হ্যাপি ইঞ্জিনিয়ার্স ডে
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনার সবাই অনেক ভালো আছেন। টাইটেল দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন আজকে তো বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ডে নয়, বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ার্স ডে মে মাসের ৭ তারিখে চলে গেছে! তাহলে আজ কেন এই পোস্ট করছি! আমরা যারা এই কমিউনিটিতে কাজ করি তারা কিন্তু দুই দেশের মানুষ। যদিও দুই দেশের মানুষ কিন্তু আমাদের মনের বন্ধন একই, তাই ইন্ডিয়াতে যা হয় তা আমাদেরও পালন করা উচিত বলে আমি মনে করছি। ভারতে আজ ১৫ ই সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ারস ডে পালিত হচ্ছে। তাই আমার ইঞ্জিনিয়ার ক্যারিয়ারের কিছু ঘটনা আপনাদের সাথে আছে তুলে ধরব।
থ্রি ইডিয়টস মুভি দেখেন নি এমন কেউ মনে হয় না বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষে রয়েছে। আমিও অনেকবার মুভিটি দেখেছি এবং সেখান থেকে অনেক কিছু শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। এছাড়াও আমাদের একটি কালচার রয়েছে আমাদের জন্মের পরেই আমাদের মা-বাবার অনেক স্বপ্ন থাকে আমাদের নিয়ে। কোন কোন বাবা মা আবার ফারহানের বাবা মার মত হয়ে যায়, জন্ম হওয়ার পরেই বাবা ছেলেকে বলে দেয় আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে, হাহাহা।
তবে আমার ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন ছিল না। ছোটবেলা থেকেই আমার মা বাবা আমাকে বলতো তোমার যেটা স্বপ্ন তুমি সেটাই করবে তোমার স্বপ্নে কখনো আমরা বাধা সৃষ্টি করব না। এই বিষয়টা আসলে অনেকটাই রেয়ার অর্থাৎ অনেক বাবা-মা তাদের নিজের স্বপ্নগুলো সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়। সে কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টি হয়নি। তবে ছোটবেলা থেকেই আমি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে একটু বেশি আকর্ষণ আমার কাজ করতো কারণ ছোটবেলায় ব্যাটারির সাথে লাইট কানেক্ট করে লাইট জ্বালিয়ে দিতাম, নিজেকে ছোটখাটো ইঞ্জিনিয়ার মনে হতো হাহাহাহা।
পরবর্তীতে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলাম এবং আমার বুদ্ধিগুলো আরো খুচর তে পরিণত হলো! খুচরো বুদ্ধি বোঝেন, হাহাহা। সেগুলোই আমি করতাম। বিভিন্ন ধরনের খেলনা গুলো ভেঙেচুরে একাকার করে দিতাম, নতুন কিছু তৈরি করার জন্য। এছাড়াও বাসায় বিভিন্ন ধরনের লাইট এবং চার্জার ফ্যান এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সাইন্স প্রজেক্ট আমি আমার এই জীবনে কাজ করেছি।
তবে আমাদের এডুকেশনাল সিস্টেমে অনেকটা কমতি রয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের স্বপ্ন দেখাতে শেখায় না। আমাদের জন্য কোন ক্যারিয়ার টা ভালো হবে এই বিষয়টি বুঝতে শেখায় না। আসলে আমরা অনেক ধরনের ইনফরমেশন পাই না যার দরুন আমরা মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। যখন আমি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে প্রথম পা বাড়াই তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না আমাকে কোন সাবজেক্টে ইঞ্জিনিয়ারিং করতে হবে! যেহেতু আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেক্সটাইল অনেকটাই এগিয়ে এবং বাংলাদেশের জিডিপির ৮০% এর উপর টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি থেকে আসে তাই আমার কাছে মনে হয়েছিল এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হতে পারে।
তবে আজ একটি সিক্রেট কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমি যেই বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইতাম সেই বিষয়ের পড়াশোনা বাংলাদেশে হয় না। তাই সেই বিষয়টি আমি আত্মগোপনেই রেখেছি এবং সেই বিষয়গুলো কখনোই কাউকে বলিনি। আমার ইচ্ছা ছিল অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে পড়ার। পৃথিবীর বাইরের গ্রহ উপগ্রহ গ্যালাক্সি এবং বিভিন্ন ধরনের আর্ন আইডেন্টিফাইং অবজেক্ট অর্থাৎ উএফও এসব বিষয়ে গবেষণা করা, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এখন আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন ছাত্র।
তবে আমি যে টেক্সটাইল সাবজেক্টে খুশি নই এমনটা কিন্তু নয়। সেই টেক্সটাইল সাবজেক্ট ও আমার অনেক ভালো লাগে। বিশেষ করে ওয়েট প্রসেসিং ডিপার্টমেন্ট আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। বিভিন্ন কেমিক্যাল এর সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের রং করা হয় এবং কাপড়ের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা হয় এই বিষয়গুলো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। এছাড়াও আমি মাঝে মাঝে প্রতিনিয়তই এস্ট্রোনোমি নিয়ে পড়াশোনা করি পৃথিবীর বাহিরে কি হচ্ছে, এই বিষয়ে জানার আগ্রহ রয়েছে, তাই প্রতিদিন এই একটু কম সময় হলেও সেই বিষয়গুলো পড়াশোনা করার চেষ্টা করি। আসলে নিজের ইচ্ছে তো নিজের ভালোলাগার এ বিষয়গুলোকে যতই না করি ততটাই আরো বেশি সেই বিষয়ে প্রেমে পড়ে যাই। আমার কাছে এই বিষয়গুলো ভালো লাগে দৈনিক নিয়মিত আধা ঘন্টার মত আমি এই বিষয়ে সময় দেই।
তবে ইঞ্জিনিয়ার একটি অদ্ভুত ধরনের প্রাণী সেই বিষয়টি আপনাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে। কারণ ইঞ্জিনিয়ার শুধুমাত্র যে একটি বিষয় হওয়া যায় তা কিন্তু নয় বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে তবে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় সবথেকে বড় ইঞ্জিনিয়ার হল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কারণ তারা কখনোই শান্তভাবে বসে থাকতে পারে না, একটি শান্ত মানুষের মতো। তারা প্রবলেম ক্রিয়েট করবে আবার সেই প্রবলেমের কিভাবে সল্যুশন বের করা যায় সেই বিষয়গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে।
যারা মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে রয়েছেন তারা আবার এই কথাই মাইন্ড কইরেন না হাহাহা। জাস্ট মজার ছলে বললাম। পৃথিবীর সব ইঞ্জিনিয়াররাই একরকম। আপনি একটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন যারা ওকালতি করে তাদের একটি ড্রেস কোড রয়েছে, যারা ডাক্তার তাদের আলাদা পোশাক রয়েছে কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারদের কোন ফরমাল পোশাক নেই। এই ইঞ্জিনিয়ার এখন বাংলাদেশের অলিতে গলিতে আপনি পাবেন। যার দরুন এর মান দিন দিন কমে যাচ্ছে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা গুলো এমন হয়ে গিয়েছে।
তবে আজ ইঞ্জিনিয়ার্স ডে তে পৃথিবীর সকল ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানীদের কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ তারা না হলে আজকের এই পৃথিবীতে কোন যান্ত্রিক বিষয়গুলোই আবিষ্কার হতো না। বর্তমানে আমি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি এবং টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে যতগুলো মেশিন রয়েছে প্রায় সবগুলোই অটোমেটিক এবং রোবটিক ভাবে কাজ করে। এই ইঞ্জিনিয়ার না থাকলে হয়তো কোন যান্ত্রিক বিষয়বস্তু আবিষ্কার হতো না, আবিষ্কার হতো না পৃথিবীর বাহিরের সেই মহাবিশ্ব।
তাই এই ইঞ্জিনিয়ার্স ডে তে সকল ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা রইল। আজকের মত এখানেই শেষ করছি আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মন্তব্যে লিখতে পারেন।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: হ্যাপি ইঞ্জিনিয়ার্স ডে
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
আসলেই ভাই বেশিরভাগ মা বাবা ছোট থেকেই সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়, বড় হয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। যা মোটেই উচিত নয়। তবে আপনি এদিক থেকে খুবই ভাগ্যবান। যাইহোক ছোটবেলায় আপনি তাহলে ছোটখাটো একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন হাহাহা। আপনি অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে না পড়তে পারলেও, বর্তমানে আপনি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। এটাই বা কম কিসের। যাইহোক ইঞ্জিনিয়ার্স ডে তে সকল ইঞ্জিনিয়ারদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
ভারতে যে ইন্জিনিয়ার্স ডে কাল পালিত হয়েছে তা জানা ছিলো না।যাই হোক হ্যাপি ইন্জিনিয়ার্স ডে।আসলে খেলনা গাড়ি ভেঙে মটর দিয়ে বিভিন্ন কিছু করা কিংবা ব্যাটারি দিয়ে কোন কিছু তৈরি করা সব ছেলেরাই মনে হয় কম বেশি করে আমি আমার ভাই কে দেখতাম ভালো ভালো জিনিস ভেঙে সে এমন করতো।যাই হোক আপনার মাঝে মাঝে এস্ট্রোনোমি নিয়ে পোস্ট দেখতে ভালোই লাগে।এটা ঠিক বাবা মায়ের ইচ্ছে গুলো ছেলেমেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বেশির ভাগ।ভালো লাগলো কথাগুলো। ধন্যবাদ
এই দিবসও আছে নাকি? ঠিক বলেছেন ভাইয়া। ছেলেবেলা হতেই শিশুরা বাবা মায়ের পছন্দেই পড়াশুনা করে। নিজের পছন্দের কোন দামই থাকে না। কিন্তু এতে করে বাচ্চাদের জীবনটাই অন্যরকম হয়ে যায়। যাই হোক ইঞ্জিনিয়ার তো ইঞ্জিনিয়ার। সে যেটাই হোক। আর এই ইঞ্জিনিয়ার দিবসে আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
হা হা ভাই সত্যি ইঞ্জিনিয়ারস ডে দেখে আমারও মনে হয়েছে এই আজ তো না। আবার থ্রি ইডিয়েটস এর ৭ সেপ্টেম্বর আজ না তাহলে। সত্যি বলেছেন আমি পাশ্ববর্তী দেশে দিবস মানে আমাদের দেশেও। আমি নিজেও মহাকাশ সৌরজগত নিয়ে বেশ উৎসাহি ছিলাম ছোটবেলা থেকেই। তবে এটা নিয়ে লেখাপড়া করার ইচ্ছা কখনো আমার হয়নি। তবে আপনার বতর্মান পেশা টাও ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্তভূক্ত। সবমিলিয়ে দারুণ লিখেছেন ভাই।।