শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ১০

in #post5 days ago

শুরু করেছে—‘দুজন গাইরে মাহরামকে এক ছাদের নিচে একা রেখে আসো তুমি! ভয়
করে না?'
কথাটা বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বার বারই হচ্ছে। হঠাৎ কেমন যেন বমি পাচ্ছে নীরার। গাড়ি থামাতে বলেই ধরমর করে বমি করে দিল। হাসি-মজার মধ্যে এমন অবস্থায় সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। গাড়ি থামার সাথে সাথে নীরা গাড়ি থেকে নেমে বলল, ওর শরীরটা ভালো লাগছে না। তাই বাসায় ফিরে যেতে চায়।
শরীর খারাপের এমন চাক্ষুষ প্রমাণের পর আর কারোরই কিছু বলার থাকে না। রোকসানা আপা মায়াভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘একা যেতে পারবে তো? বেশ দেরি হয়ে যাবে কিন্তু...!
সবাইকে আশ্বস্ত করে নীরা বাসায় ফেরার পথ ধরল।

IMG_2664.JPG

ফিরতে ফিরতে সত্যিই বেশ দেরি হয়ে গেল। তাই নিজের চাবি দিয়েই দরজা খুলল। দরজা খুলতেই কেমন যেন একটা অযাচিত ঘ্রাণে নীরার মাথার ভেতরের ভোঁ ভোঁ আরও বেড়ে গেল। সাথে সেই কথাগুলো তো মাথায় বেজেই চলছে—‘দুজন গাইরে মাহারামকে এক ছাদের নিচে একা রেখে আসো তুমি! ভয় করে না? ভআআআয় করে
না? ভয় করেএএএ না?'

কেমন যেন উদ্ভ্রান্তের মতো নিজের রুমের দিকে আগালো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাথর হয়ে গেল নীরা। কী দেখল সে এটা। এটা শাহেদ! যার সাথে নীরার এত বছরের সংসার! আর এটা সেতু। ছোটবেলা থেকে যার সাথে বেড়ে ওঠা। কীভাবে পারল তারা... ছিহ!
নীরাই বা কী করল এটা। বার বার তো নীরা নিজেই তৃতীয়জনকে সুযোগ করে দিয়েছে। এত এত হিন্টস পেয়েও গায়ে লাগায়নি। বার বার মনের সতর্কবার্তায়ও কান দেয়নি; এমনকি রোকসানা আপার স্পষ্ট ওয়ার্নিংও গায়ে মাখেনি। মাথার ভেতরের মৌমাছিগুলোও হঠাৎ করেই যেন তাদের উৎপাত থামিয়ে দিল। কিন্তু সেই কথাগুলো মাথায় বেজেই চলছে, 'দুজন গাইরে মাহারামকে এক ছাদের নিচে একা রেখে আসো।
তুমি! তোমার ভয় করে না? ভয় করে না? ভয় করে না?'

একই রকম ড্রেস কিনতাম। ঘুরতে যাওয়া। শপিং করা। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি, সুমি আর আখি—আমরা তিন জনেরই ক্রাশ ছিল রবিন স্যার। সেই আশ্চর্য মহিলা এখন রবিন স্যারের ক্লাসে নিকাব পরে বসে থাকে। কেমন যে মেজাজ খারাপ লাগে!
যাক, একটা লম্বা ছুটি পাওয়া গিয়েছে। এখন আর পুরনো কথা ভেবে মেজাজ খারাপ করে কাজ নেই। থাকুক তাপসী নিজের তপস্যা নিয়ে। আমরা এখন শুধুই চিল করব। ইয়াহহু!
23 মার্চ 2020
এই কয়দিন আমরা অনেক মজা করলাম। ভাইয়ের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ইচ্ছেমতো শপিং, ঘোরাঘুরি, খাওয়াদাওয়া সব করেছি। সবাই বলেছে পরে টাকা ফেরত দেবে। সেই টাকা কি আর ভাইয়ার পকেটে যাবে নাকি! হুহ! প্রশ্নই আসে না।

আজ আমাদের বাসায় সবাই এসেছিল। ওদের সবার আম্মুর রান্না খুব পছন্দের। এত দিন তো আমার বাসাটাই সবার আড্ডাখানা ছিল। আব্বু মারা গিয়েছে অনেক ছোটবেলায়। ভাইয়া ছিল ইতালি। আমরা মা-মেয়ে দুজন। বাসায় কোনো ঝামেলা নেই, আর সাথে ফ্রি পাওয়া যায় আম্মুর রান্না। ওরা নিজেরাই এটা ওটা আবদার করে। আম্মুও নিজের রান্নার শখ মিটায় ওদের আবদার করা রান্না করে। আজও সবাই হইহুল্লোড় করে খেয়ে গেল। ভাইয়া না থাকলে হয়তো রাতেও থেকে যেত।

গত এক সপ্তাহ আমরা খুব গ্রুপ স্টাডি করলাম। না। ইয়ে। মানে। গ্রুপ স্টাডি করারই চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু আমরা বান্ধুবীরা একত্র হলে আবার পড়া হবে। এটা কি আদৌ সম্ভব? আমরা যে গ্রুপ স্টাডি করছি, সেটা আখিকে বলে দিয়েছিল সুমি। এ জন্য রুবি আর মিনি মিলে সুমিকে সেই ধোলাই দিয়েছে। ভালোই হয়েছে। শিক্ষা হবে। নেক্সট টাইম এমন করার আগে ১০ বার ভাববে। উম্ম, অবশ্য এত ধোলাই না দিলেও চলত। আখি তো নিজেই দ্বিতীয় দিন থেকে আর আসেনি। হয়তো আমরা লাউড স্পিকারে গান প্লে করাতে। প্রথম দিন তো এ নিয়ে ছোটখাটো ওয়াজ নসিহতও করার চেষ্টা করেছিল। রুবির ধমক খেয়ে বোবা হয়ে গেল। রাতে গ্রুপকলে সুমি বলছিল, আখি নাকি নীরবে কেঁদেছিল। ও নাকি আখির নয়ন জোড়া ছলছল করতে দেখেছে। এ কথায় সবাই হেসে দিল। সুমি অবশ্য হাসির জন্য বলেনি। আখির জন্য সুমির দরদ সব সময়ই একটু বেশি ছিল। নেকামি যত্ত সব। আজ জানলাম ছুটি এপ্রিলের ১১ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
হুহ। আমাদের গ্রুপ স্টাডি লাটে উঠল।

Sort:  

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 64467.84
ETH 3492.64
USDT 1.00
SBD 2.54