আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ প্রতারণা ]
হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করছি সবাই ভালো আছেন। যদিও ভালো থাকতে পারাটা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আপনি ইচ্ছে করলেও ভালো থাকতে পারবেন না, কারন আপনার আমার চারপাশে যারা রয়েছে তারা আরো বেশী সচেতন এবং ধুরন্ধর । আপনি আমি ভালো থাকার ব্যাপারে যতটা সচেতন, সেই ধুরন্ধর প্রকৃতির লোকগুলো আরো বেশী সচেতন এবং সচেষ্ট আপনাকে আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য। সত্যি সময়ের সাথে সাথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু অবাক বিষয় হলো ধুরন্ধর প্রকৃতির লোকগুলোর পরিবর্তন আরো ব্যাপক হারে হচ্ছে এবং প্রতারণার জাল আরো বিস্তৃতভাবে ছুঁড়ে মারছে আমাদের দিকে। আজকের আবোল তাবোল জীবনের গল্পে প্রতারণা নিয়ে কিছু অনুভূতি শেয়ার করার চেষ্টা করবো।
ছোট বেলায় মানে স্কুল জীবনে খুব কাছ হতে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম একটা বিষয় সেটা হলো গাড়ীতে যাতায়াত করার সময় রুমাল বাহিনীর দৌরাত্ম্য। আমার আম্মুর চাচা মানে সম্পর্কে আমার নানা, দীর্ঘ সময় আমাদের গার্ডিয়ান হিসেবে এ্যাকটিভ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কারন বেশ লম্বা একটা সময় আমার বাবা প্রবাসী শ্রমিক ছিলেন। সেই সময়টায় আমার এই নানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আমাদের পরিবারের জন্য। একবার উনি জরুরী এক কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন। কিন্তু আসার পথে উনি সেই রুমাল বাহিনীর খপ্পরে পড়ে যান এবং প্রায় দুইদিন পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। রুমালে মেডিসিন মিশিয়ে মানুষদের অজ্ঞান করা হতো তারপর তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা সব ছিনিয়ে নিতো। শুধু এখানেই খ্যান্ত থাকতো না বরং তারপর চোখে মোখে মরিচের গুড়া মেখে দিতো।
এই রকম জঘন্য কাজ কালের বিবর্তনে পরিবর্তন হতে থাকে এবং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাথে প্রয়োগের ধরনও পাল্টাতে থাকে। সত্যি বলতে যতই বাছাই করা হোক না কেন? ধানকে যেমন শতভাগ চিটামুক্ত করা যায় না। ঠিক তেমনি যতই চেষ্টা করা হোক না কেন সততার মাপকাঠিতে সবাইকে ভালো মানে উন্নত করা যায় না। যার কারনে যুগে যুগে একটা বিপদগামী শ্রেণী মানুষের ক্ষতি করে প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে যায়। আমি আপনি যারা একটু অসতর্ক কিংবা তাদের বিবেচনায় দুর্বল তাদেরকে টার্গেট করে এই কাজগুলো করে থাকে। তবে রুমাল বাহিনীর দৌরাত্ম্য এখন না দেখা গেলেও অন্য কোন নামে সেই বাহিনী ঠিকই এ্যাকটিভ রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের ক্ষতিসাধন করে যাচ্ছে।
গতকাল পত্রিকায় পড়লাম আমাদের বিখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী শাওনের কাছ হতে প্রতারণার মাধ্যমে বেশ কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, এখন আরো বেশী আপডেট প্রতারক চক্র। মাঝে মাঝে আমরা এই সকল কাহিনীগুলো পড়ে বেশ অবাক হই এবং তাদের আপডেট অবস্থা আমাদেরকে হতবাক করে। কারন আমাদের সতর্কতাকে ছাড়িয়ে তারা আরো বেশী সুন্দর, নিখুঁত এবং গভীর পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতারণাগুলো সংঘটিত করছে। শাওন আপুর বিষয়টি সামনে আসার পর হয়তো অনেকেই এই বিষয়ে সতর্ক হবে এবং সতর্কতা বাড়িয়ে দিবে। কিন্তু প্রতারক চক্র কি এই পদ্ধতিটি আর ব্যবহার করবে? নিশ্চয় না বরং নতুনভাবে আবার কাউকে তাদের জালে আটকানোর চেষ্টায় এ্যাকটিভ থাকবে।
যেই কথা বলতেছিলাম, এরপর হতে দূরে কোথায় গেলে আমার সেই নানা আর একা একা যেতেন না। কারন তার যে ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিলো সেটা সে ভুলতে পারছিলেন না। উনি বেশ বয়স্ক এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ ছিলেন, যার কারনে সেই ঘটনাটা কখনো মেনে নিতে পারেন নাই। আজকের বর্তমান সময়ের দিকে লক্ষ্য করুন, আমরা উন্নত হয়েছি, আমাদের অবস্থান উন্নত হয়েছে। আমরা এখন ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি, সেই রুমাল বাহিনীও তাদের কার্যক্রম নিয়েও ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। যার বিস্তারিত তথ্য আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা দাদার পোষ্টে দেখতে পাবেন, ফিশিং এট্যাক নামক পোষ্টের মাঝে। সেই পোষ্টটা পড়লে নিশ্চিতভাবে আপনিও হতবাক হয়ে যাবেন তাদের অনাকাংখিত দৌরাত্ম্য এবং প্রতারণার পদ্ধতির আপডেট দেখে। মানে তারা আমাদের অবস্থান বিবেচনা করে নতুনভাবে প্রতারণার ফাঁদ তৈরীর চেষ্টা করছেন এবং কার্যকরভাবে সেটার প্রয়োগও নিশ্চিত করছেন।
আমরা কালের বিবর্তনে নতুন নতুন পদ্ধতিতে তাদের স্বীকার হচ্ছি এবং তারপর নিজেদের অবস্থান নিয়ে আফসুস করছি। সত্যি বলতে অনাকাংখিত যে কোন বিষয় যেমন খুব সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় ঠিক তেমনি এই সকল প্রতারণার ফাঁদ হতেও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব । তবে আপনাকে সর্বদা স্বাভাবিক থাকতে হবে এবং নিজের বিবেক বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। এইতো কিছু দিন পূর্বে ঢাকায় চোরাই মোবাইল ফোনের রমরমা ব্যবসা হতো। হেঁটে চলা মানুষগুলোর কাছে ভদ্রলোকের পোষাক পরিহিত একজন আসতো তারপর ফিস ফিস করে বলতো দাদা চোরাই দামী মোবাইল ফোন আছে, নামমাত্র দামে বেঁচে দিবো। আপনি চাইলে দেখতে পারেন। আপনার কৌতুহল তার ফাঁদে ফেলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি আগ্রহ নিয়ে দেখতে চাইলেই সে দামী এবং অরিজিনাল একটা ফোন বের করে দিবে, আপনার দেখে সেটা পছন্দ হবে, তারপর সেটার দাম শুনে আপনি আরো বেশী উৎসুক হয়ে উঠবেন। আপনাকে নামমাত্র দামে সেই ফোনটা দিবে আর আপনিও খুশি মনে সেটা নিয়ে নিবেন।
কিন্তু বিপত্তি ঘটবে বাড়ীতে আসার পর, যখন সেটা বের করবেন তখন। সবই ঠিক আছে কিন্তু মোবাইল ফোনের কভারের ভিতর সেই সেটটা নেই, পাবেন পলিথিনে মোড়ানো ভেজা বালি। আমি কিভাবে জানি? আরে ভাই আমার পরিচিত অনেকেই এই ফাঁদে ধরা খেয়েছেন। হয়তো আরো অনেকেই নতুন পদ্ধতিতে প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন কিন্তু লজ্জার কারনে সেটা কারো নিকট প্রকাশ করতে পারছেন না আর আমরাও সেটা জানতে পারছি না। আপনি সেটা প্রকাশ করুন আর নাইবা করুন, তারা তাদের জালে নতুনভাবে নতুনদের ঠিক প্রতারণা করে যাবে। ধানের চিটার মতো সভ্য সমাজের মাঝে এই লোকগুলো ঠিক থেকে যাবে। তাই আমাদের সতর্কতা এবং সচেতনার সাথে নিজের বুদ্ধিগুলোকে জাগ্রত রাখতে হবে, তবেই নিরাপদ থাকা নিশ্চিত করতে পারবো।
Image Taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
আমার এলাকার এক কাপড় ব্যবসায়ী ভাই ঢাকায় কাপড় কিনতে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নকল স্বর্ণ কিনে সর্বসান্ত হয়েছে ভাই। সত্যি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতারক চক্র তাদের ধরন পাল্টিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। আপনার আবোল-তাবোল জীবনের গল্পে (প্রতারণা) নিয়ে দারুণ একটি পোস্ট করেছেন ভাই। এতে অনেকে উপকৃত হবে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
প্রথমে আমি রুমাল বাহিনী কথা শুনে ভেবেছিলাম এটা মনে হয় কোন মুক্তিবাহিনী 😁 পরবর্তীতে বুঝলাম যে রুমালের সাথে মেডিসিন মিশিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে তার কাছ থেকে সমস্ত কিছু আত্মসাৎ করে যারা নিয়ে যায় মূলত তাদেরকেই রুমাল বাহিনী বলা হয়। সচরাচর এরকম দৃশ্য ঢাকা শহরেই বেশি ঘটে থাকে। আমিও আপনার মত গতকাল ফেসবুকে শাওন আপুর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পড়েছিলাম। যেটা ছিল খুবই মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক। আমি আপনার সাথে আরও একটি কথাই একমত পোষণ করছি সেটা হচ্ছে যে ধান থেকে যেমন চিটা সম্পূর্ণ আলাদা করা যায় না ঠিক তেমনি ভাবে মানুষের মধ্যে থেকে খারাপ মানুষদেরকেও আলাদা করা সম্ভব নয়। কিছু কিছু মানুষ থেকেই যাবে যারা সব সময় মুখোশ পড়ে মানুষের আড়ালে খারাপ কাজ করে যাবে।
ঠিকই বলেছেন ভাই আমরা যতটা না আপডেট হয়েছি আমাদের থেকে বেশি আপডেট হয়েছে চোর বাটপার গুলো। একসময় ঢাকা শহরে অজ্ঞান পার্টির বেশ ভালো আতঙ্ক ছিল কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় অজ্ঞান পার্টি বিলীন হলেও শুরু হয়েছে নতুন প্রতারণা। এই আপনি যেমন বললেন চোরাই ফোনের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার কথা। আরও কত প্রকার প্রতারণা রয়েছে।
আসলে ভাই আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অনেক জঘন্যতম কাজ হতো। এই পকেটমার অজ্ঞানপার্টি রুমাল ব্যবহার করা, এগুলো বেশি দেখা যেত। কিন্তু এখনকার সমাজ ব্যবস্থায় এইগুলো একটু কমে গেছে। তারপর রয়েছে।আগে আমরা গল্প শুনতাম যে আমাদের গ্রামের অমোক লোক অজ্ঞানপার্টির কবলে পরেছে। তার কাছে যত টাকা ছিল সব কিছুই নিয়ে নিয়েছে। এরকম ঘটনা আমাদের গ্রামে ঘটেছিল। গরুর ব্যবসায়ী রহিম চাচার সাথে গাবতলীতে গরু বিক্রি করে বাড়ি আসছিল। বাড়ি আসার পথে অজ্ঞান পার্টির তার মুখে রুমাল দিয়ে টাকা সব নিয়ে যায়।এই বিষয় গুলো সত্যি অনেক দুঃখজনক। একদম অসহায় করে দেয়। আপনার নানার ক্ষেত্রে এরকম হয়েছিল। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার মানুষ নিজের জন্য, নিজের টাকা উপার্জনের জন্য কত খারাপ কাজ করতে পারে, সেটা ভাবা যায় না।
ঠিক বলেছেন ভাই দিন দিন এই প্রোতারক রারা অনেক উন্নত হয়ে যাচ্ছে। তবে আপনার নানার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। আমারও একটি বন্ধু কিছুদিন আগে মলম পার্টির খপ্পরে পরে ছিল বাসের মধ্যে। তার পকেটে থাকা ফোন, টাকা সবকিছু নিয়ে গিয়েছে। এসব আসলেই খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। তবে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে সতর্কতার কোন মার নেই। তবে আপনি সর্বশেষ মোবাইল ফোনের ঘটনাটি বললেন এই রকম একটি ঘটনা আমার সাথে ঘটেছিল। ২০১৬ সালের দিকে গুলিস্তান থেকে, তখন তো আর এত কিছু বুঝতাম না ভাই, ৫০০ টাকা মেরে দিয়েছে আমার।
দিন দিন আমাদের জীবন যাত্রার মান যেমন উন্নত হচ্ছে ঠিক তেমন প্রতারণার ধরন পাল্টে যাচ্ছে। বর্তমান যুগের সবকিছুই যেন আপডেটেড। মুখোশের আড়ালে কে কখন অঘটন ঘটিয়ে চলে যাবে একদম বলা মুশকিল। এরা এতোটাই ধূর্ত যে কখনো কখনো সচেতন থেকেও কোন লাভ হয় না। তবুও সবকিছু মিলিয়েই চলতে হচ্ছে আমাদের। বড্ড নিষ্ঠুর এই বাস্তবতা।
ভাইয়া রুমাল বাহিনী সম্পর্কে আমি কিছুটা জানি। গত দেড় বছর হতে চলেছে আমার মামা এই রুমাল বাহিনীদের খুব পড়েছিল। আমার মামাকে অজ্ঞান করেছিল বাসের মধ্য থেকে। সত্যি কথা বলতে ভাইয়া আমাদের মানব সভ্যতা যত আপডেট হচ্ছে, মানব সভ্যতার নেতিবাচক দিকগুলো আরো বেশি আপডেট হচ্ছে। আর আমরা বিভিন্ন দিক থেকে চোর বাটপারদের কাছ থেকে প্রতারিত হচ্ছি। তবে এমন একদিন আসবে, প্রতারকরা প্রতারকের নিকট থেকেই প্রতারিত হবে।
সুপার একটিভে চলে গেছেন এখন কার চোর বাটপাররা।তারা সত্যি অনেক আপডেট মানুষ কে প্রতারনার চক্করে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা ফোন।আপনার নানা এই প্রতারনার বেড়া জালে পরছিলেন শুনে খুব খারাপ লাগছিলো ভাইয়া সে ভয়ে আর একা কোথাও যায় না।এই রকম সচেতন মূল্যক পোস্ট পড়ে নিজেকে এই প্রতারকের হাত থেকে বাঁচানো থেকে সাবধান হতে পারবো। রুমালে মেডিসিন নিয়ে অজ্ঞান করাে সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা অনেক শুনেছি। গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
শাওন এর বিষয়টা জাস্ট আমি মাত্রই নিউজে দেখলাম।তাদের সাথে এসব হলে,এখন আর আমাদের সাথে আর কি হবে!!