সুখে থাকতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।
হ্যালো
প্রিয় বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল এবং সুখেই আছি, আলহামদুল্লাহ। গত ছয়দিন যাবৎ আমার পাশের ডেস্কে বসা কলিগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি আছে। দোয়া করি খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসুক। এখানে চিন্তার বিষয় হলো আমার কলিগের জাগায় আমিও থাকতে পারতাম। কিন্তুু সৃষ্টিকর্তা আমাকে সুস্থ রেখেছেন। এর জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করা দরকার। যায়হোক মূল আলোচায় আসি।
বাংলাদেশের রাজধানী হাতিরঝিলের নাম শুনেছেন সবাই। অনেকেই হয়তো ঘুরতে গেছেন,অনেকে আবার যাবেন। খুব সুন্দর একটি জায়গা। অনেক বড় বড় লেক রয়েছে সেখানে। সব সময় ঠান্ডা বাতাস আসে সেই লেক থেকে। সেই লেকের এক পাশেই রয়েছে চার তলা একটি বিশাল বড় বাড়ি। বাড়ির প্রত্যেক তলার বারান্দা গুলো অনেক বড় বড় করে করা হয়েছে। চতুর্থ তলার বারান্দাটা বিশাল বড়। দুই পাশে সুন্দর ফুলের গাছ লাগানো আছে। সেই বারান্দায় বসার জন্য খুব দামি দামি দুইটি চেয়ার রাখা আছে। আমার নিজের ব্যক্তিগত ধারনা সেই চেয়ারে বসে বাড়ির মালিক প্রতিদিন চা কফি পান করে আর লেকের সুন্দর্য উপভোগ করে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে তিন মাস আমি সেই বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করেছিলাম। সেই বাড়িটির সামনে রাস্তার অপর পাশে একটি টং ছিল। টংটির মালিক শাহিন নামের একটি ছেলে। সে রাস্তার পাশে সরকারি জাগায় দোকানটি দিয়েছে। তার দোকান থেকে দশ পনের মিনিটের রাস্তা হবে এমন একটি জাগায় সে তার ফেমিলি সহ টিন সেটের বাড়িতে ভাড়া থাকে। আমি প্রতিদিন সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার সময় তার টং থেকে এক কাপ চা খেয়ে যায় আবার সন্ধায় অফিস থেকে ফিরে এক কাপ চা খেয়ে বাসায় যেতাম। শাহিনের দোকানে চা খাওয়ার সময় আমি সেই চারতলা বড় বারান্দা ওলা বাসাটা পর্যবেক্ষন করতাম। ভাবতাম এই বাড়ির মালিকের মত সুখি মনে হয় পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সন্ধার পরে বা রাতের বেলা এই বারান্দায় বসে চা কফি খেতে পারলে আর লেকের বাতাস গায়ে লাগাতে পারলে জীবনে আর কোন সুখের দরকার হয় না। কিন্তুু কোন দিন ঐ বারান্দা তো দুরের কথা ঐ চার তলা বাড়ির কোথাও কোন মানুষ দেখতাম না।
একদিন শাহিনকে জিঙ্গেস করেছিলাম যে ঐবাড়িতে কোন মানুষ থাকে না কি। সে বললো ঐবাড়ির মালিক একজন বিরাট বড় রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী। তার অনেক টাকা পয়সা। সে এই বাড়িতেই থাকে। আমি বললাম এত বড় বাড়িতে একা থাকে। কোনদিন তো কাউকে ঐ বারান্দায় আসতে দেখি নাই। সে বললো ঐ বাড়িতে আমাদের এক খালা রান্না বান্নার কাজ করে। সে বলছে ঐ বাড়ির মালিক যেমন একজন রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী তার বউও সরকারি দলের নেত্রী। সে তিন বেলা রান্না করে ঠিকই কোনদিন মালিক ও মালিকের বউকে এক সাথে বসে খেতে দেখে নাই। কে কখন আসে,কে কখন যায় কেউ জানে না। বারান্দায় বসে চা কফি খাওয়া তো দুরের কথা ঠিক ভাবে খাবার খাওয়ার সময় পায় না। আপনি এখানে এসেছেন কয়েক মাস হয়ছে,তাই তাকে দেখছেন না। আমি এখানে কয়েক বছর ধরে দোকান চালাই। আমি তাকে মাত্র কয়েকবার গাড়িতে করে যেতে দেখেছি কোনদিন আসতে দেখি নাই। আমার দোকান বারোটা একটা এমনটি দুইটা তিন্টা পর্যন্তা খোলা থাকে।
শাহিন যে জাগায় দোকান দিয়েছে তার দোকানের পিছনে লেকের পাশে অনেক খালি জায়গা রয়েছে। শাহিন সেই খালি জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে। পুইশাক,লালশাক,পালংশাক,কাচাঁ মরিচ,ধনিয়া পাতার চাষ করে। এছাড়াও শিম,করলা চাষও করে থাকে। শাহিন নিজে খাওয়া ছাড়াও কিছু কিছু সবজি বিক্রয় করে। আমি একদিন তার দোকান থেকে টাটকা পুইশাক কিনে এনেছিলাম।
পুইশাক ভাজি দিয়ে গরম ভাত খাওয়ার সময় হঠাৎ করে শাহিনের কথা মনে পড়লো। চিন্তা করলাম হাতিরঝিল লেকের পাশে চার তলা বাড়ির মালিক,ব্যবসায়ী,রানীতিবিদ। টাকা পয়সার অভাব নাই। অথচ তার সংসারে কোন শান্তি নেই। বারান্দায় বসে চা কফি খেয়ে লেকের সুন্দর্য দেখবে দুরের কথা বউয়ের সাথে বসে ভাত খাওয়ার সময় নেই। হয়তো প্রতিদিন বউয়ের চেহেরাও দেখার সুযোগ পায় না। আর বেচারা শাহিন নিজের চাষ করা সবজি দিয়ে বউ বাচ্ছা ছেলে মেয়েকে নিয়ে এক সাথে বসে ভাত খায়। প্রতিদিন সকাল সন্ধায় লেকের পাশের বসে চা কফি খায়। বিকাল বেলা দোকান বন্ধ করে আরমের ঘুম ঘুমায়। কত সুখে শান্তিতে বাস করছে। কোন টেনশেন নেই,বাড়ি করার চিন্তা নেই,টাকা পয়সা জমানোর চিন্তা নেই। চার তলা বাড়ির মালিকের চেয়েও শাহিন অনেক সুখে আছে। সত্যিই সুখে থাকতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া পোস্টটি পড়ে। আসলে ইদানিং টাকা পয়সার পিছনে ছুটতে গিয়ে পরিবারকে সময় দিতে ভুলে যায় আমরা। এই যে দেখুন না চারতলা বাড়ি অথচ স্বামী স্ত্রী কেউ কখনো একসঙ্গে ভাত খায়নি। আর শাহিন মিয়া তার পরিবার নিয়ে আর সুখে শান্তিতে সংসার করছে।
জী আপু টাকার পিছনে দৌড়াতে গিয়ে বউয়ের চেহেরা দেখার সময় নেই। ধন্যবাদ আপু।
খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখলেন।সত্যি কথা বলতে টাকা -পয়সা,আভিজাত্য,বাড়ি-গাড়ি কখনও মনে সুখ বা শান্তি আনেনা।প্রকৃত সুখ আসলে মনের সুখই।টাকা-পয়সার জন্য জীবন নয় বরং জীবনের জন্য টাকা-পয়সার দরকার হয়।
জী আপু সত্যি একটি কথা বলেছেন,টাকা-পয়সার জন্য জীবন নয় বরং জীবনের জন্য টাকা-পয়সা। ধন্যবাদ আপু।
আসলে ভাইয়া টাকা পয়সায় কখনো সুখ দেয় না। আমি ও মনে করতাম বেশি টাকা পয়সা থাকলে হয়তো বেশি সুখী আসলে তা নয়।চার তালার লোকটি তার বউয়ের সাথে ভাত খাওয়ার সময় পায় না অথচ শাহিন তার বউ বাচ্চা নিয়ে অনেক সুখে আছে। হয়তো শাহিনের চার তালা লোকর মত টাকা পয়সা নেই কিন্তু শাহিনের পরিবার সুখে আছে অনেক। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।
জী আপু চমৎকার কমেন্টে করেছেন। শাহিন তার পরিবারের সাথে অনেক সুখি। ধন্যবাদ আপু।
বাহ্যিক দিক দিয়ে আমরা যাদেরকে দেখি যে তারা অনেক সুখে আছে আসলেই কি তাই। আপনার গল্পটি পড়ে এতটুকুনি বুঝতে পারলাম যে বড় বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা রস ক্ষমতা থাকলে আসলে মানুষ সুখী হতে পারে না।। এই যে আপনি বললেন যে ওই বাড়িতে যে খালা রান্না করে সে বলেছে যে কবে দুজন একসাথে বসে খেয়েছে সেটিও তার জানা নেই।। আসলে তারা ব্যস্ত আছে টাকা করি আর ক্ষমতা নিয়ে।।
আসলে সুখ একটি অন্য জিনিস যা গাছ তলায় থাকলেও অনুভব করা যায় যদি ভালোবাসা ভালোলাগার মানুষগুলোর সাথে ভালো সময় পার করা যায়।।
আপনার গল্পতে শিক্ষনীয় অনেক দিক তুলে ধরেছেন ভালো লাগলো পড়ে।।
জী ভাইয়া ঠিক বলেছেন,শাহিনের টাকা কম সুখ বেশি আর বড়লোকদের টাকা বেশি সুখ কম।
অসাধারণ একটি বাস্তবিক গল্প শেয়ার করেছেন বেশ ভালো লেগেছে। আপনি একদম ঠিক বলছেন আসলে বেশি সুখে থাকতে গেলে শান্তি পেতে গেলে এত বেশি টাকা পয়সার দরকার হয় না। বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না একটি সংসার কিংবা পরিবার সুখে থাকতে গেলে। আসলে এমন সুখের কোন দরকার নেই অনেক টাকা আছে কিন্তু এক সাথে মিলেমিশে থাকার কিংবা একসাথে বসে খাওয়ার কোন সময় নেই। বেশ ভালই লিখেছেন অনেক ভালো লেগেছে।
জী আপু সুখ নির্ভর করে মনের মাঝে,টাকার মাঝে নয়। ধন্যবাদ আপু।
আসলেই ঠিকই বলেছেন সুখে থাকতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। টাকা পয়সা কখনো কারো জীবনে সুখ আনতে পারে না। আমি তো মনে করি যাদের বেশি টাকা পয়সা তারা জীবনে একটু বেশি অসুখী। চার তলায় যে লোকটা থাকে সে তার স্ত্রীর সাথে এখনো পর্যন্ত ভাত খাওয়ার সময় পায়নি টাকার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে। অন্যদিকে শাহীন তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বেশ ভালোই সুখে রয়েছে। খুবই সুন্দর একটা টপিক নিয়ে আজকের পোস্টটা লিখেছেন সম্পূর্ণটা পড়ে আমার কাছে অসম্ভব ভালোই লিখেছে।
জী আপু শাহিনের টাকা কম কিন্তুু সুখ বেশি আর চারতলা বাড়ির মালিকের টাকা বেশি কিন্তুু সুখ নেই। ধন্যবাদ আপু।
একটা মানুষের জীবনে টাকা-পয়সা সুখ এনে দেবে বলে এটা আমি মনে করি না। অনেকে মনে করে তার কাছে যদি টাকা থাকে তাহলে সে জীবনে সুখী হতে পারবে। আসলে সে এটা বুঝে না সুখে থাকার জন্য কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না। চার তলায় থাকা লোকটা কখন যে তার স্ত্রীর চেহারা দেখেছে আমি তো তা ভাবছি একসাথে বসে স্ত্রীর সাথে খাবার খেতেও পারে না সময়ের কারণে। আর অন্যদিকে শাহীন তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে খুবই আনন্দে দুপুরের খাবার খায়। তারা শাকসবজি দিয়ে ভাত খেলেও এমনিতেই ভালো থাকে। আর তারা জীবনে কতই না সুখী।
জী ভাইয়া দুনিয়াতে কোনরকম চলার মত টাকা হলেই চলবে। বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রথমে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। দারুন একটি টপিকসকে কেন্দ্র করে আজ আপনি আমাদের মাঝে সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন। যেখানে আপনার সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। আমার খুবই ভালো লেগেছে এই সুন্দর একটা কথা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখি। সংক্ষেপে একটা কথা বলতে চাই 'এই দুনিয়ায় কেউ সুখী নয়' তবে তার মধ্য থেকেই সুখে থাকার চেষ্টা করতে হয়। আর যে সুখগুলো কখনো টাকা পয়সা দিয়ে কেনা যায় না।
জী ভাইয়া ঠিক বলেছেন কেউ পুরোপুরি ভাবে সুখি নয়। সবাই সুখির অভিনয় করে। ধন্যবাদ ভাইয়া।