আবোল তাবোল জীবনের গল্প [ শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ]steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো এবং সুস্থ্য আছেন। আজকে আবোল তাবোল জীবনের গল্পে শিক্ষকদের নিয়ে কিছু কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করছি। যদিও আজকাল আমাদের মানসিকতা দিন দিন ভিন্ন রঙে রঙিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে বেশী আগ্রহবোধ করছি। এটা কিন্তু একদিনে হয় নাই বরং ধীরে ধীরে ঘুনে ধরার মতো আমাদের মানসিকতাকে ক্ষয়িত করেছে। যার ফলাফল আমাদের আজকের অবস্থান এবং আজকের মানসিকতা। একটু চোখ বন্ধ করুন এবং আজকের মানসিকতাকে একটু পরীক্ষা করে দেখুন, তাহলে হয়তো নিজের অজান্তে আতকে উঠবেন।

জ্বী আমি ঠিকই বলেছি, আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন আপনাদের সময়ে শিক্ষকদের অবস্থান কোথায় ছিলো? আর বর্তমানে কোথায় আছে? আমরা যে রকম পরিবেশ কিংবা শ্রদ্ধা শিক্ষকদের প্রতি দেখেছিলাম সেটা কি এখনো বিদ্যমান আছে? আমাদের সময় শিক্ষকরা যতটা স্বাধীনতা উপভোগ করতেন, এখন কি তারা সেটা করতে পারছেন? এই বিষয়গুলো নিয়ে হয়তো আমার কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই কারন বিষয়গুলো আপনাদের নিকট একদম পরিস্কার। আমার এখনো মনে আছে স্কুল শিক্ষকতো দূরের কথা, বাড়িতে এলাকার যে বড় ভাইয়ের নিকট প্রাইভেট পড়াতম, তাকে দূর হতে দেখলেও রাস্তা ছেড়ে অন্য পথ দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম, যাতে তার সম্মুখে না পরি।

class-1459570_1280.png

এটা কেন করতাম? একটা ভয় কাজ করতো তখন আমাদের মাঝে, একটা শ্রদ্ধাবোধ থাকতো তাদের প্রতি আমাদের। তাই যতটা সম্ভব আমরা এড়িয়ে যেতাম যাতে তারা কোন কারনে আমাদেরকে নিয়ে ভিন্ন মন্তব্য করার সুযোগ না পান এবং এটা বলতে না পারেন যে তুমি ঐ কাজটা খারাপ করছো। হ্যা, তখন শিক্ষকদের কাছে আমাদের যেমন একটা অবস্থান ছিলো ঠিক তেমনি শিক্ষকদের একটা অবস্থান ছিলো আমাদের কাছে। আমরা সব সময় চাইতাম তারা আমাদের যতটা ভালো জানেন সেটা যেন সব সময় অক্ষুন্ন থাকে, সে বিষয়ে যেন কখনো কোন কথা বলতে না পারেন কিংবা সুযোগ না পান।

কখনো রাগ করে কোন শিক্ষকে গালি দিয়েছি বলে আমার মনে নেই, বরং সর্বদা শিক্ষকের ব্যাপারে একটা ভয় কাজ করতো আমাদের মনে। আমরা পিতা মাতাকে যতটা ভয় পেতাম ঠিক ততোটা শিক্ষকের ভয় পেতাম। ভালোবাসারও কোন কমতি ছিলো না আমাদের। আমার মনে আছে প্রায় বিদায় অনুষ্ঠান সমূহে শিক্ষকা কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন এবং বলতেন তোমাদের ছাড়া, তোমাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি কিভাবে সময় কাটাবো। তারা অবসরে যাওয়ার সময়ও আমাদের প্রতি ভালোবাসা এবং আবেগ প্রকাশ করতেন। আমরাও যতটা সম্ভব তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও ভালোবাসা দিয়ে বিদায় দেয়ার চেষ্টা করতাম। বিদায় নেয়ার পরও কখনো দেখা হলে আমরা সেটা বুঝতে দেই নাই যে উনি আর এখন আমাদের স্কুলের শিক্ষক না। বরং ব্যবহারটা আগের মতোই থাকতো।

teacher-2928817_1280.jpg

এই পরিবেশ ও মানসিকতার দিক হতে তখন যে রকম একটা অবস্থা বিড়াজ করতো, সেটা কিন্তু এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। না এর জন্য শিক্ষকরা যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী বর্তমান পিতা-মাতা। শিক্ষকরা কোন বিষয়ে কখনো আমাদের শাসন করলে আমাদের পিতা-মাতা কোন দিনও শিক্ষকদের প্রশ্ন ছুড়তেন না কেন আমার সন্তানকে শাসন করা হলো বা কেন মাইর দেয়া হলো? কিন্তু এখন একটু চিন্তা করে দেখুন, কোন শিক্ষক যদি কোন ছাত্রকে শাসন করে তাহলে সেই ছাত্রের পিতা-মাতা গিয়ে ডাইরেক্ট তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। সন্তানদের ভুল হলেও সেটা নিয়ে শাসন করতে দিতে চান না। এই মানসিকতার একটা প্রভাব কিন্তু বর্তমান ছাত্র সমাজের উপর পতিত হচ্ছে, বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রদের উপর পতিত হচ্ছে। তারা মনে করছে যতই অন্যায় করি না কেন, সেটা নিয়ে তারা আমাদের শাসন করার অধিকার রাখেন না।

পরিবর্তিত মানসিকতা আমাদের আজ কোথায় নিয়ে আসছেন? আমরা যততা ভয় পেতাম শিক্ষকদের, ঠিক ততোটা সাহসি বর্তমান ছাত্র সমাজ। চিন্তা করে দেখুন, সন্ধ্যার পরও যদি কোন ছাত্র বাহিরে ঘোরাঘুরি করে আর সেটা যদি কোন শিক্ষক দেখে, তাহলে কি তাকে শাসন করতে পারবে? একদমই না। কারন সেই শিক্ষককে ছাত্র সরাসরি বললে আমার যা খুশি করি তাতে আপনার কি? ঠিক তেমনি হয়তো তার পরিবারের সদস্যরাও বলবে রাতে বাহিরে থাকলে আপনার কি আসে যায়? বাস্তবতা সত্যি আমাদের এক কঠিন অবস্থার সম্মুখীন করে দিয়েছে, শিক্ষক-ছাত্রদের সম্পর্ক অনাকাংখিতভাবে বিপরীতমুখী করে দিয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন যতদিন না হবে ঠিক ততোদিন শিক্ষার প্রকৃত বিষয়টি আমাদের মাঝে আসবে না। শিক্ষা শুধুমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জিত হয় না, বইয়ের বাহিরেও বিশাল দুনিয়া রয়ে গেছে, যেখান হতে বর্তমান প্রজন্ম কিছুই শিখতে পারছেন না।

Image taken from Pixabay

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  
 11 months ago 

এখন তো দেখছি শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্কটা একদম পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে শুনতাম বাবা মা শিক্ষকে বলতো সন্তান আপনাকে দিয়ে দিলাম। হাড্ডি আমাদের আর মাংস আপনার। আর এখনকার যুগে একটু ধমক পর্যন্ত শিক্ষক ছাত্রকে দিতে ভয় পায়। যুগের হাওয়ার এ পরিবর্তন মনে হয় আমাদের কে আরও বহুদূর নিয়ে যাবে। কি আছে ভবিষতে সে কেবল উপর ওয়ালাই জানে।

 11 months ago 

এখনকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষকদেরকে সম্মান তো করেই না,বরং প্রতিনিয়ত তাদের সম্মানহানি করার চেষ্টা করে। আমাদের এখানকার হাই স্কুলে শিক্ষক ছাত্রকে লাঠি দিয়ে মারার সময়, ছাত্র শিক্ষকের লাঠি ধরে ফেলে। এমনকি টিচারদেরকে হুমকি পর্যন্ত দেয়। অথচ হাই স্কুলের টিচারদের সাথে দেখা হলে এখনো আমরা রাস্তা ঘাটে সালাম দেই। সামনে যে আরো কতকিছু হবে সেটাই ভাবছি। যাইহোক এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

শিক্ষদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে চমৎকার কিছু কথা লিখে শেয়ার করলেন ভাইয়া । ভীষন ভালো লেগেছে। সবকিছুর মতো শিক্ষকদের প্রতি ভয়, শ্রদ্ধাবোধ এখন আর নেই।এখন শিক্ষকরাই ছাত্রদেরকে ভয় পায়।আমাদের সময় যাও ছিল।সামনে আরো থাকবে না শ্রদ্ধাবোধ,ভয়।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর এই পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59871.00
ETH 2671.84
USDT 1.00
SBD 2.47