অপমান থেকে আত্মহত্যা
অপমান থেকে আত্মহত্যা
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মারুফ। পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বেশ ভালই জীবনযাপন করছেন। মারুফ দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে পিয়ন পোস্টে চাকরি করছে। অল্প টাকা বেতনে সে সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সে এখান থেকে আরো অনেক ভালো ভালো জায়গায় ভালো বেতনে চাকরির অফার পেয়েও এখান থেকে কোথাও যায়নি, কারণ সকলের ভালোবাসা ও মহব্বতের কারণে সে এই চাকরিটি ছাড়তে পারিনি। এমন অনেক চাকরি আছে যেখানে অনেক টাকা বেতন কিন্তু সম্মান নেই, কিন্তু মারুফ এর ক্ষেত্রে বিষয়টি হল এমন তার অল্প বেতনে সকলের ভালোবাসা ও ভালো ব্যবহারের কারণে সে অনেক আনন্দিত। তার পরিবার ও নিজের তেমন বেশি কিছু চাহিদা ছিল না তাই অল্প বেতন ও সকলের ভালোবাসা নিয়েই দীর্ঘ দশ বছর ধরে চাকরি করা যাচ্ছে।
মারুফের অফিসের বড় বস তার পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে থাকে। বছরে একবার দেশে আসে। অফিসের বড় বড় অফিসারদের নিয়ে অফিস খুব ভাবেই চলে। বছর শেষ না হতেই বস একদিন পরিবার নিয়ে দেশে চলে আসে এর কারণ হলো বসের মেয়ের বিয়ের আয়োজনের জন্য। অনেক টাকা পয়সা ও সম্পদের মালিক মারুফের অফিসের বস। কিছুদিনের মধ্যেই মেয়ের বিয়ের কার্ড অফিসের সকলকে দিতে লাগলো ও সকলকে আমন্ত্রণ জানালো কিন্তু মারুফকে কিছুই বললো না। এতে মারুফ একটুও মন খারাপ করেনি। সে মনে মনে এটাই ভেবেছে যে আমি খুবই সাধারন ও ছোট একটা মানুষ তাই হয়তো স্যার আমার কথা ভুলে গেছে কোনো সমস্যা নেয় আমি ঠিকই স্যারের মেয়ের বিয়েতে যাবো আশাকরি স্যার আমাকে দেখলে অবশ্যই খুশি হবে। এই কথা ভেবেই মনে কিছু না নিয়ে মনের আনন্দের অফিসের কাজে মনোযোগ দেয় মারুফ।
কিছুদিনের পরে বসের মেয়ের বিয়ের দিন চলে আসছে। সেদিন অফিস বন্ধ থাকায় মারুফ ও তার স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসে বসের মেয়ের বিয়েতে। বিশাল বড় একটা কমিউনিটি সেন্টারে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। কমিউনিটি সেন্টারের চারদিকে এত আলোকসজ্জা দেখে মারুফ ও তার স্ত্রী বেশ অবাক হয় ও আনন্দ প্রকাশ করে। দেখতে দেখতে কমিউনিটি সেন্টারের ভিতরে প্রবেশ করে। সেখানে অনেক মানুষের উপস্থিতি দেখে তারা কিছুটা লজ্জাবোধও করছে। হটাৎ করেই মারুফের অফিসের বস তাদের সামনে এসে হাজির। মারুফ সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যাই ও হাসি মুখে বসকে সালাম প্রদর্শন করে। তখন সকলের সামনেই মারুফের সেই বস বলতে লাগল তুমি কেন এখানে এসেছো ? আমি কি তোমাকে এখানে আসতে বলেছি ? তোর মতো এত ছোটলোকের সাহস হয় কিভাবে আমার মেয়ের বিয়েতে আসার? এত দামি খাবারের আয়োজন কি আমি তোদের জন্য করেছি ? কমিউনিটি সেন্টারের ভিতরে চলে আসছোস তোর কি একটা বারও লজ্জা করল না ,যে আমি তোকে কোন কিছু জানায়নি, তোকে দাওয়াত দেইনি তবুও তুই এখানে বিনা দাওয়াতে কেন এসেছিস ?
কমিউনিটি সেন্টারের ভিতরে সকল মেহমান চুপচাপ করে দাঁড়িয়েছিল আর শুধু দেখছিল। মারুফের চোখ দিয়ে টলমল করে পানি ঝরে পড়ছে। এই অপমান যেন আর সহ্য করতে পারছিল না। মারুফ তখন জবাবে একটাই কথা বলল স্যার আমি সততার সাথে গত দশ বছর যাবৎ আপনার অফিসে চাকরি করে যাচ্ছি, আমি ভেবেছিলাম আপনি অফিসের সকলকে দাওয়াত দিতে গিয়ে হয়তো আমার মতো ছোট একটা মানুষের কথা ভুলে গিয়েছেন। ভেবেছিলাম দাওয়াত ছাড়া এসেছি বলে আপনি আমাকে দেখলে আরো বেশি খুশি হবেন। আমি আপনাদের সকলের প্রতি ভালোবাসা থেকে এখানে এসেছিলাম কিন্তু আমি কখনো ভাবি নি এখানে আসার পর আপনার কাছ থেকে এত বড় উপহার পাবো। এই কথা বলে মারুফ বেরিয়ে গেল কমিউনিটি সেন্টার থেকে। অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই দিন রাতেই মারুফ একটি চিঠি লিখে আত্মহত্যা করে।
আত্মহত্যা করাটা যদিও কোনো সমাধান না তবুও একটা মানুষ কতটা অপমানিত হলে ও কতটা কষ্ট পেলে এই কাজটা করতে পারে সত্যি এটা আমরা কখনো উপলব্ধি করতে পারবো না। আমাদের সমাজে এমন মানুষ অনেক রয়েছে যারা অধিক টাকাপয়সা ও সম্পদের মালিক কিন্তু গরিব ও নিচু শ্রেণীর লোকদেরকে কখনো সম্মান করতে পারে না।
সমাপ্ত
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
_
আসলে নিম্নবিত্ত মানুষদের নিজের বলতে শুধু সম্মান টুকুই থাকে। এই সম্মান কে কেন্দ্র করেই তারা বেচে থাকে।আর মারুফের বস তার সেই বেচে থাকার অবলম্বন সম্মান টুকুই কেড়ে নিয়েছেন।ফলে তার আত্মহত্যা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।ভগবান যেন এমন কারো সাথে না করে।ধন্যবাদ আপু গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
খুব খারাপ লাগলো পড়ে গল্পটি।মারুফের বস এমনভাবে অপমান করল যে মারুফ সহ্য করতে পারেনি। মানুষগুলো কেন যে এমন করে বুঝিনা। শেষে আত্মহত্যার পথই বেছে নিল। খুব খারাপ লাগলো আসলে।গল্পটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
আমাদের সমাজের এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজের অফিসে চাকরি করা মানুষগুলোকে মানুষ মনে করে না। তারা হয়তো তাদেরকে খুবই তুচ্ছ মনে করে। আসলে মারুফের সাথে এই ব্যবহার করা মোটেও উচিত হয়নি। তবে মারুফ বেশ কষ্ট পেয়েছিল বলেই আত্মহত্যার পর বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আত্মহত্যা কোন সমাধান হতে পারে না। সমাজের বাস্তব চিত্র আপনি আপনার গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন আপু।
আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা টাকার অহংকারের মধ্যবিত্ত মানুষ এবং গরিব মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা নিজেদেরকে অনেক বড় মনে করে। আর গরিবদের বেঁচে থাকা একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে সম্মান। মারুফের বস তার সম্মানটুকু কেড়ে নিয়েছিল বলে ই মারুফ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। মারুফের জন্য আমার খুব খারাপ লেগেছে। তবে আমি মনে করে আত্মহত্যা এর কোন সমাধান না। সমাজে বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকাল এই ঘটনা গুলো সমাজে বেড়ে গেছে। কিছু টাকা ওয়ালা মানুষ টাকার গরমে মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না। আজকাল সততা আর ভদ্রতাকে মানুষ দূর্বলতা মনে করে। তবে মারুফের আত্মহত্যা করা ঠিক হয়নি, কারন ওর এই কাজের ফলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঐ টাকা ওয়ালা মানুষদের কখনো মারুফের মতো মানুষদের কথা মনে থাকে না।
দারুন লিখেছেন আপু।।।