হ-য-ব-র-ল কাহিনী (শেষ পর্ব)
হ্যালো বন্ধুরা,
মিলনের মাঝে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো, আগের তুলনায় অনেক বশী ভদ্র হয়ে গিয়েছে এবং কারো সাথে ভুলেও খারাপ ব্যবহার করে না। এদিকে তার পরিবর্তন দেখে বাড়ীর সবাই বেশ খুশি কিন্তু তার মা বেশ চিন্তিত। কারন হয়তো জ্বীনের ভয়ে কিংবা অন্য কোন কারনে ছেলে এখন কিছুটা শান্ত এবং ভালো রয়েছে। কিন্তু সেটা কতদিন কার্যকর থাকে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে। তবে এখন তার মা’ও চান জ্বীনের ব্যাপারে কোন তদবির না করার জন্য, কারন এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক। তাতে অন্তত ছেলের দুর্নামগুলো চাপা পড়বে এবং পড়াশুনায় কিছুটা হলেও উন্নতি করবে। সত্যি বলতে প্রতিটি মা’ই চান তার সন্তান ভালো থাকুক এবং যে কোন বিপদ হতে নিরাপদ থাকুক, এই ক্ষেত্রে মিলনের মা কিছুটা হলেও বুদ্ধিমতি, তাই আগ পিছ এতো কিছু চিন্তা করছেন।
কিন্তু একটা কথা প্রচলিত আছে না সমাজে, চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। রাফি আর রানার অবস্থা এখন সেই রকম। যদি কাঁদতে কাঁদতে রাফি বেশ দুর্বল হয়ে গেছে কিন্তু রানা তাকে বেশ সাহস যোগানোর চেষ্টা করছেন। তারা চিন্তা করছেন নিশ্চয় মিলন কালো যাদু নামক কিছু একটা আয়ত্ব করেছে, না হলে তাদের বাড়ীতে রাতে ঐ রকম ঘটনা কিভাবে সম্ভব হলো? তার ব্যাগে কোন সুপার গ্লু কিংবা আঠা ছিলো না, তাহলে ব্যাগের সাথে তার হাত কিভাবে আটকে থাকলো? এসবের কিছুই তাদের মাথায় ঢুকছে না, তবে একটা বিষয়ে দুইজনই একমত আর সেটা হলো মিলনের উপর প্রতিশোধ নিতে হবে, না হলে তাদের হৃদয়ের আগুন নিভবে না। এটা নিয়ে রাফি এবং রানা দুই জনই বেশ চিন্তায় মগ্ন থাকলো এবং মিলনকে জব্দ করার উপায় খুঁজতে লাগলো।
একটা বিষয় কিন্তু বেশ স্পষ্ট আর সেটা হলো প্রতিশোধের জেদ মানুষের বিবেককে অন্ধ করে দেয়, মানুষের উপস্থিত বুদ্ধিকে হ্রাস করে দেয়, যার কারনে প্রতিশোধের আকাংখায় কিংবা জেদের বশে মানুষ যত কিছুই করার চেষ্টা করেছে, সেখানেই ভুল করেছে এবং পরবর্তীতে সেটার জন্য আফসুস করেছে। প্রতিশোধ কিংবা অতিরিক্ত জেদের কারনে আমাদের সম্মুখে ঘটা সহজ বিষয়গুলোকে আমরা অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করি এবং অস্বাভাবিক বিষয়গুলোকে আমারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাই। বাস্তবতাকে অস্বীকার করার ফলশ্রুতি পরবর্তীতে মাথায় হাত দিয়ে ঠিক অনুতপ্ত হই।
পরের দিন ক্লাসে সবাই উপস্থিত, সব কিছুই স্বাভাবিক আছে কিন্তু একটু অস্বাভাবিক রাফি আর রানা কারন তাদের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলছে তখনও। তারা নতুন প্লান নিয়ে আজ স্কুলে এসেছেন, মিলনের কালো যাদুর পরীক্ষা নেয়ার জন্য। তাদের দুই জনের নজর মিলনের উপর, মিলন কখন ক্লাস হতে বের হবেন এবং টয়লেটে যাবেন। মিলন ক্লাস হতে বের হয়েছে এবং টয়লেটের দিকেই যাচ্ছে। ব্যস ওমনি তারা দুইজন বের হয়ে গেলেন এবং একে একে দুই অংক মেলানোর চেষ্টা করলেন। মিলন আগে প্রবেশ করলেন তারপর রাফি এবং রানা। কিন্তু এখানেও তারা বিপদে পড়ে গেলেন, কারন বাকী সব টয়লেট ফাঁকা শুধু মাত্র দুটো টয়লেট বাদে। এখন মিলন কোনটায় আর অন্যটায় কে? এটা নিয়ে রাফি রানা বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলেন। রাফি বলে উঠে ধুর দুটোই আটকে দে বাহির হতে। এটাই বলেই দুই দরজায় বাহির হতে লক করে দিলো।
ঠিক আধ ঘন্টা পর মিলন বের হয়ে ক্লাসে প্রবেশ করলো এবং একদমই স্বাভাবিক আচরণ করলো। রাফি আর রানা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো, কিভাবে কি হলো? সেটা চিন্তা করে, তারা কিছুই বুঝতে পারছে না, মিলনকে কিভাবে জব্দ করবে। আধ ঘন্টা পর রাফি এবং রানাকে প্রধান শিক্ষকের রুমে ডাকা হলো? দুইজনের মনের অবস্থা বেগতিক, বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো এটা শুনে। প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রবেশ করলো দুইজন একসাথে, প্রধান শিক্ষক তাদের খুব সুন্দরভাবে কাছে যেতে বললেন এবং তারপর আদর করে জিজ্ঞেস করলেন অংক শিক্ষকের সাথে এই রকম কেন করা হলো? দুইজন একই সাথে উত্তর দিলো, আমরা কি করেছি স্যার? এবার শিক্ষক ধমক দিয়ে বললেন উনার টয়লেটের দরজায় বাহির হতে কে লক করেছে? এটা শুনে রাফি রানার দিকে তাকালো আর রানা রাফির দিকে তাকালো, কি বলবে? কিছুই বুঝতে পারছে না।
উত্তম-অধম কিছু খেলো, সেটা হজম করলো কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না প্রধান শিক্ষক বুঝলেন কিভাবে? মিলন কি তাহলে প্রধান শিক্ষকের কাছে তাদের নামে নালিশ দিয়েছে, সেটা কিভাবে সম্ভব তাকেও তো আটকে রাখা হয়েছিলো। এবার দুইজনের মনে কিছুটা ভয়ের ভাব তৈরী হলো, দুইজনের মাঝে একটা আতংক দেখা দিলো। কোন প্লানই সফল হচ্ছে না, উল্টো তারাই ধরা পরে যাচ্ছে। ক্লাস শেষ করলো এবং যথারীতি বাড়ীতে চলে গেলো। তারপর ফ্রেস হওয়ার জন্যই রাফি তার রুমের বাথরুমে প্রবেশ করলো এবং রানা তাদের বাড়ীর নিজের বাথরুমে প্রবেশ করলো। কিন্তু একি দুইজনের বাথরুমের ছিটকানি কিভাবে যেন বাহির হতে আটকে গেলো? দুজনেই বেশ চিৎকার করতে থাকলো। কেউ শুনছে না তাদের চিৎকার, কেউ এসে দরজা খুলছে না। দুইজনের অবস্থা বেশ কাহিল, কান্না এবং চিৎকার দুটোই চলতে থাকলো।
আধ ঘন্টা পর হঠাৎই দরজা খুলে গেলো, দুইজনই চিৎকার দিয়ে বাহির হলেন এবং বাড়ীর সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন কিন্তু সবাই একই উত্তর দিলো তাদের চিৎকারের আওয়াজ কেউ শুনে নাই। এটা শুনার পর দুইজনই স্তব্দ হলে গেলো, ভয়টা যেন দ্বিগুন হয়ে গেলো। তাদের মনের সাহস এবার একদমই উবে গেলো, বাড়ীর কাউকে সেটা বিশ্বাস করাতে পারছে না, যেটার স্বীকার তারা হয়েছে। রানা রাফিকে ফোন করলো এবং ঘটনাটি শেয়ার করলো, ঠিক একই রকম ঘটনা রাফির কাছ হতে শুনে, দুইজনই নিশ্চুপ হয়ে গেলো এবং চিন্তা করতে থাকলো এটা কিভাবে সম্ভব? তারা মিলনকে ফোন করলো, মিলন স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলো এবং বললো হয়তো তাদের কোথাও ভুল হচ্ছে, না হলে এমনটা হওয়ার কথা না।
তারা দুইজনই পরের দিন একজন কবিরাজের সাথে দেখা করলো এবং পুরো বিষয়টি খুলে বললো, উনি বললেন নিশ্চিত কোন অশুভ আত্মা তোমাদের পিছু নিয়েছে, এখন তোমাদের আর কোন রক্ষা নেই। দুইজনেই কেঁদে উঠলেন এবং উনার কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন বাবা আমাদের বাঁচান, আমরা একদমই ভালো হয়ে যাবো, আপনি যা বললেন তা তা শুনবো। কবিরাজ ছিলেন আদতে ভন্ড, তাদের আরো ভয় দেখালেন এবং দুইজনের কাছ হতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেন। তারপর এক গ্লাস পানি দিয়ে বললেন এটা একটা বোতলে ঢেলে রাখতে এবং পুরো বাড়ীতে ছিটিয়ে দিতে, প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক ঢোক এবং ঘুম হতে উঠে আরো ঢোক পানি খেতে হবে, তাহলে পুরো দিন কোন আত্মা, কোন ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। তারা ঠিক তাই তাই করলো এবং পরের দিন হতে দুইজনই স্কুলে ঠিক মতো গেলো কিন্তু কারো সাথে কোন ধরনের বেয়াদবি করলো না এবং শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলো।
আমাদের জীবনে আমরা যাই করি না কেন, তার একটা প্রভাব ঠিক ঠিক আমাদের উপরও পতিত হয়, আমরা কেউ সেটা শুরুতে বুঝতে পারি আবার কেউ সেটা দেরীতে বুঝতে পারি। যার যার কর্ম দোষে সে সে পস্তায়, কিন্তু আমরা সেটা অন্য কিছুর প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিন্তা করি এবং সঠিক উপলব্ধি হতে দূরে সরে যাই। হ্যা, আমাদের পৃথিবীতে এই রকম কিছু অবিশ্বাস্য জাতীয় ঘটনা ঘটে, যাদের কিছুর ব্যাখ্যা রয়েছে এবং কিছুর কোন ব্যাখ্যা নেই। যেগুলো আমাদের জন্য ভালো হয় সেগুলোকে আমরা স্বীকার করি আর যেগুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয় সেগুলোকে আমরা অস্বীকার করি। তবে একটা কথা অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে, আমরা যদি ভালো কাজ করি তবে তার ভালো ফলাফল একদিন না একদিন ঠিক পাবো, আর যদি খারাপ কাজ করি তাহলে সেটারও ফল একদিন না একদিন ঠিক ভোগ করবো।
Image taken from Pixabay
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভালো-মন্দে আমাদের এই জীবন। আমরা যদি ভালো কাজ করি তাহলে আমরা ভালো কিছু পাবো। আর যদি নিজেকে সবসময় খারাপ কাজে লিপ্ত করি তাহলে আমাদের কপালেও খারাপ কিছুই আছে। সত্যি ভাইয়া আপনার লেখনীর দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। দারুন ভাবে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। মনে হচ্ছে যেন আরও একটু যদি পড়তে পারতাম তাহলে আরো ভালো হতো। কখন যে গল্পের শেষ লাইনে চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। এরকম আরো নতুন নতুন গল্প চাই ভাইয়া। আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️❤️❤️
জ্বী ভাই কিন্তু আদতে আমরা সে হিসেবটা কখনো কষি না বরং নানা কারনে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করি এবং বাস্তবতাকে অস্বীকার করি। ধন্যবাদ
ঠিক বলেছেন ভাইয়া কেউ খারাপ কাজ করলে মনে করে যেন সে জিতে গেল। কিন্তু একসময় না একসময় তার প্রতিফলন ঠিকই হয়। আর প্রতিশোধের নেশা খুব খারাপ। এই নেশায় পড়লে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোভ পায়।
যাই হোক গল্পটি বেশ ভালো লাগলো। অবশেষে তারা তিনজনই ভালো হল।
আমরা বর্তমানে যত ধরনের ভুল করি তার মাঝে অন্যতম হলো প্রতিশোধের নেশা, আসলে আমরা ভুলেই গেছি ক্ষমাও মহৎ গুন।
এটা একদমই সত্যি কথা ভাইয়া যে মানুষের বিবেককে অন্ধ করে দেয় । এজন্য ছেলেদের বসে কোন কিছু করে ফেলা ঠিক নয় মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করা ভালো । রাফি আর রানা তাহলে তাদের ভুল বুঝতে পারল ভন্ড বাবার পানি পরা খেয়ে হাহাহাহা । আসলে মানুষ এরকমই তার নিজের সাথে খারাপ কিছু হয়ে গেলে সেটা শেয়ার করতে চাই না ,ভালো কিছু একটা হলেই শেয়ার করতে চাই খুব ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে ।
মানুষের স্বাভাবের কারনেই মানুষ আজ মনুষ্যত্বহীন হয়ে যাচ্ছে, দিন দিন একটা অজানা গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধন্যবাদ
পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।শিক্ষণীয় কিছু পড়তে পারলে ভালোই লাগে।আমরা যা করবো তার ফলটা আমাদের ই ভোগ করতে হবে।
কিন্তু দিন শেষে আমরা কি সত্যি কিছুই শিখছি কিংবা বাস্তব জীবনে সেটা প্রয়োগ করছি, একদমই না।
পাপ বাপেরেও ছাড়েনা।
কেউ যদি কারো সাথে অন্যায় করে তাহলে তার ফল তাকে ভোগ করতে হবেই, সেটা আজ নয়তো কাল।
দারুন একটি শিক্ষনীয় গল্প ছিল ভাই।
তবে পুরোপুরি রহস্যে ঘেরা।
মিলনের সাথে কিছু রয়েছে যার ফলশ্রুতিতে সে ওসব করেছে। যাক বেশ উপভোগ করলাম।
আপনার শরীর মনে হয় আগের থেকে ভালো 🤗
সেটাই, আসলে আমরা এসব নিয়ে চিন্তা করি না কিন্তু যখন বিপদে পড়ে যাই তখন শুধুই আফসুস আর আফসুস করতে থাকি। ভালো লেগেছে শুনে আমার কাছেও ভালো লাগলো ভাই।
শেষ পর্যন্ত সবাই ভালোর পথে ফিরে এসেছে এবং নিজের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছে দেখে ভালো লাগলো। ভাইয়া আপনার লিখা এই গল্পটিতে অনেক শিক্ষনীয় বিষয় তুলে ধরেছেন আপনি। আমার কাছে দারুন লেগেছে। এই পর্বের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রকৃতির নিয়ম এটাই আপু, দিন শেষে সবাই তার নিজে অবস্থানে ফিরে যায়। ধন্যবাদ আপু
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.