শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ০৯

in #post6 days ago

‘আপু, আমার কলেজফ্রেন্ড, অনেক বছরের রিলেশন ছিল, তারপর বিয়ে করেছিল।
কিন্তু ওর ওয়াইফের এখন অন্য এ্যাফেয়ার ধরা পড়েছে।'
‘কী বলো!' অবাক কণ্ঠে বলল নীরা।
‘হ্যাঁ, আপু। এটাই বলছিলাম রুমাকে। এখন ও খুব ডিপ্রেসড থাকে আপু।' ‘স্বাভাবিক।’ জানালার বাইরে দৃষ্টি রেখে বলল নীরা।
—আচ্ছা, মেয়েটাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেনি একবারও?' জিজ্ঞেস করল রুমা।
‘মুছে গেছে যে নাম

IMG_6588.jpg

জীবন খাতা থেকে।
পেন্সিলের চাপের দাগ থেকে
সে নাম উদ্ধারের চেষ্টা বড় বৃথা।’
কান থেকে হেডফোন সরাতে সরাতে বলল রোকসানা আপা।
কথাটা কারও মাথায়ই ঢুকল না। মাঝে মাঝেই আপা এমন উচ্চ মর্গীয় কথা বলেন, যা সবার মাথার উপর দিয়ে যায়।
‘আপা, বুঝিনি' বলে প্রতিবারের মতো দাঁত দেখিয়ে বোকা বোকা একটা হাসি দিল রুমা। দিপ্তি, আর নীরাও তাকিয়ে আছে রোকসানা আপার দিকে। তার মানে ওরাও বুঝেনি। বাবলু ভাইও দু-এক বার পেছনে ঘুরে তাকাল।
সবার দিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে চশমাটা চোখে পরতে পরতে রোকসানা আপা বললেন, “যে পাখি উড়ে যায় তা কখনো ফিরে না, বুঝলে। যে নাম মুছে যায় তা আর উদ্ধার করা যায় না। ওই জায়গায় নতুন নাম লিখতে হয় অথবা একই নাম নতুন করে লিখতে হয়।’
‘তাই বলে...’ এটুকু বলে কী যেন ভাবতে বসে গেল রুমা।
দিপ্তি বিজ্ঞের মতো বলল, 'প্রেমের বিয়ে এমনই হয়। আমি দেখেছি। আমি জীবনেও প্রেম করে বিয়ে করব না।'
দিপ্তির কথায় গাড়ির মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। হাসি থামতেই রোকসানা আপা বললেন, ‘ব্যাপারটা আসলে প্রেম ট্রেম বলে কথা না, এসব শয়তানের কাজ।'
‘কী রকম?’ রুমার ভ্রু ভাঁজ করা চাহুনিতে বোঝা যাচ্ছে যে, ও বুঝতে ভীষণ চেষ্টা
চালাচ্ছে।

ছুটি আবার বাড়ানো হয়েছে। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এবার সত্যিই খুব বিরক্ত লাগছে, ভয়ও। গত চার দিনে আমার চারপাশের পৃথিবীটা যেন একেবারে হুট করেই থমকে গিয়েছে। ভাইয়া আর আম্মুর ভীষণ জ্বর। লকডাউনের কারণে সব বন্ধ। আমি একা কীভাবে সব করে যাচ্ছি আমি নিজেও জানি না। পাশের বিল্ডিংয়ের আমজাদ চাচার মৃত্যর পর আমাদের পুরো কলোনিটা লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।
কলোনির সবাই ভাবছে ভাইয়ার কারণেই এখানে করোনা ছড়িয়েছে। গত পরশুদিন প্রতিবেশীরা এসে অনেক তামাশা করে গিয়েছে। কোনো রকমে যদি আমাদের বাসার দরজা খুলতে পারত, তাহলে হয়তো আমাদের স্বপরিবারে মেরেই ফেলত সবাই। এ অবস্থায় আম্মুর এমন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে যে, দেখে মনে হচ্ছিল আমারই দম বন্ধ হয়ে যাবে এখুনি।

রুবিকে কল দিয়ে বললাম একটু আসতে; আমি একা পারছি না। ও মুখের উপর কী কী যেন বলে ফোনটা কেটে দিল। আমার মাথা কাজ করছিল না। কী করব বুঝতেই পারছিলাম না। পাগলের মতো মিনি আর সুমিকেও কল দিলাম। কেউ রিসিভ করল না। আগে যে কোনো সমস্যায় ওদের কল দিতাম। ব্রেকআপ যখন হয়েছিল তখনও তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওদের সাথে কথা বলেই ওভারকাম করেছিলাম। কিন্তু এবার ওদের এমন স্বার্থপরের মতো আচরণ আমাকে অবাক করে দিল।
শেষে পাগলের মতো আম্মুকে আর ভাইয়াকে বাসায় রেখে আমিই বেরিয়ে পড়লাম আম্মুর পার্সটা হাতে নিয়ে। ভাইয়া অনেকবার বলল, ভাইয়া বের হবে। কিন্তু ভাইয়ার গায়ে এক রত্তি হাঁটার শক্তি নেই! কীভাবে আমি ভাইয়াকে যেতে দিই! আমি জানি না, শ্বাসকষ্টের জন্য কী ওষুধ কিনতে হয়। আমি জানি না, কোথায় এখন ওষুধের দোকান খোলা পাব। আমার এখন এটাও মনে পড়ছে না যে, তখন আমি কী পরে বেরিয়েছিলাম। আমি শুধু হাঁটছি আর মনে মনে দোয়া করছি, ‘আল্লাহ আমাকে ওষুধ কেনার ব্যবস্থা করে দাও। আল্লাহ আমার আম্মুকে তুমি বাঁচিয়ে রাখো। আমার ভাইয়াকে তুমি বাঁচিয়ে রাখো।’

আপাতত নেবুলাইজারে আম্মুর শ্বাসকষ্ট কমেছে। নিউজ ফিডে যেসব দেখছি তাতে আম্মু আর ভাইয়াকে হসপিটালে নেওয়ার সাহস হয়নি আমার। হাতে টাকাও তেমন নেই। বাসায় যা ছিল তা-ই রান্না করছি একটু একটু করে। আজ শুধু ডাল আর আলু ভর্তা করলাম। আম্মুর জ্বর কিছুটা কম। খুব আশা করে আছি ওরা দুজনই ভালো হয়ে যাবে। করোনা হয়নি ওদের। আর যদি হয়ও, তবে যেন আমারও হয়। আম্মু আর ভাইয়াকে ছাড়া আমার পৃথিবীটা অর্থহীন।

Sort:  

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 64400.67
ETH 3506.16
USDT 1.00
SBD 2.53