শৈশবের গল্প: "আরেকটু হলেই শূর্পণখা"
নমস্কার
শৈশবের গল্প: "আরেকটু হলেই শূর্পণখা"
আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এতটাই খারাপ স্মৃতি হয়ে যায় যেটি খুবই বেদনাজনক হয়ে পড়ে।সুতরাং সেই মুহূর্তগুলি কখনোই ফিরে পেতে চাই না।তেমনি শৈশবে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে।প্রথমেই বলে রাখি এটি দুষ্ট ছেলের কাজ,হয়তো সে তখন অবুঝ ছিল। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের গল্পখানি।তো চলুন শুরু করা যাক এই গল্পের মূল ঘটনা--
কি বন্ধুরা!
টাইটেলে শূর্পণখা নাম দেখেই কিছুটা অবাক হয়েছেন।আসলে শূর্পণখা নামের সঙ্গে কম-বেশি সকলেই পরিচিত।তবুও যারা জানেন না তাদেরকে বলি,শূর্পণখা নামের অৰ্থ হচ্ছে-- কুলোর মতো নখ।অর্থাৎ মহর্ষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণের একটি চরিত্র৷ তিনি ছিলেন রামায়ণের লঙ্কার রাজা রাবণের ভগিনী।
শরতের মাঝামাঝি সময়।হঠাৎ করেই বৃষ্টির আগমন দেখা যায় সেই সময়ে।তো তেমন-ই একদিন এক বৌদি হাস ও মুরগির খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় আমাদের বাড়িতে আসলো ধানের কুঁড়ো কিনতে।আমাদের বাড়িতে মা ও অল্প টাকার বিনিময়ে প্রায় আধ বস্তা কুঁড়ো দিলেন সেই বৌদিকে।বৌদির বাড়ি আমাদের পুরোনো বাড়ির পাশে অর্থাৎ আগে আমার ঠাকুরদা যেখানে বসবাস করতেন।পরে অবশ্য একেবারেই সস্তা দামে বাড়ির অন্য লোকদের কাছে বিক্রি করে নতুন ভিটায় চলে আসেন।যাইহোক পুরোনো বাড়ির ঠিক মূল রাস্তার পাশে ওই বৌদির বাড়ি।
তবে মুশকিল বাঁধলো দামের সময়।বৌদি বললো,,,আমি তোফG টাকা নিয়ে আসেনি।তাই জোর করে বৌদি মাকে রাজি করালেন তাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।অর্থাৎ আমাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে টাকা দিয়ে দেবে।অনেক্ষন পর মা রাজি হলেন এবং আমাকে যেতে দিলেন বৌদির সঙ্গে।আমাদের বাড়ি থেকে বৌদিদের বাড়ির খুব বেশি দূরত্ব নয়।যাইহোক পথের মাঝে আসতে না আসতেই ঝিমঝিম করে বৃষ্টি শুরু হলো।
বৌদির বাড়িতে এসেই দেখি,বৌদির ছোট্ট ছেলে খাটে ঘুমিয়ে রয়েছে।5-6 বছরের হবে ছেলেটির তবে এতটাই দুস্টু যে কল্পনার বাইরে।কিছুক্ষনের মধ্যেই তার ঘুম ভেঙে যায়,বৌদি আমাকে কিছু একটা খেতেও দিয়েছিলেন।যাইহোক মাটির দেওয়াল ঘরের মাঝবরাবর অংশে খাটের পাশে রয়েছে একটি জানলা।যেটা আবার খোলা কাঠের তৈরি ভারী জানলা।ছোট্ট ছেলেটির ঘুম ভেঙে গেলে সে খুবই দুস্টুমি করে।আমি তখন সেই খাটে জানলার পাশে বসে বৃষ্টি উপভোগ করছি।ছাতা নিয়ে যায় নি তাই বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করলাম।হঠাৎ দুস্টু ছেলে জানলার উপর উঠে লাফালাফি শুরু করে দিল।কে জানতো খোলা জানালা---!ওমনি খোলা কাঠের ভারী জানলা শপাং করে এসে পড়লো আমার নাকের ডগায়।আমি তখন ঐ বৌদিকে ডেকে বললাম দুস্টুমির কথা।তখন বৌদি ছোট্ট ছেলেকে শাসন করলো কারন আমিও তখন খুব বেশি বড় নই।তাই প্রথম দিকে হালকা ব্যথা অনুভব হলো।
এরই মধ্যে বৃষ্টি থামছে না বলে ছাতা মাথায় আমার দাদা আমাকে নিয়ে আসতে গেল।তারপর বললো দিদিমা অর্থাৎ আমার মায়ের মা বেড়াতে এসেছে।সঙ্গে অনেক বিলিতি আমড়া এনেছে,দাদা তো সেটা খেতে খেতেই চলে আসলো।সেই আনন্দে আমি বাড়িতে যাওয়ার জন্য উৎসুক হলাম।ওদিকে বৌদি তো খুবই থাকার কথা বললো।কিন্তু কুঁড়োর টাকা নিয়ে আমার দাদার সঙ্গে আমি বাড়ি ফেরত আসলাম।ওদিকে আমার নাকের বেহাল দশা ,ফুলে ফেঁপে টইটুম্বুর।মা তো খুবই চিন্তিত হলেন যে পাঠানো-ই উচিত হয়নি আমাকে।ভাবতে পারছেন ,আরেকটু হলেই আমার নাক কেটে পড়ে যেতে পারতো।নাহলে বড় ঘটনা ঘটতে পারতো,যাইহোক তখন কুলোর মতো নাক হয়ে যেত।তবে এমন কিছু ঘটেনি তাই শূর্পণখা নাম থেকে রক্ষা পাওয়া আরকি।তো এটাই ছিল আমার শৈশবের গল্প।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং: "শৈশবের গল্প" |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
টুইটার লিংক
দুষ্টামির মাঝেই বড় অঘটন ঘটে যায় যেমন জানালা চিপায় নাক পড়ে আপনার নাকের বেহাল দশা হয়েছিল। কিছু কিছু বাচ্চারা ছোটবেলায় এত দুষ্টু থাকে সেটা আর বলার নয়, যাই হোক আপনার ছোটবেলার গল্পটা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
একদমই তাই।আসলে ওই ছেলেটি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট হলেও খুবই দুস্টু ছিল।ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার এই ছোটবেলার গল্প করে খুব ভালো লাগলো। আসলে আমাদের ছোটবেলায় বিভিন্ন ধরনের সুন্দর গল্প রয়েছে৷ তার মধ্যে কিছু ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ হয়তো কিছু অভিজ্ঞতা ভালো আবার কিছু অভিজ্ঞতা খারাপ৷ আজকে আপনি ঠিক সেরকম একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন৷ আসলে ছোটবেলায় আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই অনেক দুষ্টু থাকে৷ তার কারণে আপনার নাক জানালার চিপায় পড়ার কারণে আপনার নাকের খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল৷ আসলে ছোটবেলায় এরকম অনেকেরই অনেক কিছু হয়েছে৷ আমারও ছোটবেলায় সাইকেলের চাকার ভেতরে পা ঢুকে গিয়েছিল৷ যার ফলে আমি অনেকটাই কষ্ট পেয়েছিলাম৷ অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর শৈশব গল্প শেয়ার করার জন্য৷
ঠিক বলেছেন, শৈশবের কিছু ঘটনাগুলি খুবই কষ্টের।ধন্যবাদ আপনাকে।
শূর্পণখাৃ নাম থেকে রক্ষা পাওয়া এটা লেখা দেখার পর বার বার হাসি পাচ্ছে।যদিওবা ঘটনাটি বেদনাদায়ক কারণ অনেক বড়ো ধরনের দূর্ঘটনায় পড়তে পারতেন। একদমই ঠিক বলেছেন আপনি আমাদের শৈশব সুন্দর হলেও মাঝে মাঝে কিছু শৈশবের স্মৃতি ভয়ংকর হয়ে থাকে।গল্পটি ভালোই লাগলো।ধন্যবাদ আপনার শৈশবের ঘটনাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
সত্যিই দিদি,বেঁচে গেছি ঈশ্বরের কৃপায়।ধন্যবাদ আপনাকে।