৬ষ্ঠ পর্বঃ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা [ বউচি ]

24-01-23

১১ মাঘ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


children-1822688_1280.jpg

copyright free image from pixabay

৫ম পর্বের পর থেকে

গ্রাম বাংলার আরেকটি জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে বউচি! নাম শুনেই হয়তো বুঝে গেছেন! এই খেলায় বইচি রাখারা পেছনেও কিন্তু একটা ইতিহাস আছে! আমরা নরমালি বউ তুলে নিয়ে আসি জামাইয়ের বাড়ি থেকে, হাহাহা! কিন্তু এই খেলায়ও সেইম কাজটায় করা হয় তবে সেটা একটু ভিন্নভাবে! খেলায় একজনকে বউ নির্বাচন করা হয় এবং দুটি ঘর থাকে! একটি ঘর বড় আরেকটি ছোট! বউয়ের টার্গেট থাকে ছোট ঘর থেকে বড় ঘরে দৌড়েঁ আসা! তবে এখানে কথা আছে। ছোটঘর থেকে আসার সময় যদি বউকে টাচ করে দেয় তাহলো পুরো দলের খেলায় বাতিল! পক্ষদল যেহেতু মুখে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কাউকে দৌড়ায় এবং বিপক্ষ দলের প্লেয়ারকে টাচ করতে চাই আর এদিকে বউ দৌড়েঁ বড় ঘরে চলে যায় তাই মূলত এই খেলার নাম বউচি

বউচি খেলা খেলেনাই এমন মানুষ খুব কম আছে! বিশেষ করে ৯-১৩ বছর বয়স পর্যন্ত আমার মনে হয় সবাই খেলেছে। গ্রামে তখন খেলাটাও জনপ্রিয় ছিল। বিকাল হলেই পাড়ার সব ছেলে মেয়েরা চলে আসতো আমাদের বাড়ির উঠোনে! আমাদের বাড়ির উঠোন ছিল খেলার জন্য পারফেক্ট একটি জায়গা! দুদলের মাঝে খেলা হতো। প্রত্যেক দলে ৬-৮ জন করে থাকতো। তার মধ্যে একজনকে বউ নির্বাচন করা হতো! বউ যাকে নির্বাচন করা হতো তাকে একটু বুদ্ধিমান হতে হতো! কারণ এই খেলায় মেইন টার্গেট থাকতো বউ! বউয়ের বিচক্ষণতার উপরেই খেলার হার-জিত নির্ভর করতো। খেলায় ১২ টি চিঁ বা দম নির্বাচন করা হতো। কুত কুত বলেই দম মুখে নিয়ে বের হওয়া যেত। ১ম দম শুধু এমনি এমনি যেটাকে বলে। পরের দম থেকে খেলা শুরু! পক্ষ দলের টার্গেট মুখে দম নিয়ে কাউকে টাচ করা। যদি পক্ষ দলের কেউ মুখে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কাউকে টাচ করতে পারতো তাহলে সে মারা যেত! মারা গেলে চলমান খেলায় আর সে প্লেয়ার খেলতে পারতো না।

বিপক্ষ দলের টার্গেট বউ! সবসময় বিপক্ষ দলের সবাই বউয়ের আশেপাশে থাকতো! কোনোভাবেই যেন বউ দৌড়ঁ দিয়ে বড় ঘরে যেতে না পারে! যদি বিপক্ষ দলের সবাইকে ফাকিঁ দিয়ে বউ বড় ঘরে চলে যায় তাহলে এক গোল্লা হয়ে যেত! যে দল বেশি গেইম দিতে পারতো সে দল জয়ী হতো! বিপক্ষ দলও কিন্তু খেলার সুযোগ পেত! বউ ছোট ঘর থেকে যখন বড় ঘরে যেত তার আগেই যখন বিপক্ষ দলের কেউ বউকে টাচ করে ফেলতো তাহলেই বউ মারা যেত! আর বউ মারা গেলে পুরো দেলার খেলা শেষ! তখন সুযোগ পেত বিপক্ষ দল! ঠিক একইভাবে বিপক্ষ দলেরও একজন বউ নির্বাচন করা হতো! আর পক্ষদল তখন বউয়ের পাশে পাহাড়া দিতো। বিপক্ষ দল দম নিয়ে আসতো পক্ষ দলের কাউকে টাচ করার জন্য! যখনই পক্ষ দলের কাউকে টাচ করে ফেলতো তখন সে মৃত! বউচি খেলায় এমন হয়েছে যে, পক্ষ দলের সবাই মারা যেত! বিপক্ষ দলের বউ তখন স্বাধীনভাবে ঘরে আসতো, হেটেঁ হেটেঁ !

আমরা তখন আপুদের সাথে খেলতাম! আপুরা সবাই অনেক দম নিয়ে খেলতে পারতো! দম নিয়ে অন্য দলের প্লেয়ারকে অনেকদূর পর্যন্ত নিয়ে চলে যেত! আর এই ফাকেঁ বউ দৌড়ঁ দিয়ে চলে আসতো ঘরে! বউয়ের ঘর কিন্তু কিছুটা দূরে থাকতো বড় ঘর থেকে! খেলায় সব প্লেয়ার বড় ঘরে অবস্থান করতো শুধু বউ বাদে! আমি কয়েকবার বউ হয়েছিলাম, হাহাহা! একটু দৌড়ঁ পারতাম তো তাই! সব সময় খেয়াল করতাম কখন প্লেয়ার একটু এদিক সেদিক যাবে! একটু ফাকঁ পেলেই সোজা দৌড়ঁ! তবে খেলায় কিন্তু অনেক সময় ঝামেলাও হতো! এই যে দম ছেড়ে দেয়া, বউ আগেই দৌড়ঁ দেয়া এসব নিয়ে ঝামেলা বেধেঁ যেত! বউ কখনও প্রথম দমে দৌড়ঁ দিতে পারবে না আবার পক্ষ দলের কেউ বড় ঘর থেকে বের হওয়ার পর দৌড়ঁ দিতে পারবে না!

২০১০-২০১২ সালের সময়টা বেশ ভালো ছিল! তখন প্রাইমারিতে পড়াশোনা করি! বিকেল হলেই এই খেলাটা হতো। তবে বাড়িতে আত্নীয়স্বজনরা আসলে এই খেলাটা বেশি হতো। কারণ সবাইকে নিয়ে বউচি খেলার মজাটাই ছিল অন্যরকম! সবাই একসাথে খেলাটা উপভোগ করার সুযোগ পেত! গ্রামের মা-চাচীরা বারান্দায় বসে আমাদের খেলা উপভোগ করতো।

এখন গ্রামে গেলে খেলাটা আর চোখে পড়ে না! সবাই এখন বড় হয়ে গেছে। আপুদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত! অনেকেই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত! চাইলেই কি আর শৈশবে ফিরে যাওয়া যাবে! গ্রামীণ এই খেলাগুলো স্মৃতির অ্যালবামে থেকে যাবে আজীবন! একটা জেনারেশনের সোনালী অতীতগুলোর মধ্যে বউচি খেলা একটি! এখনকার জেনারেশন খেলার নাম হয়ত শুনে নাই! দাদা-নানীদের কাছে হয়তো কোনো একদিন গল্পের চলে জানতে পারবে তাদের সোনালী অতীতের কথা, তাদের শৈশবে কাটানো খেলাগুলোর কথা!

যাক, আর বেশি কথা বাড়ালাম না! আবারো হাজির হবো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কোনো খেলার অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য! সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋

চলবে....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

আপনি তো ছোটবেলার সেই খেলার মুহূর্ত গুলোর কথা মনে করিয়ে দিলেন আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে। সবাই মিলে একসাথে বউচি খেলতাম। সেই মুহূর্তগুলো ছিল একেবারেই অন্যরকম। আসলে এটা কিন্তু ঠিকই বলেছেন এখন গ্রামে এই খেলাটা আর চোখেই পড়ে না। আসলে গ্রামের এই খেলাগুলো স্মৃতির অ্যালবামে থেকে যাবে আজীবন। আপনাদের মত অনেক ছোট বড় ছেলেরা আমাদের সাথে বিভিন্ন রকম খেলা খেলতো। পুরোটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। কোথাও এরকম খেলাগুলো দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। তেমনি আপনার পোষ্টের মাধ্যমেও মনে পড়ে গিয়েছে।

 2 years ago 

জি আপু! বিশেষ করে গ্রামে খেলাটা তখন খুব জনপ্রিয় ছিল! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58572.58
ETH 2551.35
USDT 1.00
SBD 2.47