কোনো কাজই ছোট নয় || জেনারেল রাইটিং

in আমার বাংলা ব্লগlast year

1000025236.jpg

"হ্যালো",

আমার বাংলা ব্লগ বাসি, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়াই এবং আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। সবার সময় ভালো কাটুক এই কামনাই করছি।

সবাইকে আমার নতুন একটি ব্লগে স্বাগতম। আজকের পোস্টটি একটু অন্যরকম হতে যাচ্ছে।আজকে আমি বেশ কিছু কথা শেয়ার করব। সেটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিংবা অন্যেকে দেখে জানা আরকি।আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে সবাই সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে চাই। পৃথিবীতে বাঁচতে হলে খাদ্যের প্রয়োজন আর খাদ্য যোগান দিতে কর্মের দরকার। কিন্তু অনেক সময় আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী এই কর্ম আমরা পাই হয়তো আবার পাই না। তাই তো পেটের যোগান দিতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। সেটা হোক ছোট বা বড়।

ছোট্ট একটা উদাহরণঃ

বিয়ের পরে আমাকে শহরের বাসায় আনা হয়। আমাদের গ্রামের বাড়ি আছে তবে সেখানে খুব একটা আমার হাসবেন্ডরা যান না। যেহেতু নতুন বিয়ে হয়েছিল তাই মাঝেমধ্যে এই গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হতো। আমার শ্বশুরের বড় একটি গরুর খামার আছে।একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমার শ্বশুর আমাকে সাথে নিয়ে গরুর খামার টি ঘুরে দেখাচ্ছিলেন।গরুর খামারের মধ্যে দেখলাম একটা পাশে অনেকগুলো গোবর জড়ো করা। তখন আমি কৌতুহল বসত জিজ্ঞেস করলাম যে এগুলো বাহিরে না ফেলে এভাবে কেন রাখা হয়েছে। বাবা তখন বললেন একজন মহিলা আসবে যিনি এগুলোকে জ্বালানি বানিয়ে আমাদের অর্ধেক দিবে এবং সে নিজে অর্ধেক নিবে।গোবর দিয়ে তৈরি এই জ্বালানি গুলোকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ঘুটা বলা হয়। যাইহোক কখনো যেহেতু দেখিনি তাই খুব ইচ্ছে হলো যে এই পদ্ধতি টা আমি দেখব।

একটু বেলা হতেই দেখলাম একজন হিন্দু মহিলা আমাদের খামারে আসলেন। আমার শ্বশুরের গ্রামের বাড়িতে বেশিরভাগ মানুষের গরিব তাই সেখানে কাজের লোক পেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। যাইহোক উনি এসে গোবরগুলো বাহিরে নিয়ে গিয়ে দুহাতে মেখে মেখে এই ঘুটা গুলো তৈরি করছিলেন। সত্যি কথা বলতে আমার তখন খুবই গা ঘিনঘিন করছিল ওনার এই গোবর মাখানো দেখে। তখন আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম আচ্ছা এগুলো করার কি দরকার। আপনি তো অন্য কোন কাজও করতে পারেন। তখন উনি করুন কণ্ঠে বললেন ওনার স্বামী কোন কাজই করতে চান না তাই তাকেই তার সংসার টা চালাতে হয়।এই ঘুটা বানিয়ে দিলে অর্ধেক মালিকের এবং অর্ধেক সে নিয়ে গিয়ে শুকিয়ে বিক্রি করে যে টাকা পায় তাই দিয়ে তার সংসার চলে।

আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম মানুষ দুটো টাকা রোজগার করার জন্য পেটের ভাত যোগানোর জন্য কত কষ্টই না করে। তখন কোন কাজই তার কাছে ছোট মনে হয় না।এই যেমন উনার গোবর মাখানো দেখে আমার গা ঘিনঘিন করছিল কিন্তু উনি খুব স্বাভাবিকভাবেই তার কাজটি করছিলেন। আমার যেমন গোবর দেখে খারাপ লাগছিল ওনারও কিন্তু খারাপ লাগে কিন্তু উনার করার কিছু নেই। এটাই তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়।

সত্যি কথা বলতে ওনার কথাগুলো শোনার পর উনার প্রতি সম্মান যেন আমার দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল। তখন আমি ওনার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম এবং ওনার সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এরপর থেকে আমি যখনই আমার গ্রামের বাড়িতে যাই তখনই ওনার সঙ্গে দেখা হলে কিছু টাকা ওনাকে দেই। উনি খুব খুশি হন।আর তখন উনার হাসি মুখটা দেখতে খুবই ভালো লাগে। আমাদের উচিৎ কোন কাজকেই ছোট করে না দেখা। প্রত্যেকের কাছে প্রত্যেকের কাজ আলাদা আলাদা ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয়। কেউ বড় বড় চাকরি করে বড় বাড়িতে থেকে জীবন কাটাচ্ছে আবার কেউ সামান্য কটা ঘুটা তৈরি করে তার সংসার চালাচ্ছে। একেই বলে জীবন যেখানে যেমন।

যাইহোক বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। ততক্ষণে সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

1000006402.png

1000006403.gif

1000006401.gif

Sort:  
 last year 

আসলেই তাই কোন কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়।মানুষ আসলে অভ্যাসের দাস তাই আপনার আমার যা দেখে গা ঘিনঘিন করে তা ওনাদের কাছে কোন ব্যাপার না হাসি মুখে করতে পারে।আসলেই বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদেরকে একেক রকম ভাবে জিবন সংগ্রাম করতে হয়।তবুও মানুষ আশা খোঁজে ভালো থাকবে বলে।

 last year 

ঠিক বলেছেন বৌদি বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের কাজে সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। সেটা হোক ছোট কাজ কিংবা বড় কাজ। মানুষ একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্য কত কিছুই না করে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আসলে প্রত্যেকটা মানুষ কোন না কোন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে এবং নিজেদের সংসার চালাচ্ছে। আমাদের কারোরই উচিত নয় কোন কাজকে ছোট করে দেখা। এই কাজটা ওই মহিলাটির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই ওনাকে এটি করতেই হবে। না হলে উনি তো টাকা রোজগার করতে পারবে না এবং কি নিজের ফ্যামিলি চালাতে পারবেনা। অনেক সুন্দর একটা পোস্ট লিখেছেন আপনি, পড়ে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।

 last year 

ধন্যবাদ ভাইয়া গঠনমূলক একটি মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আমি মনে করিএই দুনিয়াতে কোন কাজ ছোট নয়। যে যেভাবে করেন সেটাকে সম্মান জানানো উচিত। কারণ ওর কাজটি দিয়ে পরিবারের খরচ চালাতে সক্ষম। তাহলে ঐ কাজটি মহিলার কাছে অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেকে আছেন রাস্তা থেকে পলিথি কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করে খাই। অনেকে আছেন ভিক্ষা করে সংসার চালাই। আমি মনে করি এর চেয়েও মহিলার কাজটি অনেক বেশি উত্তম ছিল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করা যায়।

 last year 

আমি যখন ওনার কাজগুলো দেখছিলাম তখন মনে মনে এই কথাগুলো ভাবছিলাম। যে আসলে তার সংসার চালানোর জন্য কত কষ্টের কাজ করতে হচ্ছে। যা আমার আপনার দ্বারা সম্ভব না।কিন্তু উনি হাসিমুখে সেই কাজগুলো করছেন। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপু আমি কিন্তু আপনার কথার সাথে পুরোপুরি ভাবে একমত। প্রত্যেকটা মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে খেয়ে থাকে। আর কোন কাজ ছোট করে দেখা একেবারেই উচিত না আমাদের কারো জন্য। এই কাজটা কিন্তু এখন ওই ভদ্র মহিলাটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো তিনি হাসিমুখে এই বিষয়টা মেনে নিয়ে কাজটি করছে। আসলে আমাদের এক একজনের জীবন এক এক রকম। তাইতো একজনকে এক এক রকম ভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।

 last year 

জ্বি আপু আমাদের এক একজনের জীবন-জীবিকা এক এক রকম। তাই হয়তো যে কাজটা আমার জন্য কষ্টের সেটা উনি খুব হাসি মুখেই করছেন। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আমাদের বাংলাদেশে নিম্নমানের কাজকে খারাপ চোখে দেখে বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু অন্যান্য দেশের মানুষ কোনো কাজ ছোট করে দেখে না। তাই তারা দিনদিন আরো উন্নত হচ্ছে এবং আমাদের অবনতি হচ্ছে। যেকোনো কাজকে সম্মানের চোখে দেখা উচিত। যাইহোক এককথায় চমৎকার লিখেছেন আপু। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

আমরা বাঙালিরা কারো ভালো দেখতে পারি না আবার কেউ যদি একটু ছোট কাজ করে তাদেরকে কথা শোনাতেও ছাড়ি না। যাইহোক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

আপু আপনার আজকের লেখাটি পড়ে সত্যিই ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি । সত্যি বলতে সমাজে কোন কাজই ছোট নয় । সব কাজই মর্যাদার চোখে দেখা উচিত । কেননা কাজের দ্বারাই মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে সেটি ছোট হোক আর বড় হোক । যে যেভাবে যেটি করতে পারছে সেটি করছে এটিই বড় কথা। বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু পোস্ট টি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58482.75
ETH 2615.94
USDT 1.00
SBD 2.42