অসচেতনতার বলি (শেষ পর্ব)
কিছুক্ষণের ভেতরে সেখানে সাগরের বাবাও এসে উপস্থিত হয়। সাগরের বাবা উপস্থিত হওয়ার সাথে তার প্রতিবেশীরা তাকে পরামর্শ দিতে থাকে তাড়াতাড়ি একজন ভালো ওঝা খবর দিন। সাগরকে সাপে কামড়েছে। সাপের বিষ নামাতে হবে। সাগরের বাবা প্রতিবেশীদের সাথে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায় পাশের গ্রামে। সেখানে তাদের এলাকার সবচাইতে নামকরা ওঝা থাকে। সেই ওঝার বাড়িতে পৌঁছে সাগরের বাবা তাকে সাথে করে নিয়ে আসে। ততক্ষণে সাগরের শ্বাস-প্রশ্বাস অনেকটা ধীরগতির হয়ে গিয়েছে। আর বিষের প্রভাবে তার পা নিলচে বর্ণ ধারণ করেছে। ওঝা এসে সাগরের অবস্থা দেখে বলে আপনারা আমাকে খবর দিতে দেরি করে ফেলেছেন। এখন আমার পক্ষে এর চিকিৎসা করা সম্ভব না। ওঝা বুদ্ধিমান মানুষ। সে বুঝতে পারে এখন এই ছেলের চিকিৎসা করলে সে বাঁচবে না। শেষ পর্যন্ত তার ঘাড়ে দোষ পড়বে।
ওঝা সাগরের চিকিৎসা করতে পারবে না বলে সেখান থেকে চলে যায়। এর ভেতরে সাগরের এক বন্ধু এসে সেখানে উপস্থিত হয়। সে সাগরের অবস্থা দেখে সাগরের বাবাকে পরামর্শ দেয় চাচা তাড়াতাড়ি সাগরকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যেতে হবে। সেখানে সাপের কাটার ইনজেকশন দেয়া হয়। তাড়াতাড়ি সেখানে না নিতে পারলে সাগর বাঁচবে না। সাগরের বাবা তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কিভাবে বুঝতে পারলে? তখন সাগরের সেই বন্ধু বলে কিছুদিন আগে আমাদের স্কুলে কয়েকজন মানুষ এসে সাপে কাটার লক্ষণ এবং সেটার চিকিৎসা সম্বন্ধে আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছে।
যেহেতু ওঝা চিকিৎসা করবে না তাই সাগরের বাবা সাগরকে নিয়ে ভ্যানে করে রওনা দিলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর উদ্দেশ্যে। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সাগরদের এলাকা থেকে বেশ অনেকটা দূরে। সেখানে যেতে প্রায় ঘন্টা দুই লেগে যাবে। সাগরের বাবা বারবার ভ্যানওয়ালা কে বলছিলো আরো জোরে চালাও আরো জোরে চালাও। না হলে আমার সাগর মনে হয় মারা যাবে। শেষ পর্যন্ত তারা সন্ধ্যার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছালো। ততক্ষণে সাগরের দেহ নিথর হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছাতেই সেখানকার ডাক্তার সাগরকে দেখে তার বাবাকে জানালো আপনার ছেলে আরও বেশ কিছুক্ষণ আগেই মারা গিয়েছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সাগরের বাবা পাগলের মত কান্নাকাটি করতে লাগলো। আর এভাবেই অসচেতনতার কারণে একটি তাজা প্রাণ ঝরে পড়লো।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
অসচেতনতার কারণে সাগরের মৃত্যু হয়েছে। বাবা যদি একটু সচেতন হতো তাহলে সাগর বেঁচে থাকত। শুরুতেই যদি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেত তাহলে চিকিৎসা করে তাকে বাঁচানো যেত। অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর শিক্ষনীয় পোস্ট আমাদের মাঝে ধারাবাহিকভাবে শেয়ার করার জন্য।