পুরাণের গল্প : "ঋষি ও ইঁদুরের গল্প" - পর্ব ০৭

book-794978_1280.jpg
Copyright Free Image Source: Pixabay


একদিন চিতাবাঘরূপী মূষিক যখন বনের গভীরে ভরপেট খাওয়ার পরে বিশ্রাম নিচ্ছিলো এমন সময় বিষম এক হুংকারে চমকে উঠে বসলো । এমন গর্জন কোন জন্তুর হতে পারে ? বাজ পড়ার মতো আওয়াজ, মাটি অব্দি কেঁপে উঠেছে । মূষিকের হৃদয়ে ত্রাসের সঞ্চার হলো । ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারিদিক পানে সে চাইতে লাগলো, বেশ ভয়ে ভয়ে । এমন যার গলার আওয়াজ সে জন্তু না জানি কেমন দেখতে !

এমন সময় সহসা ঝোপ ঝাড় ভেদ করে প্রকান্ড একটা মাথা উঁকি মারলো, চিতাবাঘের মস্তকের দ্বিগুণ বড় সেই মাথা । নিষ্ঠুর দুটি হলদে চোখ, ক্ষুধিত লাল জিহ্ববা আর ছুরির মতো ধারালো চারটি শ্বদন্ত ।

চিতাবাঘরূপী মূষিক নিষ্পলক সেদিকে তাকিয়ে রইলো । ধীরে ধীরে প্রকান্ড জানোয়ারটি ঝোপ ভেদ করে খোলা স্থানে আত্মপ্রকাশ করলো । একটা প্রকান্ড বাঘ । চিতাবাঘের দ্বিগুন বড় । এক থাবায় চিতাবাঘের পিঠ ভেঙে দিতে পারে, একটি মাত্র কামড়ে ঘাড় মটকে দিতে পারে । এ হেনো প্রকান্ড বাঘ দেখে ভয়ে মূষিকের প্রাণ উড়ে গেলো । চক্ষের নিমেষে ঘুরে সে একটা প্রকান্ড লাফ মারলো । না, বাঘের দিকে নয় মোটেও, বরং সম্পূর্ণ উল্টো দিকে । বাঘকে আক্রমণ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই । বরং "য পলায়তি স জীবতি!"

কোথায় উড়ে গেলো মূষিকের বীরত্ব, সে তখন কাপুরুষের মতো উর্ধশ্বাসে ছুট লাগাচ্ছে । বাঘটি কিছুক্ষণ হকচকিয়ে গেলো । একটা চিতাবাঘের কাছ থেকে এই রকম নির্লজ্জ পলায়নতা সে আশাই করেনি । সে নৈমিষারণ্যের রাজা, তাকে দেখে চিতাবাঘটি এমন ভয় পেয়েছে যে লড়াই করার আগেই প্রাণভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে । এই কথাটি ভেবে বাঘটি প্রচুর আত্মপ্রসাদ বোধ করলো । খামোখা আর পিছু ধাওয়া করতে তার মন সায় দিলো না । এমনিতে চিতাবাঘ খুবই হালকা পলকা প্রাণী, ছুটতেও পারে ভীষণ জোরে, আর তার ওপর বাঘের হলো প্রকান্ড ভারী শরীর; ওই শরীর নিয়ে চিতাবাঘের সাথে ছুটে পাল্লা দেওয়া কখনোই সম্ভব নয় ।

এই সব ভেবে বাঘটি আর ধাওয়া করলো না । কিন্তু, চিতাবাঘরুপী মূষিক প্রাণভয়ে ছুটতে লাগলো । তার লক্ষ্য মুনির আশ্রম । এই সংকট থেকে তাকে বাঁচাতে পারে একমাত্র মুনিবর । তাকে বাঘের চাইতে জবরদস্ত কোনো জন্তু হতে হবে । তারপরে সে দেখে নেবে ওই হুমদো বাঘটাকে ।

ছুটতে ছুটতে একসময় মুনির আশ্রম এসে গেলো । তখন গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেল । ঋষিবর আশ্রমে ছিলেন না । তিনি নদীতে অপরাহ্ন অবগাহনে গিয়েছিলেন । মূষিক নিজেকে আশ্রমের বাইরে থাকা নিরাপদ মনে করলো না । সে আশ্রমে ঢুকে পড়লো । হঠাৎ, আশ্রমের মধ্যে প্রকান্ড একটা চিতাবাঘ দেখে আশ্রমের সবাই ভয়ে ব্যতিবস্ত হয়ে পড়লো । চিতাবাঘরূপী মূষিকের কিন্তু কোনোদিকে নজর নেই । সে আকুল হয়ে মুনিকে খুঁজতে লাগলো । তার এখন মুনিকে ভীষণ দরকার ।

[ক্রমশঃ]

Sort:  
 5 months ago 

ক্ষমতা চিরকাল স্থায়ী নয়।যেকোনো ভাবে যেকোনো পরিস্থিতি নিঃস্ব করে দিতে পারে।যেমনটা হয়েছিল চিতাবাঘরূপী মূষিক এর সাথে।সুন্দর একটি শিক্ষণীয় বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন তার জন্যে আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছি।

 5 months ago 

মুনি তো মূষিকের একের পর এক আবদার পূরণ করতে করতে বিরক্ত। আবারও নতুন আবদার নিয়ে হাজির হয়েছে মুনির আশ্রমে। দেখা যাক এবার মুনি, মূষিকের আবদার পূরণ করে কিনা। তবে ক্ষমতার বড়াই করা কখনোই ঠিক না। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

এই মূষিক শুধু বিপদে পড়লেই, তার মুনির কাছে চলে আসে, এ কেমন একটা ব্যাপার। একে আর কোন ভাবেই উপকার করা যাবে না। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57951.76
ETH 2347.51
USDT 1.00
SBD 2.36