স্বরচিত গল্প: পরিতৃপ্তি (10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই অনেক ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের কৃপায়।আজ আমি আবারো হাজির হলাম নতুন একটি ভিন্নধর্মী ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে।আসলে মাঝে মাঝেই বাস্তব গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে।তো সেই ভালো লাগা থেকেই আমি আজ একটি গল্প লেখার চেষ্টা করলাম।আসলে এটি কোনো কাল্পনিক গল্প নয়,সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী গল্প।যেটি আমার নিজ চোখে দেখা।তো চলুন শুরু করা যাক গল্পটি--

IMG_20230207_034931.jpg
সোর্স

পরিতৃপ্তি:

চন্দ্রবাবু ছিলেন আমাদের গ্রামের বাসিন্দা।দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়েই তার জীবন।যদিও সবাই বিবাহিত এবং ছেলেপুলে নিয়ে সংসার জীবন অতিবাহিত করছে।পরিবারের সকলেই আমিষভোজী হলেও চন্দ্রবাবু ও তার স্ত্রী ছিলেন কয়েক বছরের নিরামিষভোজী।চন্দ্রবাবু ও তার স্ত্রীর বয়স হয়েছে।তবুও তার স্ত্রী বাড়িতে গরু-ছাগল দেখাশোনা ও ঠাকুরের নামকীর্তন করতেন।চন্দ্রবাবুর আবার বিভিন্ন রঙের কাগজ ফুল লাগানোর বেশ শখ ছিল।গ্রামে ফুল প্রিয় কোনো ব্যক্তি বাইরে বেড়াতে গেলে তাকে ও ফুলের চারা কিনে এনে দেওয়ার আবদার করতেন চন্দ্রবাবু।এছাড়া তিনি একটি ছোট্ট মুদি দোকানও চালাতেন সঙ্গে কিছু তুলসী গাছের ছোট বড় মালা গেথেও বিক্রি করতেন।একসময় দোকানটি বেশ চললেও এখন তেমন চলে না।এসবের পাশাপাশি চন্দ্রবাবুর আরো গুন ছিল যেকোনো গাছ কলম করতে পারতেন এবং শীতকালে খেজুর গাছ রসের জন্য কেটে তুলতেন।এটাই ছিল চন্দ্রবাবুর পরিচয়।


বেশ কয়েকদিন যাবৎ চন্দ্রবাবুর স্ত্রী অসুস্থ।যদিও দুই ছেলের সংসার অল্পদিন হলো আলাদা হয়েছে।তবুও ছোট ছেলের প্রতি প্রবল টানের জন্য চন্দ্রবাবুর স্ত্রী সেখানেই থাকতেন।আর চন্দ্রবাবু বড় ছেলের বাড়িতে।কিন্তু যখনই চন্দ্রবাবুর স্ত্রী শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন তখনই দুই সংসারে বাঁধলো ঝামেলা।চন্দ্রবাবুকে প্রতিনিয়ত কেউ নিরামিষ রান্না করে দিতে চাইলো না আলাদাভাবে।এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেল চন্দ্রবাবুর স্ত্রী খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।অনাদর ও অবহেলায় একদিন তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন।

চন্দ্রবাবুকে এখন থেকে নিরামিষ ছেড়ে আমিষ খেতে হবে।যদিও আমিষ খাওয়ার অভ্যেস তার আগে ছিল। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রথম দিকে এটা তার জন্য খুবই কষ্টের হয়ে উঠলো।চন্দ্রবাবুর শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে প্রতিনিয়ত বমি করার ফলে।তবুও বয়স হয়েছে না খেয়ে উপায় নেই।তাই আস্তে আস্তে চন্দ্রবাবু পুনরায় আমিষ জীবনে ফিরে গেল।প্রথমত মাছ খেতে আরম্ভ করলো।তারপর ডিম,মুরগির মাংস,খাসির মাংস ইত্যাদি।অবশেষে এই পরিতৃপ্তি তার সন্তানদের জীবনে ক্ষনিকের শান্তি ফিরিয়ে দেবে।

(পরিস্থিতি মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে অনেকখানি পাল্টে দেয়। জীবনের খেয়ালে সঙ্গিনীর গুরুত্ব অপরিসীম।সঙ্গিনীর অনুপস্থিতিতে সময় মানুষের অনিচ্ছাগুলিকেও প্রধান করে তোলে।)

আশা করি আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা গল্পটি ভালো লাগবে।পরের দিন আবারো নতুন কোনো ব্লগ নিয়ে হাজির হবো।ততক্ষণ সকলে ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸

অভিবাদন্তে: @green015

Sort:  
 last year 

আপু আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি বলেছেন আপু পরিস্থিতি মানুষের জীবনকে অনেক খানি পাল্টে দেয়।চন্দ্র বাবুর বেশ ভালোই ছিল কিন্তু তার স্ত্রী মারা যাওয়ায় তাকে নিরামিষ ছেড়ে আমিষ খেতে হলো।পরিস্থিতিতে সব কিছু পাল্টে দিতে হয় আরকি।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ আপু,আপনার সুন্দর মতামত তুলে ধরার জন্য।

 last year 

পরিস্থিতি অনেক সময় অনেক রকম হয়ে যায় যার জন্য অনেক কিছুই পাল্টে যায়। চন্দ্রবাবুর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর না পারতে ও আমিষ জাতীয় খাবারগুলো খেতেন। চন্দ্রবাবু আস্তে আস্তে পুনরায় আমিষ জীবনে ফিরে গেলেন। আপনার আজকের গল্পটি পড়ে সত্যি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। এরকম গল্প গুলো পড়তে আমার কাছে একটু বেশি ভালো লাগে। সম্পূর্ণটা এত সুন্দর ভাবে লিখেছেন যে বুঝতে অনেক সুবিধা হয়েছে।

 last year 

আপনার প্রশংসামূলক মন্তব্য পড়ে উৎসাহ পেলাম, অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া😊।

 last year 

কখন যে কার কি হয় কেউ জানে না। মানুষের জীবনে কখন হাসি কান্না হাজার কখনো নেমে আসে দূর সহ বেদনা। তাই ঠিক তেমনি একটি ঘটনাবুল কাহিনী নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন আজকে। যেখানে লক্ষ্য করলাম চন্দ্রবাবুর জীবন কাহিনী। আর এই কাহিনীর মধ্যে বাস্তবতার বিশেষ কিছু রূপ ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে বলবো সুন্দর উপস্থাপনা আপনার।

 last year 

ভাইয়া,পুরোটাই বাস্তব গল্প এটি।আমাদের বাড়ির পাশের,ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

চন্দ্রবাবুর গল্পটা পড়ে খারাপ লাগছে। স্ত্রী অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই পুরো চিত্রটা পাল্টে গেল! ছেলেরাও তাকে নিরামিষ খাওয়াচ্ছে। সমাজে এমন দৃশ্যগুলো দেখা যায়। চন্দ্রবাবুর স্ত্রী সুস্থ্য থাকলে হয়তো গল্পটা এমন নাও হতে পারতো।

 last year 

ঠিক বলেছেন, স্ত্রী বেঁচে থাকলে এমন হতো না।ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

খুবই দু:খজনক গল্প।বাবা মা সন্তানদের জন্য এত কিছু করে,অথচ বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে যায়।নিরামিষ খাওয়া শুরু করার পর আবার আমিষ খাওয়া শুরু করা যে কতটা কষ্টের তা আমি জানি।সুন্দর ছিল গল্পটি।ধন্যবাদ দিদি সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 last year 

একদমই তাই দাদা,অভ্যেসটাকেই পরিবর্তন করতে হয়।ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

গল্পটা পড়ে অনেক খারাপ লাগলো ৷ আসলেই জীবনে সঙ্গিনীর গুরুত্ব অনেক ক্ষানিই ৷ চন্দ্রবাবুর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিরামিষ ছেড়ে এখন আমিষ খেতে হচ্ছে ৷ এতো দিনের অভ্যাস পাল্টে ফেলে এখন শেষ বয়সে এসে আমিষ খেতে হচ্ছে সত্যিই বিষয়টি অনেক খারাপ লাগার ৷ তবে এটা বাস্তব এমন হচ্ছে অনেক ৷ যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য ৷

 last year 

বাস্তবে এমন ঘটে চলেছে অনবরত ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

দিদি আপনি আপনার গল্পের মধ্যে বাস্তব কিছু পরিবারের চিত্র তুলে ধরেছেন ৷ আসলে আমাদের সমাজে আশে পাশে এসব ঘটনা অনেক শোনা যায় ৷ দুই ছেলে থাকায় বাবা মাকে ভাক করে নেয়া ৷ আমরা সন্তানেরা ভুলে যাই বাবা মা কি জিনিষ ৷ কিন্তু পরিশেষে বুঝতে পারি যখন বাবা মা আর থাকে না ৷ আপনার গল্পে চন্দ্র বাবু অনেক কষ্টের অনুভুতি শেয়ার করেছেন ৷

 last year 

অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন, ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 66217.53
ETH 3316.11
USDT 1.00
SBD 2.70