নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ৩০

কেন? ওই বিয়েতে কি মেয়ে পছন্দ করতে যাওয়ার কথা ছিল? তাহলেই তুই বোঝ। তুই কত নিরস! তোর সাথে তাহলে এমন একটা ব্যাপার কীভাবে শেয়ার করি? প্রেমে পড়েছেন সেটা সরাসরি বললেই তো ল্যাঠা চুকে যেতো । উৎপলকে মিটিমিটি হাসতে দেখে অমিত আবার বলল, তা সেই দুর্ভাগ্যবান রমণীটি কে? তুই বল তো কে । এই এই দাঁড়া। তোর ওই নতুন ভাবীর ছোটো বোনটা নাকি যার সাথে কথা বলার জন্য তুই বারবার এদিক ওদিক চলে যেতি? কী যেন নাম? সহু না সহা না সহসা...! উৎপল সাহায্য করল, এক হাজার বছর। অমিত চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, ও বাবা। এই কেস তাহলে? তো তাকে বলেছিস যে তুই তাকে পছন্দ করিস?

এই শোন, সবসময় সব কথা মুখ ফুটে বলার দরকার হয় না। আর মেয়েরা আপনি বুঝতে পেরে যায় কোন ছেলে তাকে পছন্দ করে। হয়। তা তোর কী মনে হয়? সেও তোকে পছন্দ করে? করে করে । আমি বুঝি । মুখে বলেছে? না তা এখনো বলেনি। তাহলে আর কী? ডিমে তা দিয়ে বসে থাকো কখন ডিম ফুটে প্রেম বের বলে অমিত তার নিজের খাটের দিকে চলে গেল। উৎপল তার ফোনটা হাতে নিল। রোজ এই সময় সে সহস্রাব্দীকে ফোন করে। কোনোদিন সে ধরে। কোনোদিন ধরে না। আজ ধরল না। তার মানে আজ তার শরীর ভালো নেই? একটা মেসেজ দিলে কেমন হয়? উৎপল তার ফোনের মেসেজের অপশন খুলতে খুলতে বিড়বিড় করতে লাগল, দশ হাজার... নয় হাজার... আট হাজার... সাত হাজার... । সহস্রাব্দীর কলেজ মাত্র ছুটি হয়েছে। আজ সে ছুটির সাথে সাথেই বাড়ির পথ ধরল না। আজ তার শরীরটা অন্যদিনের চেয়ে একটু ভালো লাগছে। এমন হলে সে বান্ধবীদের সাথে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে, ঘোরাঘুরি করে

একশো... দুইশো তিনশো... চারশো পাঁচশো... অমিত উৎপলের পিছনে এসে দাঁড়াল। তারা এখন হলে। ডাইনিং থেকে রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসেই সে দেখল উৎপল একা একা তার পড়ার টেবিলে বসে বিড়বিড় করছে। আর সেটা যেন তেন বিড়বিড় নয়। রীতিমতো একশো থেকে গণনা শুরু। অমিত লক্ষ্য করেছে তারেক ভাইয়ের বিয়ে থেকে ফেরার পর থেকেই উৎপল যখন তখন বিড়বিড় করে সংখ্যা গণনা করতে শুরু করে। আর যেখান থেকেই সে গণনা শুরু করুক না কেন, তা সবসময়ই একটি মাত্র সংখ্যায় এসে থামে।

অমিত জানে এবারো তাই হবে । উৎপল খেয়ালই করেনি অমিত কখন তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ছয়শো... সাতশো আটশো নয়শো... এক হাজার! ইয়েস ইয়েস এক হাজার! অমিত চিৎকার করে উঠল । উৎপল চমকে গেল। অমিতকে দেখে সে কিছুটা অবাক হয়ে বলল, কী হল? তুই চিৎকার করছিস কেন? অমিত উত্তেজিত হয়ে বলল, ইয়েস! এক হাজার! এক হাজার! কী আছে এই এক হাজার সংখ্যাটার মধ্যে? আমি দেখেছি কখনো তুই একশো থেকে শুরু করিস আর কখনো দশ হাজার থেকে। কিন্তু থামিস সবসময় এই এক হাজারে এসে! কেসটা কী বল তো? উৎপল কিছু না বলে কেবল মুচকি মুচকি হাসতে লাগল । অমিত আবার বলল, তারেক ভাইয়ের বিয়েতে যাওয়ার পর থেকেই তুই কেমন যেন বদলে গেছিস। তোর বউভাতে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু ওখানে গিয়ে বললি থাকবি। আর ফিরে আসার পর থেকেই দেখছি তুই সবসময় অন্যমনস্ক । কী হয়েছে তোর বল তো? উৎপল অমিতের কথার উত্তর না দিয়ে বলল, তারেক ভাইয়ের বিয়েতে গিয়ে তোর কোনো মেয়েকে পছন্দ হয়নি?