ইঁদুর দৌড় || Rat Race (১ম পর্ব)
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলব। ইদুর দৌড়, কখনো নাম শুনেছেন! কি সেই ইদুর দৌড়! জানলে অবাক হবেন আমরা সবাই এই ইদুর দৌড়ের মাঝে পরে গেছি!! কিন্তু কিভাবে? সেই বিষয়টি আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো, তবে চলুন শুরু করা যাক।
ইঁদুর দৌড় বিষয়টি আসলে কি এবং এই বিষয়ের মধ্যে আমরা কিভাবে জড়িয়ে পড়েছি এই বিষয়টি বুঝতে গেলে আগে বুঝতে হবে এই ইঁদুর দৌড় অর্থটা কি? এর প্রকৃত অর্থ আমাদের জানতে হবে। আমরা সকলেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও আমরা কখনো না কখনো দেখেছি। একটি ইঁদুরকে গোলাকার একটি চাকার মধ্যে রেখে তাকে সামনে খাবারের লোভ দেখানো হয় এবং সেই ইদুর সেই খাবার পাওয়ার লোভে প্রতিনিয়ত দৌড়াতে থাকে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের জন্য। কিন্তু তার গন্তব্য কখনোই শেষ হয় না। এই বিষয়টিকেই আমরা ইঁদুর দৌড় বা Rad Race বলে থাকি।
আপনি ঠিক কখন এই দৌড়ের মধ্যে পা বাড়িয়েছেন সেটা বলা খুবই কঠিন কিন্তু এটা একদম সত্য বিষয় যে আপনি এই প্রতিযোগিতার মধ্যে এখনো রয়েছেন। কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারি না। আপনি কিভাবে এই প্রতিযোগিতার অংশ সেই বিষয়টি একটু পরে বলছি তার আগে একটি ছোট্ট উদাহরণ দিতে চাই। আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা করেছি এবং একটি বিষয়ে আমরা সব সময় অনুধাবন করেছি আমাদের বাবা-মা প্রায়ই বলতো। এইতো ক্লাস এইট এর বৃত্তি পরীক্ষার পরে জীবন অনেক সুন্দর হবে। জীবন আরো গোছালো হবে শুধুমাত্র এতোটুকু কষ্ট করো পরবর্তী জীবন সুখের হবে। পরিবারের এই কথা শুনে আমরা তখন সবাই প্রায় অনেক পরিশ্রম করেছি। টিউশন স্যারের বাসায় গিয়ে টিউশন নিয়েছি, পাটিগণিতের সেই ভেজালময় সূত্রগুলো মুখস্ত করেছি এবং সবাই আমরা ভিত্তি পরীক্ষা দিয়েছি। এরপরে কি শান্তি পেয়েছি!! কখনোই না? এরপরে শুরু হয়েছে নতুন একটি অধ্যায়। এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতে হবে এরপরই নাকি কলেজ জীবনে উঠলেই জীবন শান্তিময় হয়ে উঠবে।
তখন বাবা-মা বলতো এই তো এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে ভালো একটি কলেজের চান্স পেয়ে যাবা, কলেজে কোন প্রেসার নেই। কলেজে শান্তি আর শান্তি। এরপর থেকে শুরু হলো সেই আরেকটি যুদ্ধ। কলেজে উঠে শুনতে হল এই কলেজ জীবনটা নাকি অনেক কঠিন এরপরেই রয়েছে ভার্সিটি জীবন ভার্সিটি জীবনে কোন টেনশন নেই, নেই কোন বাড়তি চাপ। এই বিষয়টি যে সম্পূর্ণ ভুল সেটাও বুঝতে বেশি সময় লাগলো না। এরপর থেকে শুনতে হল ভালো একটি চাকরি। এই চাকরি পেয়ে গেলেই নিজের টাকায় ভালো কিছু করবে, নিজের টাকায় নিজের মন মত খুশি মত ঘুরে বেড়াবে, নিজের টাকায় সবকিছুই করবে তখন কেবল শান্তি আর শান্তি।
সেই মাধ্যমিক থেকে প্রতিবারই আমাদের শুনতে হচ্ছে এই অধ্যায়টা পেরোলেই তোমাদের শান্তি আর শান্তি। কিন্তু এর শেষ কোথায় আপনি কি বলতে পারবেন কখনোই না!!! একটি ছোট্ট উদাহরণ দিলাম। এই বিষয়গুলো আমাদের সবার সাথেই প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে এরপরে আসে জব সেক্টরের বিষয়। আমরা সবাই মধ্যবিত্ত তাই মধ্যবিত্ত দিয়েই প্রথমে একটি উদাহরণ দিতে চাই। মনে করুন আপনার বেতন ২০-৩০ কিংবা ৫০০০০ টাকা আপনি সেই বেতন অনুযায়ী আপনার লাইভস্টাইল সেট করে রেখেছেন। প্রথমে জবে জয়েন করলেই নিম্ন পোস্ট থেকে শুরু করতে হয় হয়তো এসিস্ট্যান্ট। পরবর্তীতে সুপারভাইজার এর পরে হয়তো অফিসার এবং তারপরে হয়তো আরো উচ্চপদস্থ যাওয়ার আপনি চেষ্টা করবেন এবং চেষ্টা করবেন আপনার শ্রমের যেন মূল্যায়ন আপনার কোম্পানি করে তা না হলে আবার কোম্পানি পরিবর্তন এবং সেই সার্কেলটা আবায় আবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
বিষয়গুলো একটু মন দিয়ে লক্ষ্য করুন আপনার যেখানে আপনি জব করছেন সেখানেও কিন্তু বিভিন্ন ধরনের পদবী রয়েছে এবং এক পদবী থেকে অন্য পদবীতে যাওয়ার একটা অঘোষিত প্রতিযোগিতামূলক বিষয় সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। হয়তো দুই বছর পরে আপনার বেতন বেড়ে গেছে কিন্তু সেই হিসেবে আপনার খরচের তালিকাটাও বেড়ে গেছে। হয়তো আপনি এই বিষয়গুলো বুঝতে পারছেন না আমাদের এই পরিশ্রমের যে অর্থগুলো রয়েছে সেই অর্থগুলো শুধুমাত্র আমরা খরচই করে যাচ্ছি। কোন কিছু সঞ্চয় করতে পারছি না কারণ এই বাজারে এই টাকা দিয়ে চলা অনেকটাই কঠিন। আচ্ছা একটি সত্যি কথা বলুন তো, আপনারা তো ব্লগিংয়ের পাশাপাশি অনেকেই বিভিন্ন চাকরি করছেন। মাসের প্রথম দিকে যখন আপনি স্যালারি পান তখন আপনার কিরকম অনুভূতি হয়? আপনি আপনার স্যালারি দেখে খুশি হন নাকি আতঙ্কিত হন! নাকি এটা ভেবে থাকেন আগামী ৩০ দিন এই টাকা দিয়ে কিভাবে সংসার চলবে!!!
এইটা গেল মধ্যবিত্তদের কথা। যারা একটু স্বাচ্ছন্দভাবে বসবাস করে তাদের কথা একটু যাওয়া যাক। আপনারা যদি মনে করেন তারা এই ইঁদুর দৌড় থেকে বিরত রয়েছে তাহলে এটা ভুল ধারণা। তারাও এই ইদুর প্রতিযোগিতার মধ্যেই রয়েছে। হয়তো চাকরিতে ঢুকার চার বছর পরে আপনার স্যালারি বেড়ে দাঁড়ালো এক লক্ষ টাকা। তখন কিন্তু আপনার লাইফ স্টাইল পরিবর্তন হবে হয়তো। আগে যেই বাসায় থাকতেন তার থেকে একটু বড় বাসা ভাড়া নিবেন কিংবা আপনার মোটরসাইকেল বিক্রি করে ছোটখাট বা রিকন্ডিশনে হলেও একটি গাড়ির প্রয়োজনীয়তা আপনি অনুভব করবেন। এভাবে করেই প্রতিনিয়ত আমাদের খরচের তালিকা বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু সঞ্চয় আমাদের সকলের শূন্য!
ধরুন বেতন বাড়ার পরেই আপনার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিল। পরবর্তীতে অন্যজনের দায়িত্ব আপনাকে কাঁধে নিতে হল। এর কিছু বছর পরে আপনার সন্তান হলো মাথায় আরও একটি মানুষের দায়িত্ব যোগ হল। এর পরবর্তীতে সেই সন্তানকে লালন-পালন করা তার পড়াশোনার খরচ সবমিলিয়ে দেখবেন একদিন আপনি ঠুস করে মরে গেছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে যখন আপনি হিসেব খুঁজবেন তখন কিছুই পাবেন না। শুধুমাত্র এটাই অনুধাবন করতে পারবেন দুহাত দিয়ে পরিশ্রম করে টাকা ইনকাম করেছি আর খরচ করেছি, জীবনটাকে উপভোগ করতে পারিনি কিংবা জীবনে কিছু করতে পারিনি। এটা আর দশটা সাধারণ মানুষের কথাই বলছি কিছু কিছু মানুষ ব্যতিক্রম থাকতে পারে। বিষয়টাকে যদি আমরা একটু সামারাইজ করি তাহলে দেখা যাবে ক্লাস এইটের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের চাপ আছে এবং পরিবার এই আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে এর পরেই হয়তো তোমার চাপ কমবে কিন্তু সেই বিষয়টা কোনভাবেই হচ্ছে না। সেই ক্লাস এইটের পর থেকে একদম মৃত্যুর পর্যন্ত কখনোই আপনি শান্তি থাকতে পারবেন না, একটার পর একটা কাজ করেই যাচ্ছেন, এই বিষয়টি হল ইঁদুর দৌড়।
এই ইঁদুর দৌড় বিষয়টা অনেকটাই জটিলতম তাই এই বিষয়গুলো আমি বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে বোঝানোর চেষ্টা করব আজকে শুধুমাত্র কিছু উদাহরণের মাধ্যমে এই ইঁদুর দৌড় কি এবং এই ইঁদুর দৌড়ের ব্যাখ্যাটি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই ইঁদুর দৌড়ের সাথে অনেকগুলো বিষয়বস্তু জড়িত রয়েছে সেগুলোও আগামীকাল আপনাদের সাথে শেয়ার করে নেব। আশা করছি এই পর্বগুলো আপনাদের অনেক ভালো লাগবে আজকের মত এখানে বিদায় নিচ্ছি ধন্যবাদ সবাইকে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: ইঁদুর দৌড় || Rat Race (১ম পর্ব)
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
পোস্টের টাইটেল পড়ে মনে করেছিলাম হয়তো ইঁদুরের মজার একটি গল্প হবে কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম বাস্তব জীবনে মানুষ যে পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করছে সেটা নিয়ে লিখেছেন। বলতে গেলে মানুষের জীবনটাও এই ইঁদুরের মতোই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার প্রয়োজন গুলো মেটাতে দৌড়াতে থাকে।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এরকম ইঁদুরের দৌড়ের মত জীবন চক্র চলতেছে। আমরা হয়তো কেউ বুঝতে পারি কেউ বুঝতে পারিনা। প্রতিনিয়ত একটা না একটা লক্ষ্য উদ্দেশ্য এর পেছনে,ক্লান্তিহীন হয়ে ছুটতে ছুটতে একটা সময় দেখব নিজের জীবনটাই ফুরিয়ে গেছে। সত্যি বলতে আপনার ব্লগে খুব সুন্দর উপস্থাপন করেছেন। যে কেউ বিষয়টি অনেক সুন্দর ভাবে অনুধাবন করতে পারবে।খুব ভালো লাগলো এই রকম বাস্তবিক একটি পোস্ট পড়তে পেরে। ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন ভাই।
আপনার লেখাটা ছিল একেবারে বাস্তব। কিন্তু এটা পড়ে হাসব না আফসোস করব বুঝছি না। অসাধারণ বলেছেন ভাই আমরা সবাই যেন এই ইদুর দৌড়ের উপরই রয়েছি। আর ছোট থেকে আমাদের এমনটাই দেখানো হচ্ছে এবং এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটা অন্যরকম অবস্থা। একটা সময় ইদুরের মতো আমরাও ক্লান্ত হয়ে যায় এবং পিছে তাকালে দেখতে পাই এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে জীবনের কতটা সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। অসাধারণ লিখেছেন ভাই।
একেবারে বাস্তবসম্মত কিছু উদাহরণ দিয়েছেন ভাই। আমাদের জীবনে অধ্যায়ের কোনো শেষ নেই। এক অধ্যায় শেষ হলে আরেক অধ্যায় শুরু হয়ে যায়। হয়তো পৃথিবীতে আমরা যতদিন বাঁচবো ততদিন একের পর এক অধ্যায় চলতেই থাকবে। আর প্রতিযোগিতার কথা যদি বলি, তাহলে বলবো প্রতিটি সেক্টরে প্রতিযোগিতা রয়েছে। যারা চাকরি করে তারা প্রতিনিয়ত প্রমোশনের আশা করে। তাহলে বেতন বাড়বে এবং পদবীর উন্নতি হবে। আবার যারা ছোট ব্যবসা করে, তারা কিভাবে ব্যবসাকে বড় করবে সারাক্ষণ সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে। তবে এটা অবশ্যই সত্যি যে আয়ের সাথে ব্যয় বাড়ে। যাইহোক এতো চমৎকার কিছু উদাহরণের মাধ্যমে এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।