সাইমন।

in আমার বাংলা ব্লগlast year


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ সোমবার,২রা অক্টোবর, ২০২৩।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


received_560805398598035.jpeg

তিন বছর আগে তোলা সাইমনের ছবি


আচ্ছা আপনারা কী বিড়াল পছন্দ করেন। আমি বিড়াল অনেক পছন্দ করি। এবং বিড়ালের অনেক ভালো দিক আছে। অধিকাংশই বাড়িতেই বিড়াল থাকে। আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের বিড়াল হয় হুলো এবং মেনি। সাধারণত বড় সাইজের পুরুষ বিড়ালকে হুলো এবং কিউট মেয়ে বিড়াল গুলোকে মেনি বলা হয়। যাইহোক একসময় আমি নিজেও বিড়াল পালন করতাম। আমি এখন পযর্ন্ত বেশ কয়েকটা বিড়াল পালন করেছি। তবে এরমধ্যে আমার সবচাইতে প্রিয় বিড়াল ছিল সাইমন। সাইমনের দেখা পাই আমি একেবারে ছোট থাকতে। কিন্তু সাইমন এর শেষ পরিণতি আমি মেনে নিতে পারিনি। তারপর থেকে আমি আর কোনো পালন বাড়িতে রাখি নি। কারণ সাইমন এর ঘটনা টা আমার মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। সাইমন এর শেষ পরিণতি আমাকে অনেক ভেঙে দিয়েছিল। আজ সে স্মৃতিটাই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেব।

২০১৯ সালের শেষের দিকের কথা। আমি তখন কলেজে পড়ি। এবং আমার বাড়িতে কোনো বিড়াল নেই মোটামুটি মাস ছয়েক। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে একদিন বিকেল বেলায় আমি বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে গেছিলাম। ঐসময় এলাকার একটা জায়গাই দেখি ছোট একটা বিড়াল পড়ে আছে। অবস্থা টা একটু খারাপ। দেখেই আমার কেমন জানি খারাপ লাগছিল। ফলাফল আমি ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে গেলাম। মোটামুটি আমি থাকলে খাবার দিতাম আবার মাঝে মাঝে আমার মা খেতে দিত। এবং রাতে আমার রুমেই ঘুমাতো। বেশ কিছুদিন পর আমাদের দুজনের বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। ফলাফল আমি ওর নাম দেয় সাইমন। তখন থেকেই আমার এবং সাইমনের গল্প শুরু। আমি এবং ও যেন দুজন দুজনকে চোখে হারাতাম। সাইমন সারাদিন বাড়িতে থাকত। এবং আমি বাড়ি থাকলে আমার কাছ থেকে দূরে যেত না। আমার আশপাশেই থাকতো। তারপর আসলো করোনা মহামারী।


IMG_20201224_220242.jpg

IMG_20201018_213419.jpg


আমার করোনার পুরো সময় টাই কেটেছে কিন্তু সাইমন এর সঙ্গে। করোনা টাও কেটে যেতে লাগল। এবং সাইমন ও দেখতে দেখতে বেশ বড় হয়ে গেল। এককথায় যাকে বলে হুলো বিড়াল। হুলো বিড়াল টা কী সেটার বর্ণনা আমি প্রথমেই দিয়েছি। ২০২১ সাল পড়ে গেল। মার্চ মাস চলছে। সাইমনের বয়স দেড়বছরের বেশি। ২০২১ সালের শুরু থেকেই সাইমনের আচরণে বেশ পরিবর্তন চলে আসে। আগে যে সাইমন বাড়ির বাইরে যেত না তখন ও অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকত। তবে রাত হলেই ফিরে আসতো। সাইমন আমার কথা বুঝতো ব‍্যাপারটা ছিল এমন। আমি জিজ্ঞেস করতাম কী রে কোথায় গেছিলি। ওর কাছে ব‍্যাখ‍্যা থাকলে ও মিউ মিউ করত। আর যদি কোনো জবাব না থাকত তাহলে ও চুপ থাকত। বিষয়টি আমার বেশ ভালো লাগত। মাঝে মাঝে আমার খুজতেও যাওয়া লাগত।

তবে একবার একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেল। সাইমনের দেখা নেই প্রায় চারদিন। বেশ অনেক খুজেঁছিলাম আমি। কিন্তু পাইনি। চারদিন পর হঠাৎ একদিন সন্ধ‍্যায় এসে হাজির সাইমন। গায়ে অনেক কাদা মাটি মুখটাও শুকনা বুঝলাম কয়েকদিন ঠিকমতো খাইনি। ওকে গোসল করালাম তারপর খেয়ে দিলাম। তবে সেদিন ওকে কিছু বলিনি। এবং ও যেন খুবই অস্থির ছিল ওর ভাব টা এমন। সেদিন রাতে ও আমার রুমে ঘুমালো না বাইরে চলে গেল। পরের দিন দুপুর থেকে আবার সাইমনের দেখা নেই। আমি ভাবলাম হয়তো আবার গেছে। আবার সময় হলে চলে আসবে। তারপর মোটামুটি দুইদিন কেটেছে। সকালে আমার মা আমাকে ডাকছে বলছে ইমন তাড়াতাড়ি এদিকে আই। গিয়ে যা দেখলাম আমার বলার ভাষা ছিল না। দেখি সাইমনের নিথর দেহ পড়ে আছে আমাদের রান্নঘরের টিনের চালের উপর। সেটা রীতিমতো আমাকে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। সাইমনকে আমি আমার বাড়ির পাশেই কবর দেয়। এবং তারপর থেকে আমি আর কোনো বিড়াল পালন করিনি।।



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG_20230518_131529.JPG

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।


আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png



Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আসলে বিড়ালটার জন্য বেশ খারাপ লাগলো,কষ্ট পেলাম। কি বলবো এই প্রাণি গুলোর সাথে যদি ভালোবাসার সম্পর্ক হয় তাহলে তারা হারিয়েগেলে ভেতরটা একদম শেষ হয়ে যায়। আমি বলব আমি আপনার দুঃখটা একটু বেশি বুঝেছি কারণ আমিও আপনার মত একটি ঘটনার শিকার হয়েছি। তাই আমিও আর কোন বিড়ালকে কাছে ঘেষতে দিই না। কারণ এতে আবার হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। আর অন্য কোন বিড়ালকে কেন জানি সহ্য হয় না এখন কারন সেই প্রিয় বিড়ালটার কথা মনে পড়ে যায়।

 last year 

আমি কখনো বিড়াল পালন করিনি।তবে আমার বড় ভাইয়া পুষেছিল।আপনার সাইমনের গল্প শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো। আসলে কিছু পালন করলে তার প্রতি অনেক বেশি মায়া পরে যায়।তাইতো আপনার কষ্টের মাত্রাটা ও খুব বেশী ছিল।তাই আপনি আর বিড়াল পালন করতে পারেননি।ধন্যবাদ ভাইয়া অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।

 last year 

সাইমনের শেষটা জেনে খুব দুঃখ পেলাম ভাই। আমাদের বাড়িতেও এরকম একটা বিড়াল রয়েছে, সেটা অবশ্য আমার পোষা না বা আমাদের বাড়ির কারোরই পোষা না, কিন্তু সে সবসময়ই আমাদের বাড়িতে থাকে সেই জন্যই মা ওকে এখন খেতেও দেয়। অনেক মায়া লাগে আসলে জীবজন্তুর জন্য। মানুষকে একবার তাড়ালে মানুষ আর ফিরেও তাকায় না, কিন্তু ওদেরকে হাজার বার তাড়ালেও ওরা সেই আমাদের কাছেই ফিরে ফিরে আসে। সেই জন্যই সাইমন আপনার খুব প্রিয় হয়ে গিয়েছিল, তবে তার শেষ পরিণতিটা ছিল খুবই দুঃখজনক।

 last year 

একেবারে সঠিক বলেছেন আপু।। ধন্যবাদ আপনাকে।।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65628.71
ETH 2669.64
USDT 1.00
SBD 2.86