।। চই গাছেই লাখোপতি মামুন ! ।। 10% shy-fox beneficiary।।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

০১লা নভেম্বর/২০২২ইং।
রোজঃ মঙ্গলবার।

বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব,
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই হেমন্ত ঋতুর উষ্ণ শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন। আমিও ঈশ্বরের কৃপা ও আপনাদের আশীর্বাদে ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে ব্যতিক্রমী একটি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। আর তা হচ্ছে- চই গাছে লাখপতি মামুন এর গল্প। বেশ অবাক লাগছে তাইনা ? সত্যি অবাক লাগারই কথা ! আমি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আজকে সেই গল্প শোনাবো আপনাদেরকে।

কালী পুজোয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য চই (ঝালের বিকল্প) একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যান্য পূজা-পার্বণে নিরামিষের বেশি ভোজন করা হয়। রসুন, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস খাওয়া নিষেধ। এমনকি পুজোর আগের দিন থেকে এ সমস্ত খাওয়া নিষেধ। কিন্তু কালীপুজোয় নিয়মটা একটু ভিন্ন। এ পুজোয় ভাজাপোড়া, রসুন পেঁয়াজ খেতে হয় পুজোর পরে। সাথী আবার চই দিয়ে চাল ভাজা, রসুন গুড়ো করে অবশ্যই খেতে হবে। চই হচ্ছে একটি লতা জাতীয় গাছ। কালী পুজো এলেই এটি বাজার থেকে করে নিয়ে এসে খাওয়া হয়। এটার সম্পর্কে তেমন বেশি ধারণা ছিল না আমার। পুজোর দিনে বিকেল বেলা বাজারে গেলাম চই কিনার জন্য। গিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। সেই "চই" নিয়ে রীতিমত কারা ছিড়া অবস্থা। পাশের গ্রামের মামুন নামের এক ব্যক্তি "চই"বিক্রি করছেন। আকাশ চুম্বী দাম তার, ১০,০০০/= (দশ হাজার) টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে "চই"।

IMG_20221023_172003889~2.jpg

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সেই মামুন ভাইকে মৌমাছির চাকের মতো ঘিরে ধরেছে "চই"নেয়ার জন্য। নিমিষের মধ্যেই ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম করে বিক্রি হয়ে গেল প্রায় ৫ কেজি "চই"। আমি কোন রকমে ১০০ গ্রাম নিতে পেরেছি শাস্ত্র পালনের জন্য। এই গাছের এত দাম শুনে আমার একটু ইচ্ছে হলো একটি সারা লাগানোর জন্য। মামুন ভাইকে ডেকে নিয়ে চায়ের ক্যান্টিনে বসে জিজ্ঞেস করলাম যে ভাই আপনি চই এর গাছ কোথায় পেলেন? আমাকে একটা চারা সংগ্রহ করে দেয়া যাবে কি ? মামুন ভাই বলল, এটা আমার বাড়ির গাছের। আমি চাইলে সে চারা তৈরি করে দিতে পারবে। কিন্তু একটি চারার মূল্য নিবে ৫০০/=টাকা। আমি চাচি রাজি হয়ে গেলাম, সে এক মাস পরে আমাকে একটি চারা দিতে চেয়েছে।

IMG_20221023_172117479~2.jpg

মামুন ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, আজকে কত টাকা বিক্রি করলেন "চই" ? উনি বললেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা। আমার তো শুনে কপালে উঠে গেল চোখ! উনি আরো জানালেন, দুই বছরে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার "চই" বিক্রি করেছেন তিনি। দিনমজুর এই মামুন ভাইয়ের লাখপতি হওয়ার গল্প শোনার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল আমার। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম এটা কিভাবে সম্ভব ? উনি পর্যায় কর্মী সেই গল্প শুরু করে দিলেন। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। উনি ঢাকা শহরে একটি হারবাল কোম্পানিতে দিনমজুরের কাজ করতেন। মামুন ভাই সহ আরো ৮-১০ জন মজুর ছিল সেই কোম্পানিতে। এদের কাজটি হল ঔষধি গাছের পাতা, ফল, ও গাছের ছাল সংগ্রহ করা। যেমন-পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা, আকুন্দ পাতা, অর্জুনের ফল ও জাল, "চই"গাছ ইত্যাদি । এ সকল ওষুধি গাছের বীজও ছাড়া কোম্পানি থেকেই চাষীদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। এবং এ সকল ঔষধি গাছ পরিপুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই সকল চাষীদের কাছ থেকে নগদ মূল্যে তা কিনে নিয়ে আসতো।

IMG_20221023_172054307~2.jpg

এ সকল ওষুধি গাছের মধ্যে সবথেকে দামি ঔষধি গাছ হচ্ছে "চই" গাছ। এই ওষুধি গাছের চারাটি ও কৃষকদের মাঝে ফ্রি দেয়া হতো। একটি গাছের বয়স যখন পাঁচ বছর পার হইতো তখন কৃষকের কাছ থেকে কিনে নেয়া হতো। পাঁচ বছরই একটি গাছ কৃষকদের কাছ থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা দিয়ে নেয়া হতো। আবার এই ওষুধে গাছটির বয়স এক যুগ পার হলে একটি গাছের মূল্য প্রায় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা হতো। মামুন ভাই ওই ঔষধ কোম্পানিতে এক বছর চাকরি করার পর বাড়িতে চলে এসেছেন। কিন্তু বাড়িতে আসার সময় ফ্রিতে বারটি "চই" এর সারা নিয়ে এসেছেন। সেগুলি তিনি বাড়ির ভিতরে সুপারিশ গাছের গোড়াই গোড়ায় লাগিয়েছেন। এই বারোটি গাছেই তার এক যুগ পার হয়ে গিয়েছে।

IMG_20221023_171910857~2.jpg

এরমধ্যে পাঁচটি গাছ খুবই পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছে গিয়েছিল। বেশ স্বাস্থ্যবান ও লম্বা। সেই স্বাস্থ্যবান পাঁচটি গাছ রেখে বাকি সাতটি গাছের ডাল কেটে চারা তৈরি করেন এবং প্রতিবছর কালী পূজার সময় ৫০-৬০ হাজার টাকার চই বিক্রি করেন। গত বছর কালী পূজার আগেই কোম্পানির লোককে খবর দিয়ে তিনটি গাছ তিন লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন। এ বছরেও বাকি দুইটি গাছ কোম্পানির কাছে ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছেন তিনি।

IMG_20221023_171853790~2.jpg

আমি তো শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। একি শোনালেন আমাকে মামুন ভাই। আমাদের বাড়ির পাশে, আনাচে-কানাচে অসংখ্য জায়গা পড়ে থাকে। এই সমস্ত পথের জায়গায় এই ওষুধে গাছের চাষ করলে মন্দ হয় না। তবে মামুন ভাই বারবার সাবধান করে দিলেন। এটা বাহিরে করা যাবে না। বাড়ির ভিতরে কোন গাছ থাকলে সেই গাছের গোড়ায় লাগাতে হবে। কারণ এর বয়স যত বাড়বে ততই মানুষের চোখে ধরবে। তখন অধিক মূল্য হওয়ায় এই গাছটি চুরি হয় খুবই।

IMG_20221023_171847182~2.jpg

এখন মামুন ভাই বলতে গেলে এই ঔষধি গাছ "চই"এর কারণে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। এখন তিনি স্বাবলম্বী। বাড়ির পাশেই আরো পাঁচ শতক জমি করে করেছেন। এবং সেটি চতুর্দিক দিয়ে টিনের বেলা দিয়ে ঘিরে নিয়েছেন। পাশাপাশি শতাধিক সুপারির গাছ লাগিয়েছেন। উদ্দেশ্য প্রত্যেকটি সুপারির কাছেই আবার নতুন করে চারা তৈরি করে লাগাবেন। দারুন একটি আইডিয়া। আসলেই বাড়িতে এ ধরনের ওষুধি গাছের চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করা যায় এটা কল্পনাতেই আসেনি কখনো। ধন্যবাদ মামুন ভাইকে, দোয়া করি আরও বড় হোক তার উদ্যোগ। সেই সাথে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল ইউজার ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ রইলো আসুন, সকলেই এ ধরনের মৃত্যু নতুন ঔষধি গাছের সন্ধান করি, সাথে চাষাবাদের চেষ্টা করি।

IMG_20221023_171812280~2.jpg

বন্ধুরা, এই ছিল আজকে আমার দিনমজুর মামুন ভাইয়ের লাখপতি হওয়ার গল্প। আজকে এ পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, সকলের দীর্ঘায়ু কামনায় শুভরাত্রি।*

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

k75bsZMwYNtze9xHvT6xWCdz7q3QGD35ZKdaPpVrFksWkH68jVCNK4hKZwCGfUMBFP8ZsUJgfSSBfzXnu7zpWkg5zGzFwka5KMkG7dT2yTrZYwE6LM85iWR2zCzbpbtGXnNUJuioFxovEYAGN2FJd85aUUR7tXXgz.png

নামশ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব।
User Id@amitab
CameraSymphony Mobile phone.
Mobile Phone ModelZ-35.
Photo Locationvendabari pirganj rangpur.
My AddressVendabari Prigonj Rangpur Bangladesh.

Writing location

Sort:  
 2 years ago 

দাদা আপনি ঠিকই বলেছেন কালী পুজোর দিন অন্য পুজোর দিনের থেকে ব্যতিক্রম। আমাদের বাড়িতেও চুই ঝাল দিয়ে আরও অনেক প্রকারের গাছের ছাল-বাকল ও রসুন মরিচ দিয়ে ঝালের গুঁড়া তৈরি করে আর এটাকে একধরনের ঔষধি খাবার বলে। ছোটবেলায় খুব খেতাম এত পরিমাণে ঝাল হলো চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসতো। এখন চুই ঝাল মোটামুটি সবাই খায় তার জন্য দামও অনেক বেড়ে গেছে। মামুন ভাই চুই ঝাল বিক্রি করে লাখপতি হয়েছে শুনে খুবই ভালো লাগলো। অথচ আগে এগুলো বাড়ির আশেপাশে কত এমনিতে পড়ে থাকতো।সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

এখন তো এসব গাছ পাওয়াই যায় না দিদি। এগুলো এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

টাইটেল দেখে আমি তো অবাক, ভিতরে লেখা পড়ে আমি আরো বোকা হয়ে গেলাম, শুধুমাত্র এটি বিক্রি করে সে লক্ষ টাকা ইনকাম করে নিয়ে গেল ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকছেনা। এখন আমার তো মনে হচ্ছে সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে এই বিজনেস করাটাই ভালো 😄😄

 2 years ago 

এটাই বাস্তবতা ভাই। বর্তমানে এটির খুবই অভাব। একটি গাছের বয়স এক যুগ পার হলে অনেক মূল্যবান। ওষুধ কোম্পানিগুলো এগুলো কিনে থাকেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 63188.04
ETH 2570.49
USDT 1.00
SBD 2.79