ট্রেনে উঠে একলোক বলতে লাগলো,আমি খুনি।।
যদি বন্ধু হও,হাতটা বাড়াও-
বছর চারেক আগের কথা। ২০১৯ সালের শেষের দিকে আমাদের কলেজের সব স্টুডেন্ট মিলে একটি বিদায় অনুষ্ঠান করেছিল। আমরা তখন অনার্স ফাইনাল পরিক্ষা দিয়ে ফেলেছি তবে রেজাল্ট দেয়নি। জীবিকার তাগিদে কে কোথায় চলে যায় বলা যায় না। তাই একটি স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সবাই একত্রিত হয়েছিলাম। দিন তারিখ আমার সঠিক মনে নেই। আমি ঢাকা থেকে সকাল আটটার সময় মহানগর প্রভাতী ট্রেনে চড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিলাম। দশটা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। কমলাপুর থেকে ৭.৪৫ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে দিলো। পরের স্টেশন বিমান বন্দর গিয়ে ৮.২০ মিনিটে ট্রেন থামলো। সেখান থেকে অনেক যাত্রী উঠেছে আবার বেশ কিছু মানুষ নেমেছে। যাদের অফিস উত্তরা, বিমান বন্দর, বনানী তারা সবাই কমলাপুর থেকে সকাল বেলা এই ট্রেন ধরেই যাতায়ত করে।
আমি অনার্সের চার বছরে কমপক্ষে কয়েকশত বার ট্রেনে যাতায়ত করেছি। এই লাইনে কোন ট্রেন কোথায় কতক্ষন দাড়ায়,কোন জাগায় পাথর মারে,কোন জাগায় মোবাইল ছিনতাই হয় সবই আমার জানা। রাত বিরাতে ট্রেনে আসা যাওয়া করেছি। বিমান বন্দর থেকে সবসময় যাত্রীর চাপ থাকে। ঐদিন আমাদের বগিতে বিমান বন্দর থেকে তেমন যাত্রী উঠে নাই। এসি বগি হওয়ার কারনে যাদের সিট ছিল শুধু তারাই উঠেছে। দাড়ানো কোন যাত্রী ছিল না। ট্রেন যথা সময়ে ছেড়ে দিলো। টঙ্গী স্টেশন অতিক্রম করার পরে মধ্য বয়সি একটি লোক,কাধেঁ একটি ব্যাগ নিয়ে বগিতে এসেই বলতে লাগলো আমি একজন খুনি,আমি আমার বোনকে হত্যা করেছি,আমি একজন মেয়েকে হত্যা করেছি,আমি একজন চিত্র শিল্পীকে হত্যা করেছি,আমি একজন গায়ককে হত্যা করেছি। আমরা সবাই ভেবেছি লোকটি হয়তো পাগল। তাই তার কথায় তেমন কেউ গুরুত্ব দিলাম না।
লোকটি একটি মেয়ের ছবি বের করে বললো,আজ থেকে তিন বছর আগের কথা, সে আমার বোন ছিল। আমি তখন চট্রগ্রামের একটি নামকরা ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসাবে ছিলাম। আমার এই বোনটি হঠাৎ একদিন রাতের বেলা চট্রাগ্রামে আমার বাসায় গিয়ে হাজির। এতটুকু বলার পরে আমি সহ আরো কয়েকজন ঐ ব্যাক্তির দিকে মনযোগ সহাকরে তাকালাম। সে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকতো। ঢাকায় আমাদের নিজেদের বাড়ি আছে। আমার বড় বোন চট্রগ্রামে তার হাসবেন্ডের সাথে থাকে। আমার ছোট বোন বড় বোনের বাসায় না গিয়ে আমার বাসায় গিয়েছিল। আমি তাকে অনেক ভালোবাসতাম,সেও আমাকে অনেক ভালোবাসতো। তার এমন কোন ইচ্ছা নেই যেটা আমি পুরন করি নাই। রাতের বেলা তাকে চট্রগ্রামে আমার বাসার সামনে দেখে আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম। ভাবলাম হয়তো বাবা-মা সহ এসেছে। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম,বাবা-মা কেউ নেই,বোনটা একাই ঢাকা থেকে চট্রগ্রামে এসেছে।
বাসার ভিতরে নিয়ে ফ্রেশ হতে বললাম। খাবার টেবিলে বোনের মাথায় হাত দিয়ে বললাম,হঠাৎ কোন খবর না দিয়ে চট্রগ্রাম আাসার কারন কি..। সে তখন কাদোঁ কাদোঁ অবস্থায় বললো আমি এখন বিয়ে করবো না। এই কথা বলার পরেই আমি সব কিছু বুঝে ফেলেছি। আমার বোন সবে মাত্র কলেজে উঠেছে, এমন সময় বাবার এক পরিচিত বন্ধুর ছেলে ইতালি থেকে দেশে এসেছে। সে বিয়ের জন্য মেয়ে খোঁজতেছে। সেই সূত্র ধরেই বাবার বন্ধুর ছেলে দুইদিন পরে আমার বোনকে দেখতে আসবে। তাই আমার বোন পালিয়ে ঢাকা থেকে চট্রগ্রামে চলে এসেছে। বাবা ততক্ষনে ঢাকার সকল আত্নীয় স্বজনের বাসা ও আমার বোনের বন্ধু বান্ধবের বাসায় খোঁজখবর নিয়ে ফেলেছে। আমার মোবাইলেও ফোন দিয়েছে,তবে আমি বাবার ফোন রিসিপ করতে পারি নাই। এতক্ষনে সব কিছু আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমি খানার টেবিলে বোনকে আর কিছু বললাম না। পরের দিন বাবার কথা মত বড়বোনকে নিয়ে চট্রগ্রামের বড় মাকের্ট থেকে আমার বোনের জন্য অনেক কিছু কেনা কাটা করে রাতের ট্রেনে ঢাকায় আসলাম। সাথে আমার ছোট বোন,বড় বোন,আমার ওয়াইফ সবাই ছিল।
আমার বোনের অনিচ্ছা সত্বেও অনেকটা জোর করেই আমি আমার বোনকে ইতালি ফেরত ছেলের সাথে বিয়ে দিলাম। বিয়ের পর থেকে আমার ভিতরে কেমন যেন একটা অস্থিরতা কাজ করতে লাগলো। আমি আমার বোনকে জোর করে বিয়ে দিয়ে ঠিক করি নাই এমন চিন্তা ভাবনা করতে লাগলাম। দেখতে দেখতে একবছর অতিক্রম হয়ে গেলো। একদিন হঠাৎ করে আমার মোবাইলে কল আসলো, আমার বোন ঢাকা এক হাসপাতলে ভর্তি আছে। খবর শুনা মাত্রই আমি ট্রেনে করে ঢাকার সেই হাসপাতালে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার বোনের ফুটফুটে একটি কণ্যা সন্তান জন্ম হয়েছে। কিন্তুু আমার বোনের অবস্থা খুবই খারাপ। সে বার বার আমাকে দেখতে চাচ্ছে। আমি তার কাছে গেলাম,আমি গিয়ে দেখি তার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে,সে আমার হাতটি ধরে শুধু এতটুকুই বললো ভাইয়া আমি তখন বিয়ে করতে চাইনি,তারপরেও তোমরা আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। একথা বলার পরেই আমার হৃদয়ে বিষাক্ত তীরের মত আঘাত লাগলো। আমি কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে রাখলাম। আমার বোন তখন আমার হাতটা ছেড়ে দিলো। আমি মথা তুলে দেখি আমার বোন আমার সাথে অভিমান করে চির তরে পৃথিবী থেকে চলে গেছে।
আমার বোন খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিল, সে খুব ভালো আর্ট করতে পারতো। তার গানের গলা অনেক সুন্দর ছিল। আমি সবাইকে হত্যা করেছি,আমি একজন খুনি, একথা বলে কাঁদতে কাঁদতে লোকটি নিচে বসে পড়লো। আমি অনুভব করলাম আমার মনের অজান্তে আমার চোখের কোণে এক ফোটা জল চলে এসেছে....😥
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
ট্রেনে উঠে যদি কেউ আমার সামনে বলে যে, "আমি একজন খুনি, আমি আমার বোনকে খুন করেছি, আমি একজন মেয়েকে হত্যা করেছি", তাহলে তো আমি নিজেই ভয় পেয়ে যাব। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত জানা গেল আসল কারণটা কি। জোর করে বিয়ে দেওয়ার কারণে আসলে আমাদের সমাজের অনেক মেয়ে বা ছেলে এরকম শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর পথটাকেই বেছে নেয়। আমার মনে হয় সেই মানুষগুলোর কথা শোনা উচিত আগে, যে তারা আসলে বিয়ে করতে চায় কি না বা তাদের ঠিকঠাক মতামত আছে নাকি। যাই হোক, যারা পোস্টটা পড়বে আশা করি তাদের বেশ ভালো রকমের একটা শিক্ষা হবে।