বনফুল কে নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ৭
আইনের বাবারও সাধ্য নেই আপনাকে ধরে, তখন তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে, এই অব্যর্থ অস্ত্রটি একেবারে ইন্দ্রের বজ্র হয়ে তাঁরই মাথায় ভেঙে পড়বে। সার্টিফিকেট নিয়ে লোকটি হাতের নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারবাবু পুলিশের পত্রে জানতে পারলেন যে, তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রটি নিহত হয়েছে, এবং হত্যাকারী যে এইমাত্র তাঁর কাছ থেকেই আত্মরক্ষার চরম অস্ত্রটি আদায় করে নিয়ে গেছে, সে সত্যও তার কাছে দিবালোকের মতই প্রাঞ্জল হয়ে উঠল। ‘চান্দ্রায়ণ’ গল্পে আর. এম. এস.-এর শর্টার চন্দ্রবাবুর প্রায়শ্চিত্তটিও কবিবিধাতার চরম দপ্ত বিধানেরই উদাহরণ। চাকরির সুযোগ গ্রহণ করে লুকিয়ে লুকিয়ে পরের প্রেমপত্র খুলে পড়ার দুষ্প্রবৃত্তি একেবারে মাথার ওপর বজ্রই ডেকে আনল। চান্দ্রায়ণ নামকরণের শ্লেষার্থটিও বড়ই নির্মম। চন্দ্রচরিতই চান্দ্রায়ণ-প্রায়শ্চিত্তকে অনিবার্য করে তুলেছে। অবশ্য আর্টিস্ট হিসাবে স্যাটায়ারিস্টের শিল্পভাষণ এখানে 'কান্তাসস্মিত’ নয় একেবারে ‘প্রভুসস্মিত’। কবিপ্রজাপতির চেয়ে কবিবিধাতাই এখানে অধিকতর সক্রিয়। ডাকে তবে স্যাটায়ারের সরু কাজেও যে বনফুল সমান ওস্তাদ তা বলাই বাহুল্য। নকল ভদ্রতার মুখোশ খুলে দেখাবার কাজে ‘শ্রীপতি সামন্ত' আর 'ছোটলোক' গল্প দুটি স্মরণীয়।
‘পরনে একটি আধময়লা থান, খালি গা, পায়ে ধূলিধূসরিত এক জোড়া দেশী মুচির তৈয়ারি চটি, চোখে তির্যকভাবে বসানো কাঁচ-ফাটা চশমা, চশমার ফ্রেম নিকেলের এবং তাহারও ডান দিকে ডাণ্ডাটা নাই, সেদিকে সুতা বাঁধা।'—এই দীন চেহারা নিয়ে শ্রীপতি সামন্ত ট্রেনের ভিড়ে যখন প্রথম শ্রেণীর সংলগ্ন ভৃত্যের কামরাটিতে একটু আসন পাবার করুণ আবেদন জানালেন তখন তাতে আপত্তি হল পাইপ-শোভিত-বদন সাহেবি -পোশাকধারী প্রথম শ্রেণীর বাঙালী যাত্রী-বাবুটির। কিন্তু পরে প্রথম শ্রেণীতেই উঠে শ্রীপতি যখন শুধু নিজেরই সমস্ত দেয় কড়ায় গণ্ডায় চুকিয়ে দিলেন না, ঐ ভণ্ড সাহেবটিকে বিনা-টিকিটে ভ্রমণের লজ্জা আর অপমান থেকে রক্ষার জন্যে তারও সমস্ত চার্জ পাঞ্জাবি ক্রুকে বুঝিয়ে দিলেন তখন আর নকল প্রথম-শ্রেণীর যাত্রীর মুখে কথাটি নেই। ‘ছোটলোক' গল্পের চাবুকটি আরো সূক্ষ্ম, কিন্তু আরো তীব্র। অনমনীয় চরিত্র রাঘব সরকার চির-উন্নত-শির; কখনো কারো অনুগ্রহ প্রত্যাশী নন, যথাসাধ্য সকলের উপকার করেন, পারতপক্ষে কারো দ্বারা উপকৃত হন না! কৃতবিদ্য পুরুষ, সুতরাং মস্তিষ্কে ধনিকবাদ, দরিদ্রনারায়ণ, বলশেভিজম, ডিভিশন অব লেবর প্রভৃতি ভাবের অভাব নেই। চলার পথে রিকশাওয়ালার কাকুতি দেখে দয়ার্দ্র হলেন; কিন্তু রিক্শায় চড়া তাঁর আদর্শে বাধে। অথচ করুণাসিন্ধু উদ্বেল হয়েছে। কাজেই দরিদ্র রিকশাওয়ালাকে করুণা দেখাতে গেলেন রিক্শায় না চড়েই তাকে তার পথের ভাড়া দিয়ে। কিন্তু ‘ছোটলোক’এরও যে আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে পারে, সে জ্ঞান তিনি সেদিন প্রথম লাভ করলেন। 'আমি কারো কাছ থেকে ভিক্ষা চাই না'—একটি রিকশাওয়ালার মুখে এ কথা শুনবেন, রাঘব সরকার বোধ হয় কোনোদিন তা কল্পনাও করতে পারেননি। আঘাতটি শুধু মর্মবিদারীই নয়, আদর্শবিলাসী 'ভদ্রলোকে'র পক্ষে চক্ষুরুন্মীলনকারীও বটে! ‘ছোটলোক' গল্পটি উৎকৃষ্টতম স্যাটায়ারের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। গবে যে ম
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community