ইন্টারস্টিলার ফিল্মের বিভিন্ন বিষয়....

in Steeming Community2 years ago


image.png
image

ইন্টারস্টিলার মুভিটি বানানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ই হলো আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করা। মুভিটি দেখে আপনি হয়ত কিছু বিষয় বুঝেছেন, আবার অনেক বিষয় ই বুঝেন নি অথবা এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, নিচের বিষয়গুলো আশা করি এই ফিল্মের সাইন্স সম্পর্কে আপনার ধারণা অনেকাংশেই সহজ করে দিবে:

  • Dystopian Future | ডিস্টোপিয়ান ফিউচারঃ-

মুভির প্রথমেই এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবী যখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তখন মানুষ অন্য গ্রহের সন্ধান করে বেঁচে থাকার তাগিদে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মানুষ প্রাণপন চেষ্টায় বেঁচে থাকার যে প্রবনতা দেখা যায় তা হলো ডিস্টোপিয়ান ফিউচার এর নিদর্শন। সাধারনত পৃথিবীতে যখন খড়া , ঝর তুফান , তাপমাত্রা বেড়ে যায় অথবা কোন রোগ বালাই এর কারণে মানব সভ্যতা ধ্বংসের পথে, এমতাবস্থায় সাইন্সের ভাষায় মানুষ একে ডিস্টোপিয়ান ফিউচার বলেই মনে করে। ইন্টারস্টিলার ফিল্মে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছিলো। এইজন্যই মুভিতে নতুন গ্রহের সন্ধানে গিয়েছিলো।

  • Apollo Mission | অ্যাপোলো মিশনঃ-

অ্যাপোলো মিশন সম্পর্কে তো সবাই ই পড়েছি বই এ। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত চাঁদের বুকে পা রাখার যে অভিযান চালানো হয়েছিল বা মিশন হয় , সেটাই অ্যাাপোলো বা এ্যাপোলো মিশন।

  • Apollo Controversy | অ্যাপোলো কন্ট্রোভার্সিঃ-

সর্বপ্রথম চাঁদে পা রাখার ব্যাপারটাকে অনেকেই ভুয়া বলে দাবি করেন। বিভিন্ন দেশে এই ব্যাপারটিকে ভুয়া বলেছেন এবং নাসা র একটি মিথ্যে সাজানো নাটক বলেও দাবি করেছেন। আবার অনেকেই সত্য মনে করেন। রাশিয়া , জার্মানী এবং আমেরিকার মাঝে এই বিবাধটি ছিল। একেই অ্যাপোলো কন্ট্রোভার্সি বলা হয়।


image.png
image

  • Morse Code | মোর্স কোডঃ-

মোর্স কোড হলো যোগাযোগের একটি সাংকেতিক ভাষা। ১৮৩৬ সালে স্যামুয়েল মোর্স নামক আমেরিকান এক বিজ্ঞানী এটি আবিষ্কার করেন। ডট (.), ড্যাশ (-) এবং স্পেস ( ) ইত্যাদি দিয়ে ভাষা তৈরির মাধ্যমে যোগাযোগ কর হয়। যেমন:
. _ = A , _ . . . = B এবং .. = C ইত্যাদি। শব্দ, আলো বা ক্লিক, ইত্যাদির মাধ্যমে মোর্স সংকেত তৈরীর মাধ্যমে মোর্স রিডাররা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে পূর্বে যোগাযোগ করা হতো। এখনো এটি বিভিন্ন যন্ত্রে ব্যবহার করতে দেখা যায়। ইন্টারস্টিলার মুভিতে ঘড়ির কাটার মাধ্যমে যে সংকেত দেওয়া হয়েছিল, সেটাই মোর্স কোড ছিল।

  • Poltergeist | পোলটারগাইষ্টঃ-

এই ব্যাপারটিকে আমরা গ্রামের ভাষায় ছায়াভূত ও বলে থাকি। এটি হচ্ছে একটি ভৌতিক অবয়ব যাকে ইংরেজিতে Noisy Ghost বা Disturbing Object বলা হয়। বস্তুর ফিজিক্যাল ডিস্টার্বেন্স অর্থাৎ বস্তুর অবস্থানগত সমস্যা তৈরি করে। এটি ঘরের এক জায়গার জিনিস পত্র অন্য জায়গায় সরিয়ে দেয়, উল্টেপাল্টে করে রাখে। বাস্তবে যদিও এটির অস্তিত্ব নেই। মুভিতে অভিনেতার মেয়ে ভাবতো তার ঘরে ভূত আছে। এটাই সেই ভূত এর ডেফিনেশন। সেটাই পোল্টারগাইস্ট ছিল। তাছাড়া বস্তুর অবয়ব বা ছায়াকে যখন ভূত প্রেত এর ন্যায় কিছু কল্পনা করা হয়, সেটিও এটিই।


image.png
image

  • Binary Code | বাইনারি কোডঃ-

এই বয়সে কি আপনাদের আর বাইনারি কোড শেখানো লাগবে? আমরা দুনিয়ায় যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ইউজ করি, সবই বাইনারিতে কোডিং করা। বাইনারি কোড হলো ডিজিটাল ডাটা বা সিগন্যাল এনকোডিং এবং ডিকোডিংয়ের একটি পদ্ধতি যা 0 এবং 1 দিয়ে তৈরি করা হয়!

Letter -ASCII - Code Binary

=====================
A - 065 - 01000001
B - 066 - 01000010
C - 067 - 01000011
D - 068 - 01000100

এভাবে A-Z এবং 0-9 পর্যন্ত সবই বাইনারির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় এবং একে অন্যের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে কম্পিউটার ফোন ল্যাপটপ , সব ধরনের ডিভাইস শুধুই ০ এবং ১ ছাড়া অন্য কোন ভাষাই জানেনা। কারণ, আপনাকে ব্যতিতীত কম্পিউটার এবং ফোন, এরা সব মূর্খ।

  • Geographic CoOrdination | জিওগ্রাফিক কো-অরডিনেশনঃ-

এটাকে বলা হয় স্থানাংক। গুগল ম্যাপস ইউজ করার সময় ম্যাপ এর পাশে এগুলো উঠে। যেমন ঢাকা শহরের কোন একটি অবস্থানের কো-অরডিনেটস হলো Latitude: 23.777176, Longitude: 90.399452। মুভিতে অভিনেতা NASA তে যায় এই স্থানাংক পেয়ে। আপনি ফোনে গুগল ম্যাপস ওপেন করলে এগুলো ইজিলি দেখতে পারবেন। আপনি Latitude: 23.777176, Longitude: 90.399452 এটি লিখে গুগলে সার্চ দিন। দেখবেন ঢাকা'র লোকেশন দেখাবে।


image.png
image

  • Black Hole | ব্ল্যাক হোলঃ-

মহাকাশের স্পেস এবং সময়ের কম্বিনেশনে এমন এক গ্রাভিটি বা অবস্থার সৃষ্টি হয় যেখানে কিছু ঢুকলে আর বের হতেই পারেনা। আলো ও বের হতে পারেনা। এতো শক্তিশালী এর আকর্ষন। এটি সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করলে অনেক আর্টিকেল পাবেন। বিস্তারিত অনেক বিষয় রয়েছে ইন্টারনেটে।

  • Project Endurance & Rangers | প্রোজেক্ট এন্ডুরেন্স এবং রেঞ্জার্সঃ-

ফিল্মে প্রোজেক্ট এনডুরেন্স হলো দশ বছর আগে ব্যর্থ হওয়া 'রেঞ্জার্স মিশনের একটি অংশ'। আর ১২ টি মহাকাশযান যেই মূল স্টেশনে যুক্ত থাকবে তার নামও এন্ডুরেন্স দেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রোজেক্ট রেঞ্জার্সে ১২ টি মহাকাশযানে করে ১২ জন মহকাশচারী মনুষ বসবাসযোগ্য গ্রহগুলো খুঁজার জন্যে মহাকাশে যায় যেখান থেকে মিলার, এডমুন্ড এবং ম্যান পৃথিবীতে ডেটা পাঠিয়েছেন! মুভির প্রথম ভাগে আমরা এই বিষয়গুলো দেখতে পেয়েছি।

  • Wormhole | LightSpeed | ওয়ার্মহোল এবং লাইটস্পিডঃ-

আমরা এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় সময়ের স্বল্পতার জন্য শর্টকাট রাস্তা অবলম্বন করি। তেমনি মহাকাশে এক স্থান হতে অন্য স্থান কোটি কোটি মাইল দূরে। সেখানে যদি আলোর গতিতে যাওয়া যায় , তাহলে দ্রুত যাওয়া সম্ভব। এটাই লাইটস্পিড। আলোর গতিতে ভ্রমন। আর ওয়ার্মহোল হলো শর্টকাট রাস্তা। আমি ঘুরে না গিয়ে কোণাকুণি গেলে আগে যেতে পারবো। তেমনি এরকম শর্টকাট মহাকাশে ইউজ করাকেই বলে ওয়ার্মহোল। মুভিতে ওয়ার্মহোল ইউজ করা হয়েছিল সময়ে বাঁচাতে এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে দ্রুত যাওয়ার জন্য। এটা কিছুটা ছায়াপথ এর মত। ফিল্মে ওয়ার্মহোল দিয়ে যাওয়ার পূর্বে কুপার কে ওয়ার্মহোল সম্পর্কে একটি কাগজ দিয়ে খুহ সহজেই বুঝানো হয়। আপনিও ওই সিনটি দেখলেই বুঝে যাবেন।


image.png
image

  • Human Transportation | হিউম্যান ট্রান্সপোর্টেশনঃ-

নতুন গ্রহে পুরনো সভ্যাতার জীবন স্থানান্তর। ফিল্মে প্ল্যান এ এবং প্ল্যান বি নামে দুটি প্ল্যান থাকে তাদের। নিন্মে বিস্তারিত বলা হলো।

  • Plan A = Harness Gravity

ফিল্মের থিওরি অনুসারে যদি গ্রাভিটির ইকুয়েশন বের করা যায় তাহলে সেই ইকুয়েশন কে কাজে লাগিয়ে বড় বড় মহাকাশযান বানিয়ে সেগুলোতে পৃথিবীর মানুষকে পাঠানো গেলে পৃথবীর সবাইকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু, গ্রাভিটির বিপরীতে যেতে হলে প্রয়োজন জটিল সব কোয়ান্টাম ইকুয়েশন। আর তাহলেই গ্রাভিটির বিপরীতে গিয়ে মহাকাশযানে করে মানুষকে পাঠানো যাবে।

  • Plan B = Population Bomb

৫০০০ ফার্টিলাইজড হিউম্যান ভ্রুণ সংরক্ষন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশ হতে। এগুলো নিয়ে গিয়ে অন্য গ্রহে ৩০ বছরের মধ্যে নতুন গ্রহে মানব কলোনি স্থাপিত করবে। মানে নতুন উপযুক্ত কোন গ্রহ পেলে সেখানে এই ভ্রুণ হতে বাচ্চা উৎপাদন করে সেখানে মানব সভ্যতা গড়ে তোলা হবে। ফিল্মের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু এটাই ছিলো।

  • Planet Timeline | প্ল্যানেট টাইমলাইনঃ-

এক গ্রহের ১ ঘন্টা আরেক গ্রহের ৭ বছর বা ১০ বছর বা ১২ বছর। একে টাইমলাইনের হিসেবে ধরা যেতে পারে। তবে একবার কোন গ্রহে সময় অতিবাহিত করলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যাবেনা। মুভিতে মিলারস গ্রহে এই টাইমলাইনেই তারা অতিরিক্ত সময় কাটিয়েছে। আমরা ফিল্মের ডায়লগগুলো একটু খেয়াল করলেই কিন্তু বুঝে যাবো।


image.png
image

  • Diamenssion | ডাইমেনশনঃ-

3D র সাথে আমরা সকলে পরিচিত। থার্ড ডাইমেনশন বলে যাকে। এই অবস্থায় যেকোন বস্তুর ৩টি দিক আমরা আনুভব করি বা দেখি। তা হলো দৈর্ঘ , প্রস্থ এবং উচ্চতা। কিন্তু, এই মুভিতে ৪র্থ এবং ৫ম ডাইমেনশন ও দেখানো হয়েছে যা যথাক্রমে টাইম এবং গ্রাভিটি।

  • ৪র্থ ডাইমেনশন তথা সময়ঃ-

এটি হলো সময় নিয়ে এক খেলা। মহাবিশ্বের বস্তুর উপর দৈর্ঘ , প্রস্থ এবং উচ্চতা র মত যদি সময় ও আরোপ করা যায় , তাহলে তা হবে ৪র্থ ডাইমেনশন। এবার আপনার প্রশ্ন হতে পারে যে সময়ের সাথে বস্তুর সম্পর্ক কি?
ধরুন আপনার কাছে ১০টাকা আছে। সেটা আমায় দিলেন। আমি দিয়ে দিলাম অন্য কাউকে। সে আবার দিয়ে দিল অন্য কাউকে। এবার আপনি জানতে চাচ্ছেন যে এই ১০টাকা কখন কার কার কাছে দেওয়া হয়েছে। যদি জানতে চান কখন কখন দেয়া হয়েছে = সময়। এক্ষেত্রে আপনি সময় কে স্পেস এর থার্ড ডাইমেনশনে আরোপ করলেন। মানে প্রতিটি ডাইমেনশন তার পূর্বের ডাইমেনশন এর সাকসেসর।

Coin Marketplace

STEEM 0.24
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 61243.73
ETH 2974.21
USDT 1.00
SBD 3.69