নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ২৪

সহস্রাব্দীর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে। সর্বশেষ ধাপ। যেখান থেকে রোগীর ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই। সাদাব সাহেব অনেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করলেন। মেয়ের শেষ রিপোর্টগুলো হাতে পেয়ে তিনি ঢাকা পর্যন্ত ছুটে গেলেন। কিন্তু সব জায়গায় তিনি হাতে গোণা কয়েকটা স্বান্তনাবাণী ছাড়া আর কিছুই পেলেন না। সব ডাক্তারই ঘুরে ফিরে একই ধরনের কিছু ওষুধ নেয়ার পরামর্শ দিলেন যেগুলো নিয়মিত নেয়ার মাধ্যমে রোগীর শারীরিক কষ্ট কিছু সময় কমে থাকবে।

কিন্তু সবশেষে সে আর সর্বোচ্চ কতদিন পৃথিবীতে আছে সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারলেন না । সহস্রাব্দীর তার ঘরে শুয়ে আছে। তার শরীরের চেয়ে মনে বেশি কষ্ট হচ্ছে। সে কিছুতেই ডাক্তার দেখাতে চায়নি। যার উপরে যাওয়ার টিকিট আগেই কাটা হয়ে গেছে তার ডাক্তার দেখিয়ে কী হবে? শুধু শুধু মাঝখান দিয়ে বাড়ির মানুষগুলোর ভোগান্তি। মা সারাদিন লুকিয়ে চুরিয়ে চোখের পানি ফেলেন। দাদীমার মুখের দিকেও তাকানো যায় না। আর যুগের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া তো আরেক দায় হয়েছে সবার। শতাব্দীও ভালো করে কিছু জানে না। সে তিন মাসে পা দিয়েছে। এ অবস্থায় তাকে কিছু জানানোর ঝুঁকি বাড়ির কেউ নিতে পারছে না । সহস্রাব্দীর শরীরের ভিতর কাঁপুনি শুরু হয়েছে। জ্বর আসছে। সহস্রাব্দী অনেক কষ্টে উঠে বসার চেষ্টা করল। সে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল কিন্তু দাদীমা এসে তাকে ধরে ফেললেন। ও কী ও কী দেদেভাই! করচিস কী? চুপটি করে শুয়ে থাক । ছাড়ো আমাকে দাদীমা । শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না । এ কী! তোর গায়ে তো অনেক জ্বর দেদেভাই! খুব কষ্ট হচ্ছে না রে? না একটুও কষ্ট হচ্ছে না। ভালো লাগছে আমার! এ তোর অভিমানের কথা দেদেভাই

সহস্রাব্দী অবাক হয়ে বলল, কেন বলুন তো? না আসলে আগেরবারের চেয়ে আপনার বেণীটা অনেক চিকন মনে হচ্ছে তাই । বিগত এক দেড় মাস ধরে সহস্রাব্দীর নিয়মিত চুল পড়ছে। সহস্রাব্দী তাকে হ্যাঁ না কিছুই বলল না। উৎপল আবার বলল, আপনাকে দেখতেও আগেরবারের চেয়ে অনেক ফ্যাকাশে লাগছে সহস্রাব্দী। আপনি ঠিক আছেন তো? আমি একদম ঠিক আছি । সত্যি তো? হ্যাঁ সত্যি তাহলে আমার সাথে একটু কাছে কোথাও খেতে যাবেন? আমি আপনাকে ট্রিট দিতাম ।

কিসের জন্য? এইযে আপনি ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো করেছেন সেইজন্য। সহস্রাব্দীর মন বলছিল না গেলে ভালো হবে। সে ছেলেটার সাথে বেশি মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। এতটা হয়তো শেষে গিয়ে ভালো হবে না। কিন্তু তার না বাড়ি যেতে ইচ্ছা করছে, না ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিতে। সে রাজী হল । কফিশপে বসে সহস্রাব্দী বারবার এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। পরিচিত কেউ দেখে ফেললে খুব খারাপ হবে। উৎপল বলল, কী হল সহস্রাব্দী? এদিক ওদিক কী দেখছেন? না? পরিচিত কেউ আছে কিনা তাই দেখছি। ও আচ্ছা। এখানে বোধহয় আপনি আগেও অনেকবার এসেছেন তাই হ্যাঁ । উৎপল মজা করে বলল, বয়ফ্রেন্ডের সাথে? না। ফ্রেন্ডদের সাথে। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। কখনো ছিল না । আপনার মতো চটপটে মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নেই? ব্যাপারটা একটু অবিশ্বাস্য হল না? অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?