২৮শে আশ্বিন ১৪২৯ বাং।
১৫ই অক্টোবর/২০২২ইং।
রোজঃ শনিবার।
বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই শরৎ ঋতুর অপরূপ সৌন্দর্য কাশফুলের শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন, আমিও ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে দেশ-বিদেশে অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত মাটির নিচে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা !-"গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার" এর অপরূপ সৌন্দর্য ও নির্মাণ শৈলী নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা রাখি সকলকে ভাল লাগবে।
এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব বাড়িতে পূর্ণাঙ্গ আয়োজন থাকায় দেবী দুর্গার প্রতিমা দর্শনে বাহিরে যেতে পারিনি। দুর্গাপুজোর দুদিন পরেই পরিবার নিয়ে চলে গেলাম শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধায়। গাইবান্ধার মাটির নিচে এই দৃষ্টিনন্দন ভবনটির কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু কখনোই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এবারে মনে মনে নিয়ত করেছি শ্বশুর বাড়িতে গিয়েই বিকেলে ভবনটি দর্শন করতে যাব। যেই কথা সেই কাজ, শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বিকেল বেলা মামাশ্বশুরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভবনটি দর্শনে বেরিয়ে পড়লাম। মাটির নিচে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি দেখতে গিয়ে সত্যি অভিভূত হয়ে গেলাম, নয়নী ভিরাম দৃশ্য, অপূর্ব নির্মাণশৈলী। শরতের স্নিগ্ধ বিকেলে হৃদয় জুড়িয়ে গেল আশ্চর্য এই স্থাপনাটি দেখে।
(উপরের ছবিটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই মাঠের নিচেই লুকিয়ে রয়েছে একটি বিশাল স্থাপনা।)
মাটির নিচের দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি "গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার"নামে পরিচিত। এটি গাইবান্ধা থেকে পূর্ব দিকে বালাসিঘাট সংযোগ সড়কের পাশে মদনের পাড়া নামক স্থানে অবস্থিত।২০১২ ইং সনের নভেম্বর মাসে এটির শুভ উদ্বোধন করা হয়। এই অপরূপ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটি করতে দুই বছরের অধিক সময় লেগেছিল। প্রায় তিন একর জমি নিয়ে, ৩২ হাজার স্কয়ার ফিট পরিধির মধ্যে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়।
(স্থাপনাটির সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একটি সেলফি।)
মাটির নিচে এই স্থাপনাটিকে দুইটি ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে। এই দুইটি ইউনিটে প্রায় ২৫-৩০টি কখন রয়েছে। এটি জাপান বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে একটি বেসরকারি সংস্থা। এখানে রয়েছে-একাধিক ট্রেনিং সেন্টার, লাইব্রেরী, একাধিক অফিস কক্ষ, ডাইনি রুম, স্টাফদের আবাসন রুম ইত্যাদি।
(স্থাপনাটির মাঠের চতুর দিক দিয়ে সারি সারি নারিকেলের গাছ।)
নদী এলাকার চর এলাকায় বসবাসকারী হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও ভূমিহীন মানুষদের ফ্রিতে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মৎস্য চাষ, তাঁত শিল্প, গরু ছাগল ও পোল্ট্রি খামার বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলায় একমাত্র উদ্দেশ্য। এর জন্য আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়ে থাকে।
(বাহির থেকে স্থাপনার মাঠে প্রবেশ করতে হলে এই রিসিপশন কক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হয়।)
গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের মাধ্যমে রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, চিলমারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, জামালপুর, বগুড়া সারিয়াকান্দি, বিশাল কর্মযোগ্য চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য এইসব এলাকায় নদীপথে ভাসমান মেডিকেল রয়েছে এদের। অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন এলাকায় জাহাজের নঙ্গল ফেলে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে এই সমস্ত হতদরিদ্র মানুষদের।
(দৃষ্টিনন্দনেই স্থাপনাটির চতুর্দিক দিয়ে একটি ড্রেন ও বাউন্ডারি নির্মাণ করা রয়েছে।)
জ্বর থেকে মেজর অপারেশন পর্যন্ত করা হয় এই ভাসমান হাসপাতালে। অপারেশন থেকে শুরু করে চিকিৎসার ওষধপত্র থাকা খাওয়ার জন্য কোন টাকা পয়সা লাগেনা এই সমস্ত হতদরিদ্র মানুষদের। গায়ত্রী মধ্যেই ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে দেশব্যাপী। সেই সাথে অসংখ্য হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও রয়েছে তাদের এই ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে।
(মাটির নিচে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় নামার জন্য সিঁড়ি।)
তাদের এই মানবিক সেবা গুলো যেমন সারাদেশে নজর কেড়েছে তার থেকে তার থেকে অধিক আকর্ষিত ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে মাটির নিচে "অপরূপ দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি।"এটি এক নজর দেখার জন্য সারা দেশ থেকে পর্যটক চলে আসে এই "গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে।"এমনকি এখন অনেক বিদেশি পর্যটক চলে আসে এই অপরূপ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটি দেখার জন্য।
(সিঁড়ি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার পর মূল স্থাপনার ভিতর প্রবেশ করার প্রবেশদ্বার।)
আমরা যেদিন স্থাপনাটি দেখার জন্য গিয়েছিলাম সেদিন বাহির থেকে আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। বিশাল এলাকা জুড়ে বাহির থেকে মনে হচ্ছিল একটি সবুজ মাঠ পড়ে রয়েছে। মাটির উপরে সবুজ ঘাস, মাঝেমধ্যে নানান প্রজাতির ফুলের গাছ ও পাতাবাহারি গাছ শোভা পাচ্ছে। মাঠের চতুর দিক দিয়ে সারি সারি নারিকেল গাছ শোভা পাচ্ছে।
(স্থাপনার ভিতরে প্রবেশের পর একটি প্রশস্ত রাস্তা।)
মাটির নিচে স্থাপনাটি দেখার জন্য রিসিপশনে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। তারপর হেঁটে হেঁটে ভিতরে প্রবেশ করছিলাম আর স্থাপনায় প্রবেশের জন্য সুরঙ্গ পথের সিঁড়ি খুঁজছিলাম। সেই সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পুরো মাঠটি প্রাণভরে দেখছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নিচে মাটির নিচে নামতে থাকলাম।
(সম্পূর্ণ ইট দিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই স্থাপনার রাস্তা ও কক্ষগুলো।)
সিঁড়ি দিয়ে মাটির নিচে নেমে অবাক বনে চলে গেলাম। অসাধারণ দৃশ্য সেই কাঙ্খিত স্থাপনার দেখা পেলাম। মনে হচ্ছিল শহরের কোন গলিতে আমরা ঢুকে পড়েছি। অপূর্ব নির্মাণশৈলীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ঘর। দুটি ব্লকে মনে হচ্ছিল দুটি আধুনিকায়ন আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়েছি।
(এই স্থাপনার অংশে ট্রেনিং এর ক্লাস রুম সহ একটি ডালিম গাছ দেখা যাচ্ছে।)
আমরা যে সময় গিয়েছিলাম সে সময় কোন ট্রেনিং ছিল না। অফিসের কোন লোকজনও ছিল না তেমন। অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছিল। ফাঁকায় ফাঁকায় ঘুরেফিরে কক্ষগুলো দর্শন করলাম উপভোগ করলাম সেই সৌন্দর্য। কয়েকজন দর্শনার্থী ঢুকে পড়েছে আমাদের সঙ্গে তারা বেশ সেলফি তুলছে বিভিন্ন স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে।
(বিশাল এই কক্ষটিও একটি প্রশিক্ষণ ক্লাসরুম।)
আমিও সমস্ত স্থাপনা গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম আর উপভোগ করছিলাম দৃষ্টি নন্দন স্থাপনার দৃশ্যগুলো। সত্যি সত্যি ই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। গল্প শোনা আর বাস্তবে দেখা এর মধ্যে আনন্দ ও উপভোগ্য বিষয়টা একটু ভিন্ন আমেজের।
(অপর আরেকটি প্রশিক্ষণের ক্লাসরুম।)
খুবই ভালো লাগলো গাইবান্ধা জেলার মদনের পাড়ায় অবস্থিত "মাটির নিচে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা!-"গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার।"এই স্থাপনাটি গাইবান্ধা জেলাকে অনেকটা বিকশিত করেছে সারা দেশ সহ বহির্বিশ্বে। অসংখ্য অ্যাওয়ার্ড ও পেয়েছেন এই স্থাপনাটি।
(কক্ষগুলোতে সর্বক্ষণিক প্রাকৃতিক আলো বাতাস ঢোকার জন্য দুই ব্লকেই ফাঁকা রাখা হয়েছে। সেই ব্লকে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে।)
বন্ধুরা, এই ছিল আজকে আমার গাইবান্ধা জেলার **মাটির নিচে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা !-"গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার ** এর কার্যক্রম, দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার বিবরণ ও অবস্থান সম্পর্কে ব্যাখ্যা। আজকে এই পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই প্রত্যাশায় সকলের সুস্বাস্থ্য কামনায় শুভরাত্রি।
নাম | শ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব। |
User Id | @amitab |
Camera | Symphony Mobile phone. |
Mobile Phone Model | Z-35. |
Photo Location | gaibandha modonerpara. |
My Address | Vendabari Prigonj Rangpur Bangladesh. |
Writing location
আমি একদমই অবাক হয়ে গেলাম মাটির নিচে এত সুন্দর একটি স্থাপনা দেখে। আসলে ছবিগুলো দেখে বোঝাই যাচ্ছে না এটি মাটির নিচের অংশে তৈরি করা হয়েছে। আর দেখে এতটা সুন্দর দেখা যাচ্ছে মনে হচ্ছে যেন একদম নতুন ভাবে এটি তৈরি করা হয়েছে। আমার তো খুব ইচ্ছে করছে সামনাসামনি গিয়ে দেখতে। ছবিতে যতই দেখা হোক না কেন সামনাসামনি দেখার এবং উপভোগ করার মজাটাই আলাদা। আপনি অনেক সৌভাগ্যবান যে এত সুন্দর একটি জায়গায় যেতে পেরেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমাদের মাঝে ছবির মাধ্যমে হলেও পুরো স্থাপনাটি শেয়ার করার জন্য।
আসলেই আপু এটি একটি প্রশংসার স্থাপনা গাইবান্ধা জেলার। তা বাস্তবে গিয়ে দেখে আসলাম। আমিও খুবই উপভোগ করেছি স্থাপনা দিক দেখে। করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাহ্ এক কথায় অসাধারণ ছিল। আপনার মাটির নিচে এত সুন্দর একটি স্থাপনা দেখে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি তো না দিয়ে দেখে ফেললাম গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। সত্যি খুবই মনোমুগ্ধকর দেখাচ্ছে এটিকে। দেখে তো মনে হচ্ছে বেশি ঘোরাঘুরি করেছেন এবং ফটোগ্রাফি করেছেন তার সাথে। একদম নতুন মনে হচ্ছে এটিকে দেখতে।
জি ভাই মনোমুগ্ধকর একটি স্থাপনা। এবং পরিবেশটা খুবই সুন্দর। বর্তমানে গাইবান্ধা জেলার এটি একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি সত্যিই দেখতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে। মাটির নিচে এরকম সুন্দর স্থাপনার দেখে অভিভূত হওয়াটাই স্বাভাবিক। মাটির নিচে স্থাপনার সিঁড়ির ফটোগ্রাফিটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। এরকম সুন্দর জায়গায় কিছুটা সময় কাটানোর মজাটাই আলাদা। কোনদিন সুযোগ পেলে অবশ্যই গাইবান্ধার এই অসাধারণ স্থাপনার জায়গাটি ভ্রমণ করব।
আসলেই অসাধারণ । না দেখলে বিশ্বাস করার মত নয়। চমৎকার নির্মাণশৈলী। বেশ সময় ধরে উপভোগ করেছি এই স্থাপনাটি। মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাইয়া আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নাই যে , মাটির নিচে এত সুন্দর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা রয়েছে। স্থাপনার চারদিকে নারিকেল গাছ গুলো স্থাপনার সুন্দর্য হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।সিঁড়ি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার পর মূল স্থাপনার ভিতরে প্রবেশ করার প্রবেশদ্বারের তিনটি গেইটই অনেক সুন্দর লাগলো। প্রশিক্ষণ ক্লাসরুমের কাঠের চেয়ার গুলোও দেখার মত ছিল। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সত্যিই অসাধারণ ভাই। এটি বর্তমানে গাইবান্ধা জেলার একটা ঐতিহ্য বহন করছে। অসংখ্য পর্যটকও এখানে এক নজর দেখার জন্য আসে। তাদের সেবা গুলো মানবিক ও মানবতার। অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য আপনাকে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।