রাজিয়ার জীবন কাহিনী || ২য় এবং শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

sad-g633ec05b0_1920.jpg
সোর্স

"হ্যালো",

আমার বাংলা ব্লগ বাসি, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।আমিও আপনাদের দোয়াই এবং আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। সবার সময় ভালো কাটুক এই কামনাই করছি।

আমি আজকে রাজিয়ার জীবন কাহিনীর ২য় এবং শেষ পর্ব শেয়ার করছি।

বেশ কয়েক মাস পর তার স্বামী জেল থেকে ছাড়া পায়। এবং সে রাজিয়াকে নিতে আসে বলে সে ভালো হয়ে যাবে। এই বলে তাকে আবারও তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যায়। এভাবে রোজগার অশান্তি এবং মারপিট এভাবেই চলতে চলতে বেশ কয়েকটি বছর কেটে যায়। এরমধ্যে রাজিয়া একটা ছেলে সন্তানের মা ও হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় তার জীবনে আবারও নতুন ঝড়।

রোজকার অশান্তির মধ্য দিয়ে তার সংসার জীবন চলছিল। এরই মধ্যে রাজিয়ার ছেলের বয়স চার বছর হয়ে গেছে। হঠাৎ রাজিয়া জানতে পারে সে আবারো গর্ভবতী। তখন সে কিছুতেই বাচ্চাটা রাখতে চায় না। আমার খুব ভালোভাবে মনে আছে একবারও বাবার বাড়িতে মানে আমাদের গ্রামে এসেছিল গর্ভবতী অবস্থায়। এবং সে তখন বাচ্চা নষ্ট করার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মারে কে। হয়তো তার ভাগ্যে এটাই ছিলো।এভাবেই তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয় এবং দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হয়। সে যখন দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য বাবার বাড়িতে এসেছে এবং জন্ম দেওয়ার পরও কিছুদিন থেকে ছিল এরই মধ্যে তার স্বামী আবার দ্বিতীয় বিয়ে করে।

তখন রাজিয়ার পরিবারও বুঝতে পারে যে আসলে ছেলেটা কখনোই ভালো ছিল না। আমাদের আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। এবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে এখানে আর মেয়েকে পাঠানোর কোন দরকার নেই আর পারিবারিকভাবে বসে বিষয়টা শেষ করা দরকার। যাইহোক তখন দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা বলে রাজিয়াকে সেখান থেকে ডিভোর্স নিয়ে চলে আসে। এভাবে রাজিয়া দুই সন্তান নিয়ে তার বাবার বাড়িতে দিন কাটছিল। আমাদের সমাজে ডিভোর্সি মেয়েদেরকে কি চোখে দেখা হয় এটা কিন্তু আমাদের কারোই অজানা নয়। তাই রাজিয়াকেও প্রতিনিয়ত তার পরিবার থেকে শুরু করে আর প্রতিবেশী সমাজের কাছ থেকে সেই কথাগুলো শুনেই দিন কাঁটাতে হতো।

আস্তে আস্তে ছেলেমেয়েরা বড় হতে থাকে। খরচ বাড়তে থাকে।এর মধ্যে রাজিয়ার ভাইয়েরাও বিয়ে করে আলাদা আলাদা সংসার করছে তারা কেউ রাজিয়া ছেলেমেয়ে, রাজিয়া এবং তার বাবা মাকে তেমন দেখাশোনা করেনা।তখন রাজিয়া মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় যে তাকেই কিছু একটা করতে হবে। আর কিই বা করবে তার তো তেমন পড়াশোনা নাই ।তখন সে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ খোঁজার চেষ্টা করে। সে একটা কাজও পেয়ে যায়। এখন সে এক ক্লিনিকে কাজ করে তার সন্তানদের ভরণপোষণ এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা পাশাপাশি তার বাবা-মাকেও দেখাশোনা করতে হচ্ছে। তার দিন কেটে যাচ্ছে সে জানে না তার ভবিষ্যৎ কি।আর ভবিষ্যতে কিই বা অপেক্ষা করছে তার জন্য।

আমরা এই কাহিনী থেকে একটা জিনিসই শিক্ষা নিতে পারি সেটা হচ্ছে আমাদের অবশ্যই বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে এবং বিয়ের ব্যাপারটা অন্তত ছেলে মেয়েদের সম্মতি নিয়ে করা উচিত। কেননা এটা সারা জীবনের একটা প্রশ্ন।রাজিয়ার মা যদি ছোটবেলায় এই ঘটনাটা না ঘটাত তাহলে হয়তো রাজিয়ার জীবনটা আজকে অনেক সুন্দর হতে পারতো। বা প্রথমবার যখন তার স্বামী জেল হাজতে গিয়েছিল তখন যদি সেখান থেকে রাজিয়াকে ফেরত আনত তাও হয়তো রাজিয়ার জীবনটা অনেকটাই ভালো হতো।

আসলে একটা জীবনি কখনো দু পাতা লিখে শেষ করা যায় না। তবুও শেষ করতে হচ্ছে।ফিরে আসব আবারো নতুন কোন জীবন কাহিনী কিংবা অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

24QmLBi2hi5sxeF4rfhXesN4Z3rEWTikWPFADtR6zyMx1EmYRYsQvFLAH72WL1voB5Qv1bAb8AZSXixgFjhiMWAnz2UA9cMfriUVJ7ctL7...nSLVWX5o43xBXmLDdwhihbXiBhaPqShV2SFRHcKYd8CXKMs5RdPFoVngFzUPZy735MKSBrn82U6bCmY9F8MzT3ucNgZ2hGFcSdZg7fSmWifdcnibPP7TB2AbsL.png

E8fRY4dhuR5sTLZsFHQGy2Dnv1izoNa9kDDwNf6SWjwUiExjDZXA9b63NAwrwLXd8Ct7t1ZtdVLLXWaLZw5onyjbiCRPr6s2tz1kz75iSS...xFU9EXxXdabqMHBsc9mJ817a2SuVogJxMBkzsHNyMz11NQwmvwuEWHWA5F82zgRf2rtHDE85bAj4sRhY9U82BY2NqNXEu8caQc9HGJHwF7D2FoRAiQKCNDCinS.png

Xaey6XUsuMsULyX7cP1nbTWJzYmPAgo7FUiwufHRk6Jy2gyG1Db2Jf3F8zDR4enXrGJXJVY8zjUpsz8r7ybb4LRV5UxeCYiYK1QPL3cJGf...AYxpdPLKDUL7U8qu4Pikt2pYsm5FijpvHVGxLifJJPzqmZNKMNA2z45a46JW8rG61eode8Q5PXFhQEQKZCgnKP8ynSwFBAExhqvJUM7KDLc3AeqHmeUQyR5QSZ.gif

Sort:  
Loading...
 2 years ago 

রাজিয়ার জীবন কাহিনী পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো আপু। আসলে পরিবারের যত সদস্য পারবে পরিবারের খরচ ততই বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। এখনকার সমাজে প্রচলিত রয়েছে এটাই ছেলেকে বিয়ে দিলে আলাদা হয়ে যাবে এবং বাবা মাকে দেখবে না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সব ছেলেরাই আবার এরকম না। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 2 years ago 

রাজিয়ার জীবনী কাহিনী পড়ে সত্যি ভীষণ খারাপ লেগেছে। আসলেই রাজিয়ার মা যদি তাকে ছোটবেলায় বিয়ে না দিত তাহলে তার জীবনটা অনেক সুন্দর হতো। আসলে ঠিকই বলেছেন আমাদের সবার উচিত ছেলেমেয়েদের সম্মতি নিয়ে তাদের বিয়ে দেওয়া। আর ভালো বিবাহ না দিলে অনেক ভালো হয় একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয় না। রাজিয়ার মা তাকে অনেক অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিল এবং তার জীবনটা এভাবেই নষ্ট করে দেয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজিয়া কাজ করে তার মাকে খাওয়াচ্ছে। এবং কি তার ছেলেমেয়ে দুটির বরন পোষণ এভাবেই চলছে। যাইহোক ভালোই লিখেছেন সম্পূর্ণটা ভালো লাগলো। ‌ ‌

 2 years ago 

জ্বী ভাইয়া আমাদের বিয়ের ব্যাপারে অন্তত ছেলে-মেয়েদের সম্মতি নিয়ে বিয়ে দেওয়া উচিত। এতে করে তাদের সংসার জীবনটা ভালো হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আপু রাজিয়ার জীবন কাহিনী খুবই বেদনাদায়ক। আর এরকম জীবন কাহিনীর কথা শুনলে খুবই খারাপ লাগে। রাজিয়ার মা ছোটবেলায় রাজিয়ার বিয়ে দিয়ে তার জীবনটি নষ্ট করে ফেলল। দুই দুটি সন্তান অবস্থায় রাজিয়ার স্বামী রাজিয়াকে তালাক দিয়ে দিল। অন্যদিকে আবার রাজিয়ার ভাইয়েরা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে, এমতাবস্থায় রাজিয়ার জীবন যাপন খুবই কষ্টসাধ্য হয়েছে। আর এরকম কষ্টসাধ্য জীবন যেন কারোরই না আসে এই কামনা করছি। আপু, রাজিয়ার জীবন কাহিনী আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

জ্বি ভাইয়া এমন কষ্টের মাঝেই রাজিয়ার জীবন চলছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আপনি ঠিক বলছেন আপু আমাদের সমাজটাই এরকম যখন তারা বুঝে অনেক দেরি হয়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় যদি রাজিয়াকে ফিরে আনা হতো তাহলে আজকে এই পরিণতি হত না। তখন ছেলে মেয়েরাও হতো না সুন্দর একজন ছেলে দেখে তাকে আবার বিয়ে দেওয়া হতো। অথবা লেখ জীবন করিয়ে সুন্দর জীবনটা গড়ে তুলতে পারতো। যতই বলি না কেন আমাদের সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ রোধ হবে না আপু। সুন্দর গল্প শেয়ার করলেন পড়তে অনেক ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আমাদের সমাজে লোকজন এগুলো কে ভাগ্য মনে করে মেনে নেয় মেনে নিতে বলে।তাই রাজিয়ার মতো হাজারো মেয়ের জীবনে এমন কষ্ট নেমে আসে।ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

রাজিয়ার জীবন কাহিনী প্রথম পর্ব পড়েছিলাম প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব পড়ে সত্যি ভীষণ খারাপ লেগেছে আমার কাছে। আসলে অল্প বয়সে এভাবে একটা মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিয়ে তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। তার মা শেষ পর্যন্ত তাকে তার পরিবার আর স্বামীর বাড়িতে যেতে দেয়নি এটা কিন্তু ভালোই করেছে। আসলে এরকম বাস্তবিক ঘটনাগুলো অনেক ঘটে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা কাজ করে তার মাকে এবং সন্তানদেরকে খাওয়াচ্ছে।

 2 years ago 

জ্বি আপু তার বাবা-মা শেষ পর্যন্ত তাকে সেই পরিবারে যেতে দেয়নি কিন্তু না যেতে দিয়েও কোন ভালো কাজ তারা করেনি।কারণ ততদিনে তার জীবন টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং মাঝখান থেকে দুটো সন্তানের জীবন নষ্ট।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.32
JST 0.033
BTC 108415.08
ETH 3847.10
USDT 1.00
SBD 0.61