আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ তিক্ত অনুভূতি ]
হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করছি সবাই ভালো আছেন, আমি আমার মতো আছি। অনেক দিন পর জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আবোল-তাবোল জীবনের গল্পের আরো একটি পর্ব নিয়ে হাজির হলাম।
মানুষগুলো কেমন জানি রোবটিক হয়ে যাচ্ছে, হৃদয়গুলো কেমন জানি পাথরের ন্যয় শক্ত হয়ে যাচ্ছে। যার কারনে মানুষের বিপদ দেখেও আমরা উদাসহীন হয়ে থাকি, না দেখার ভান ধরে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সত্যি বলতে আমরা উন্নত হচ্ছি শুধুমাত্র পোষাক-আশাকে, কিন্তু ভেতরটা একদমই আগের মতো থেকে যাচ্ছে। না আগের মতো থেকে যাচ্ছে না বরং আগের তুলনায় আরো নিম্নমুখী হয়ে যাচ্ছে। কারন আগেতো ভালো মন্দের বিষয়টি ছিলো না কিন্তু এখনতো মন্দ কিছু ছাড়া ভালোর চিন্তাই আসে না।
একটা বিষয় উল্লেখ্য না করে থাকতে পারলাম না, স্কুল জীবনে যখন কারো অসুখের কিংবা সমস্যার কথা শুনতাম, বন্ধুরা সবাই মিলে চাঁদা তুলতাম এবং সেই টাকা দিয়ে রুটি কলা কিনে সহপাঠীকে দেখতে যেতাম অথবা তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতাম। দারুণ একটা অনুভূতি তখন হৃদয়ে কাজ করতো, যা খরচ করতাম তার থেকে বেশী আনন্দ উপভোগ করতাম, এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করতো হৃদয়ে। ভাবতেই অবাক লাগে, সময়ের সাথে সাথে আমরা কিভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছি, মানুষের বিপদ এখন আর আমাদের হৃদয়ে মমতা জাগ্রত করে না। যার কারনে আমরা অন্যের দুঃখে দুঃখী হই না, তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না।
তবে একটা জিনিষ খুব ভালো পারি বা করি সেটা হলো অন্যের ক্ষতি, নানা ভাবে আমরা এই চেষ্টাটা করে থাকি। এই বিষয়ে কারো হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় না বরং নিজে নিজেই দারুণভাবে অভিজ্ঞ হয়ে উঠি। অথচ যেটা আমাদের প্রয়োজন ছিলো, যে বিষয়ে চারপাশের সবাই আমাদের শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করে, সেটা কিন্তু আমরা একদমই শিখি না বা শিখতে চাই না। কেন এমনটা হচ্ছে? অথচ যা হওয়ার কথা ছিলো না। যেখানে অন্যরা চেষ্টা করেন, উৎসাহ যোগান, নানাভাবে অনুপ্রেরণা দেন, কিন্তু তবুও আমরা সেদিকে হাঁটি না বা সে বিষয়টি বুঝতে চাই না। অথচ সবাই যেটা করতে না করেন কিংবা যে বিষয়গুলো হতে আমাদের দূরে রাখার চেষ্টা করেন, আমরা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেই কাজটিই বেশী বেশী করার চেষ্টা করি। কি আশ্চার্যজনক সমীকরণ!
বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করুন, একটু ভিন্নভাবে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। আপনি একজন মানুষের যতই উপকার করার চেষ্টা করুন না কেন, দিন শেষে সেই মানুষটিই সর্ব প্রথম আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলবে বা আপনার বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করবেন। এটা বাস্তবতার আলোকে বলছি, নিজের মনের কথা কিংবা বানিয়ে কিছু বলছি না। একটু নজর দিন আপনার চারপাশে, তাহলেই বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে এবং আমার কথার সাথে আপনিও সহমত পোষন করবেন। এটাতো হওয়ার কথা না, মানুষের স্বভাব জাততো এটা না? তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
হ্যা, মানুষের স্বভাব জাত এটা হওয়ার কথা ছিলো না সত্য কিন্তু মানুষ কি আজ মানুষের কাতারে আছে? নাকি শুধুমাত্র মানুষের খোলস জড়িয়ে রেখেছেন শরীরে? মূলত আজকের লেখার মূল প্রশ্নই এটি, আপনাদের সুবিধার্থে সোজা না এসে একটু ঘুরে আসলাম যাতে বিষয়টি বুঝতে সহজ হয়। আমাদের উপর মানুষের খোলস আছে সত্য কিন্তু সেই জিনিষটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে সেটা হলো মনুষ্যত্ব, আর মুনষ্যত্ব ছাড়া মানুষের ভেতর মানুষের গুনাবলি উপস্থিত থাকে কিভাবে? কোন ভাবেই সম্ভব সেটা সম্ভব না আর এই কারনেই মানুষগুলো অবস্থা এই রকম।
আপনি মনুষ্যত্ব বিহীন একজন মানুষের নিকট হতে কি প্রত্যাশা করেন, কতটুকু ভালো জিনিষ আশা করেন? কারন এখান হতে কিছুই পাওয়ার সম্ভবনা নেই। না আমি ভুল বললাম কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে আর সেটা হলো কষ্ট কিংবা যন্ত্রনা। কারন এরা মানুষের উপকার করেন না সত্য কিন্তু অপকার করতে কখনো দ্বিধা করেন। আপনি যতই তার ভালো চিন্তা করেন, সে ঠিকই সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে এবং সময় মতো ঠিক জায়গা মতো আঘাতটা করবে। এই জন্য নূণ্যতম অনুতপ্ত হবে না সে, আপনি তার যতই উপকার বা তাকে যতই সুবিধা প্রধান করেন না কেন? সে ব্যাপারে নূণ্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ তার ভেতর জাগ্রত হবে না।
সুতরাং তার নিকট হতে ভিন্ন কিছু পাওয়াটাই আপনার জন্য প্রত্যাশিত, বরং সেটা যদি না পান তা হবে অপ্রত্যাশিত। একটু চিন্তা করুন, আপনার সাথে এই রকম কতজন মানুষের সংযুক্তি ঘটেছে এবং তারা ঠিক সুনিপূনভাবে এই কাজটি মানে সুন্দরভাবে আপনাকে যন্ত্রণা দেয়ার চেষ্টা করেছে, তাহলেই কেবল আপনি আমার কথাগুলোর সাথে সহমত পোষণ করতে পারবেন, অন্যত্থায় আপনার কাছে এগুলো শুধুই কথার কথা মনে হবে। আজ যাচ্ছি মানে আবোল তাবোল জীবনের গল্পের কথাগুলো আজ এখানেই থামাচ্ছি, পরবর্তীতে আবারও দেখা হতে পারে, এই রকম অন্য কিছুর অনুভূতি নিয়ে।
Image Taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
ছোটবেলায় আপনার মত আমরাও সহপাঠীদের কেউ যখন অসুস্থ হয়ে যায় তখন ক্লাসে সবাই চাঁদা তুলে তাকে দেখতে যেতাম । এটার মধ্যে যে কি রকম শান্তি ছিল তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে একদমই ভিন্ন । মানুষ যেন মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়েছে । কাউকে কষ্ট দিতে কোন রকম দ্বিধাবোধও করে না । আর মনুষত্বহীন মানুষ আসলে নামে মাত্র মানুষ । চমৎকার একটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দারুন একটি গল্প লিখেছেন ভাইয়া আপনার গল্প বরাবরই আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে আপনার গল্প থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি প্রতিনিয়ত জানছি এবং ভবিষ্যতেও আরো অনেক কিছু জানবো বলে আশা রাখি।
সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে এটা যে আপনি ছোটবেলার একটি কাহিনী আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সেটা হচ্ছে যে কোন বন্ধু যদি অসুস্থ হতো তাহলে আমরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে তাকে দেখতে যেতাম সত্যি বলতে স্কুল লাইফে এরকম ঘটনা একবার ঘটেছিল আমাদের সাথে। আমার এক বন্ধু বাইকে অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল আমরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে তার জন্য অনেক রকম খাবার কিনে নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম, সত্যিই সেই অনুভূতিটা অন্যরকম ছিল তার জন্য কত টাকা চাঁদা তুলেছি সেটা বড় ব্যাপার না বড় ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম সে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। অনেকদিন বাদে আপনার গল্পের মাধ্যমে সেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়লো। সত্যিই সেই দিনটা ভেবে এখন খুবই ভালো লাগছে যে আগের দিনগুলো সত্যিই অনেক ভাল ছিল। কিন্তু এখন আর তেমন হয়ে ওঠে না এখন বন্ধুদের সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগও হয়ে ওঠে না সবকিছু পরিবেশ পারিপার্শ্বিকের অবস্থা আমাদেরকে বদলে দিয়েছে।
আবোল-তাবোল জীবনের গল্প হলেও এই গল্পের মাঝে আপনি জিবেনের বাস্তবতা নিয়ে খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। বিশেষ করে আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনি মানুষের সত্য কথায় গুলো তুলে ধরেছেন। মানুষের আচরণ, বিবেগ, ও মনুষ্যত্ব এই গুলো থাকলে একজন প্রকৃত ব্যক্তি হওয়া যায়। বর্তমানে আমাদের সমাজের কিছু মানুষ বিবেগ ও মনুষ্যত্ব বিলীন করে দিয়েছে। একজন মনুষ্যত্ব বিহীন মানুষের কাছে কোন কিছুই আশা করা যায় না বরং ক্ষতি ছাড়া। আপনার গল্পটির মাঝে অনেকে কিছু শিখার আছে ভাইয়া। সত্যি কথা বলতে কি ভাইয়া এই প্রথম আমি আপনার গল্পটি পড়লাম এবং এই প্রথম আমার কমেন্ট। পরবর্তী সময় আমি আপনার একটি পোষ্টও মিস করব না। ধন্যবাদ ভাইয়া,
মানুষের মাঝে যখন মনুষত্ববোধ বা বিবেকবোধ হারিয়ে যায় তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না। হয়তো শারীরিকভাবে মানুষ থাকে কিন্তু মানসিকতার দিক থেকে মানুষ থাকতে পারে না। একজন মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ হলো তার মনুষ্যত্ব এবং বিবেক। আর সেই গুণাবলী যদি মানুষ হারিয়ে ফেলে তাহলে তাকে আর মানুষের কাতারে ফেলা যায় না। আসলে বাস্তবতা এরকমই। যার উপকার করবেন সেই শেষে উপকারের উল্টো প্রতিদান দিয়ে দিবে। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️
ভাই একটা গান আছে না, মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই কিন্তু সে মানুষের ভিড়েতে আসল মানুষ নাই। আমার মনে হয় আসল মানুষটাই হচ্ছে মনুষত্ব। আর মনুষত্ব না থাকলে মানুষের দাম কি। যদিও আমরা বাঙালিরা ইদানিং মনুষত্ব বর্জিত মানুষ হবারই চেষ্টা করে যাচ্ছি। চালিয়ে যান আপনার লেখালেখি। অন্তত একজন মানুষও যদি এতে পরিবর্তন হয় তাতেই আপনার সার্থকতা।
দারুণ একটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন ভাইয়া।সত্যিই ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে!যেখানে মানুষের বিপদে কেউ এগিয়ে না গিয়ে দুঃখী না হয়ে আনন্দিত হয় এবং অন্যের ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করে।দিন দিন মানুষের চাহিদা উর্ধমুখী হলেও মানসিকতা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।এটা পাথর বা রোবটের থেকে কম কিছু নয়।এটা কখনো সুখী জীবন নয়,তবুও এটাই আধুনিক জীবন।ধন্যবাদ ভাইয়া।
দিন দিন আমাদের মানসিকতা নিজ কেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছে, যার কারনে আমরা অন্যদের গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি না।
আপনার প্রশ্নের উত্তরের আমার ও বিশেষ তো জবাব নেই।নিজেও মানুষ কিনা তাই ভাবি কারণ চারপাশে মানুষদের দেখে এখন নিজেকে নিয়েই চিন্তা হয়।
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
সত্যি ভাই প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে আপনি খুব দারুণভাবে বিষয়টিকে তুলে ধরেন আমাদের মাঝে, যতই পড়ি ততই মুগ্ধ হয়ে যাই। আপনার ছোটবেলার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আসলে একদম ঠিক বলেছেন আমারও মনে আছে এরকম ছোটবেলায় চাঁদা তুলে বন্ধুদের বিপদ-আপদে সহযোগিতা করতাম বা অসুস্থ থাকলে দেখতে যেতাম। তবে বর্তমানে এগুলো এখন আর দেখা যায় না সবাই যার যার চিন্তায় ব্যস্ত বা নিজেকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত। কি হলো না হলো খোঁজখবর তো দূরের কথা কোন মাথা ব্যাথা নেই এই নিয়ে।