নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ২৫
তো? সাবিকুন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, প্রেমের সম্পর্ক আদৌ আছে সহস্রাব্দী তার কথার উত্তর না দিয়ে মনে মনে বলল, প্রেমের সম্পর্ক না থাকলে যে আমি বেঁচে থাকার দায় থেকে বেঁচে যেতাম রে ! কথা বলতে বলতে তারা সবাই কলেজ থেকে বের হয়ে এসেছিল। বের হয়ে কলেজ গেটের সামনে এসেই আয়েশার একজনকে নজরে পড়ে গেল। সে তখন খুশি গলায় বলে উঠল, আছে! প্রেম আছে! কারণ সে দেখেছিল উৎপল একটা রজনীগন্ধার তোড়া নিয়ে তাদের কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বান্ধবীরা ভেবেছিল উৎপল বোধহয় আজকে ফুল দিয়ে সহস্রাব্দীকে প্রোপোজ করতে এসেছে। কিন্তু তেমন কিছুই হল না। উৎপল সহস্রাব্দীকে ফুলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল, বলেছিলাম না ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো করলে উপহার থাকবে? আপনি ফোনে একদিন বলেছিলেন রজনীগন্ধা ফুল আপনার প্রিয় ।
তাই ভাবলাম এটাই উপহার হোক । বান্ধবীরা হতাশ হয়ে তাদেরকে একা ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সহস্রাব্দী উৎপলের সাথে হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণ আগে সাবিকুনের বলা কথাগুলো তার কানে বাজছে । দাদীমা হলে বলতেন, নাম নেওয়া মাত্রই হাজির! ছেলে তাহলে অনেকদিন বাঁচবে। আচ্ছা সাবিকুনের কথাগুলো যদি সত্যি হয়? সত্যিই তো। উৎপল তো কোনোদিন তাকে বলেনি যে সে তাকে ভালোবাসে? সহস্রাব্দী নিজেই তাকে মন দিয়ে বসেছে। হতেই পারে যে ছেলেটা তাকে শুধু বন্ধু ভাবে। আপনি কি কিছু ভাবছেন? উৎপলের কথায় সহস্রাব্দীর ঘোর কেটে গেল। ইতস্তত করে সে বলল, কই কিছু না তো । তারপর কথা ঘুরাতে সে আবার বলল, আচ্ছা এবারো কি আপনি বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছেন? তাই আগে কলেজে এসেছেন? উৎপল হেসে বলল, যদি বলি হ্যাঁ? তাহলে আর কী? আমি বুঝবো আপনি ঝগড়া করার জন্য বলছেন! উৎপল হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে সে সহস্রাব্দীকে লক্ষ্য করতে লাগল । একসময় সে বলল, সহস্রাব্দী আপনার কি চুল পড়ে গেছে?
বান্ধবীদের আড্ডায় বসে এসব আকাশ কুসুম চিন্তা করার সময় সাবিকুন হঠাৎ তার হাতে ছোট একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, তার মানে তুই বলছিস যে ওই ছেলেটা তোকে এখনো ভালোবাসার কথা বলেনি? হল? সহস্রাব্দী নির্লিপ্ত উত্তর দিল, না বলেনি। তাহলে তুই কিভাবে বুঝলি যে সে তোকে ভালোবাসে? এটা কি প্রেম কেন? মুখে ভালোবাসি না বললে ভালোবাসা হয় না? না হয় না । আয়েশা বলল, আরে মুখে ভালোবাসার কথা না বললে কী হবে? সেদিন দেখলি না কিভাবে ঢাকা থেকে ছুটে চলে এল শুধু সহুর সাথে দেখা করার জন্য! সাবিকুন কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলল, হ্যাঁ খুব! আর এসেই বলল কুটুম বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছে তাই সহুর সাথে করে বাড়ি যেতে চায়।
এখানে ভালোবাসার কি পেলি তোরা? রাদিয়া বলল, কুটুমবাড়ির কথা ছাড়। রাস্তার ওপাশ থেকে কিভাবে সহুর দিকে তাকিয়েছিল দেখেছিলি? ভালো না বাসুক, পছন্দ তো একটু হলেও করে। সাবিকুন মুখ বাঁকিয়ে বলল, এত বড় ছেলে সে ঢাকায় পড়াশোনা করে অথচ সেখানে তার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই? এটা কি বিশ্বাস করার মতো কিছু হল? আয়েশা বলল, না থাকতেই পারে। সাবিকুন বলল, ওসব ছেলেরা খুব চালাক। দেখ গিয়ে ওখানে একটা গার্লফ্রেন্ড রেখে এদিকে আমাদের সহুর মন নিয়ে খেলছে। সহস্রাব্দী জোরে বলে উঠল, থামবি তোরা! সাবিকুন বলল, আমাকে থামতে বললেই তো আর তোমার পদ্মফুল থেমে থাকবে না। সে তার কাজ চালিয়ে যাবে। আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল যেদিন ওই চিঠিটা দেখেছিলাম। প্রেমিক কখনো প্রেমিকাকে ওসব কথা লেখে? ওসব কথা যে কেউ যে কাউকে লিখতে পারে ! এতক্ষণে সহস্রাব্দী মুখ খুলল, আচ্ছা সাবি, তুই কি সব ছেলেকেই তোর প্রাক্তন প্রেমিকদের মতো ভাবিস? শোন সব মানুষ যেমন এক হয় না তেমনি সব প্রেমের সম্পর্কও এক হয় না।