সময় চলে যায় রেখে যায় স্মৃতি (দ্বিতীয় পর্ব )||
- ২০ ভাদ্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
- ৭ সফর, ১৪৪৪ হিজরি
- রবিবার
- শরৎকাল
আমার বাংলা ব্লগের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়ে আজকে আবার আপনাদের সামনে এসেছি সময় চলে যায় রেখে যায় স্মৃতির দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। আশা করছি সবাই ভালো আছেন, আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসাতে খুব ভালো আছি। প্রতিটা মানুষের জীবনে তার অতীতের কিছু না কিছু স্মৃতি থাকে যেগুলো তার পরবর্তী জীবনে মনের কোণে উঁকি দিয়ে বেড়ায়। আমার জীবনেও অতীতের এমন কিছু স্মৃতি রয়েছে যেগুলো মনে হলে মাঝে মাঝে মন ভালো লাগে এবং অনেক আবাগী হয়ে উঠি। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি সময় চলে যায় স্মৃতি রেখে যায় এর দ্বিতীয় পর্ব।
SOURCE
আমাদের গ্রামের বাড়ির অবস্থান বিশাল দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠের এক প্রান্তে। এই মাঠ ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে যা আমার স্মৃতিগুলোকে বিভিন্ন রঙে রঙিন করেছে। আমার ভীষণ ভাবে মনে পড়ে ওই সময়গুলো যখন আমি নিম্নমাধ্যমিকে পড়াশোনা করি। আমরা বাড়ির আশেপাশের সকল বন্ধুরা একসাথে দলবেঁধে স্কুলে যেতাম। যখন বৃষ্টি হতো আমরা পলিব্যাগের মধ্যে বই খাতা এবং জামা ভরে মাথার উপর রেখে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দৌড়ে বাড়ি চলে যেতাম। সেই সব দিনগুলোর কথা এখন প্রচন্ড রকমের মিস করি। বাড়িতে বই-খাতা রেখে চলে যেতাম ফুটবল খেলতে। বর্ষাকালে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলার অন্যরকম একটা আনন্দ ছিল। আমরা বৃষ্টির মধ্যে যখন ফুটবল খেলতাম তখন খেলার নির্ধারিত কোন টাইম থাকতো না যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ। সে খেলায় অনেক সময় কোন পক্ষে গোল হতো না, কারণ ফুটবল মাঠে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় বল নিয়ে এক গোলপোস্ট থেকে অন্য গোলপোস্টে যাওয়াটা ছিল যুদ্ধে জয় করার শামিল।
SOURCE
বৃষ্টির মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় খেলা ছিল হাডুডু খেলা, যেখানে পিচ্ছিল খেলার মাঠে কর্দমাক্ত শরীরে নিজেকে অনেক সময় চিনতে পারতাম না। হাডুডু খেলার মাঠ আমরা নিজেরাই তৈরি করতাম, যখন যেখানে খালি জায়গা পেতাম জমির মালিকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন ছিল না। বেশিরভাগ সময় সরোয়ার মোল্লা নামক একজন বয়স্ক লোকের একটা অব্যবহৃত জমি ছিল সেখানেই তৈরি করতাম। লোকটি অনেক রাগী ছিল, যখন দেখত তার ভিটাতে কেউ হাডুডু খেলছে পিছন থেকে লাঠি নিয়ে তাড়া করতে। উনার তাড়া খেয়ে সোজা পুকুরে গিয়ে ঝাঁপ দিতাম।
পুকুরে ঝাঁপ দেয়ার পর আমরা যারা সাঁতার কাটতে জানতাম তারা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম। যেমন পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কে আগে যেতে পারে, পানির নিচে একটানা কে কতক্ষণ থাকতে পারে, ডুব দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা, কাদা ছুড়াছুড়ি আরও কত কি। আর যারা সাঁতার কাটতে জানতো না তারা পুকুরের ঘাটলায় দাঁড়িয়ে সাঁতার শেখার চেষ্টা করত। সাঁতার না জানার কারণে আমরা সবাই মিলে তাকে নানা ভাবে রাগাবার চেষ্টা করতাম। সাঁতার কাটতে কাটতে অনেক সময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যেত। পানির মধ্যে অনেকক্ষণ যাবত ডুবডুবি করতে করতে শরীরের উপরে শ্যাওলা জমে যেত এবং চোখ দুটো লাল হয়ে যেত। এমন সময় হঠাৎ দেখতাম পুকুরের পাড়ে মা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মাকে দেখে পুকুরের অন্য পাড় দিয়ে তাড়াহুড়া করে উঠে দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছতাম। তারপর শুরু হতো বোকা আর উত্তম মাধ্যম।
SOURCE
ছোটবেলায় আমি একটু ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম, সেজন্য আমার মধ্যে দুরন্তপনাটা একটু বেশি ছিল। সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকার কারণে অনেকবার মায়ের হাতে মার খেতে হয়েছে। মা যখন মারতে আসত আমার দাদী আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করত বিভিন্নভাবে।
আমার ছোটবেলার বর্ষাকাল তিন রকম আনন্দে কেটেছে যেমন বর্ষার শুরু বর্ষার সময়, ভরা বর্ষায় এবং বর্ষার শেষে। আমি আগেই বলেছি আমাদের বাড়ির পাশে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ আছে যেখানে বর্ষা মৌসুমে পাট কাটার পর হাওড়ার মত অথৈ পানি থাকে। বর্ষার শেষে আসে মাছ ধরার আনন্দ, মাছ ধরার ফাঁদ দিয়ে অনেকবার মাছ ধরেছি। ভরা বর্ষায় যখন হাওরের মত পানি থাকে তখন ঘুনি (মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ ) দিয়ে মাছ ধরতাম, বাবা আমাকে মাছ ধরার টোপ বানাতে সাহায্য করতে। মাছ ধরার টোপ হিসেবে ধানের কুড়া এবং ভাতের সাথে মিশ্রণ করে ব্যবহার করা হতো, যা ঘুনির মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে আটকে দিতাম। মাছ এই টোপ খেতে খেতে ঘুনির মধ্যে একবার চলে গেলে আর বের হতে পারত না। স্কুলে যাওয়ার আগে বিশেষ করে কোমর পানিতে ধান ক্ষেতের মধ্যে লম্বা লাঠি দিয়ে পানির নিচে রেখে আসতাম। দুপুর বেলা টিফিন টাইমে বাড়িতে এসে সবার আগে ঘুনি দেখতে যেতাম। এই মাছ ধরার ফাঁদে অনেক ধরনের মাছ পাওয়া যেত, বিশেষ করে দুপুরবেলায় চকচকে রোদে দেশী পুঁটি এবং রাতের বেলায় চিংড়ি এবং বাইন মাছ পাওয়া যেত।
SOURCE
মাছ ধরার অন্যরকম আনন্দ তৈরি হতে বর্ষার শেষে বিশেষ করে শরতের মাঝামাঝি সময়। বর্ষার পানি যখন নেমে যেত তখন মাঠের নিচু জায়গাতে পানি জমে থাকতো এবং মাছ পাওয়া যেত। আমরা বিশেষ করে শুক্রবারে স্কুল বন্ধের দিনে সবাই মিলে পরিকল্পনা করে যেকোনো একটা জায়গা বেছে নিতাম মাছ ধরার জন্য। অল্প পানি হওয়ার কারণে যতটুকু জায়গায় পানি অপসারণ করব ততটুকু কাদা দিয়ে একটু উঁচু করে চারিদিকে বাঁধ তৈরি করে নিতাম। পানি অপসারণ এর কাজে কেউ থালা, কেউ বালতি দিয়ে, আবার কেউ বাটি ব্যবহার করত। এ কাজে সবার অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং আনন্দের সাথে। অনেক সময় এমনও হয়েছে পানি অপসারণ করতে করতে শেষ পর্যায়ে এসে বাঁধের একটা জায়গা ভেঙে গিয়ে আবার পানি ভরে যেত,তখন সবাই মিলে আবার বাঁধ দিয়ে নতুন করে পানি অপসারণ এর কাজ শুরু করতাম। এরকম অন্যরাও কয়েকটা দলে বিভক্ত হয়ে মাছ ধরতে, এই মাছ ধরার কাজ চলত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। পানি অপসারণ করার পর কাঁদার মধ্যে আমরা অনেক ধরনের মাছ পেতাম, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শোল মাছ, টাকি মাছ, বাইন মাছ ইত্যাদি। মাছধরা শেষে পরিষ্কার পানিতে মাছের উপরের কাদা ধুয়ে নিয়ে আমরা যারা একসাথে মাছ ধরেছি সবাই সমান ভাগে ভাগ করে নিতাম এবং সবশেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতাম আনন্দের সাথে।
এই সকল স্মৃতি মনে পড়তেই এখনো অনেক আবাগী হয়ে উঠি এবং মনের অজান্তেই চলে যায় ছেলে বেলার সেই দিনগুলোতে। বন্ধুরা আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, সময় চলে যায় স্মৃতি রেখে যায় এর পরবর্তী পর্বে আবার আপনাদের সামনে হাজির হব আমার নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
সময় চলে যায় রেখে যায় স্মৃতি কথাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা সবাই একদিন এই সুন্দর পৃথিবী থেকে চলে যাব। কিন্তু আমাদের অনেক স্মৃতি রয়ে যাবে এই ভুবনে ছোটবেলায় আমি তেমনি মাছ ধরে বেড়াতাম এবং অনেক খেলাধুলা করে বেড়াতাম যেটি আপনি ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন ধন্যবাদ আপনাকে শুভকামনা রইল। তৃতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে শুভকামনার জন্য। ছেলেবেলার কাটানো সময় মানুষ সারাজীবন মনে রাখে।
ঠিক বলেছেন ভাই আপনি সময় চলে যায় শুধু রেখে যাই স্মৃতিগুলো। বৃষ্টির দিনে হাডুডু খেলা আমিও অনেক পছন্দ করি ভাই। আপনার পোষ্টের মধ্যে দেখলাম আপনি লিখেছেন হাডুডু খেলার ঘর আপনার নিজে নিজে কাটতেন ঠিক আমরাও এখনো হাডুডু খেলার ঘর নিজে নিজে কাটি ভাই।
অনেক খেলাধুলা করেছি আর আম্মুর হাতে মার খেয়েছি।