দাগি চোর ও ছিঁচকে চোরের গল্প
চোরের গল্প
আসলে বড়দের মুখে গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে। যখন ছোট ছিলাম তখন বাপ চাচাদের মুখে দাদা দাদিদের মুখে খালা ফুবুদের মুখে গল্প শুনতে খুব ভালবাসতাম। আর এমন কিছু কিছু গল্প শুনলে হাসি পেতো, আশ্চর্য হতাম, আরো গল্প শোনার প্রতি আগ্রহ জাগত। ঠিক তেমনি হঠাৎ মনে আসলো একটি চোরের গল্প। গতদিন আমি চোর বিষয়ে জেনারেল পোস্ট করেছিলাম, তাই হঠাৎ বেশ কিছু চোরের গল্প মাথায় আসায় তার মধ্যে থেকে একটি আজকে শেয়ার করছি। আব্বুর মুখে শোনা গ্রামের একটি চোরের গল্প।
আগের সময় গ্রামে বেশ চুরি ডাকাতি হত। কিছু কিছু ছিসকে চোর থাকতো পাড়াগাঁয়ের মধ্যে। আবার কিছু কিছু চোর থাকতো যারা চুরি করে বিষয়টা গোপন রাখতে পারতো না যে কোন মুহূর্তে যেকোন ভাবেই বিষয়টা প্রকাশ পেয়ে যেত। আর এই সমস্ত চোরগুলো বাইরে গ্রামের চুরি করতে পারে না, নিজের গ্রামের পাড়ার মধ্যে সুযোগে চুরি করার চেষ্টা করে। ঠিক তেমনি ছিল আমাদের গ্রামের সেই দাগি চোর আর ছিঁচকে চোর। যাদের নামটা ব্যক্ত করলাম না। একদিন দাগি চোর গ্রামের মধ্য থেকে একটা বড় ছাগল চুরি করেছিল। ছাগলটা দেখতে পাড়া গায়ের অন্যান্য ছাগলের তুলনায় অনেক বড়। আর ছাগলটা ছিল গ্রামের ধনী একটি পরিবারের ছাগল, যিনি অতিশয় আদরে লালন পালন করেছিলেন ছাগলটা। ঠিক যেন নিজের সন্তানের মত। ছাগলের মালিকেরা বাইরের গ্রামে মাস্টারির চাকরি করতো। সকালে বাইরের গ্রামে স্কুলে চলে যেতেন, বিকেলে বাড়ি ফিরতেন। একদিন হঠাৎ বাড়িতে এসে লক্ষ্য করে দেখছে ছাগলটা বাড়ি আসছে না। পাড়াগাঁয়ের ছাগলের সাথে রাস্তাঘাটে এমনকি পাট ক্ষেতের দিকে চড়াই করতে যেত। আর সে পাট ক্ষেতের নিকট থেকেই আমাদের গ্রামের চোরটা ছাগলটাকে গোপন করেন।
ছাগলটিকে মাস্টার খুজে খুজে হয়রান। ছাগলটা পাওয়া গেল না। একদিন গেল দুই দিন গেল। ছাগল নিখোঁজ। একদিন হঠাৎ পাটের মধ্যে এক পাড়াগাঁয়ের ছিঁচকে চোর গরুর ঘাস কাটার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয় এবং তিনি পাটের মাথা কেটে বস্তা লোড করে বাড়িতে আনবেন গরুর জন্য। অর্থাৎ বুঝতে পারছেন এই নরমাল চোটটা লোকের ক্ষতি করে, লোকের জমির ক্ষেত কেটে গরু দিয়ে খাওয়ায়। এমন মুহূর্তে পাটের জমি থেকে লক্ষ্য করে দেখেন গ্রামের দাগি চোর ছাগলের চামড়া রক্ত এ জাতীয় জিনিসগুলো মাটি চাপা দিচ্ছে পাটের জমির মধ্যে। ছিঁচকে চোর দূর থেকে নিরবে তার কার্যক্রম দেখ থাকে। তার আর বুঝতে দেরি হইল না। গত দিন যে ছাগলটা হারিয়েছে। সে ছাগলটা এই দাগি চোর ব্যক্তি চুরি করেছেন এবং এই পাটের জমির মধ্যে জবাই করেছেন। তবে কোন কারনে তাদের দুইজনার মধ্যে খারাপ সম্পর্ক ছিল। মাস্টারমশাই যখন ছাগলটা পাড়ায় খোঁজাখুঁজি করছিল পাড়ার সেই ছিঁচকে চোর বিষয়টা জেনেছিল। তাই সুযোগ বুঝে ছিঁচকে চোর মাস্টারের বাড়িতে বিষয়টা জানালো। মাস্টার গ্রামের সেই দাগি চোরকে ধরে আনলো। ছিঁচকে চোরের মুখ থেকে শোনা বিষয়টা মাস্টার গোপন রাখল। মাস্টার দাগি চোরের কাছে প্রশ্ন করল, সে তার ছাগলটা চুরি করেছে কিনা। চোর তো স্বীকার করলো না। কেউ কখনো চুরি করলে সহজে স্বীকার করতে চায়। তিনবার প্রশ্ন করল একবারও সে স্বীকার করলো না, সে আরো সাধু সাজছিল, আনমনা সাজছিলো। সে আরো সুন্দর করে বলছিল আমি তো ঐ দিন বিকেল বেলায় ফুটবল খেলা দেখতে গেছিলাম নিকটের একটি গ্রামের, গ্রামের আরো অনেকজন তার সাথে ছিল খেলা দেখায়। জনপ্রিয় ফুটবল খেলা হচ্ছিল সেখানে। এ কথা সত্য হ্যাঁ সে ফুটবল খেলা দেখতে গেছিল। গ্রামের আরো অনেক মানুষ জবান দিয়েছিল কারণ তারাও দেখেছিল এই ব্যক্তি তাদের সাথে খেলা দেখতে গেছিল এবং খেলা দেখছিল বিকেল মুহূর্তে। কিন্তু মাস্টার কোন কিছুতেই লোকের কথা বিশ্বাস করল না। বিশ্বাস করল নরমাল সেই ছিঁচকে চোরের কথা।
এরপর মাস্টার দাগি চোরকে প্রচন্ড মারতে লাগলো, গ্রামের অন্যান্য মানুষরা মাস্টারের উপর ক্ষিপ্ত হলো। কারণ সবাই বলতে থাকলো সে চোর, তাই বলে কি তাকে সন্দেহ করে মারতে হবে। সে যে তার ছাগলটা চুরি করেছে তার প্রমাণ কি? গ্রামের অনেক মানুষ তো বলছে সে পাশের গ্রামে ফুটবল খেলা দেখতে গেছিল। তখন মাস্টার মুখ খুললেন। বললেন গ্রামে অমুক জনার পাটের জমিতে আমার ছাগলের চামড়া রয়েছে দেখে আসতে পারো সবাই। গত দিন আমি খোঁজ করেছি তাই সে পাটের জমির মধ্যে ভালোভাবে চামড়া পুতে রাখার চেষ্টা করেছেন। এ বলার পর আরো কয়েকটা ঘুসি মারে তাকে। একবার গ্রামের লোকজন তার কাছে জানতে চাই কথাটি সত্য? তখন দাগি চোর বুঝতে পারে কোনভাবে হয়তো জানাজানি হয়ে গেছে তাই সে খুব সহজে এবার স্বীকার করে। সবাই জানতে চাই কিভাবে চুরি করলো, আর কিভাবে জবাই করল এত বড় ছাগল, বিস্তারিত সে যেন খুলে বলে। সে তখন বলে দুপুর টাইমে রাস্তার পাশে কোন লোকজন ছিল না। ছাগলটাকে সে একাই ধরে পাটের জমির মধ্যে টেনে নিয়ে গেছে। তার কাছে সব সময় ছুরি থাকে,সে একাই জবাই করেছিল। এরপর পাটের জমির মধ্য থেকে ছাগলের মাংস একাই নিজের মত করে চামড়া থেকে আলাদা করে। এরপর সে মাংসগুলো নিয়ে যায় কোন এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ ছিল তার কাছে বিক্রয় করে দেয়। দ্রুত কাজ করে মাংস নিয়ে যেতে হয়েছিল তাই চামড়াটা সেখানেই পড়েছিল। ভেবেছিল কেউ পাটের মধ্যে এই চামড়া দেখতে পারবে না। কিন্তু অতিরিক্ত খোঁজাখুঁজির কারণে তার মনের মধ্যে ভয় লাগে তাই গত দিন চামড়াটা মাটির নিচে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিল।
এরপর দাগি চোর হঠাৎ বলে বসলো আমার এই বিষয় আপনার কে জানিয়েছে? মাস্টার তাকে আরও ঘুষি মেরে বলে আমার জানানো লোকের অভাব আছে। এমন কাজ কেন করলি। চোর আর সোজা লাইনে কথা বলে না। এরপর সে খুব সহজেই ছিঁচকে চোর এর নাম উল্লেখ করে বলে, মনে হয় ওই শালা পাটের মাথা কাটতে গেছিল গরুর খাওয়ানোর জন্য, আর আমাকে দেখে ফেলেছে। তখন বিষয়টা আরো ক্লিয়ার হয় এবং লোকজন মাঠের সেই জমির ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। সবাই দেখতে পারে কোথায় ছাগলটাকে দাগি চোর জবাই করেছিল। আর তারি কিছুটা দূরে একটা জমির সবে মাত্র বেড়ে ওঠা পাটের মাঝখানে অনেক মাথা কেটে ফেলেছে। অর্থাৎ গ্রুপে খাওয়ানোর জন্য উঠতে বসে পাঠ গুলো নষ্ট করেছে ছিঁচকে চোর। আর এভাবেই দুই চোর খুব সহজেই নিজেদের ভুলের কারণে ধরা পড়ে গেল জনগণের কাছে।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s-50mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
দাগি চোর ও ছিঁচকে চোর দুজনেই ধরা খেল।আসলে কথায় আছে না পাপে ছাড়া না বাপেরে।ছিঁচকে চোর ভেবেছিল বলে দিলে হয়তো নিজে বেঁচে যাবে কিন্তু সেও যে ফেসে যাবে তা ভাবেনি।ধন্যবাদ আপনাকে অনেক ভালো লেগেছে।
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।