নদী ও প্রকৃতির মাঝে কিছু সময়।।

হ্যালো বন্ধুরা, আশা করি বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টিময় মুহূর্তে আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন। কিছুদিন আগেও আমরা বৃষ্টির জন্য কত হাহাকার করেছি। অবশেষে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে বৃষ্টি দিয়েছেন। বেশ কয়েকদিন যাবত বৃষ্টি হচ্ছে। তবে একটি ভয়ের কারণ হলো প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু গরম কমছে না। আশা করি ধীরে ধীরে বৃষ্টির সাথে বাতাস বইতে শুরু করলে এক সময় গরম কমে আসবে। যাই হোক আজকে আমি নদী ও প্রকৃতি নিয়ে একটি অনুভূতিমূলক ব্লগ শেয়ার করতে যাচ্ছি।

আমি ঈদের সময় বাড়িতে দীর্ঘ নয় দিন ছুটি কাটিয়েছিলাম। সেই নয় দিনে আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেছি,আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়েছি। কিছু কিছু মুহূর্তের অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। একদিন বিকালবেলা আমি একা একা তিতাস নদীর পাড়ে হাঁটতে গিয়েছিলাম। আসরের নামাজ পড়ে আর বাসার দিকে যায়নি। তিতাস নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে হেঁটে প্রকৃতি ও নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম। আপনারা সবাই জানেন যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী সারা বিশ্বে বিখ্যাত একটি নদী। এই নদীকে নিয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণ বিখ্যাত একটি উপন্যাস রচনা করেছেন। সে উপন্যাসের নাম হলো "তিতাস একটি নদীর নাম"। এ উপন্যাস রচনা করে অদ্বৈত মল্লবর্মণ বিশ্ব বিখ্যাত খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র মাঝি মাল্লাদের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যদিও আমি এখন পর্যন্ত ঐ উপন্যাসটি পড়িনি, তবে আমি ইচ্ছা প্রকাশ করেছি এই উপন্যাসটি অতি তাড়াতাড়ি পড়বো, ইনশাআল্লাহ। যাইহোক আমি নদীর পাড় দিয়ে উত্তর দিকে হাটতে লাগলাম।

যেহেতু এখন বর্ষাকাল চলে এসেছে, আর প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে নদীতেও পানি এসেছে। পানি ছাড়া নদীর সৌন্দর্য বৃথা। নদীতে যখন পানি থাকে, নদীতে নৌকা চলে, জেলেরা মাছ ধরে, এই দৃশ্যগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে। উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন যেহেতু নদীতে পানি এসেছে মাছ ধরার জন্য জেলেরা নৌকা মেরামত করতেছে। যেহেতু হঠাৎ করে নদীতে পানি চলে এসেছে তাই আগে নৌকা মেরামত করার সুযোগ পায়নি, আবার কিছু নৌকা নদীতে অলরেডি নামিয়ে দিয়েছে। নদীতে এখন নতুন পানির সাথে নতুন নতুন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এখন থেকেই বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত জেলেরা নদীতে মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকবে।

নদী ভাঙ্গনরোধে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সে বাঁধের উপর দিয়ে আমি হেটে হেঁটে উত্তর দিকে যাচ্ছিলাম। নদীর পাশে বালু দিয়ে ভরাট করে নতুন নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীর পাড়ে বড় বড় গাছ আছে, সেখানে আছে কিছু দোকানপাট। বর্ষার সময় এই নদীর বাঁধের উপর দিয়ে শত শত মানুষ চলাচল করে। বাতাসে নদীর পানির ছোট ছোট ঢেউ দেখতে খুবই ভালো লাগে। আসলে প্রকৃতি ও নদীর সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। ইট পাথরের শহর ছেড়ে নদীর পারে গেলে মনটা খুবই হালকা হয়ে যায়।

আরেকটু সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একটি যাত্রীবাহী নৌকা খরমপুরে মাজার থেকে বাড়ি ফিরছে। নদীর উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত নৌকা খরমপুর মাজারের উদ্দেশ্যে চলে যাই। সারারাত সেখানে থেকে সকালবেলা বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। এখানে নদীতে যে নৌকাটি দেখলাম সেটির মধ্যে কোন যাত্রী দেখতে পায়নি। আমি জুম করে ফটোগ্রাফিটা করেছি। আরেকটি নৌকা দেখলাম নদীর ঘাটে বাধা আছে। এ নৌকাটি দিয়ে সাধারণত ইট বালু বিভিন্ন মালামাল আনা নেওয়া করা হয়। আমাদের গ্রামের দিকে তেমন কোন নদী বা খাল বিল নেই, যার ফলে আমরা তেমন নৌকা লঞ্চ টলার এগুলি দেখতে পায় না। নৌকা দিয়ে ভ্রমন করা খুবই আনন্দের একটি বিষয়। আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে গেলে অল্প কিছুক্ষণ সময় হলেও নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করি।

অল্প কিছু সামনে গিয়ে একটি নৌকাতে উঠে বসলাম। খুব সুন্দর একটি বাতাস আসতেছে, নৌকাতে বসে আমার কাছে খুবই ভালো লাগতেছে। অল্প বাতাসের সাথে ছোট ছোট ঢেউ এসে নৌকাতে লাগতেছে। সেই ঢেউয়ের তালে তালে নৌকাটি দুল খাচ্ছিল। আমি নৌকাতে উঠে দুইটি ফটোগ্রাফি নিলাম। মন চাইছিল পানিতে নেমে কিছুক্ষণ গোসল করি। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। আমাকে দেখে নদীর পাড়ের মানুষ তাকিয়ে ছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল আমি হয়তো নদী নৌকা এগুলো তে তেমন অভ্যস্ত না। প্রায় পাঁচ সাত মিনিটের মত নৌকাতে বসে চলে আসলাম।

এভাবে হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। দেখতে দেখতে এক সময় সন্ধ্যা নেমে আসলো। পূর্বের সূর্য পশ্চিম আকাশে গিয়ে অস্থ যেতে লাগলো। মনপুরা নামক একটি স্থানে গিয়ে আমি আবার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। মনপুরা নামক জায়গাটা খুবই সুন্দর। এখানে দুই দিক থেকে নদী এসে একত্রিত হয়েছিল। এটা কিন্তু অরিজিনাল মনপুরা না, যেহেতু জায়গাটা একটু সুন্দর তাই এলাকাবাসী জায়গাটার নাম দিয়েছে মনপুরা। ঐদিন বিকালটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল। নদী ও প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমার মনটা ফ্রেশ হয়ে গিয়েছিল।

বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই, আজকে আর কথা বাড়াচ্ছি না। এখান থেকে আজকে বিদায় নিতে হবে। আবার আগামীকাল আপনাদের সাথে নতুন কোন ব্লগ নিয়ে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। তো বন্ধুরা সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সেই কামনা করে আজকের মত এখান থেকেই বিদায় নিলাম।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।