বিভীষিকার রাত।।২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন?আশা করি ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আমার পোস্ট লেখা শুরু করছি।আজকে আমি একটি ভূতের গল্প লিখতে চলেছি।আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
পূর্ব বাংলার ছোট্ট গ্রাম গোপীনগর।সবুজ ধানক্ষেত,শান্ত নদী আর মানুষের সরল জীবন নিয়ে এক অদ্ভুত মায়ার গ্রাম।কিন্তু এক বছর আগের বর্ষাকাল সেই মায়াকে এক লহমায় মুছে দিল।কলেরা নামের এক ভয়ঙ্কর মহামারি গ্রামটিতে আছড়ে পড়ল আর সেই রাতই ছিল গ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ রাত।
কলেরা ছড়িয়ে পড়ল বিদ্যুতের গতিতে।দিনে দিনে বাড়ির পর বাড়ি মৃতদেহে পূর্ণ হতে থাকল। গোটা গ্রাম মৃত্যুপুরীতে পরিণত হল।চারপাশে শুধুই কান্নার আওয়াজ,আতঙ্ক আর চিৎকার। গ্রামের প্রায় অর্ধেক মানুষ সেই মহামারির শিকার হয়ে মারা গেল।পণ্ডিতমশাই থেকে শুরু করে কৃষক, শিশু, বৃদ্ধ—কেউই রক্ষা পেল না।গ্রামের পাশে ছোট্ট শ্মশানে এত লাশ পোড়ানো হচ্ছিল যে আগুন নিভতে চাইছিল না।
একদিন রাতে শীতের বাতাসে গ্রামের বড় পুকুরপাড়ে একদল মানুষ একটা অলৌকিক কান্ড দেখল।গ্রামের সবচেয়ে পুরনো বটগাছের নিচে অগণিত মানুষের কন্ঠস্বর।কান্না, আর্তনাদ আর হাহাকার মিলেমিশে একাকার।দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল, একদল মানুষ সাদা ধবধবে পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু তাদের মুখগুলো ছিল বিবর্ণ, চোখদুটো গভীর গর্তের মতো।যেন জীবিত নয়, একেকটা যেন মৃত মানুষের ছায়া।
গ্রামের প্রধান গোপাল মণ্ডল সেই দৃশ্য দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলেন।তিনি গ্রামের মুরুব্বিদের নিয়ে সেই স্থান থেকে দূরে সরে গেলেন।পরদিন সকালে গ্রামের কয়েকজন সাহসী যুবক সেই বটগাছের নিচে গেল।তারা গিয়ে যা দেখল তা দেখে তাদের রক্ত হিম হয়ে গেল।গাছের গোড়ায় বিশাল এক পুঁতে রাখা মাটির প্রদীপ আর তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৃত মানুষের হাড়গোড়।গ্রামের বয়স্করা বললেন, "এই মাটির প্রদীপটা সেই রাতেই পুঁতেছিল, যেদিন গ্রামের অর্ধেক মানুষ কলেরায় মারা গেল। কেউ জানে না, কে পুঁতেছিল।"
তারা জানত এ প্রদীপ আর নয়, এ হলো ভয়ংকর অভিশাপের চিহ্ন।গ্রামের অনেকেই বলল কলেরায় মৃত মানুষের আত্মারা ফিরে এসেছে প্রতিশোধ নিতে। যারা বাঁচতে পেরেছে, তাদেরও শান্তি নেই।রাতে তাদের কান্না, চিৎকার আর হাহাকার শুনতে পাওয়া যায়।এমনকি অনেকেই বলেছে রাতে যদি কেউ সেই বটগাছের পাশে চলে যায় তবে সে আর বেঁচে ফিরে আসে না।
গ্রামবাসীরা মিলে একটি মন্দিরে পুজো দিল প্রার্থনা করল।কিন্তু পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক হলো না।সন্ধ্যা নামলেই গ্রামের পথে শীতল হাওয়ার সাথে সাথে সেই আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসে।বাচ্চারা রাতে ঘুমায় না বড়রা গায়ে গরম তেল মেখে বসে থাকে যেন কোনো অদৃশ্য হাত এসে তাদের গলা টিপে ধরবে।
একদিন রাতে গোপাল মণ্ডল সাহস করে বটগাছের নিচে গেলেন।তিনি প্রদীপটা হাতে তুলে বললেন, "যে অভিশাপের ছায়ায় আমরা আছি, তার মুক্তি চাই।যদি তোমরা আত্মা হয়ে থাকো, আমাদের মাফ করে দাও।" মুহূর্তেই এক ঝড় উঠল, বাতাসে ভেসে এল অসংখ্য মানুষের কন্ঠস্বর—"মুক্তি চাই!"
গোপাল মণ্ডল প্রদীপটা ভেঙে ফেলে দিলেন। তারপর সেই রাতে বটগাছের নিচে আগুন জ্বালিয়ে প্রার্থনা করলেন।ভোরবেলায় যখন প্রথম আলো গ্রামটাকে ছুঁল,গ্রামের মানুষেরা একটা অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করল।সেই রাত থেকে আর কোনো কান্নার আওয়াজ শোনা গেল না।
গ্রাম ধীরে ধীরে তার পুরনো ছন্দে ফিরে এল। কিন্তু আজও কেউ রাতের বেলা একা বটগাছের পাশে যায় না।কারণ তারা জানে সেই প্রদীপ ভেঙে তাদের মুক্তি দিলেও, কলেরায় মৃত মানুষের আত্মারা কখনোই পুরোপুরি মুক্তি পায়নি।গোপীনগরের রাত এখনো রহস্যময়, অন্ধকারের কোণে লুকিয়ে আছে অগণিত অদৃশ্য ছায়া।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Take it out and let it go.
Creativity and Hard working. Discord
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @blacks,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
গল্পটা ছোট কিন্তু চমৎকার লাগল। একটা আতঙ্ক একটা শরীর হিম করা ব্যাপার ছিল লেখাটার মধ্যে। গোপীনগরের মানুষ এখনও ঐ বটগাছ ঐ অভিশাপ থেকে দূরে থাকে। চমৎকার লিখেছেন দাদা। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
আপনার গল্পটি পড়ে আমার অনেক ভালো লাগলো দাদা। এই গল্পগুলো পড়লে মনের ভেতর আতঙ্ক কাজ করে পড়তেও অনেক ভালো লাগে।সেই বটগাছটি সত্যিই অনেক ভয়ঙ্কর। গোপীনগরের রাত এখনো রহস্যময় আর অন্ধকারে লুকিয়ে আছে অদৃশ্য ছায়া।
বেশ দারুন লাগলো গল্পটি পড়ে।ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
এ যেন অতৃপ্ত আত্মার চিৎকার। হঠাৎ করে কলেরায় মারা গেছেন তাদের আশা আহ্লাদ সাথে নিয়ে৷ তাদের আত্মার মুক্তি হয়নি।
পড়তে পড়তে অনেক ভৌতিক দৃশ্য মনে পড়ছিল। বেশ শিহরণ জাগানো গল্প লিখেছেন৷
গোপাল মণ্ডল একেবারে কাজের কাজ করেছে। নয়তো গ্রামের সব মানুষ মারা যেতো ভয়ে ভয়ে। যাইহোক এমন ভৌতিক গল্প পড়তে কিংবা শুনতে ভীষণ ভালো লাগে। গল্পটা পড়ে খুব ভালো লাগলো দাদা। এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এই মাঝরাতে যখন লেখাটি পড়ছিলাম, তখন কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম ভাই। কেননা লেখার ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। দারুণ উপভোগ করলাম লেখাটি।