নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১৪
মনা খাঁ মেয়ের ঘরের নাতনি ও নাতিন জামাইয়ের সাথে কড়াইল বস্তিতে থাকেন। নাতিন ময়না গুলশানের এক বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ করেন। নাতিন জামাই মতিন রিক্সা চালান। ময়না মতিনের দুই মেয়েকে সারাদিন দেখা শোনা করা মনা খাঁর কাজ । দুই কিশোরীকে সামলানো দুরূহ কাজ । চড়ুই পাখির মতো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে যায় আর আসে। বস্তির ভিতর একটি বেসরকারি স্কুলে একজন চতুর্থ শ্রেণি আরেকজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আশিবছর বয়সী মনা খাঁ চোখে কম দেখেন, কানে কম শোনেন, চলাফেরায় শক্তি পান না। মুহূর্তে ময়নার মেয়েরা মনা খাঁকে বোকা বানাতে পারে । ময়না এসব নিয়ে নানার সাথে রাগ করে । মনা খাঁ নাতিনকে বলেন, কলির যুগ বইন। আমি আদিকালের মানুষ। অগো লগে পারা আমার কাম না । সত্তর বছর আগে মনা খাঁর পুর্বপুরুষেরা ভোলা সামাইরে বসবাস করতো ।
তাঁদের চাষের জমি ছিল। আম কাঁঠাল তাল নারিকেলের বাগানে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি এখনো চোখের সামনে ভাসে। তখনকার ডিআইটি ভোলা গ্রামের বসতবাটি, জমিজিরাত অ্যাকোয়ার করে গুলশান বানায়। ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে বাপ চাচারা কি করেছিলেন তার হদিস মেলেনি। তবে একে অপরকে দোষারোপ করে ঝগড়াঝাঁটি করতেন এটা মনে আছে। গুলশান দুইয়ের পূর্বদিকে বহুতল ভবনের দক্ষিণ দিকে মনা খাঁর বাড়ি ছিল। নাতিন জামাই মতিন মিয়ার রিক্সায় করে মাঝেমধ্যে গুলশান আসেন পৈতৃক ভিটেমাটির গন্ধ পেতে । বড় বড় দালান কোঠার দিকে তাকিয়ে ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করেন। নাতিন জামাই মতিনকে বলেন, একদিন গুলশানে আমাদের বাড়ি ছিল। চেনা জায়গা কেমন করে অচেনা হয়ে গেল । ময়না কাজ করেন গুলশানের এক বাসায়। তাঁর কাজ দরজা জানালা, আসবাবপত্র মোছা। সকালে কাজে যান বিকেলে বস্তিতে ফেরেন। প্রায় দিনই দরদী গৃহকর্ত্রী ময়নাকে বাসায় যাবার সময় কিছু খাবারদাবার দেন। আগে মেয়েরা খাবার দেখলে দৌড়ে আসতো। এখন তেমন একটা আগ্রহ করে না।
সাবিনা ঢাকার নামকরা কলেজে অনার্স পড়ছে। এই সাহসী মেধাবী তরুণী মাত্র দুটো টিউশানি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারেন। গত বছর কোভিড-১৯এর আক্রমণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সাবিনা গ্রামের বাড়িতে চলে আসলেন । টেলিভিশনে করোনা আতংকে মানুষের মধ্যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন। ফেসবুকে দেখলেন ঢাকায় করোনা রোগীর সেবার জন্য সেবাকর্মী আবশ্যক। তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে হতাশ হলেন, কারণ তার কোন ধরনের প্রশিক্ষণ নেই । সেবাগ্রহীতারা বেশি টাকায় অদক্ষ সেবাকর্মী নিতে রাজি হচ্ছে না ।
অবশেষে একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সুলতানাকে অনুরোধ করে বলেছেন, বায়োডাটা দিয়ে রাখলাম যদি কখনো প্রয়োজন মনে করেন তবে একটা ফোন করবেন প্লিজ।' রাত দশটার দিকে সুলতানা ডা. মুনিরার ফোন পেলেন, সুলতানা আপা আমার মায়ের কোভিড-১৯ পজিটিভ, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। একটা মেয়ে দিন প্লিজ । সুলতানা- আপা আমার হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন মেয়ে নেই । যাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাঁরা যেতে চায় না । আপনি চাইলে প্রশিক্ষণ ছাড়া একটা মেয়ে নিতে পারেন। মুনিরা- এই মুহূর্তে আমার সাথে একজন সাহসী মেয়ে দরকার। প্রশিক্ষণ আমি দিয়ে নেব । সুলতানা- আপা মেয়েটা গাজীপুরের কাপাসিয়া থাকে । আমি ওঁর সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি। মুনিরা- আসতে রাজি হলে আমি গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে আসবো। অবশেষে ভোর পাঁচটায় সাবিনা মুগদা হাসপাতালে ডাক্তার মুনিরার কাছ থেকে তাঁর মাকে বুঝে নিলেন । মুনিরা কেবিনে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community