আমার চোখে দেখা "ভালোবাসা"
টিভিতে বসে পাকিস্তান এবং অস্ট্রোলিয়া টেস্ট ম্যাচ খেলা দেখতে ছিলাম,হঠাৎ ছবিটা চোখে পড়লো। ছবিটা দেখে একটা ঘটনা মনে পড়লো। ঘটনাটা ঘটার সাথে সাথেই ভেবেছিলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। কিন্তু ব্যাস্ততার মারপ্যাঁচে আর সময় হয়ে উঠেনি।
প্রচন্ড গরমের দিন, সূর্য তখন নব্বই ডিগ্রি কোনে তাপ দিচ্ছে। গরমের তীব্রতা এতোটাই প্রখর ছিলো যে, আমি বগুড়া শহরের সাতমাথায় রাস্তায় একা একা হেঁটে বেড়াচ্ছি আর মনে মনে ফিল হচ্ছে আমি যেন বগুড়া শহরে নয় আরবের সাহারা মরুভূমিতে হেঁটে বেড়াচ্ছি। পাঞ্জাবীটা ঘামে ভিজে পিঠের সাথে লেগে গেছে। চেহারায় কেমন একটা তেল চিটচিটে ভাব যেন পাঁচ মি.লি. সরিষার তেলের সাথে পাঁচ মি.লি. গ্লিসারিন মিশিয়ে মুখে মেখেছি।
রাস্তার পাশেই দেখলাম এক লোক ভ্যানে করে শরবত বিক্রি করছে। ভাবলাম, এই গরমে এক গ্লাস শরবত খেলে মন্দ হয়না। যেই ভাবা সেই কাজ, গেলাম ভ্যানের সামনে। এখানে আমি আর শরবতওয়ালা ছাড়াও একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার দুটো চোখ ছাড়া পুরো শরীরই আবৃত। ছেলেটা টি-শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পড়েছে। দুজনেই খুব সম্ভবত ইন্টার লেভেলের স্টুডেন্ট। প্রথমে ভেবেছিলাম এরা হয়তো ভাই-বোন। কিন্তু এরা কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে প্রমান করলো আমার ধারণা ভুল।
শরবত ওয়ালা আমার দিকে এক গ্লাস শরবত বাড়িয়ে দিলো। আর ওদের দিকেও এক গ্লাস। তবে একটা পার্থক্য ছিলো, সেটা হলো আমারটাতে একটা পাইপ আর ওদেরটাতে দুইটা পাইপ।
আমি পুরো গ্লাস এক টানেই খতম করে দিলাম।কিন্তু ওরা কে আগে চুমুক দিবে এটা নিয়েই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ছেলেটা বলছে তুমি আগে দাও। আবার মেয়েটা বলছে তুমি আগে দাও। আমি শরবতওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম,
"মামা, গ্লাস কতো করে?"
"বিশ ট্যাহা মামা।"
আমি ভাবলাম ওরা হয়তো টাকার অভাবে এক গ্লাস দুজনে ভাগ করে খাচ্ছে। আমি বললাম,
"মামা, ওদেরকে আরেক গ্লাস দেন।"
ছেলেটা বললো, "কোনো প্রয়োজন নেই।"
আমি বললাম, "তোমরা দুজনে এক গ্লাস খেয়ে তোমাদের তৃষ্ণা মিটবেনা। আমিই বিল দেব আরেক গ্লাস নেও। টাকা পয়সার সমস্যা থাকতেই পারে। আমি তো তোমাদের বড় ভাইয়ের মতো। আরেক গ্লাস নাও।"
ছেলেটা বললো, আরে ভাই টাকা পয়সার সমস্যা হবে কেন! আপনার বিল ও আমি দেব। আপনি এবার আসতে পারেন।
ছোট ভাই যেহেতু বিল দেবে বলেছে, আমি শরবতওয়ালাকে বললাম, "মামা আমারটার দাম ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েন।"এই বলেই হাঁটা শুরু করলাম। ক্ষানিকটা দূরে গিয়ে ভাবলাম, কে আগে চুমুক দেয় দেখি।
পিছনে ফিরতেই দেখলাম, মেয়েটা আগে চুমুক দিলো, তারপর ছেলেটা। আমি যেটা ত্রিশ সেকেন্ডে শেষ করেছি। ওরা দুজন চুমুক দিয়েও পাঁচ মিনিটে সেটা শেষ করতে পারলোনা। আমার তো প্রথম দিকে মনে হচ্ছিলো, ওদের শরবত কমার বদলে যেন বেড়ে যাচ্ছে। একটু পর গ্লাসের সীমা অতিক্রম করে যেন উপচে পড়বে। শরবতের বন্যায় প্লাবিত হবে পুরো শহর।
কামতৃষ্ণা
~ হামিদুর রহমান হিমু
অনেক সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন ভাই। কমিউনিটিতে চলমান কন্টেস্টগুলোতে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করুন।
ভাই আমি তো নতুন steem এ, কোথায় কিভাবে কনটেস্ট গুলোতে অংশগ্রহন করবো একটু জানিয়ে দিলে ভালো হয়।