মানুষের জীবন ভয়ংকর সুন্দর।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
ঘটনা টার শুরু প্রায় আজ থেকে পাঁচ, ছয় মাস আগের। তখন আমার ইচ্ছা আমার লক্ষ্য ছিল একটা। কিন্তু আজ এই পাঁচ মাস পরে আমার গন্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার লক্ষ্যটাও এখন পাল্টে গিয়েছে। ভাবতে হচ্ছে নতুনভাবে। এটা মোটেও সহজ ছিল না। আমি আমার স্বপ্ন'টাকে নিজের চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু কাউকেই বলতে পারিনি। নিরবে নিভৃতে দেখে গেছি। কথাগুলো যখন লিখছি অজান্তেই আমার চোখের কোণে পানি চলে আসছে এমন অবস্থা। কথাগুলো হয়তো কখনো কাউকেই বলা হবে না। সেজন্য এখানে লিখে রাখছি। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারলে হয়তো এই লেখাটা দেখে তখন মনে পড়বে আসলেই সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা মানুষের চিন্তার বাইরে। আমি সাধারণত নিজের কথাগুলো নিজের মধ্যে চেপে রাখি। কাউকে বলি না বিশেষ করে আমার খারাপ মূহুর্ত টা। এটা আমার একটা অভ্যাস। আমি চাই না আমার এই কথাগুলো আর কেউ জানুক। কিন্তু আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা যেতেই পারে।
আমি যে খুব ভালো ছাএ সেটা বলব না। তবে মোটামুটি একটা পর্যায়ে আছি। বর্তমানে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির ফাইনাল ইয়ারের ছাএ। এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এ আছি। এটা হয়তো বুঝবেন না। এটাকে ইন্টার্নশীপও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আমার ইচ্ছা আমার পরিকল্পনা ছিল আলাদা। বিগত ছয় সেমিষ্টারে আমার ফলাফল বেশ ভালো। মোটামুটি 4.00 এর মধ্যে গড়ে 3.90 আমার সিজিপিএ। অন্য সব ছাএদের মতো আমারও ইচ্ছা ছিল আমি ডিপ্লোমা শেষ করে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করব এডমিশন কোচিং করব। আমার সমমানের সব বন্ধুরা আমার থেকে অনেক খারাপ ছাএরাও চলে গেছে এডমিশনে। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত আমার আর যাওয়া হলো না!
আমার বয়স যখন এগারো তখন আমার বাবা মারা যায়। তারপর আমার লেখাপড়ার খরচ আমার মা বহন করে। এরপর ক্লাস টেন থেকে আমি টিউশনি শুরু করি। নিজের এলাকাতেই কয়েকজন কে পড়াতাম। এতে করে আমার লেখাপড়ার খরচ চলে যেত। এভাবে প্রায় কয়েকবছর চলে। তারপর আমার পরিচয় হয় স্টিমিট এর সঙ্গে। তখন চলছে করোনা। আস্তে আস্তে টিউশনি করা বাদ দিয়ে দেয়। স্টিমিটে কাজ করা শুরু করি পাশাপাশি লেখাপড়া। মোটামুটি স্টিমিট থেকে যা আর্ন করতাম সেটা দিয়ে আমার লেখাপড়া হাত'খরচ বেশ ভালোভাবে চলে যেত। পাশাপাশি বেশ কিন্তু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যায় আমার সঙ্গে আমার পরিবারের সঙ্গে। স্টিমিট থেকে আর্ন করে যা সঞ্চয় করেছিলাম সেগুলো সেখানে চলে যায়। কিন্তু সেটা রেখেছিলাম আমি আমার ভবিষ্যত লেখাপড়ার জন্য। কিন্তু ঐ যে নিয়তি।
এবার আসল সেই সময়। যখন আমাদের কলেজকে জানাতে হয় আমরা কে কোথায় যাব। এডমিশনে গেলে বেশ অনেক গুলো টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সত্যি বলতে আমার পরিবার বলতে আমার মা কে টাকাগুলোর কথা আমি বলি নাই। কারণ টা আশাকরি বুঝেছেন। আমার সব কাছের বন্ধুরা এডমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমি কোথায় যাচ্ছি এটা কাউকে বলি না। আমার সিদ্ধান্ত সর্বদাই আমি নিজেই নেয়। এক্ষেত্রেও কাউকে আর কিছু বলিনি। এডমিশনে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলি সিদ্ধান্ত নেয় ইন্টার্নশীপ টাই ভালোমতো করব। তারই ধারাবাহিকতায় এখন ঢাকাতে আছি। এখানে আসার পর আমার ক্লাসের যে আমাকে দেখছে সেই আমাকে একটা প্রশ্ন করছে কী ব্যাপার ইমন তুই এডমিশনে যাস নাই। তখন আমার মুখে কোনো কথা থাকে না। একটা চোরা হাসি দিয়ে চলে আসি। কিন্তু আমার ভেতরে কী হয়ে যায় সেটা আমি জানি। ঐ যে বললাম না আমার স্বপ্নটাকে আমি নিজের চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখেছি। এটা নিয়ে অবশ্য অনেকে না জেনেই অনেক কথা বলেছে। সেগুলো আমি কানে নেয় নাই।
মানুষের তো কত পরিকল্পনা কত ইচ্ছা'ই থাকে। সবকিছু কী পূরণ হয়। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার একটা পরিকল্পনা থাকে আমাদের নিয়ে। তার ইচ্ছাতেই সব হয়। এবং মহান সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা আমাদের চিন্তারও বাইরে। হয়তো তিনি আমার কপালে ঐটা লেখেন নাই। অন্যকিছু রেখে দিয়েছেন। সেজন্য এখন আর হতাশ হয় না। সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। নিজের ইচ্ছাগুলোকে নিজের মধ্যেই রাখি। কারো কাছে এখন আর কিছু এক্সপ্লেইন করতেও যায় না। দিনশেষে মানুষের প্রিয় পার্টনার প্রিয় শখা সে নিজেই। মানুষের জীবন ভয়ংকর সুন্দর।।
------- | ------ |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @emon42 |
ডিভাইস | VIVO Y91C |
সময় | সেপ্টেম্বর,২০২৩ |
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
ইমন ভাই, আপনার ক্যাপশনটি মারাত্মক সত্য। মানুষের জীবন ভয়ংকর সুন্দর! আমরা চিন্তা করি এক, কিন্তু উপরওয়ালার পরিকল্পনা যদি ভিন্ন হয়, আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে আপনি আজ যতটুকু, আপনার নিজের চেষ্টা এবং পরিশ্রম এর ফল। আশা করছি এই চেষ্টা চাকিয়ে গেলে ভবিষ্যতেও আপনি নিজেকে অনেক উচ্চ স্থানে নিয়ে যেতে পারবেন। উপরওয়ালার পরিকল্পনা বোঝা এত সহজ না ভাই! আপনার জন্য শুভকামনা।
এটা একদম বাস্তব সত্য কথা ভাই। আপনি কাউকেই আপনার প্রয়োজনে পাশে পাবেন না, সবাই আপনাকে জাস্ট সান্তনাই দিবে। তবে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়াটা জরুরি। জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ হোক এমনটাই দোয়া করি 🌼।
কি বলবো ভাই আমি যেন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার লেখাগুলো পড়ে মনের ভেতরে ভীষণ কষ্ট অনুভব করলাম। অন্যদিকে আবার আপনার মনের জোর ও মনোবল দেখে মনে হচ্ছে আপনাকে দেখে শেখার মত সত্যিই অনেক কিছু আছে। শুধু বলবো আপনার এই প্রচেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনের পথ গুলো যেন খুব সহজে পাড়ি দিতে পারেন এই প্রত্যাশা করছি। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আমি এটা সবসময় বিশ্বাস করি যে,সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে উত্তম পরিকল্পনাকারী। কারণ আমরা কতো কিছুর প্ল্যান করে রাখি,সব প্ল্যান তো সাকসেস হয় না। তবে আমাদেরকে চেষ্টা করে যেতে হবে। ভাগ্যে থাকলে হবে, নয়তো হবে না। কোনো কিছুতে ব্যর্থ হলে হতাশ না হয়ে, সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে। এতে করে তিনি ভীষণ খুশি হন আমাদের উপর এবং আরো ভালো কিছু আমাদেরকে উপহার দিয়ে থাকেন। আপনার জন্য হয়তো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে ভাই। অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল আপনার জন্য।