চিকিৎসার জন্য বড় ভাই ও ভাবিকে নিয়ে রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে একদিন।
হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।
আজ বৃহস্পতিবার। ১৫ ই জুন, ২০২৩ ইং।
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমরা সকলেই সব সময় সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পছন্দ করি। আর সব সময় সুস্থ স্বাভাবিক থাকার জন্য আমরা সৃষ্টিকর্তার নিকট বিশেষভাবেই প্রার্থনা করি। আসলে সুস্থতা হলো মহান সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক আমাদের জন্য একটি বিশেষ নেয়ামত। পৃথিবীর কোন মানুষই কোন সময়ের জন্যও অসুস্থ হতে চাই না। সকলের একটাই প্রত্যাশা আমরা যেন শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকি। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আমরা শারীরিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবার বা সংসারের স্বাভাবিক কাজকর্ম গুলো করতে সক্ষম হলেও আমাদের শরীরের ভিতরে কোন না কোন সমস্যা যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। যাহোক, মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
আমার ছেলের বড় মামার বিয়ের বয়স দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত আমার ছেলের বড় মামি মা হতে পারেনি। তাদের দাম্পত্য জীবনে সন্তান না আসার কারণে তারা বেশ দুশ্চিন্তায় জীবন যাপন করছে। তাদের চিকিৎসার কোন ত্রুটি বিচ্যুতি এখনো পর্যন্ত ঘটেনি। সব ধরনের চিকিৎসায় ইতিমধ্যেই তাদের নেওয়া হয়ে গেছে। পানি পড়া খাওয়া, গাছ পড়া খাওয়া, সন্তান হওয়ার জন্য মান্নত করা, কবিরাজি চিকিৎসা গ্রহণ করা, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করা----এ সমস্ত চিকিৎসা গুলো একেবারেই পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করেছে কিন্তু রেজাল্ট শূন্য। এরপর অন্য মানুষের পরামর্শে আমাদের কুষ্টিয়া শহরে নামকরা গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রুমি ফরহাদের কাছে দীর্ঘদিন তারা চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু এতেও কোন কাজ হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবে আমার ভাই ও ভাবি অত্যন্ত হতাশার মধ্যে পড়েছিল। তাদের এরকম হতাশাগ্রস্ত চেহারা দেখে আমরাসহ সকল আত্মীয়-স্বজনও বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
বড় ভাই-ভাবির এরকম অসহায়ত্ব দেখে আমি নিজ দায়িত্বে তাদের পুনরায় নতুন করে চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। তাই প্রথমে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, তাদেরকে নিয়ে ঢাকায় ভালো একটি হাসপাতালে যাবো। কিন্তু পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে, বর্তমানে রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রাখী দেবী নামে খুবই ভালো মানের একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ভাই ও ভাবিকে নিয়ে রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করেছিলাম। এরপর ডাক্তার রাখী দেবীর কাছে তাদের চিকিৎসা করানোর জন্য সিরিয়াল করার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। সিরিয়াল করতে হবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। দীর্ঘ ২২ দিনের সীমাহীন চেষ্টার পরে ডাক্তার রাখী দেবীর কাছে সিরিয়াল করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাদের রোগী দেখার সময় দিলো-২৩ শে (২০২৩ইং) ফেব্রুয়ারি রাত আটটা ত্রিশ মিনিট (৮:৩০ মিনিট)। বাধ্য হয়ে এই সিরিয়াল মেনে নিতে হলো। আমাদের সিরিয়াল নাম্বার হয়েছিল-০৬।
এবার নির্ধারিত দিনে আমরা গাংনী থেকে একটি মাইক্রো গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছিলাম। তারপর দুপুর বেলায় মাইক্রো গাড়িতে করে আমরা মোট তিনজন রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। আমরা মাগরিবের সময় রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পৌঁছে গিয়েছিলাম। যদিও রাজশাহীতে আমাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। কিন্তু আমরা সেখানে না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে চলে গেলাম। তারপরে আমাদের সিরিয়াল নাম্বার ঠিকঠাক আছে কি-না সেটা দেখে নিলাম। দেখলাম সবকিছুই ঠিক রয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে ডাক্তার রোগী দেখা শুরু করবে। এরপর আমরা একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খাওয়ার কাজটা সেরে নিয়েছিলাম।
এরপর বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষার পরে সেই কাঙ্ক্ষিত রোগী দেখার সময় চলে এলো। অর্থাৎ রাত সাড়ে আটটা বেজে গেল। কিন্তু ডাক্তার সাহেব আসলো না। পরে জানতে পারলাম যে তিনি একটা অপারেশনের কাজে ব্যস্ত আছেন। তাই অপারেশন শেষ করে আসতে আধা ঘন্টা সময় লাগবে। ভাবলাম মাত্র আধা ঘন্টার ব্যাপার, আবারো শুরু করলাম অপেক্ষা। কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে নয়টা বেজে গেল ডাক্তার আসলো না। তারপর সাড়ে নয়টা বেজে গেল তাও ডাক্তার সাহেব আসলো না। শেষ পর্যন্ত পৌনে দশটার সময় ডাক্তার সাহেব আসলো। ডাক্তার সাহেব একটা রোগী দেখার পরে পুনরায় তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল। পরে জানতে পারলাম তিনি নাস্তা করতে গেলেন। আবারো শুরু হলো অপেক্ষা। এ যে কি বিরক্তি? ভাষায় বোঝানো সম্ভব না। যাহোক, পুনরায় ডাক্তার এসে রোগী দেখার কার্যক্রম শুরু করলেন।
তারপর সিরিয়াল অনুসারে আমার ভাই ও ভাবি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলেন। ডাক্তারের নিকটে যাওয়ার পূর্বে আমি আমার ভাই-ভাবিকে ভালোভাবে পরামর্শ দিয়েছিলাম যে, তাদের যে সমস্যা রয়েছে তারা যেন খোলামেলা সব ডাক্তারকে বলে দেয় এবং এ ব্যাপারে কোন ধরনের যেন লজ্জা না করে। তারপর আধাঘন্টা পরে আমার ভাই ও ভাবি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো। ভাই ও ভাবি আমাকে বলল যে, তারা সব ধরনের কথাগুলো খোলামেলা ভাবে ডাক্তারকে বলেছে।
কয়েক মিনিট পরে একজন মহিলা এসে আমাদের হাতে এই প্রেসক্রিপশনটি দিলেন। তারপর তিনি পরামর্শ দিলেন যে, প্রেসক্রিপশন এর লেখা ওষুধ গুলো সেবন করতে এবং প্রেসক্রিপশনে যে সমস্ত টেস্ট গুলো করানোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো যেন করে। প্রেসক্রিপশনে আমার ভাই ও ভাবির অনেকগুলো টেস্ট দিয়েছিল। তারপর আমি প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে চলে গেলাম। কিন্তু রাত এগারোটা বেজে যাওয়ার কারণে ক্যাশ কাউন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলে দিল যে, আজকে কোন টেস্ট করানো সম্ভব নয়। আগামীকাল সকালে আসতে বললো। একই সাথে তারা বললো যে, যে সমস্ত টেস্ট দিয়েছে সেগুলোর রিপোর্ট আসতে তিন দিন পর্যন্ত সময় লাগবে।
সম্পূর্ণ বাধ্য হয়ে সেই রাত দুপুরে আমার আত্মীয়কে কল করলাম। আমাদের হাসপাতালে শুনে আমার আত্মীয়রা খুব তড়িঘড়ি করে চলে আসলো। তারপর আমরা সবাই আত্মীয়র বাসায় উঠলাম। পরের দিন পুনরায় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্যাশ কাউন্টারে এসে ১৭ হাজার ৪০০ টাকা জমা করে আমার ভাই ও ভাবি টেস্ট করানো শুরু করলাম। তিন দিনের মধ্যে সকল টেস্টের রিপোর্ট হাতে পেলাম। তারপর ডাক্তার রাখী দেবী রিপোর্টগুলো দেখে সন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন আমার ভাইয়ের কোন সমস্যা নেই। শুধুমাত্র ভাবির সামান্য সমস্যা রয়েছে। সেটা হলো ভাবির ডিম্বাশয় ছোট বড়। তারপর আমরা ডাক্তারের পরামর্শ এবং ডাক্তারের দেওয়া ওষুধগুলো ক্রয় করে হাসপাতাল থেকে চলে আসলাম।
ডাক্তারের কথা শুনে আমরা অনেকটাই দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছি এবং আশার আলো দেখার অপেক্ষায় আছি। আপনারা দোয়া করবেন যেন আমার বড় ভাই ও ভাবির কোলে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ যেন খুব তাড়াতাড়ি সুসন্তান দান করেন।
https://twitter.com/bidyut01/status/1669375303221907456?t=2P_ec1-S3x17Zctx7Gfckg&s=19
মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন চিকিৎসার জন্য বড় ভাই ও অভিভাবক হয়ে রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আমাদের ভাইয়ের মামীর জন্য দোয়া রইল যাতে সমস্যা খুবই তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যায়। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপনার বড় বড় ভাই ভাবিকে আমার সালাম দিবেন। দোয়া করব তারা যেন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। আশা করি এই মুহূর্তে তারা অনেক ভালো রয়েছে। সুন্দর একটা মুহূর্ত আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার এই পোস্ট থেকে অনেক কিছু ধারনা অর্জন করতে পারলাম।