মামি-ভাগ্নি কম বান্ধবী বেশি।
হ্যালো
আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি সুস্থ আছি।
পৃথিবীতে অনেক ধরনের সম্পর্ক আছে যা কখনো কখনো এতটাই বেশি গভীর হয়ে যায় যে তখন সম্পর্কের মানেটাই উল্টো হয়ে যায়। ঠিক তেমনি পিংকি আর আমার সম্পর্কটা।পিংকি হলো আমার একমাত্র বড় ননদের একমাত্র মেয়ে পিংকি।আমার বিয়ের সময় পিংকি ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন থেকেই ও আমাদের বাড়িতে থাকতো।বাড়ির কাছেই একটা প্রাইমারি স্কুলে ওকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলো ও তাই আমাদের বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করতো। পিংকি তখন আমার খুব একটা ভক্ত ছিলোনা তার কারন হলো আমি ওকে সবসময়ই পড়ার কথা বলতাম তাই ও আমার উপরে খুব বিরক্ত হতো। কিছুদিন পরে আমি ঢাকায় চলে গেলাম পিংকি আমাদের বাড়িতে থাকলো।
মাঝে মাঝে যখন বাড়িতে আসতাম তখন পিংকি আমার কাছে বেশি থাকতো তখন আস্তে আস্তে আমার ভক্ত হয়ে গেলো তার কারন হলো আমি দূরে থাকি ওকে আর পড়ার কথা বলে বিরক্ত করিনা তাই। ওর যখন স্কুলের পরীক্ষা শেষ হতো তখন পিংকি ঢাকায় ঘুরতে যেতো আর বেশ কিছুদিন করে আমার কাছে থাকতো আর তখন থেকেই ও আমার প্রতি বেশ দূর্বল হয়ে পড়তে লাগলো। আমি যা বলি তাই শোনে সবসময়ই আমার কাছে থাকতে পছন্দ করে।আমার বাসায় রেখে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওর মা এত্তো দূরে মেয়েকে রাখতে রাজি হলেন না তাই একেবারে রাখা হয়নি।
আস্তে আস্তে পিংকি বড় হয়ে গেলো আর কখন যে ও আর আমি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু হলাম। একে অপরের ভালো মন্দ সব ধরনের কথা শেয়ার করতাম। আমরা যে মামি ভাগ্নি দেখে কেউ বুঝতে পারতো না,সবাই ভাবতো আমরা দুই বোন কারন মামি ভাগ্নির এতো ভালো সম্পর্ক হতে পারে সেটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না।ওর ভালো মন্দ সবকিছুর দায়িত্ব আমি নিয়েছিলাম। সবসময়ই ভাবতাম কিভাবে ওকে ভালো রাখা যায়। দেখতে দেখতে ওর বিয়ের বয়স হয়ে গেলো তখন আমার মাথায় চিন্তা পেয়ে বসলো কি করে ওকে ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দেবো। দেখতে মোটামুটি ভালোই ছিলো, পড়াশোনা করছে সেগুলো ঠিক ছিলো কিন্তু ওর বাবার আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভালো ছিলো না।তাই মেয়েকে বড় ঘর বা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেওয়া ওর বাবার পক্ষে মোটেও সম্ভব ছিলো না। পরে অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করলাম। আমার ছোট দাদার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু ছিলো বাঁধন দাদা, উনি সবসময়ই আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করতো সেই সুবাদে আমাদের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো।আমরা একেবারে নিজের ভাই বোনের মতো মনে করতাম। বাঁধন দাদা তখন একটা এনজিও তে চাকরি করতো,পারিবারিক মিষ্টির ব্যবসা ছিলো পাশাপাশি টিউশনি করতো।তিনি আবার সরকারি চাকরির জন্য খুব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু পরে সরকারি চাকরি পেলেন না। পরে এমপিও ভুক্ত গার্লস হাইস্কুলে চাকরি পেয়ে যান।
আমি সরাসরি বাঁধন দাদাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছিলাম না তার কারন উনি আমার ভাইদের চেয়েও বেশি শাসন করতো ওনাকে বেশ ভয় পেতাম।আর ওনার বাড়ির তেমন কারো সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো না তাই কোনভাবেই বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছিলাম না। আর মনে একটা ভয় ছিলো আমার ননদের পারিপার্শ্বিক দিক খুব একটা ভালো ছিলো না তাই যদি বিয়ে না করে।পরে একদিন আমি বাঁধন দাদার ফোন নাম্বার পিংকি কে দেই যে তুমি ওনার সাথে কথা বলো কিন্তু পরিচয় দিবা না। পিংকি আমার কথামতো ফোন দেয় এবং কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু উনি পাত্তা দিতো না। পিংকি মাঝে মাঝেই কল দিতো পরে একপর্যায়ে কথা শুরু হয় এবং পরবর্তী সময়ে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।এভাবেই ওদের বিয়ে দেই।আমার একটা বিশ্বাস ছিলো পিংকি খুব ভালো মেয়ে ও যে বাড়ির বউ হয়ে যাবে তাদের কে আপন করে নিবে এবং সবাইকে ভালো রাখবে এই বিশ্বাস থেকেই এতো বড় একটা পরিকল্পনা করার সাহস পেয়েছিলাম।
বাঁধন দাদা এখন স্কুলের টিচার পাশাপাশি ৬-৭ টা কোম্পানির ডিলারশিপ বিজনেস করে।দোতলা বাড়ি করেছে ২৪ টা দোকানের মালিক আরও অনেক কিছুই আছে তার। সবকিছু মিলিয়ে পিংকি বাঁধন দাদা দু'জনেই খুব সুখে শান্তিতে সংসার করছে এবং পরিবারের সবাই খুব খুশি পিংকির মতো একজন ভালো বউ পেয়ে।আমিও খুশি যে পিংকি আমার মানসম্মান নষ্ট করে নি। ও যদি কোনো কারনে খারাপ আচরণ করতো তাহলে সম্পূর্ণ দায়ভার আমার উপরেই এসে পড়তো।পিংকি সবসময়ই আমার ভালো চায় আর আশাকরি সারাজীবন তাই চাইবে।ওদের দুজনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা করি যেনো সবসময়ই অনেক ভালো থাকে।
আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে অন্যা কোনো সময়ে অন্য কোনো নতুন বিষয় নিয়ে সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আমাদের উইটনেস কে সাপোর্ট করুন।
পিংকি সত্যি একটা সহজ সরল ভালো প্রকৃতির মজার মেয়ে।যে সব সময় নিজেকেও আনন্দে রাখতে পছন্দ করে এবং চারপাশে সবাইকে।পিংকির সাথে আমারও অনেক আনন্দঘন মূহুর্ত আছে যা আজ আপনার পোস্ট টি দেখার পর মনে পড়ে গেলো।বাঁধন দাদা সত্যি খুব ভালো একটা ছেলে।পিংকি যেম বাঁধন দাদাও ঠিক তেমনি।খুব সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আসলে কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যে সম্পর্ক গুলো দিন যত যায় তত বেশি গভীর হতে থাকে। আপনি এবং পিংকি দিদি। হয়তোবা ঠিক তেমনি কাছে থাকতে থাকতে এখন অনেকটাই বন্ধুর মত হয়ে গিয়েছেন। তবে একটা ব্যাপার খুবই ভালো লাগলো যে আপনি তাদের যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বিয়ে দিয়েছেন এরকম প্রক্রিয়ায় বিয়েটা খুব কমই হয়। আপনার সাহস আছে বলতে হবে, সাহস না থাকলে কি আর এত বড় একটা রিক্স এর কাজের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে নিতেন...? আশা করি আপনাদের এই সম্পর্ক সারা জীবন অটল থাকবে এবং একে অপরকে এরকম ভাবেই ভালোবেসে যাবে। শুভকামনা রইল।