ছোটগল্পঃ জমিদার বাড়ি
15-10-2023
৩০ আশ্বিন , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
আজ দশ বছর পর দেশে ফিরছে আবির। সেই ভার্সিটি শেষ কর উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছিল সূদূর কানাডায়। পড়াশোনা শেষ হয়েছে অনেকদিন হলো। কিন্তু সেখানে ভালো একটি জবও পেয়েছিল। মা বাবার জন্য কিছু তো নিয়ে আনতে হবে!
রহমান চাচাকে তার মা রাহেলা বেগম আগেই এয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দেয়। আবিরের এয়ারপোর্ট আসতে আসতে রাত সাড়ে বারোটা বেজে যেতে পারে। রহমান চাচা আবিরকে ভালো করেই চিনে। আগেরবার যখন এয়ারপোর্ট এ এসেছিল আবির তখন রহমান চাচার প্রাইভেট কার দিয়েই এসেছিল। পারিবারিক যত কাজ হয় সব কাজেই রহমান চাচাকে ডাকা হয়। আবিরকে প্রথমবার যখন এয়ারপোর্ট এ দিতে আসছিল তখন আবিরের মা রাহেলা বেগমও এসেছিল। আবিরের বাবা মারা গেছে সেই ছোটবেলায়। তবে বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেয়নি মা। অনেক কষ্টে আবিরকে মানুষ করেছে। আবিরও তার মায়ের বাধ্যগত ছেলে। মায়ের অবাধ কখনো হয়নি।
রহমান চাচার বয়স এখন পঞ্চাশের বেশি। তবে চাচা এখনও ড্রাইভিং করায় পাকাপোক্ত! চোখের পাওয়ার কিছুটা কমে গিয়েছে। রহমান চাচা চশমাও ব্যবহার করে এখন। রহমান চাচা রাত এগারোটার মধ্যেই এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছে যায়। আবিরের মা রহমান চাচাকে বলে দিয়েছিল এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকতে, আবির বের হয়েই ফোন দিবে।
আবির এয়ারপোর্ট থেকে বের হয় রাত সাড়ো বারোটার দিকে। টার্মিনালের এক কোণায় রহমান চাচা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবির বের হয়ে রহমান চাচাকে ফোন দেয়! আবিরের কানে ফোন, হাত লাগেজ, পরনে ফর্মাল ড্রেস! রহমান চাচা দূর থেকেই চিনে যায় আবিরকে। সেই দশবছর আগে শেষ আবিরকে দেখেছিল।
-আসসালামুআলাইকুম চাচা! কেমন আছেন আপনি?
-আগের মতো ভালো নাইরে বাপ, শরীরটাও ভালো ঠেকছে না। মনের জোরে এখনও ড্রাইভিং টা করে যাচ্ছি!
- আচ্ছা, চাচা আপনার সব কথা শুনবো গাড়িতে বসে বসে। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে!
এই বলেই আবির গাড়ির পিছনে লাগেজটা রেখে দেয়। চাচার বয়স হয়েছে এজন্য চাচাকে আর দেয়নি। লাগজটা রেখেই গাড়িতে উঠে বসে আবির। রহমান চাচা বিসমিল্লাহ বলেই গাড়িটা স্টার্ট দেয়। গাড়িতে বসে আবির তার মাকে ফোন দিয়ে বলে দেয় সে রহমান চাচার সাথে আসছে। ঘড়িতে তখন রাত একটা বাজে।
তারপর চাচা আপনার অবস্থা বলেন! রহমান চাচা আবার চুপ থাকার মানুষ না। সেবারও সারা জার্নিতে রহমান চাচা পুরোটা সময় আড্ডায় মাতিয়ে রেখেছিল। চাচার বয়স হলেও আগের মতোই আছে। রসিকতায় ভরপুর একজন মানুষ। চাচার সাথে কথা বললেও কেউ কখনো বিরক্ত হবে না। চাচার রসিকতার কথা শুনে আবির কিছুক্ষণ অট্রহাসিতে মেতে থাকে।
হঠাৎ করেই খেয়াল করে আবির, রহমান চাচা মজার মজার কথা বলছে না। মনে হচ্ছে রাস্তার মাঝে গাড়িটা থামানো। কোনো সাড়াশব্দ নেই। চারপাশে শুধু ঘনজঙ্গল! এমন জায়গায় গাড়িে এসে থামল। আবির রহমান চাচাকে ডাকে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না। গাড়ির গ্লাসটা নামাতেই শীতল বাতাস এসে যেন আবিরের গায়ে লাগলো। আবিরের গায়ের লোম কাটাঁ দিয়ে উঠল। কিছুটা ভয় অনুভব করতে থাকে আবির।
রহমান চাচার আবার মাঝ পথে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার অভ্যাস আছে। আবির ভাবছে তাই হয়ত চাচা একটু বাহিরে গিয়েছে। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল চাচার কোন খবর নেই। আবির কিছুটা ভয় নিয়ে গাড়ি থেকে নামে। ফোনের টর্চলাইট অন করে চাচাকে খুঁজতে থাকে আবির! এমন থমথমে পরিবেশের মাঝে কখনো পরেনি আবির! 'চাচা, কোথায় আপনি? ' ফোনের টর্চ অন করে বলতে বলতে খুঁজতে থাকে আবির।
হঠাৎ করে আবিরের কাধেঁ হাত। শীতল অনুভূতি মনে হলো আবিরের কাছে। পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় রহমান চাচা।
' আমি একটু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেছিলাম বাজান। গাড়ির ইঞ্জিনে সমস্যা হয়েছে, এই রাতে আশেপাশে কোনো গাড়ির গ্যরেজও নেই। আজকের রাতটা গাড়ির ভিতরেই কাটানো লাগবো। বাজান, সামনে একটা জমিদার বাড়ি দেখলাম। সে বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে। আজকের রাতটা বিয়ে বাড়িতে কাটানো যাবে! '
আবির রহমান চাচার পিছন পিছন হাটঁতে থাকে। জঙ্গলের ভিতরে কিছুদূর যেতেই আবিরের চোখে পরে অনেক আগের পুরনো একটি বাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে জমিদার বাড়ি। বাড়িটা আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে! বড় পরিসরে বিয়ের আয়োজন। এতোবড় বিয়ের আয়োজন আগে কখনো দেখেনি আবির! বাড়ির গেটের সামনে প্রবেশ করতেই কয়েকজন এসে আবিরকে সাদরে গ্রহণ করে।
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার পর আবিরের মনে হলো বিয়ে হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগছে! সবাই বিয়েতে আছে কিন্তু পুরো পরিবেশটা প্রাণ শূন্য মনে হচ্ছে। হঠাৎই একজন আবিরের হাত ধরে নিয়ে যায়। আবিরকে এক গ্লাস শরবত দেয়। আবিরের প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছিল। গ্লাসের দিকে তাকিয়েই আবির যেই না মুখে শরবত দিলো তখন মনে হলো যেন তাজা রক্ত! পাশের লোক তখন বলে উঠল, 'আপনার তৃষ্ণা মিটেছে বলেই অট্রহাসিতে মেতে থাকে!'
আবির তখন ভয় পেয়ে যায় ভীষণ। গালে দাগকাটা কয়েকজন এসে আবিরকে এসে ধরে। সবাই বলতে থাকে, ' এই জমিদার বাড়িতে একবার যারা প্রবেশ করেছে, তারা আর কখনো বের হতে পারবে না! এই বলে সবাই অট্রহাসিতে মেতে পরে! '
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
জমিদার বাড়ি গল্পটার প্রথম পর্ব পড়ে অনেক ভালো লেগেছে, আবার শেষের দিকটা পড়ে ভয় লেগেছে। ওই জমিদার বাড়িতে যাওয়া তাদের কোন রকমেই উচিত হয়নি। এবার তাদের সাথে কি হয় এটা ভেবে কি রকম ভয় লাগছে। আশা করছি তাদের সাথে খারাপ কিছু হবে না। পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় আছি।
ভাইয়া এটা ছোটগল্প তো এক পর্বেই শেষ করার চেষ্টা করেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
প্রথমে গল্পটি পড়ে বেশ মজাই পেয়েছিলাম। কিন্তু লাস্টে পড়ে অনেক ভয় পেয়ে গেছি। কারণ আবির কিন্তু অনেক বিপদের মধ্যে পড়ে গেল। খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করলেন। পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
আপু এটা তো ছোটগল্প তাই এক পর্বে শেষ করলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ☘️
গল্পটা পড়ে বেশ ভালোই লাগছিল,কিন্তু শেষের দিকে তো ভয় পেয়ে গেলাম। জঙ্গলের ভেতর এমন জমিদার বাড়িগুলোতে সবসময়ই মনে হয় ভূত পেত্নী থাকে। অনেক মুভিতেই এমনটা দেখেছি। আবিরের মা অপেক্ষা করে থাকবে ঠিকই, কিন্তু আবির আর বাসায় ফিরবে না কখনো। যাইহোক এমন গল্প পড়তে আসলেই খুব ভালো লাগে। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
হুমম ভাইয়া, চেষ্টা করেছিলাম ভৌতিক কনসেপ্ট থেকে লেখার। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ☘️
প্রথম দিকে গল্পটি স্বাভাবিক মনে হলেও শেষের দিকে এসে বেশ ভুতুড়ে মনে হলো। দারুন রহস্যময় করে লিখেছেন ভাই গল্পটি। না জানি, এমন এক ভুতুড়ে বাড়িতে আবিরের কত ভয় করছিল, শেষ পর্যন্ত সে বাঁচলো কিনা! সবমিলিয়ে দারুন একটি উপস্থাপনা ছিল এটি। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
জি দিদি চেষ্টা করেছি দারুণভাবে উপস্থাপনের জন্য। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 😍