চিত্তরঞ্জন পার্কে মাছ কিনতে একদিন।।১০ নভেম্বর ,বুধবার।।
Delhi CR park
হ্যালো বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন।আশা করি সবাই ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন।সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আজকে আমার পোস্ট লেখা শুরু করছি। বন্ধুরা প্রায় পনের দিন হলো আমি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে দিল্লিতে এসেছি।প্রাথমিকভাবে দিল্লিতে থাকার কথা থাকলেও পরে আমাকে যেখানে কাজ করতে হবে বা আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছি ,সেই উদ্দেশ্যটা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত আমাকে পৌঁছাতে গাজিয়াবাদ।
এই জায়গাটি দিল্লী থেকে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের পথ। তো পরের দিন সেখানেই চলে গেলাম তল্পিতল্পা গুটিয়ে।ওখানে একটু রেস্ট নিলাম এবং তার পরের দিন থেকে কাজ শুরু হবে। যেহেতু প্রথম দিন তাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম এক পাঞ্জাবী ধাবা থেকে।অবশ্যই তাদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে বলছি আমার মত বাঙ্গালীর কাছে তাদের খাবার একদম ভালো লাগে নি।তবে তাদের রান্নার পদ্ধতি যথেষ্ট স্বাস্থ্যসম্মত ছিলো।ভালো না লাগার অন্যতম প্রধান কারণ তাদের মসলা।আমরা বাঙালিরা যে সমস্ত মসলা খেয়ে অভ্যস্ত পাঞ্জাবীরা সেই সব একেবারেই ব্যবহার করেনা।
তাদের মসলা অন্যরকম একটু বেশি তীব্র এবং টক জাতীয় ।যাইহোক কোন ভাবে সেদিনটা পার করানো গেল। তো আমি যে এপার্টমেন্ট এ উঠেছি সেখানে যে ফ্ল্যাট টি আমাকে দেয়া হয়েছে সেটা full furnished।এখানে ফ্রিজ ও রয়েছে । সুন্দর একটি রান্না রয়েছে তাই চিন্তা করলাম যে বাজার করে রান্না করে বাঙালি খাবার খাব। কিন্তু এখানে একটি বিপদ দেখা দিল রান্নার সামগ্রী কোথায় পাবো?আমি এপার্টমেন্ট এর মালিককে জিজ্ঞাসা করলাম যে এখানে বাজার কত দূরে?তিনি বললেন মান্ডি কাছেই।
এরা আবার হিন্দিতে বাজার কে মান্ডি না ফ্যান্ডি কি একটা বলে।যাই হোক সে বলল সবজির জন্য বাজারে যাওয়ার দরকার নেই কারণ সকাল হলেই ভ্যানে করে সবজি ওয়ালা আসবে আর চিৎকার করবে সবজি লো সবজি লো।আর আমি উপর থেকে দো দো।পানীয় জলের ব্যবস্থা হলো স্থানীয় এক মুদির দোকান থেকে।
এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো মাছ কারণ আমরা হচ্ছে বাঙালি মাছে ভাতে বাঙালি ,মাছ ছাড়া আমাদের দিন যাবে এ ভাবাই একদম অসম্ভব। এখানে মোটামুটি মাংস পাওয়া যায় কিন্তু মাছের চল বলতে গেলে তেমন একটা নেই।সুপার মলগুলোতে মাংস পেলেও মাছ তেমন একটা পেলাম না।যা অল্প কিছু ছিলো তা কেনার মতন আর কি নষ্ট গোছের।
মাংস খেলাম কিছুদিন আর সময় অসময়ের বন্ধু ডিম তো আছেই।মোটামুটি আশা করা যায় ডিমের মতোই আকার নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরব।তো এখন কি করা যায় ,অনলাইন ডেলিভারি সংস্থা অনলাইন সুপার মার্কেট যাকে বলে বিগবাস্কেট এ মাছ অর্ডার করলাম কিন্তু মাছ গুলো একদমই স্বাদের না আর অত্যাধিক দাম তবুও বাঙালির আত্মার শান্তির জন্য মেনে নিলাম।
তাজ মাছগুলো খেয়ে পেট ভরলো ঠিকই কিন্তু মন ভরলো না।বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম যে বাঙালি মাছ ছাড়া কি ভাবে চলবে।এখানে এসে রেজওয়ান ভাই নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।আমার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে লোকটির। মাঝেমধ্যে ওনার সঙ্গে আমি বেরিয়ে পড়ি আশেপাশে বেড়াতে।আমি তাঁকে জানালাম কোথায় ভালো মাছের মার্কেট আছে?উনি আমাকে জানালেন যে CR পার্কে (দিল্লী) গেলে সব পাওয়া যাবে।
সি আর পার্ক একে আপনি একটা ছোট কলকাতা বলতে পারেন।দিল্লির মোটামুটি সব বাঙালীরা এখানেই বসবাস করে যারা দিল্লিতে কর্মরত। গতকালকে গিয়েছিলাম সি আর মার্কেট এ। বুঝতে পারলাম এটা আসলেই পুরো বাঙ্গালীদের আস্থানা ।
প্রত্যেকটা দোকান বাঙালির আর প্রত্যেককেই বাংলা ভাষায় কথা বলছে।এবং যে সকল শাকসবজি খাদ্য সামগ্রী দেখলাম সবই বাঙালি সংস্কৃতির এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার এখানে বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। যেটা কলকাতায় ঐতিহ্য বহন করে। আমার মনের হলো আসলেই এটি ছোট্ট কলকাতার ক্ষুদ্র সংস্করণ।
আমি অন্য কোথাও মনোযোগ না দিয়ে চলে গেলাম ফিস মার্কেটের ভিতরে। গিয়ে তো আমি অবাক, বিশাল ফিস মার্কেট বড় বড় মাছ হরেক রকমের।প্রত্যেক দোকানদারিই অত্যন্ত আন্তরিক এবং সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে দিলো সব মাছের গুণাগুণ। আমার যে বিষয় টা সবচেয়ে ভালো লাগলো সেটা হলো অধিকাংশ মাছ ফ্রেশ দেখে বোঝা যাচ্ছে এবং মাছের দাম আমার কলকাতার থেকে বেশ কম।
আমার এলাকায় আমি যে সকল মাছ কিনে থাকি তার থেকেও এখানে দাম কম।আমি মনে মনে ভাবলাম হয়তো মাছ গুলো খেয়ে তেমন একটা ভালো হবে না তাই দাম কম। আমি কিনেছিলাম একটি দেড় কিলো ভেটকি, ছোট মৌরালা মাছ এক কিলো, হরিনা চিংড়ি এক কিলো ,বড় গলদা ১ কেজি ৩০০ গ্রাম,ছোট চিংড়ি ১ কিলো, রুই মাছ দেড় কিলো ,পাবদা এক কিলো আর ইলিশ একটি এক কিলোর একটু বেশি।
এই সব মাছ আমার এলাকায় মিনিমাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা লাগতো কিনতে কিন্তু আমি মাত্র ৩৮০০ টাকায় কিনতে পেরেছি।এরপর বাড়ি ফিরে এলাম বাড়িতে কিন্তু দুঃখের বিষয় বাড়িতে এসে মাছগুলা রান্না করতে পারি নি কারণ বাড়িতে এসে দেখি জল নেই।বাড়ির মালিক কে ফোন করে জানতে পারলাম যে মোটর নষ্ট হয়ে গেছে আজকে জল আর আসবে না।
আমার ইমার্জেন্সি কোনো ব্যাপার হলে রাত বিরেতে কি করবো এই চিন্তা করে ভদ্রলোক আমাকে ৫ লিটারের চারটি জলের বোতল উপহার দিলো।পরের দিন ভোরবেলা উঠে রান্না করে ফেললাম মৌরোলা মাছ আর ভেটকি মাছ এবং রাতে ইলিশ আর চিংড়ি।প্রত্যেকটি মাছ অনেক ফ্রেশ এবং সুস্বাদু ছিলো।
Take it out and let it go.
Creativity and Hard working. Discord
দাদা ঠিক বলেছেন,বাঙালিরা মাছ ছাড়া এক বেলা চলে না।মাছে-ভাতে বাঙালি' এই কথা তো আমরা সবাই জানি।দাদা, আপনার লেখাটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তরতাজা মাছগুলো দেখে। দাদা, লেখার লাস্টে যখন পড়লাম তখন খুব মন খারাপ লেগেছে। কারণ পানি ছাড়া মানুষ একবেলা চলতে পারে না।সেই জায়গায় রাতে পানি আসবে না সকালবেলায় আসবে তো কিরকম বিরম্বনা পরেছেন লেখাটি পড়ে বুঝতে পেরেছি। তবে অনেক ভালো লেগেছে যখন পড়েছি আপনি সকালবেলা তরতাজা মাছগুলো রান্না করে খেয়েছেন।
ধন্যবাদ দাদা,এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।
এদিকে মাছের যে দাম দাদা🥵ওতো মাছ তো এমনিতেও এভেইলেবল না,,যদিও পাওয়া যেত তাও ৮/৯ হাজার🙂
তা দিল্লি নাকি এখন ধূলার শহর😷?
ভাইয়া ফান্ডি মান্ডি কথাগুলো ভালো লাগলো। ভাই আপনার এই পোস্টটি পড়ে এক সপ্তাহের সেরা হাসি টাই হাসলাম আজ। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ঠিকই বলেছেন দাদা বাঙালিদের মাছ ছাড়া যেন একদিনও চলে না। এবং সি আর পার্ক যেন মিনি কলকাতা। কথাটা দারুণ লাগল। এবং এখানে সবাই বাংলাই কথা বলে সেটা শুনে দারুণ লাগল। এবং মাছগুলো তো খুবই ভালো ছিল ফ্রেশ লাগছে দেখে।
দাদা আশাকরি ভাল আছেন। প্রথমত যে লেখাটি পড়ে হাসি পেয়ে গেল সেটা হল ডিমের মত আকার নিয়ে বাড়ীতে ফিরবেন। হা হা হা। দাদা আমার মনে হয় মান্ডি শব্দটি পাঞ্জাবী , আমি সিওর না জাষ্টা আইডিয়া করলাম। মাছের বাজার তো দেখছি বিশাল। রুপ চাদাঁ মাছ গুলো দেখে মনে হল টাটকা।এই মাছটি মনে হয় কেনেন নি। ওখানেও দেখছি একি সমস্যা পানীর । যাই হোক সব মিলিয়ে সময় টা ভালই কেটেছে আপনার। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য। ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা রইল।
ওরে আল্লাহ এদেখিক মাছের কারখানা প্রচুর মাছ, অনেক অনেক ধন্যবাদ ব্লাক দাদা এত সুন্দর একটা মাছের বাজার আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ঠিকই বলেছেন দাদা আমরা বাঙালিরা মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ ছাড়া আমাদের একটা দিনও চলে না। এত মাছের সন্ধান করার পরে আপনি শেষমেশ একটি বড় মাছের মার্কেট পেয়েই গেলেন। আর সবথেকে ভালো ব্যাপারটি হলো সেখানে মাছের দাম খুবই কম। আমাদের এদিকে এক কিলো ইলিশ মাছের দাম ১৩০০ টাকা। সেই হিসেবে আপনি ৩৮০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের অনেক ভালো ভালো মাছ কিনতে পেরেছেন এবং ছবিতে মাছগুলো দেখে ভালই টাটকা মনে হচ্ছে।
আহা, জীবন যেখানে যেমন। সুন্দর ছিল আপনার মুহূর্ত গুলো। অর্ধেক দামে মাছ, ব্যাপারটা তো বেশ ইন্টারেস্টিং। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইলো ভাইয়া।
সত্যি অবাক হলাম এত মাছ। মাছের হাট এইবারি মনে হচ্ছে। প্রতিটি মাছ দারুণভাবে তুলে করেছেন।
এইটা পড়ে ভাইয়া হাসতে হাসতে শেষ আমি। 🤣মাছ না পেয়ে তখন আপনার মান্ডি বা ফান্ডি কিছুই ভালো লাগছিলোনা তা ভালোই বুঝতে পারছি আমি।
তবে এতো মাছ ৩৮০০ তে পেয়েছেন এটা ভেবেই তো আমার অবাক লাগছে। আমাদের এদিকে গলদা চিংড়িই বলে ১৩০০ করে কেজি। বেশ ভালোই কিন্তু ওখানে।