পুরাণের গল্প : "ঋষি ও ইঁদুরের গল্প" - পর্ব ০৫
Copyright Free Image Source: Pixabay
সন্ধ্যের একটু পূর্বে ঋষি সান্ধ্য আহ্নিকের আয়োজন করছেন এমন সময় দেখতে পেলেন একটা কুকুর তীরবেগে ছুটে আশ্রমে এসে ঢুকে পড়লো । একটু পরেই কুকুরটি এসে তাঁর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়লো । কুকুরটিকে ঋষি দেখেই চিনতে পারলেন । এ তো সেই ক্ষুদ্র মূষিক যাকে তিনি মন্ত্রবলে প্রথমে বেড়াল আর তারপরে কুকুরে রূপান্তর করে দিয়েছেন ।
কুকুরটি হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, "প্রভু, বিপদ !"
ঋষি তাকে হাত তুলে আশ্বস্ত করে বললেন, "হে মূষিক, এই আশ্রমে তোমার কোনো ভয় নেই । এখানে তুমি সম্পূর্ণ নির্ভয়ে থাকতে পারো । বনের কোনো হিংস্র জন্তুরই আমার আশ্রমে প্রবেশাধিকার নেই । তাই, তুমি এতো ভীত হয়ো না, তোমার বক্তব্য তুমি নিঃশঙ্ক চিত্তে বলতে পারো ।"
মুনির বচনে মূষিক অনেকটাই আশ্বস্ত হয়ে বললো, "প্রভু, অতীতে আপনার শরণ নিয়ে আমি বিপদ থেকে মুক্ত হতে পেরেছি । আশা করছি এবারও পারবো । হে প্রভু, আমি ভেবেছিলাম কুকুর হওয়ার পরে আমার আর কোনো ভয় থাকবে না, কিন্তু, আমার ধারণা যে কতটা ভুল আর নির্বুদ্ধিতা ছিল আজ তা বুঝতে পারলুম ।"
একটু থেমে মূষিক আবার বলতে শুরু করলো, "প্রায় মাস দুই আমি বনে স্বাধীনরূপে ঘুরে বেড়িয়েছি । নির্বিঘ্নে শিকার ধরেছি । নির্ভয়ে ঘুমিয়েছি । কিন্তু, আজ আমার সব সুখ হাওয়ায় উবে গিয়েছে । প্রভু, আজও যথারীতি সকালের দিকে দু'দুটো খরগোশ শিকার করে আরাম করে পেট পুরে খেয়ে ঝর্ণার ধারে একটা চাতালে ঘুমিয়েছি, এমন সময় সন্ধ্যের কিছুটা পূর্বে হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। কেমন একটা সন্দেহজনক বিপদের গন্ধ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ঝর্ণার ঠিক উপরে একটা প্রকান্ড চিতাবাঘ জলপান করছে আর আমার দিকে অগ্নিময় চক্ষে পর্যবেক্ষণ করছে । দেখেই তো ভয়ে আমার প্রাণ উড়ে গিয়েছে । জনশ্রুতি আছে যে কুকুর হলো চিতাবাঘের সব চাইতে প্রিয় খাদ্য ।"
"চিতাবাঘটিকে দেখা মাত্রই আমি এক লাফ দিয়ে উঠে পড়ি কি মরি করে ছুট লাগলাম । চিতাটা পেছন পেছন তাড়া করে আসছে কি না সেটা দেখারও সাহসে কুলোয়নি আমার । প্রভু, আপনি তো আমার প্রতি অনেক দয়া করেছেন, এবার শেষবারের মতো দয়া করুন । প্রভু, জঙ্গলে নিরাপদে নিঃশঙ্কচিত্তে বাস করতে হলে আমাকে চিতাবাঘ হয়েই বাস করতে হবে । নতুবা, চিতাবাঘের হাতে আমার মৃত্যু অনিবার্য । প্রভু, দয়া করুন ।"
মুষিকের কাতর আর্জি শুনেও কিন্তু এবার মুনির মনে ঈষৎ রাগ আর বিরক্তির সঞ্চার ঘটলো । অর্বাচীন মুষিকের উচ্চাকাঙ্খা দিন দিন বেড়েই চলেছে । সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তার অহং বোধ ।
মুনি তখন মূষিককে উদ্দেশ্য করে বললেন, "হে মূষিক, তুমি আমার আশ্রমে থেকেই বাকিটা জীবন নির্বাহ করো । বন যখন তোমার জন্য একটা ত্রাসের জায়গা হয়ে উঠছে তখন এখানে আমার কাছেই থাকো ।"
কিন্তু, মূষিক রাজি হয় না । তার যুক্তি যে সে তো বনেরই জীব । তাই, আশ্রমের গৃহপালিত জীবন সে চায় না । সে চায় আগলমুক্ত, স্বাধীন মুক্ত জীবন ।
অগত্যা কি আর করা ! মুনি একদা মুষিকের জীবন রক্ষা করেছিলেন । তাই, আর বেশি ঘাঁটালেন না তাকে । মূষিককে চিতাবাঘে পরিণত করে দিতে রাজি হয়ে গেলেন অতঃপর তিনি ।
[ক্রমশঃ]
মূষিকের আকাঙ্খা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা বলতেই হচ্ছে। তাছাড়া তার ভিতরে অহংকার বাসা বেঁধেছে। মুনি যেহেতু মূষিককে কুকুর থেকে চিতাবাঘে পরিণত করে দিতে রাজি হয়েছে, চিতাবাঘে পরিণত হওয়ার পর তো মূষিকের অহংকার আরও বৃদ্ধি পাবে। অহংকার পতনের মূল। সুতরাং এটা বলা ই যায়, মূষিকের পরিণাম খুবই ভয়াবহ হবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
এমনটা আমাদের বাস্তবিক সমাজেও দেখা যায় ভাই , দিনশেষে সবাই আত্ম অহংকারী হয়ে ওঠে। যেটা মোটেও কাম্য নয়। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য।