শৈশবের গল্প: "আঙুল মচকানো সমাচার"
নমস্কার
শৈশবের গল্প: "আঙুল মচকানো সমাচার"
আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এতটাই আচমকা ঘটে যায় যেটি খুবই বেদনাজনক হয়ে পড়ে।সুতরাং সেই মুহূর্তগুলি কখনোই ফিরে পেতে চাই না।তেমনি শৈশবে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে।প্রথমেই বলে রাখি এটি ইচ্ছেকৃত নয় হঠাৎ ঘটে গিয়েছিল। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের গল্পখানি।তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক----
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা আমার অনেক পছন্দের।বিকেল চারটা বাজলেই তাই আমাদের বাড়ির পিছনে ইয়া বড় স্কুলের মাঠে চলে যেতাম খেলাধুলা করতে।কখনো মেয়েদের সঙ্গে বুড়ির চু,মাছফুল,দড়ি লাফ, ঘূর্ণচন্ডী কিংবা পাঁচ গুটি খেলা চলতো।তো কখনো কখনো আবার ছেলে মেয়েরা একসঙ্গে হাইজাম্প,লং জাম্প কিংবা ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় যোগ দিতাম।তবে ফুটবল খেলাতে বেশি মেয়েরা যোগ দিত না,শৈশবে আমি আর আরেকটি মেয়ে যোগ দিতাম দাদাদের সঙ্গে।এছাড়া আমাদের বাড়িতেও ছিল প্রচুর জায়গা এবং অনেক ছেলেমেয়ে।বিকেল হলেই তাই কখনো বাড়িতেও লুকোচুরি খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলা করা হতো।
শীতকালের এক বিকেলের কথা।বিকেলে যেহেতু মাঠে ফুটবল খেলা হতো তাই অন্য গ্রামের ছেলেরাও যোগ দিত তাতে।আর আমাদের বাড়ির পিছনে স্কুলের মাঠ হওয়ার দরুন ফুটবল রাখার দায়িত্ব পড়তো আমার দাদার উপর নয়তো আমার কাকার ছেলের উপর।সবাই মিলে অল্প অল্প করে টাকা দিয়ে ফুটবল কেনার বন্দোবস্ত করত।কোনো কারণে সেইদিন খেলা হয়নি,তবে ফুটবল ছিল আমাদের বাড়িতে।আমার দাদার পায়ে খুবই গতি তাই ফুটবলের শট মারেও ভালোই।খেলার কাউকে না পেয়ে আমাকে বললো---
চল, আমি বলের শট মারবো তুই হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করবি।
প্রথমত,আমি রাজি ছিলাম না কিন্তু দাদা আমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিতে বললো---হু,,, তুই পারিস না।তোর থেকে দোলন ভালো পারে।।
দোলন হচ্ছে আমার বড় জেঠুর ছোট মেয়ের ডাকনাম।আর ও আমার সাত মাসের বড় হলেও আমরা একই ক্লাসে পড়তাম।যাইহোক তখনই রাজি হয়ে গেলাম খেলা করতে।
প্রথমত একবার বলের শট ঠেকালাম,তারপর দাদা এমন প্রচন্ড গতিতে শট মারলো যে দুই হাত দিয়ে বল ঠেকাতে গিয়েই ডান হাতের বুড়ো আঙুল মচকে বল বেরিয়ে গেল বাইরে।আমি তো খুবই কান্না করলাম ,আর দাদা বললো মায়ের সঙ্গে না বলতে--
আমিও মাকে বললাম না কিছু,কিন্তু তীব্র ব্যথায় হাতের অবস্থা বেহাল।একটি আঙুলের জন্য গোটা হাত ফুলে গোডাউন হয়ে গিয়েছে।অনেক সাবধানে স্নান করে সকলের পরে খেতে বসতাম মায়ের চোখ এড়িয়ে,,, এইভাবে দুইদিন কেটে গেল।দুইদিন পর জেঠুর ওই মেয়ে খেলার জন্য আমাকে ডাকতে এলো।কিন্তু ও বারবার আমার ব্যথায় টনটন করা হাত ধরলে আমি একটু আস্তে, আঁ-----করে উঠলাম।তারপর ধীরে বললাম আমার এই হাত ধরিস না---ব্যথা হয়েছে।আর আমার মাকে বলবি না,,,কিন্তু আমি যত বারণ করছি ও ততই আমাকে ব্যথা দিচ্ছে হাত ধরে।আমার মা সবজি ক্ষেতে জল দিচ্ছিলেন বালতি ও বদনার সাহায্যে।যদিও বর্তমানে বদনার ব্যবহার হয় না কারন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।দোলন আমার মাকে বলে দিলে মা তো হাতের অবস্থা দেখে কষিয়ে আরো দুইখান চড় বসিয়ে দিলেন আমার পিঠে না বলার জন্য।আমি ততক্ষণে কেঁদে অস্থির,আর মা তখন মাটির উনানে সরিষার তেল ও লবণ হাতে গরম করে নিয়ে আমার হাতে মালিশ করে দিলো।কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যার একটু আগে দাদা বাড়ি ফিরে আসলে মা হাতের বদনা ছুড়ে দিলো দাদার পিঠে।এরপর দাদা ভয়ে দৌড়ে পালালো---
যদিও মায়ের মালিশে দুইদিনের মধ্যেই খুব ভাল-ই সুফল পেয়েছিলাম।এটাই ছিল আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি খন্ড চিত্রের গল্প।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং: শৈশবের গল্প |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
আসলে ছোটবেলার যেমন ভালো কিছু স্মৃতি রয়েছে। তেমনি হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কিছু খারাপ স্মৃতি ও রয়েছে। হঠাৎ করে আপনার সাথে এটা হয়েছে যা বুঝতে পেরেছি। যেহেতু বুড়ো আঙ্গুলে এরকমটা হয়েছিল তাই অনেক বেশি ব্যথাও করছিল। প্রথম দুই দিন আপনার আম্মুকে না বললেও পরবর্তীতে জেনে গিয়েছিল। মায়েরা মারলে ও যত্ন করে। প্রথমে যদিও আপনাকে না বলার জন্য মেরেছিল, কিন্তু পরে মালিশ করে দিয়েছিল। আপনার আম্মু মালিশ করার কারণে আপনার আঙ্গুল ভালো হয়ে গিয়েছিল জেনে ভালো লাগলো।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, মায়েরা সব-ই পারে।ধন্যবাদ আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
টুইটার লিংক
আসলে কিছু কিছু স্মৃতি সারাজীবন মনে থাকে। আমরা দুই ভাই ছোটবেলা থেকেই একসাথে ক্রিকেট, ফুটবল এবং বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। তো খেলতে গিয়ে আমার ছোট ভাই বেশ কয়েকবার ব্যথা পেলেও, বাসায় বলতাম না আম্মু মারবে বলে। আপনার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। যাইহোক শেষ পর্যন্ত আন্টির কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন তাহলে। আঙুল মচকে গেলে প্রচুর ব্যথা লাগে। ফুটবল খেলতে গিয়ে একবার পায়ের আঙুল মচকে গিয়েছিল আমার। তখন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম আমি। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সত্যিই ভাইয়া, আঙুলে ব্যথা লাগলে যেন সারতেই চায় না।আপনার অনুভূতি জেনেও ভালো লাগলো।
ছোটবেলায় এরকম ঘটনা সবার সাথে কম বেশি ঘটেছে আমারও একবার আঙ্গুলে এরকম সমস্যা হয়েছিল আম্মু সরিষার তেলের মালিশ দিয়ে দিত।
ছোটবেলায় যখন খেলতে যেতাম তখন আমার ভাইও আমার সাথে এরকম করত হা হা হা।
আপনার মাও তেল মালিশ করে দিতেন জেনে ভালো লাগলো, আসলে এটা যেন ব্যথাতে জাদুর মতো কাজ করতো।
আসলে শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে পরলে বেশ হাসিও পায় আবার কষ্ট লাগে। আসলে এরকম ব্যাপারগুলো মা বাবাকে জানানো উচিত, নাহলে বিপদ ঘটতে পারে। ভাগ্যিস আপনার মা জানতে পেরেছিলেন নাহয় সত্যিই খারাপ কিছু ঘটতে পারতো। আর মার টা কিন্তু পাওনা ছিলেন আপনারা 😄
সত্যিই ভাইয়া, এই ব্যথা পাওয়ার ব্যাপারগুলো দ্রুত জানানো উচিত নইলে খুবই গুরুতর অবস্থা হয়ে যায়।এইজন্য তো মা দুটো চড় ফ্রি দিয়েছিলেন☺️☺️
ছোটবেলায় এরকম আমার সাথেও কয়েকবার ঘটেছিল। যখন এই কথাগুলো আম্মুর কাছ থেকে লুকাতাম, তখন আম্মু পরবর্তীতে জানতে পারলে বকাঝকা করত। আপনি তো দেখছি আন্টির কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন। মায়েদের কাছে সব রকমের ব্যথার ওষুধ থাকে। আর আপনার আম্মু মালিশ করার পর আপনার আঙ্গুল ভালো হয়ে গিয়েছিল। আপনার দাদার পিঠে বদনা ছুড়ে মেরেছিল শুনে একটু হাসি পেয়েছে আমার। তবে যাই হোক ছোটবেলা এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে।
হ্যাঁ ভাইয়া, মায়ের হাতে যেন জাদু ছিল।দুইদিন সকাল ও সন্ধ্যা মালিশ করতেই যেন ম্যাজিকের মতো ব্যথা ও ফুলাভাব দূর হয়ে গেল।ধন্যবাদ আপনাকে।
ছোট বেলার মধুর কিছু স্মৃতির পাশাপাশি থাকে এ ধরনের কিছু কস্টের স্মৃতি। খেলতে গেলে এ ধরনের ব্যাথা পাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল আমাদের সময় । আর লুকিয়ে রাখা ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার । কেননা মা বাবা জানলে খেলতে দিবে না যে! মায়ের চোখ কি আর ফাঁকি দেয়া যায় ধরা পরবেই। এবং উল্টো মার খেতে হতো না বলার জন্য। এখন এ স্মৃতিগুলো মনে পরলে বেশ আফসোস হয়। যদি ফিরে পেতাম সেই দিন গুলো। ধন্যবাদ শৈশবের একটি ঘটনা শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু,তবে লুকিয়ে রেখেই আমরা ভুল করতাম।কারন ওই মুহূর্তের ছোট ছোট ব্যথাগুলি যেন বড় বেলায় অনুভূত হয়।