চেম্বার কথন: বুকে বাতাস জমা (Pneumothorax) এক রুগীর গল্প!
বুকে বাতাস জমা (Pneumothorax) এক রুগীর গল্প!
২৮ বছর বয়স্ক একজন যুবক। হালকা-ভারি বিভিন্ন রকম কাজই করা লাগে। এক সন্ধ্যায় কাজ করার সময় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। খুব বেশী তীব্র ব্যথা না, আবার কমও না। পরে দিন ডাক্তারের শরনাপন্ন হন আমারই ক্লিনিকে। লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় ডাক্তার বুকের একটা ইসিজি করান। সেটাতে কোন সমস্যার ধরে পড়ে না। অর্থাৎ বুকের ব্যথাটা হার্টের কারণে না। একটা ব্যথানাশক এবং গ্যাসের ওষুধ দেয়া হয় তাকে।
প্রথম ভিজিটের দুইদিন পর আবার উনি এসে হাজির। এবার পড়েছেন আমার ভাগে! ওষুধ খেয়ে ব্যথাটা পুরাপুরি না গেলেও কিছুটা কমেছে বললেন। সাথে নতুন একটা সমস্যার উদয় হয়েছে। একটুতেই হাপিয়ে যাচ্ছেন বিগত ২ দিন ধরে। আগের মতই একই কাজই করছেন। কিন্তু অল্পতেই হাপ লেগে যাচ্ছে। একটু দ্রুত হাটাচলা করলেও হাপ লেগে যাচ্ছে। কাহিল মেরে যাচ্ছে শরীর!!
উনি শান্ত ভাবেই চেয়ারে বসে আসেন। শ্বাসকষ্টের কোন নমুনা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না। শারীরিক পরীক্ষা করা শুরু করলাম। রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেন এর মাত্রা (Pulse Oximeter দিয়ে), পালস, তাপমাত্রা সবই ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা পেলাম বুকে নল লাগিয়ে (Stethoscope দিয়ে)। বুকের ডান পাশ এবং বাম পাশ সমান না। ডানপাশে সমস্যা মনে হলো। একটা এক্সরে (Chest X-ray) করা লাগবে, বললাম। রাজি হলেন।
এক্সরে তে দেখা গেল যে উনার ডান পাশের ফুসফুস একেবারে চুপসে গেছে। ফুসফুসের বাইরে (বুকের ভিতর) বাতাস জমে ফুসফসকে চাপ দিয়ে একেবারে ছোট করে ফেলেছে [নিচে এক্সরে এর ছবি আছে]। ফলে উনার ডান ফুসফুস অকেজো হয়ে আছে।শুধু বাম ফুসফুস দিয়ে বাতাস আদান-প্রদানের কাজ চলছে। এজন্যে কাজের সময় কিংবা হাটা-চলার সময় যখন শরীরের অক্সিজেন ডিমান্ড (Oxygen demand in the body) বেড়ে যাচ্ছে তখন এক ফুসফুস সেই ডিমান্ড পুরণ করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে হাপ লেগে যাচ্ছে।
এই সমস্যার চিকিৎসা হচ্ছে দ্রুত ভিত্তিতে বাতাস বের করার ব্যবস্থা করা, যেটা আমার ক্লিনিকে সম্ভব ছিল না। হাইয়ার সেন্টার এ (High center) যেতে হবে। তাকে বিষয়টা বললাম। উনি আবার উনার ফোরম্যান কে (Foreman of his comany) ডেকে আনলেন। তাকেও বিষয়টা বললাম এবং ইমার্জেন্সি ভাবে বড় হাসপাতালের যাওয়ার তাগিদ দিলাম। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো তাকে ওমানে চিকিৎসা না করিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিবে কোম্পানি। আমি আমার কর্তব্য হিসাবে একটা জরুরী রেফারেল লেটার (Emergency referral letter) লিখে দিলাম বড় হাসপাতাল যাওয়া জন্যে। উনারা বিদায় নিলেন!
এই গল্পের আলোচ্য রোগ বুকে বাতাস জমা (Pneumothorax) সম্পর্কিত কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ এখানে আজ আমরা শুধু রুগীর এক্সরে টা দেখব এবং নিউমোথোরাক্স টা কি জিনিস তা জানব। এই ছবিটি উপরে উল্লেখিত রুগীর এক্সরে।
ছবি লক্ষ্যকরুন। দুইটা ফুসফুসেরই সীমানা লাল রঙ দিয়ে হাইলাইট করা হয়েছে। বাম ফুসফুস স্বাভাবিক কিন্তু ডান ফুসফুস অনেক ছোট। হলুদ রঙ দিয়ে দেখানো হয়েছে ডান ফুসফুসের সীমানা কোথায় থাকার কথা ছিল। লাল এবং হলুদ লাইনের মাঝে পুরোটাই বাতাস জমে গেছে।
এই YouTube animation Video টা দেখতে পারেন। বাতাস জমার বিষয়টা ক্লিয়ার বুজতে পারবেন আশা করি।
অথবা, বুকে বাতাস জমা রোগ সম্পর্কে জানতে এই ভিডিওটা দেখতে পারেন। এটা বাংলা ভাষায় বর্ণনা করা একটা ইউটিউব ভিডিও।
ওকে। আজকে এ পর্যন্তই। আশা করি কিছু নতুন তথ্য পেয়েছেন আমার পোস্ট থেকে। কোন পরামর্শ বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন। ভাল থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ
ডা. হাফিজ
ওমান
চেম্বার কথন সিরিজের পূর্ববর্তী পোস্টঃ
একজন হাউজমেইডের (Housemaid) গল্প যিনি তার চাকরি হারানোর দ্বারপ্রান্তে
ফরনিয়ার গ্যাংগ্রীনে আক্রান্ত এক রুগীর গল্প
পেশাব এবং তলপেটের ব্যথা নিয়ে আসা এক রুগীর গল্প
আমি ডা. হাফিজ। ঢাকার একটা মেডিকেল থেকে ডাক্তারী পাশ করেছি। ২০১৪ সাল থেকেই দেশের বাইরে আছি। শুরুতে ২ দুই বছর ছিলাম মালদ্বীপে। তারপর থেকে ওমানে আছি গত ৭ বছর ধরে। এখানে একটা পলিক্লিনিক এ জি.পি. ডাক্তার হিসাবে কর্মরত আছি বর্তমানে।
My Discord ID: hafiz34#3722
জ্বী ভাই, বেশ সুন্দরভাবে বিষয়টি যেমন উপস্থাপন করেছেন ঠিক তেমনি বুকে বাতাস জমা সম্পর্কিত দুটো ভিডিওর লিংক দেয়াতে সেটা আরো বেশী সহজ হয়েছে বুঝতে। অনেক ধন্যবাদ ।
শুনে ভাল লাগলো ভাই।
চেস্ট থাকবে এরকম পোস্ট চালিয়ে যাওয়ার, ইনশাআল্লাহ।