শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ০১

in #new27 days ago

শাহেদ কাজ শেষ করে শুতে যাচ্ছিল। হঠাৎ খেয়াল করল এতক্ষণের কান্নার শব্দ যেন দেয়াল পেরিয়া আর কানকে বিরক্ত করতে আসছে না। স্বস্তির শ্বাস নিল শাহেদ৷ যাক, এত দিনে মেয়েটা তাহলে একটু ঘুমোতে পারছে। ঐশীর সাথের সময়টা তাহলে কাজে লাগছে ওর। লাইট অফ করতে যাবে এমন সময় মনে হলো কিছু একটার শব্দ হলো। চেয়ার টানাটানির। এত রাতে কে চেয়ার টানবে। ধ্যাত! ভুল শুনেছে হয়তো। কিন্তু অকারণেই মনটা কেমন উশখুশ করতে লাগল। তাই না চাইতেও পা বাড়াল সেতুর রুমের দিকে। পর্দা সরাতেই খুব বীভৎস এক দৃশ্যের সাক্ষী হতে হলো শাহেদকে। সেতু নিজের গলা ও ফ্যানের মধ্যে ওড়নার মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চেয়ারের সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে চিরতরে পালাবার পরিকল্পনা ওর। শাহেদ মুহূর্তের জন্য পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

IMG_6585.JPG

হিতাহিত জ্ঞান শূন্য মস্তিষ্ক নিয়ে৷ পরক্ষণেই নিজের সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে ছুটে গিয়ে সেতুর পায়ের নিচের চেয়ার শক্ত করে ধরে দাঁড়াল। বিদঘুটে নীরবতায় ঠিক কতটা সময় কেটেছে দু'জনের কেউই তা বলতে পারবে না। একসময় সেতু একেবারে জুবুথুবু হয়ে নেমে এল নিজেই। খাটের এক কোণে বসে হেরে যাওয়া অশ্রু ঝরাল। নিঃশব্দ অশ্রু। কিছুক্ষণ পর পর হেঁচকির মতো করে টানছে। শাহেদ চেয়ার ধরে রাখার দায়িত্বে ইস্তফা দিয়ে সেতুর পাশে গিয়ে বসল। কেমন যেন গুমট নীরবতা নেমে আসে চার দেয়ালের চাহুনিতে। লাইট, ফ্যান, এমনকি খাটের পাশে যত্ন করে রাখা ফুলের টবটাও যেন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। বারান্দার গ্রিল উঁকি দিতে চেষ্টা করছে। বাইরে অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে টিপটিপ। এর মধ্যে সুন্দর একটা অর্ধেক চাঁদ মেঘের আড়াল থেকে ফিরে তাকাচ্ছে। যে ভুল হওয়ার কথা না; যা কেউই চায়নি; যে ভুলের কথা ভাবাও যায় না; তা-ই হয়ে গেল..!

সম্পাদন হয়। এখন খুব সকাল তাও না। সাড়ে নয়টা বাজে। কাজের ফাঁকে বাইরে থেকে নাস্তা নিয়ে আসে শাহেদ। টেবিলে রাখতে রাখতেই ঐশীর আদুরে কান্নার শব্দ কানে এল। এই কান্না মানে উনি ঘুম থেকে উঠেছেন তার জানান দেওয়া। নীরা বলেছিল একবার। মায়েরা কান্নার ভাষাও বোঝে। শাহেদ তেমন বুঝে না। নীরা যেমন বলে তা মেনে চলার চেষ্টা করে কেবল। তাই একটু উঁকি দিল সেতুর রুমের দিকে। এখন ঐশী রাতে সেতুর রুমেই থাকে। রাত বিরাতে সেতুর রুম থেকে আর কান্না গোমট শব্দ আসে না। ঐশীর সাথে হাসি খেলার শব্দ আসে। ভালোই হলো অন্তত ক'টা দিনের জন্য হলেও মেয়েটা নিজেকে ডিভোর্সের আঘাত থেকে বের করে আনতে পারছে।

শাহেদ কী মনে করে যেন সেতুর রুমে গেল। ঐশী বাবার দিকে তাকিয়ে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। একটু উবু হয়ে ঐশীকে কোলে তুলে নিতে গিয়ে হঠাৎ নির্দোষ দৃষ্টি পড়ল সেতুর দিকে। নাহ মেয়েটা কাল রাতেও কেঁদেছে। নিষ্পাপ চেহারা, চোখ মুখ ফুলে আছে। কোনো কারণ ছাড়াই শাহেদের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ܀܀܀ ঐশী ঘুমিয়ে পড়েছে। সেতু রাতে ঘুমোতে পারে না। ৬ বছরের সংসারের প্রতিটা মুহূর্ত তাড়া করে বেড়ায় ওকে। কী করে কেউ এত দিনের সম্পর্ক শেষ করে দিতে পারে৷ প্রতিরাতে এই একই প্রশ্নের উত্তর খোঁজে সেতু। নিজেই জিজ্ঞেস করে। কোনো উত্তর নেই। প্রশ্নটা চার দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে এসে সেতুকেই আঘাত করে। নীরব অশ্রুরা রাত বাড়ার সাথে সাথে স্বরব হয়ে ওঠে। সেতুর সাথে সঙ্গী হয় দেয়াল, লাইট, ফ্যান। ইদানীং ফ্যানটাকে খুব আপন মনে হয়; যেন এই একটা জিনিসই নিজের দিকে টানে সেতুকে। মুছে দিতে ইচ্ছে হয় নিজের নাম। অস্তিত্ব। ইচ্ছেটা দিন দিন শেকড় গাড়ছে মনে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 56523.53
ETH 2982.54
USDT 1.00
SBD 2.15