোলাে মোবাইল ট্রাকের নিচে পড়লেও ভাঙ্গবে না। গাদার মত সেটাই বিশ্বাস করতাম।
আমার দাদি আমাদের বলতো পুলিশ দুই প্রকার। একটি হলো ছোট পুলিশ আর একটি হলো দারুগা পুলিশ। ছোট পুলিশরা ঘুষ খায়। আর দারুগা পুলিশ ঘুষ খায় না। দারুগা পুলিশ আসলে না কি কেউ ঘরের বাহিরে থাকে না। সবাই ঘরে ঢোকে দরজা লাগি দিতো। তবে সেই ভুল ধারনা খুব তারাতারি ভেঙ্গে গেছিলো। রেডিও টিভির ভিতের মানুষ আছে,সেটাও একসময় ধারনা করতাম। তবে এই ধারনা গুলো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
আপনারা ছোট সময় কি কি ভুল ধারনা করতেন,সে গুলো জানতেও আমি খুবই আগ্রহী। সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। বিদায়।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
ভাই ছোটবেলার মজার মজার ভুল ধারণার গল্প পড়ে বেশ মজা পেলাম। এরকম ভুল ধারণা ছোটবেলায় আমাদের ভেতরেও ছিলো। সত্যি বলতে এসবের কারণেই কিন্তু শৈশবটা অনেক সুন্দর ছিলো। ছোটবেলায় আমিও বিশ্বাস করতাম চাঁদে বুড়ি আছে। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে বিস্তারিত ভাবে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
জী ভাইয়া এই ধারনা গুলো সচারাচর সবাই করে ছিল। ধন্যবাদ।
আপনাকে আর কি বলবো ভাই, বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি। আপনি তো দেখছি সবকিছুই আমার মত চিন্তা করতেন ছোটবেলায়। ছোটবেলায় এরকম বোকা মানুষদের মধ্যে আমিও কিন্তু একজন ছিলাম। আপনার ধারণা এবং আমার ধারণা একেবারে সেম ছিল, সবকিছুই মিলে গিয়েছে। এখানে কিন্তু আরো একটা বাদ পড়ে গিয়েছে। সেটা হচ্ছে ছোটবেলায় মনে করতাম শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু স্বামী-স্ত্রী🤣🤣। সত্যি ছোটবেলার কথা গুলো মনে পড়ে গিয়েছে। আমার তো আপনার পোস্ট পড়ে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।
ছোট সময়ের কথা কি বলবো ভাই। ছাত্রলীগ করে এক কর্মী সে এখনও সেটা মনে করতো। আমি তার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছি,হা হা হা। এই আমাদের দেশের অবস্থা। ধন্যবাদ।
মোটামুটি এই সবগুলো ধারনাই ছোটবেলায় সবারই থাকে। আপনার লেখা পড়ে ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়ে গেল। চাঁদের বুড়ি নিয়ে আরো কত যে ভুল ধারণা ছিল 😆। আমি তো ছোটবেলায় শুনেছিলাম চাঁদের বুড়ি নাকি সেখানে বসে কাঁথা সেলাই করছে। এখন ভাবি এই কাঁথা গুলো কোথায় পার্সেল করে। 😆।
খুব মজা পেলাম আপনার আজকের পোস্ট পড়ে।
চাঁদের বুড়ি কাঁথাও সেলাই করে। যাক নতুন তথ্য পেলাম। একটা কাঁথা অর্ডার দিতে হবে, হা হা হা।
বাহ চমৎকার লিখলেন আপনি ছোট কালের অনেক গুলো ভুল ধারনা নিয়ে। আপনার সেই ভুল ধারণার সাথে আমার অনেক মিলে গেল। যদিও কবরস্থানে আঙ্গুল দেখার কারণে আপনারা মারা যাবেন এমন একটি ভুল ধারণা ছিল। কিন্তু আমরা জানতাম যে কবরস্থানে দিকে আঙ্গুল দেখালে সেই আঙ্গুল পচে যাবে হা হা হা। আর আরো একটি ধারণা ছিল সেটা হচ্ছে কালো পিঁপড়া খেলে নাকি সাঁতার জানতো তাই আমরা কালো পিপড়া খেতাম হি হি হি। সবগুলো ধারনা ভুল এসব ভুল ধারণা নিয়ে আমরা এক সময় বড় হয়েছি। আজ বুঝি সে ভুল ধারণা থেকে যদি তখন বেরিয়ে পড়তাম তাহলে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারতাম।
আপনি ছোট সময় পিঁপড়া খেয়েছেন, বিয়ার গ্রিলস হয়ে গেলেন,হা হা হা। ধন্যবাদ।
আসলে আমার মাঝে মাঝেই মনে পড়ে ছোটবেলার এই ভুল ধারণা গুলোর কথা। এগুলোর কথা মনে পড়লে নিজেই নিজেকে অনেক বেশি বলদ মনে করি। এইসব ভুল ধারণা কিন্তু আমার নিজেরও ছিল। বইয়ের পেজগুলোর মধ্যে ময়ূরের পালক তেল দিয়ে রেখে দিতাম যত্ন সহকারে, ভাবতাম এটা বাচ্চা দিবে। মুভিতে যখন দেখতাম ভিলেনরা খারাপ কোন কিছু চিন্তা করে, তখন নায়ক কে এগুলো বলে দেওয়ার ইচ্ছাটা আমারও ছিল। আর কষ্টের কোন কিছু দেখলে চোখের পানি এমনিতেই চলে আসতো। সত্যি আপনার পোস্ট পড়ে আবারো মনে পড়ে গেলো সব কথা।
জী আপু এগুলো ছিল,ঐ সময়ের ছেলে মেয়েদের চিন্তা ভাবনা। ধন্যবাদ।
এক ডিশে শিং গজানোর ভয়ে কতবার যে পরের আবারো কপালে কপাল দিয়ে ঠুস খেয়েছি!! আবার, পিপড়া খেয়ে সাঁতারা শিখবো ভেবেছিলাম! 🤣 আর ভুলে যদি কোন ফলের বীজ খেয়ে ফেলেছি,, তবে তো আসলেই অনেকদিন পর্যন্ত ভয়ে থাকতাম।যদি শরীর এর কোন অংশ ফুড়ে গাছ বেরিয়ে যায় এই চিন্তায় রীতিমতো ভয়েই থাকতাম। স্বপ্নও দেখেছি এটা নিয়ে!! আসলেই কতো কি বিশ্বাস মাথায় আসতো ছোটবেলায়।
জী আপু সবাই বলতো পেট ছিড়ে গাছ বের হবে,হা হা হা। ধন্যবাদ।