শৈশবের গল্প: "প্রথম মায়ার যন্ত্রনা"
নমস্কার
শৈশবের গল্প: "প্রথম মায়ার যন্ত্রণা"
আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এতটাই মায়াবী স্মৃতি হয়ে যায় যেটি খুবই বেদনাজনক হয়ে পড়ে।সুতরাং সেই মুহূর্তগুলি কখনোই ফিরে পেতে চাই না।তেমনি শৈশবে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া মায়ার একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে।প্রথমেই বলে রাখি এটি ইচ্ছেকৃত নয়,হয়তো সেটা নিয়তির পরিণাম। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের গল্পখানি।
মায়া হচ্ছে অদ্ভুত একটা জিনিষ ।অর্থাৎ কোনো কিছুর প্রতি অতিরিক্ত টান বা ভালোবাসার আরেক নাম মায়া।মায়া খুবই খারাপ একটি জিনিস,যা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব হয়ে যায়।তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক----
আমি তখন অনেক ছোট।মায়া জিনিসটা কি! সেটা সবে বুঝতে শিখেছি ওই ঘটনার মধ্যে দিয়ে।অর্থাৎ আমার হৃদয়ের প্রথম আন্দোলন, প্রথম নাড়া দেওয়া কিংবা প্রথম ধাক্কা খাওয়ার গল্প এখান থেকেই শুরু বলা চলে।
সময়টা গ্রীষ্মের মাঝামাঝি।বিকেলের ফুরফুরে হাওয়া মনকে জুড়িয়ে দেয়।আমাদের বাড়ি প্রায় আড়াই বিঘা জমি নিয়ে তৈরি।এমনটা শুধু আমাদের নয় বরং অন্যান্য কাকা-জেঠুদেরও এমন বড় বড় ভিটা রয়েছে।যাইহোক আমরা আমাদের ভিটায় বিভিন্ন ফলমূলের গাছের সঙ্গে কিছু বাঁশ ঝাড়ও লাগিয়েছিলাম।অর্থাৎ বাবা মোট 15 টি ছোট ছোট বাঁশ ঝাড় লাগিয়েছিল।গ্রীষ্মের সময় বাঁশের পাতা ঝরে পড়ে মাটিতে।মা সেগুলো কুড়াতে যায় ঝাড়ু দিয়ে সঙ্গে আমিও।খসখসে পাতা কুড়াতে কুড়াতে একসময় একটি পাখির বাচ্চা কুড়িয়ে পাই আমরা।আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম--মা এটা কি পাখি?
পাখি দেখেই মা বললো---- গৃহস্থের কুহু কু পাখি।বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে পাখির বাসা খুঁজে পেলাম না।এদিকে চারিদিকে ভয়াবহ প্রাণীর অভাব নেই।কখনো চিল কিংবা কাক আবার কখনো মাটিতে কুকুর কিংবা সাপের উপদ্রব রয়েছে।তাই আমি বাহানা করলাম যে এটা ঘরে নিয়ে যাবো।মা তো প্রথমে নিষেধ করছিলো পরে বললো ঠিক আছে।বাড়ি এনে আমি পাখির বাচ্চাকে চাউলের খুদ ও জল খেতে দিলাম।তারপর একটি মাটির পাত্রের ভিতরে খড় জড়ো করে বাচ্চাকে রেখে দিলাম।
রাত কাটলো,পরের দিন সকালে উঠেই বাচ্চাকে দেখলুম।রাতে যেন ঘুম এলো না পাখি পোষার চিন্তায়।যাইহোক তখনো পাখির বাচ্চা ঠিক রয়েছে তাই আবারো খেতে দিলাম।মা তো এবার বললেন--যেখানে পেয়েছি সেই বাঁশঝাড়ের নীচে যেন বাচ্চাকে রেখে দিয়ে আসি।তাহলে বাচ্চার মা এসে নিয়ে যাবে।কিন্তু আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না,তবুও খুবই অল্প সময়ের জন্য রেখে এসে পাহারা দিলাম ওর মা আসার জন্য।কিন্তু দেখলাম না আসেনি,তাই আমার মাথায় ভূত চাপলো পাখি পোষার।তাই আবারো নিয়ে আসলাম, মা তো খুবই বকাঝকা করলো।মারা যাবে এটাও বললো---তবুও ওই যে ছোট্ট মনে আমাকে আর কে ঠেকায়।আমি তো পাখির বাচ্চার খেয়াল নিয়েই ব্যস্ত।
এভাবে কয়েক দিন কেটে গেল।বাচ্চাটি নেতিয়ে পড়ছে।অবস্থা খারাপ দেখে ভয় পেলুন ,তাই তেঁতুল গাছের ডালে দিয়ে আসলাম।যদি তার মা এসে তাকে নিয়ে যায় কিন্তু আশপাশ দিয়ে ডাকাডাকি করলেও তার মা যেন দেখতেই পাচ্ছে না তাকে।মনটা হালকা খারাপ হয়ে গেল, এভাবেই তেঁতুল গাছের ডালে থাকতে থাকতে বাচ্চাটি মারা গেল।দেখতে দেখতে তার দেহটি রোদ-বৃষ্টির মধ্যে কঙ্কালে পরিণত হলো।ছোট্ট মনের প্রথম আঘাত পেয়ে আমি তো কেঁদে গড়াগড়ি।মনকে কিছুতেই সান্ত্বনা দিতে পারছিলাম না।শুধুই মনে হচ্ছিল, আমিই মেরে ফেলেছি বাচ্চাটিকে।আর কখনো কিছু পুষবো না,এখনো মনে পড়ে শৈশবের সেই দিনের কথা।
কালো ও হলুদ রঙের সমন্বয়ে গঠিত পাখিটির নাম হচ্ছে বেনে বউ, ইস্টি কুটুম,সোনা বউ কিংবা কুটুম পাখি।বড় হয়েই সেটা জানতে পেরেছিলাম,খুবই খারাপ লাগে এখনো সেই দিনের কথা মনে পড়লে।সেই থেকেই হয়তো আমার মনে মায়ার যন্ত্রণা প্রথম শুরু হয়েছিল।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং: "শৈশবের গল্প" |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
টুইটার লিংক
দিদি কোথাও একটু মিসটেক আছে যদি একটু ঠিক করে নিতেন, গল্পের মূল অংশটা মিস্টেক আছে সম্ভবত।
দুঃখিত ভাইয়া, এখন ঠিক করে দিয়েছি।আপনি কষ্ট করে একটু দেখে নিতে পারেন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক আছে দিদি।
😊
আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে দিদি শুধু পাখি কেন বাড়িতে যেকোন জিনিস পুষলে অনেক মায়া লাগে।তবে এখানে আপনার কোন দোষ ছিল না যেহেতু আপনি পাখিটিকে রেখে এসেছিলেন তার মা নেয়নি। আসলে আপু আমার মেয়েটা ও এমন পাখি অনেক পছন্দ করত।যাইহোক মৃত্যুর কাছে কারো হাত নেই। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপু, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
শৈশবের এরকম স্মৃতি কমবেশি সকলের আছে। আপনি আপনার মায়ের সাথে পাতা কুড়াতে গিয়ে পাখির বাচ্চা পেয়ে নিয়ে এসেছেন। আসলে মা পাখিটি ওকে তো বাসায় তুলতে পারতো না কারণ বাচ্চা পাখিটি তো উড়তে পারে না।ওখানে পড়ে থাকলে খেয়ে ফেলতো পশুরা।আপনি তো অনেক যত্ন করেছিলেন কিন্তুু ওদের মা পোকামাকড় খাওয়ায় ওদের পুষ্টির জন্য। আমরা মানুষেরা তো তা পারি না।সেজন্য বাচ্চা পাখিটি দূবল হয়ে গিয়েছিল। তাছারা ওর মায়ের শরীরের তাপ প্রয়োজন ছিলো।আসলে এরকম ঘটনা গুলো কষ্ট দেয়। ভালো লাগলো শৈশবের স্মৃতিচারন করে পোস্ট টি করার জন্য।
ঠিক বলেছেন দিদি,ওইসময় মায়ের তাপমাত্রার প্রয়োজন ছিল বাচ্চাটির।তাছাড়া ওদের খাবার আমরা কখনো ঠিকভাবে দিতে পারবো না।
মায়া মানুষ কে কখনো ভালো থাকতে দেয় না। মায়ার যন্ত্রনা বড়ই খারাপ যন্ত্রণা। আপনি কুড়ে পাওয়া পাখি কে অনেক আদর যত্ন করে পুষেছিলেন। হঠাৎ বাচ্চা টি তেঁতুল গাছের মধ্যে মারা যায়। তখন আপনি অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন। আসলে খুব আদর যত্নে গড়ে উঠা জিনিস গুলো বেশি দিন স্থায়ী হয় না। আপনার গল্প টি পড়ে আমার অনেক বেশি খারাপ লাগলো।
ভাইয়া, বাচ্চাটি দুর্বল হচ্ছে দেখে তেঁতুল গাছে রেখেছিলাম।যদি তার মা এসে নিয়ে যায় ডাল থেকে এইজন্য, কিন্তু আফসোস।
দিদি আপনার সাথে আমি একমত পোষন করছি ৷ আসলে মায়া জিনিসটা হলো আমার কাছে এইরকম ছাড়তেও ইচ্ছা করে না সহ্যও হয় না।আবার ছেড়ে গেলে ভিষন কষ্ট।
যেটা আপনার মধ্যে খুজে পেলাম ৷
আমিও ছোট বেলায় পাখি পুষি কিন্তু আপসোস পাখিটি মরে যায় ৷ তখন সত্যি খারাপ লাগে ৷
তবে আপনার দোষ ছিল দিদি ৷ কুড়িয়ে পেয়ে নিয়ে গেছেন আবার তার মাকে দেওয়ার রেখেও এসেছেন ৷ কিন্তু পাখিটি মা আসে নি ৷
আপনার ওই শৈশব জীবন যতটা সায় দিছিল সত্যি অসাধারণ ৷
আপনার শৈশব জীবনের মায়ার যন্ত্রণার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷
আসলেই এই স্মৃতিগুলো অনেক বেশি কাঁদায়।
যখন কোন কিছুর উপর আমাদের মায়া বসে যায় তখন সেটির যদি কোন ধরনের ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে আমাদের অনেকটাই খারাপ লাগে এবং এই খারাপ লাগা থেকেই আমাদের মনের মধ্যে একটা কষ্ট বেড়ে উঠতে থাকে এবং এই কষ্ট যেন প্রকাশিত হয় না৷ আপনি কুড়িয়ে পাওয়া একটি পাখি যত্ন করে রেখেছিলেন এবং এটি যখন তেঁতুল গাছে গিয়ে মারা গেল, তখন আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন৷ আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমরাও অনেক কষ্ট হচ্ছে৷
এটা পড়ার পর আপনারও কষ্ট হচ্ছে এইজন্য আমি দুঃখিত ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ছোটবেলায় এরকম কোথাও পাখি গুলো দেখলে আমারও ইচ্ছে করত সেগুলোকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য এবং কি সেগুলোকে পোষার জন্য। ওই পাখির বাচ্চাটাকে তার মা নিয়ে যাচ্ছিল না তাই আপনি তাকে নিয়ে এসেছিলেন। পরবর্তীতে আরেকটা গাছের ডালে বসানোর পর, পাখিটা অনেক ডাকাডাকি করেছিল আর মারা গিয়েছিল শুনে খারাপ লাগলো। আসলে ছোটবেলায় এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে যেগুলোর কথা মনে পড়লে খারাপ লাগে।
আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ আপু।
পাখি পোষার প্রতি আমারও দুর্বলতা কাজ করে। তাই চেষ্টা করি সবসময় পাখি পুষতে। যাইহোক আপনার মা ঠিকই বুঝেছিলেন যে পাখিটি এভাবে বাঁচবে না। সেজন্যই নিষেধ করেছিল পাখিটিকে বাসায় নিতে। কিন্তু আপনি তো ছোট ছিলেন, তাই আবেগটা বেশি কাজ করেছে। প্রথম বার যখন বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন পাখিটাকে,তারপর হয়তোবা পাখির মা তাকে অনেক খুঁজেছে, কিন্তু পায়নি আপনি বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন বলে। তাই পরবর্তীতে পাখিটাকে তেতুল গাছের ডালে রেখে দেওয়ার পরেও,পাখির মা আর খুঁজে পায়নি তাকে। আসলে ছোটবেলার কিছু যন্ত্রণা সারাজীবন মনে থাকে। হয়তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেগুলো ভুলা যায় না। যাইহোক শৈশবের স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, এই যন্ত্রণা সারাজীবন বহন করতে হয়।ধন্যবাদ আপনাকে।