ABB Contest-57 || আমার ঘুড়ি বানানোর দক্ষতা || ফড়িং ঘুড়ি।

আমার ঘুড়ি বানানোর দক্ষতা ফড়িং ঘুড়ি

_{^{ছবিটি কেনভা দিয়ে তৈরি}}

শুভ রাত্রি আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি আমার আজকের আয়োজন। আজ আমি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলে এলাম। এবারের টপিক একদমই ইউনিক এবং মজার। সত্যি বলতে এই টপিক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই ছেলে বেলায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। আসলে আমাদের ছেলেবেলা অনেক আনন্দের ছিল কারন আমরা বাইরে উন্মুক্ত পরিবেশে খেলাধুলা করতে পারতাম। এখনকার সময়ে বাচ্চারা কেমন যেন রোবটিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এখানে শুধুমাত্র বাচ্চাদের দোষ দিলে হবে না, আমরাও সেই একই পথে হাঁটছি। আমরা আমাদের বাচ্চাদের সময় দেই না, তাদের ভালো লাগা মন্দ লাগা প্রাধান্য দেই না। যাইহোক গত কিছুদিন আগে ইলমা বায়না ধরেছিল ঘুড়ি তৈরি করে দেয়ার জন্য। তখন সময় স্বল্পতার কারণে খুব সাধারণভাবে একটি ঘুড়ি তৈরি করে দিয়েছিলাম।

যাইহোক এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় দেখে আমি কতটা খুশি হয়েছিলাম তা আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। কারন এই সুযোগে হয়তো আমার বাচ্চাদের একটু আনন্দ দেয়া যাবে। যেই চিন্তা সেই কাজ, গতকাল অফিসের এক ফাঁকে বাসায় চলে এলাম। ঘুড়ির কাজ অর্ধেক শেষ করেই এমন একটা কাজ চলে এলো যেখানে আমি না গেলে কিছুতেই সমাধান হবে না। অবশেষে অর্ধেক কাজ ফেলে চলে গেলাম অফিসে কাজে। আর আজকে সকাল থেকে বেশ কিছু ঝামেলার কাজ করেছিলাম, তবে মনে মনে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছিলাম যদি বিকেলের দিকে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় পাই তাহলে আমার ঘুড়ি বানিয়ে শেষ করতে পারবো। উপর ওয়ালা হয়তো আমার কথা শুনতে পেয়েছেন, বিকেলের দিকে হঠাৎ একটা সুযোগ পেয়ে বাসায় ছুটে গেলাম। আর অবশেষে তৈরি করতে পারলাম আমাদের ফড়িং ঘুড়ি 😊 যাইহোক চলুন দেখে নেয়া যাক তৈরি প্রনালী।

---

---

প্রয়োজনীয় উপকরণ

• _{বাঁশ/সিলিং ঝাড়ু}
• _{রঙিন কাগজ}
• _{হলুদ পলিথিন}
• _সুতা
• _{স্কেল}
• _{রাবার}
• _{রং পেন্সিল}
• _আঠা
• _{মশার কয়েল}
• _{কাঁচি}
• _{হেক্সো ব্লেড}
• _{দা/বডি}
• _{মার্কার কলম}

তৈরি প্রক্রিয়া

আসলে শহরের বাড়িতে হুট করে বাঁশ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। আমিও প্রথমেই বেশ চিন্তায় পরে গেলাম বাঁশ জোগাড় করার জন্য। পরে মাথায় এলো আমার একটা সিলিং ঝাড়ু রয়েছে, তাহলে এটাকেই শহীদ করে দিয়ে বাঁশ সংগ্রহ করতে হবে। 😄
যাইহোক হেক্সো ব্লেড দিয়ে প্রথমেই মাপ দিয়ে বাঁশ কেটে নিলাম। এরপর দা দিয়ে মাপ মতো ফালি করে নিলাম।

আমার একটা চিন্তা ছিলো বাঁশটা বেশ শুকনো এটা বাঁকা করে ঘুড়ি আদৌ তৈরি করা যাবে কিনা। তাই কেটে ফালি করার পর অনেক লম্বা সময় নিয়ে এগুলো পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিলাম।

এবার আমার ঘুড়ির প্রধান মেরুদন্ড তৈরি করতে হবে। প্রথমেই মার্কার কলম দিয়ে দাগ দিয়ে নিলাম। এরপর ছোট ছোট দুটো কাঠি কেটে সুতা দিয়ে লাগিয়ে নিলাম।

এবার ডানা তৈরির জন্য, একটি কাঠির মাঝে সামান্য ফালি করে ঢুকিয়ে দিয়ে সুতা দিয়ে বেঁধে দিলাম। ঠিক একই ভাবে দ্বিতীয় ডানা লাগিয়ে নিলাম।

এই ধাপে বাশ দিয়ে মাথার অংশ তৈরি নিলাম। এরপর সুতা টানা দিয়ে ডানার মূল ভিত্তি তৈরি করে নিলাম।

এবার সুতা দিয়ে শরীরের মূল বডি তৈরি করে নিলাম।

এবার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে পাওয়া হলুদ পলিথিন কেটে ডানার দিকে বিছিয়ে দিলাম। আসলে কোন কিছু ফেলনা নয় 😄

এরপর এগুলো জোড়া দেয়া নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে গেলাম। অবশেষে মাথায় চিন্তা এলো কয়েল দিয়ে জোড়া দিলে কেমন হয়। যাইহোক কয়েল দিয়ে ডানাগুলো জোড়া দিয়ে দিলাম। 😄 এই আইডিয়াটা কেমন লাগলো আশাকরি জানাবেন।

এবার রঙিন কাগজ কেটে মুল শরীর এবং লেজ তৈরি করে নিলাম। এরপর কাগজ কেটে মুখটা তৈরি করে নিলাম এবং আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিলাম।

এবার ঘুড়িতে সুতা লাগিয়ে উড়ানোর বন্দোবস্ত করে নিলাম।

ফটোসেশন

প্রথমেই ছাদের উপর ঘুড়িটা নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম। দেখতে অসাধারণ সুন্দর দেখাচ্ছে।

ওরা দুজন ঘুড়ি হাতে নিয়ে ছবি তুলবেই তুলবে, আমি কিছুতেই ওদের দমিয়ে রাখতে পারলাম না 😅

এতো কষ্ট করে ঘুড়ি তৈরি করলাম ছবি না তুললে হয় বলুন 🤪 তবে আমার ছবিগুলো একদমই ভালো আসেনি।

ঘুড়ি উড়ানো

সত্যি বলতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমি আমার বাচ্চাদের কতটা আনন্দ দিতে পেরেছি তা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আর কিছুটা সময়ের জন্য আমি আমার শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম 😄

সবশেষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের কাছে, এতো চমৎকার একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।

---

ছবির বিবরণ

ছবি যন্ত্র	রিয়েলমি সি-২৫
ছবির কারিগর	@emranhasan
ছবির অবস্থান	ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।