নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১৫

in #new6 months ago

গৃহশিক্ষকের প্রেমে পড়েছিলেন নবম শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা । তখন প্রেমিক সফিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । সফিকের অফুরন্ত সময়, তাই ছাত্রী পড়াতে গেলে ফিরে আসার তাড়া থাকে না । সাবিহার মা মেধাবী সফিককে হাতছাড়া করতে চান নি। ফলে গৃহশিক্ষকের সাথে সাবিহার বাড়তি সময় কাটানোকে হাল্কা করে নিয়েছেন । সফিক বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়াকালীন কলেজ পড়ুয়া সুশ্রী সাবিহাকে বিয়ে করলেন । বিয়ের পর সাবিহা বিএ পাশ করলেন। সফিকের চাকরি হলো ব্যাংকে আর সাবিহা গৃহিণী। ছেলের নাম সাকিব আর মেয়ের নাম রাখলেন পরী। পরীর জন্মের ছয়মাস পর নিশ্চিত হলেন পরী অটিস্টিক। দেশ বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু কোন ডাক্তার ভালো সংবাদ দিতে পারলেন না। পরীকে বিশেষ সন্তান হিসেবে সফিক সাবিহা গ্রহণ করেছেন। সাত বছর বয়সে তাঁকে অটিস্টিক বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করালেন। সাবিহার সারাদিন কাটে পরীর পিছনে ৷ পরীর যতটা পরিবর্তন আশা করেছিল তা হলো না ।

সফিকের হার্টঅ্যাটাকে মৃত্যু হলো তখন পরীর বয়স এগারো বছর। সাবিহা সংসার, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সামাল দিতে গিয়ে হয়রান। সফিকের প্রকৌশলী বন্ধুর স্ত্রী শম্পা ক্যান্সারে মারা যান ৷ পারিবারিক আয়োজনে দু'জনের মতে আদনান সাবিহার বিয়ে হলো। সাবিহার চার সন্তানের সংসারে আরো দু'জন যুক্ত হয়ে মোট ছয় সন্তানের মা হলেন । ধানমন্ডির চার হাজার স্কয়ারের বাড়িতে সাবিহা আদনানের সংসার ভালোই চলছিল। সাবিহার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে তাই পরীর দেখাশোনা সেবাযত্ন নিজের হাতে করতে পারেন না । পরীর দেখা শোনা করার জন্য একজন সেবাকর্মী রাখা হয়েছে। সাকিব অস্ট্রেলিয়া পড়তে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিন সংসারের টানাপোড়ন দিন দিন বাড়তে থাকলো। মায়ের সংকট থেকে খানিকটা মুক্তি দিতে বোনের দায়িত্ব গ্রহণ করলো। ঢাকার অদূরে সিঙ্গাইরে

IMG_6609.jpg

রকিব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন প্রেম করেছিলেন সেলির সাথে। পারিবারিক আয়োজনে সেলিকে বিয়ে করেন সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা। ১৯৭৭ সালে সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোলে তাঁর স্বামী নিহত হন। রকিব প্রেমিকার দুঃসংবাদে দেখা করতে আসলেন। পুরোনো প্রেম নতুন করে আবির্ভূত হলো । চারমাসের সন্তান সেলির পেটে। রকিব অনাগত সন্তানকে মেনে নিলেন। যথা সময়ে কন্যাসন্তান জন্ম নিল । নাম রাখা হলো জয়িতা। জয়িতার জন্মের ছয়মাস পর পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ইতিমধ্যে রকিব অনার্স পাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলো । মাস্টার্স করে বিসিএস (শিক্ষা) পাস করলেন । রকিব সেলির ঘরে আরো দু'টি সন্তান জন্ম নিল । ছেলের নাম দুর্জয়, মেয়ের নাম কাব্য। বড়মেয়ে জয়িতা সারাক্ষণ বাবার কাছেই থাকে। মায়ের কাছে থাকার উপায় ছিল না । কারণ মা দুর্জয় আর কাব্যকে সামলাতে গিয়ে দিশাহারা অবস্থা । জয়িতা বাবার কোলে গল্প শুনে বড় হয়েছে ।

বাবাই তাঁকে প্রথম স্কুলে নিয়ে যায় ৷ জয়িতা যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তখন রকিবের প্রমোশন হলো । নতুন কর্মক্ষেত্র কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে যোগ দিলেন। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থেকে কুমিল্লা আসা-যাওয়া করতেন। আসা-যাওয়ার হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা যেতেন আবার শনিবার সকালে কুমিল্লা যেতেন । প্রতি সপ্তাহে বাবা মার ঝগড়া দেখে জয়িতার শিশু মন বিষিয়ে উঠেছে। জয়িতা অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে বাবা মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। রকিব একটা প্রতি মাসে বেতন পেয়ে তাঁর সন্তানদের দেখতে আসতেন। বেতনের বড় অংশ ছেলে মেয়ের ভরণপোষণের জন্য সেলির হাতে দিতেন । জয়িতা হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস আর বুয়েট থেকে আর্কিটেক্ট । লেখাপড়ার পুরোসময়টা রকিব জয়িতার সাথে দেখা করেছেন, হাতে টাকা পয়সা দিয়েছেন এবং লেখাপড়ায় উৎসাহ দিয়েছেন।

Sort:  

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 67011.69
ETH 2366.74
USDT 1.00
SBD 2.32