নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১০
চেনা নেই জানা নেই এক পুরুষের সামনে বাসর রাতে গা থেকে কাপড় খুলতে কার না ঘেন্না করে। নিজেকে কেবল স্থায়ী বেশ্যা মনে হয়। নারীর জন্য এমন অসম্মান আর কী হতে পারে? কাবেরী উপরের কথাগুলি বলছিলেন ফোয়ারাকে। ফোয়ারা ঠাট্টা করে কাবেরীকে বললো, তবুও মেয়েরা অজানা পুরুষকে বিয়ে করে নিজেকে খুলে ধরতে ব্যাকুল। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত নারীর মুক্তি চাননি, চেয়েছেন উর্বশী। উর্বশীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন। উর্বশী হলো সহজ ভাষায় বেশ্যা। তবে তিনি নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ভীষণ বিরক্ত হয়ে কাবেরী বললো, ফোয়ারা তুমি তর্কের নামে চটুল কথাবার্তা বলছো । যাইহোক, আগামী শনিবারে মাসিক পাঠচক্র হবে সকাল ১০টা থেকে । ঠিক সময়ে চলে এসো কমরেড। ফোয়ারাকে কেউ কমরেড বললে ভীষণ বিরক্ত হয়। শনিবারের পাঠচক্রে টিএসসির তিনতলায় ফোয়ারা হাজির হলো । জনা চল্লিশেক নারী উপস্থিত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ইডেন কলেজের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র তিনজন । আলোচক সীমা চৌধুরী আলোচনা শুরু করলেন । পাঠচক্রের আলোচ্য বিষয় নর- নারীর সম্পর্ক । সীমা চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা নর-নারীর সম্পর্ক বলতে কি বোঝ? ইডেন কলেজের সুন্দরী সুজাতা বললো, ফ্রয়েড বলেছেন নর-নারীর সম্পর্ক যৌনতার সম্পর্ক, সব আবেগের মূল হলো লিবিডো অর্থাৎ যৌনাবেগ। অন্য মেয়েরা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলো । দম বন্ধ হওয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে কাবেরী বললো, নর-নারীর সম্পর্ক হলো শোষক ও শোষিতের। পুরুষ শোষক, শাসক, নির্যাতনকারী আর নারী হলো শোষিত, শাসিত, নির্যাতিত। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবই পারে নারীর মুক্তি দিতে। সুজাতা কাবেরীর কথা শুনে হাসছিল । সীমা চৌধুরী বললেন, সুজাতা হাসছো কেন ??
চুয়াল্লিশ বছর বয়সী রং মিস্ত্রি ষাটোর্ধ বাড়িওয়ালীর কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। শফিক ছয়তলা বাড়িতে রং করার কাজ করে । কোন কিছু মাথায় আসছেনা রং মিস্ত্রি শফিকের । কেন বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছে তার কোন কুল কিনারা করতে পারছে না। বিয়ের কথা কাউকে বলা যাবে না এই শর্ত তাঁকে মাঝে মধ্যে রোমাঞ্চিত করে তোলে । বাড়িওয়ালীর ডাকাবুকো ছেলের কথা মনে পড়লে ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে। নিমেষেই মনের উষ্ণতায় হিমপ্ৰবাহ বয়ে যায় ৷ গত পাঁচদিন ধরে বাড়িওয়ালীর সামনে না পড়ার অজুহাত খুঁজছে শফিক। স্ত্রী ময়নার সাথে বেঈমানী করা যাবে না। নিজের মেয়ে কলেজে পড়ছে। বিয়ের জন্য মাঝে মধ্যে প্রস্তাব আসছে। মেয়ে লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না । এ অবস্থায় বাড়িওয়ালীর বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না ।
নাহ্ এ বিয়ে হবে না । তবে মাঝে মধ্যে বাড়িওয়ালীর সহায় সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি মনটা বিগড়ে দেয় । মনকে শক্ত করে বাড়িওয়ালীর সামনে এসে দাঁড়ায় শফিক । মাথা নিচু করে জানিয়ে দেয়, আমার বউ বাচ্চা আছে, আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব হবে না । আমি আর কাজ করবো না । আপনি অন্য লোক দেখেন । গভীর রাতে গৃহকর্মীর চিৎকার শুনে শফিকের ঘুম ভেঙে গেল। পাশে শোয়া দারোয়ান রফিককে জাগিয়ে তোলে । রফিক তার চাচাতো ভাই । দু'জন বাসায় গিয়ে দেখে বাড়িওয়ালী অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলো। টানা দশদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িওয়ালী সাবিনা বাসায় ফিরে এসেছেন। তাঁর তিন ছেলে মেয়ে এখন বিদেশে থাকেন। সাবিনা বছর তিনেক আগে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসরে গেছেন। নির্মোহ শফিককে সাবিনা চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছেন না। শফিকের বাড়ি থেকে স্ত্রীর অসুস্থতার খবর আসলো । দ্রুত স্ত্রীকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হলো। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেল শফিকের স্ত্রী ময়নার ক্যান্সার ।