তিথী রানীর বাসায় কিছু সময়

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো বন্ধুরা

সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি,সুস্থ আছি।

আপনারা সবাই ইতিমধ্যে @tithyrani কে তার সুন্দর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে খুব ভালোভাবে চিনে ফেলেছেন।আসলে মানুষের এমন কিছু প্রতিভা থাকে যার কারনে খুব তাড়াতাড়ি সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে।ঠিক সেরকমই তিথী রানীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে।আমার বাংলা ব্লগ এ জয়েন হওয়ার পর থেকেই ওর প্রতিভা গুলোকে প্রকাশ করে চলেছে,আর সবার মনের মধ্যে একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।তিথী রানী আমার ছোট বোন।আমার বাবা কাকারা চার ভাই।আমার বাবা সবার বড় আমি তার একমাত্র মেয়ে।তারপর আমার বড় কাকা তার একমাত্র মেয়ে হলো তিথী রানী।আমাদের বাড়িতে কাকাতো জ্যাঠাতো ভাইবোন বলে কোনো কথা নেই।আমরা সবাই নিজের ভাইবোন মনে করি।আমাদের বড় হওয়া গ্রামে কিন্তু তিথী রানীর বড় হওয়া ঢাকায়।মাঝে মাঝে যখন ছুটিতে বাড়িতে আসতো তখন আমি ওকে সবসময়ই কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো খাওয়ানো,স্নান করানো সবকিছু করতাম।
IMG_20230918_004803.jpg

ছোট ভাইবোন কে ভালোবেসে কাছে রাখার কি যে ভালোলাগার অনুভূতি,তা যে করে সেই বোঝে।আস্তে আস্তে বড় হলো বিয়ে হলো সবকিছু যেনো স্বপ্নের মতো মনে হয়।তিথীর বিয়ের পর ঢাকায় গিয়েছি কিন্তু কাকার বাসায় থেকেছি একদিন শুধু ওর বাসায় দুপুরে খেতে গিয়েছিলাম।সেভাবে থাকা কখনো হয়নি।ঢাকায় কাকিমার বাসাই আমাদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ ও ভরসার স্থান ছিলো।এখন খুব মিস করি সেই তেজগাঁও থানা কোয়ার্টার এর বাসা টাকে ওখানে অনেক মধুর স্মৃতি রয়েছে।

IMG_20230918_004301.jpg

আমার হাসবেন্ড ঢাকায় থাকে আমিও একটা সময় ছিলাম।তিন বছর আগে নিজ এলাকায় চলে এসেছি।
গত সপ্তাহে আমি চিকিৎসা পাশাপাশি মানসিক শান্তির জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম।মেয়েদের কে বাসায় আমার শাশুড়ী মার কাছে রেখে।সকাল ১১ টায় বাসে উঠি যাতে করে তিথীর অফিস থেকে আসার সময় হয়ে যায়।তার কারন হলো বাসায় তালা দেওয়া আমি আগে গিয়ে কোথায় উঠবো!যাইহোক সেদিন রাস্তা একদম ফাঁকা ছিলো তাই খুব একটা সময় লাগেনি ঢাকায় পৌঁছাতে।তিথী আমাকে জানাতে বলেছিলো কখন কোথায় থাকি কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই জানাইনি।কারণ হলো ও চাকরি করে ইচ্ছে করলেই অফিস থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।আমি যদি আগেই পৌঁছে যাই তাহলে কোথাও একটা সময় কাটাতে পারবো তাতে আমার কোনো সমস্যা হবে না এই ভেবে কিছু জানাইনি।

ঢাকায় পৌঁছে দেখি আগে থেকেই আমার হাজবেন্ড আমাকে নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।বাস থেকে নেমে বাইকে করে রওনা দিলাম মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে।এর মাঝে তিথীর সাথে কথা হয়েছে ও তাড়াতাড়ি করেই অফিস থেকে বের হয়েছে যাতে আমাদের আগে বাসায় পৌঁছাতে পারে।কিন্তু ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের যে পরিস্থিতি তাতে করে নির্দিষ্ট টাইমে কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।সেদিন কোনো একটা কারণে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো তাই তিথীর আসতে খুব দেরি হয়ে যাচ্ছিল।তখন ও আমার হাজবেন্ড জিৎ কে বিষয় টি জানায়,আর জিৎ সাথে সাথে অফিস থেকে রওনা হয়ে যায়।

আমরা ঠিক ছয়টায় মোহাম্মদপুরে পৌঁছাই।তারপর একটা ফুচকা চটপটির দোকানে চেয়ার পাতা ছিলো ওখানে গিয়ে বসি।আমাকে রেখে আমার হাজবেন্ড বাইক রাখার জন্য মোহাম্মদপুর থানায় যায় থানায় বাইক রেখে আবার আমার কাছে আসে।আসার পর আমি কি খাবো জানতে চাইলে আমি কিছু খেতে চাইলাম না তারপরও জোর করে আমাকে চটপটি কিনে দিলো।আবার দোকানে গিয়ে আমার জন্য ঠান্ডা জল আইসক্রিম এগুলো নিয়ে আসলো।এই বসে বসে চটপটি খেলাম আইসক্রিম খেলাম এভাবে কখন এক ঘন্টা পার হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।সাতটার পরপরই দেখি জিৎ এসে হাজির তারপর আমরা বাসায় গেলাম।আধাঘন্টা পর তিথীও চলে আসলো।

IMG_20230918_013728.jpg

সবাই ফ্রেশ হয়ে দই মিষ্টি খেয়ে,দুধ চা ও মুড়ি চানাচুর মেখে নিয়ে বসে খেলাম এবং কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলাম।আমাদের বাড়ির একটা ঐতিহ্য বলা চলে সেটা হলো আত্মীয়-স্বজন যেই আসুক বা ছোটখাটো কোনো অনুষ্ঠান হোক তখন আমরা যত কিছুই খাই না কেনো এক গামলা মুড়ি মেখে চা দিয়ে না খেলে কেনো জানি আড্ডা জমেই না এরকম একটা ব্যাপার।চা মুড়ি খাওয়ার পর আমি আর তিথী দুজন মিলে রান্নাঘরে চলে গেলাম দুজন মিলে গল্প করলাম এবং রান্না করলাম।তারপর আমরা চারজন মিলে একসাথে বসে রাতের খাবার খেলাম।তারপর সবাই ঘুমিয়ে গেলাম।
আমি পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি তিথী জিৎ দুজনেই অফিসে চলে গেছে ওদের সাথে আর দেখা হয়নি।

IMG_20230918_013752.jpg

IMG_20230918_013740.jpg

আমরা ঘুম থেকে উঠে সকালের খাবার খেয়ে মিরপুরে আমার পিসতুতো বোন তন্বীর বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি।সারাদিন তন্বীর বাসায় থেকে সন্ধ্যায় তিথীর বাসায় চলে আসি।জিৎ তিথী অফিস থেকে দুজনে আসলো।আবারও চা নাশতা খেয়ে একটু আড্ডা দিলাম।জিৎ খুব ভালো মাংস রান্না করে তাই রাতের রান্নাটা জিৎরই করার কথা,সেজন্য আমি এবং তিথী রান্নাঘরে ঢুকলাম না।জিৎ চুইঝাল দিয়ে খাসির মাংস রান্না করলো সাথে আরও অন্য আইটেম ছিলো।সবাই মিলে খেতে বসলাম।মাংস মুখে দেওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম জিৎ সত্যিই অনেক ভালো রান্না করে।
সবাই চুই ঝাল দিয়ে মাংস খুব মজা করে খেলাম।চুইঝাল দিয়ে মাংস কখনো খাইনি এটাই আমার প্রথম খাওয়া তাই বেশ ভালোই মাংস খেয়ে ফেললাম এতো টেস্টি খাবার কি অল্প খাওয়া যায় বলেন!
IMG_20230918_004125.jpg

খাওয়া দাওয়ার পর রাতে হঠাৎ করে আমার মেয়ে ফোন দিয়ে বললো ওর ঠাঁকুমার খুব জ্বর অনেক অসুস্থ বোধ করছে।এই কথা শোনার পর থেকে আমরা খুবই টেনশন এ পড়ে গেলাম।তাই আর দেরি না করে পরের দিন খুব সকালের বাসের টিকিট বুক করা হলো।রাতটুকু কোনোরকমে পার করে ভোরবেলা বেড়িয়ে পড়লাম।আর ভালোভাবে বাসায় এসে পৌঁছালাম।খুব ইচ্ছা ছিলো কয়েকদিন থাকবো।ছুটির দিনে দুই বোন মিলে পুরো ঢাকা শহর ঘুরবো তারপর অনেক গল্প গুজব করে সময় কাটাবো কিন্তু কিছুই হলো না।হঠাৎ করে চলে আসাতে আমার যেমন মন খারাপ হয়েছিলো,ঠিক তেমনি তিথীও মন খারাপ করেছিলো।খুব অল্প সময় থাকা হয়েছে তারপরও অনেক ভালো লেগেছে।আশাকরি পরবর্তী সময়ে আবার ঢাকায় গিয়ে দুজন মিলে অনেক ঘুরবো গল্প করবো।

আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে অন্য কোনো সময়ে অন্য কোনো নতুন বিষয় নিয়ে সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।

ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

ঢাকায় গিয়ে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন নিজের কাছের লোকদের সঙ্গে। চুই ঝাল দিয়ে কখনো আমারও মাংস খাওয়া হয়নি। তবে শুনেছি বেশ সুস্বাদু লাগে খেতে। বোনদের সাথে বেশ ভালো সময় কাটানোর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

তেমন ভালো সময় কাটাতে পারিনি তার কারন সময় খুবই অল্প ছিলো।চুই ঝাল দিয়ে মাংস একদিন খেয়ে দেখবেন খেতে খুবই ভালো লাগে।ধন্যবাদ ভাবি।

 last year 

নিজের প্রশান্তির জন্য এভাবে মাঝে মাঝে বেড়িয়ে পরা জ্রুরি। তবে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ঢাকায় বেশ ভালো সময় কাটালেন নিজের আত্মীয়দের সাথে। আর চুঁই ঝাল দিয়ে মাংস রান্নার রংটি কিন্তু বেশ লোভনীয় হয়েছে। এভাবে মাঝে মাঝে বেড়িয়ে পরবেন তবে শরীর মন দু"টোই ভালো থাকবে।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু মাঝে মধ্যে একটু ঘুরতে ভালোই লাগে।ধন্যবাদ আপু।

 last year 

চুঁইঝাল দিয়ে মাংস রান্না করলে সত্যিই অনেক দুর্দান্ত লাগে খেতে।ঢাকায় এসে তিথী আপুর সাথে খুব ভালো সময় কাটিয়েছেন যা দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

চুই ঝাল দিয়ে মাংস খেতে সত্যিই অসাধারণ লাগে।আমি এবার প্রথম খেয়েছি।তিথীর সাথে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি আপু।ধন্যবাদ।

 last year 

এবারে এত অল্প সময়ের জন্য এসেছো দিদিভাই, ঠিকমতোন গল্প করেই মন ভরে নি।দুইটা দিন একদম চোখের পলকেই যেন কেটে গিয়েছে! পরের বার অবশ্যই অবশ্যই দুই মেয়েকে নিয়ে সবাই মিলে আসবে এবং একটু বেশি সময় নিয়ে আসবে। তবুও, যতটুকু সময়ই পেয়েছি, খুবই খুশি খুশি লাগছিলো তোমাদের কাছে পেয়ে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

এবারের সময় খুবই অল্প ছিলো কিন্তু তারপর ভালো লেগেছিলো।আশাকরি খুব শীঘ্রই আবার আসছি তখন অনেক মজা করা হবে।ধন্যবাদ মনা।

 last year 

আপনি তো তিথী রানী আপুর বাসায় গিয়ে বেশ আনন্দ করলেন। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলে বেশ মজার হয়। অনেক আড্ডা করা যায় সবাই মিলে বেশ মজার মজার খাবার খাওয়া সম্ভব হয়। আপনি তো খুব সহজেই ঢাকা পৌঁছে গেলেন মেয়েদেরকে রেখে। তাছাড়া ঘোরাফেরা করলেন প্রয়োজনীয় কাজ গুলো সেরে নিলেন। অনেক ভালো লেগেছে আপনার পোস্ট পড়ে।

 last year 

জ্বি আপু আত্মীয়স্বজনের বাসায় গেলে বেশ মজা হয়।অল্প সময়ের জন্য গিয়েছিলাম,তারপরও অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি।ধন্যবাদ আপু।

 last year 

আসলেই তিথী আপুর আবৃত্তি খুব চমৎকার হয়। ঢাকায় এসে বেশ ভালোই সময় কাটিয়েছেন দেখছি। তবে আরো কয়েকদিন থাকতে পারলে আরো বেশি উপভোগ করতে পারতেন। কিন্তু ঢাকা শহরের যানজট এর কারণে একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি। খাবারের ফটোগ্রাফি গুলো দেখে বেশ লোভনীয় লাগছে। আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগলো আপু। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

হ্যাঁ ভাইয়া ও অনেক ভালো কবিতা আবৃত্তি করে।ঠিক বলেছেন আরও কয়েকটা দিন থাকতে পারলে খুবই ভালো হতো।আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65792.35
ETH 2676.19
USDT 1.00
SBD 2.90